<strong>অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস</strong>

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুল. অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস হল স্কার টিস্যুর কারণে কাঁধের শক্ত হয়ে যাওয়াকে বুঝায়, এটিকে আর্থ্রোফাইব্রোসিস, ফ্রোজেন সোল্ডার বা একটি প্যাথলজিকাল প্রক্রিয়া হিসাবেও বর্ণনা করা যেতে পারে।এতে মুলত সোল্ডার বা কাঁধের গ্লিনোহিউমেরাল জয়েন্টে আঠালো স্কার টিস্যু তৈরি হয়। যার ফলশ্রুতিতে কাঁধ শক্ত হয়ে যায়, কাঁধ মোভমেন্ট হারিয়ে ফেলে, কাঁধে ব্যথা হয়, ধীরে ধীরে এটি আমাদেরকে কর্মহীনাতার দিকে নিয়ে যায়।

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা আঠালো ক্যাপসুলাইটিসের প্রকৃত কারণ বিতর্কের বিষয়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এটি প্রদাহ বা আঘাতের দ্বারা সৃষ্ট। অন্য দিকে মনে করা হয়, জয়েন্টের আস্তরণ স্ফীত বা ফুলে সাইনোভাইটিস এর কারনে হয়, অপর দিকে বলা হয়ে থাকে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা হয়, যেখানে শরীর তার নিজস্ব পদার্থ এবং টিস্যুগুলির বিরুদ্ধে একটি “আক্রমণ” শুরু করে যার যার ফলশ্রুতিতে এডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস হয়। কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণ ও তার প্রতিকার

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস কেন হয়?

  • ইডিওপ্যাথিক বা অজানা

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা আঠালো ক্যাপসুলাইটিস রোগের প্রাথমিক বা মাধ্যমিক সূত্রপাত বলা যেতে পারে ইডিওপ্যাথিক বা অজানা। এছাড়া এটি প্রায় অন্যান্য রোগের সাথে যুক্ত হয়, যেমন-ডায়াবেটিস মেলাইটাস, থাইরয়েড রোগ, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন, হাইপারট্রিগ্লিসারাইডেমিয়া ও সার্ভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস।

  • ট্রমা বা কাঁধে আঘাত

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা আঠালো ক্যাপসুলাইটিস রোগের সেকেন্ডারি সূত্রপাত বলা যেতে পারে-সাধারণত ট্রমা বা কাঁধে আঘাত। সাধারণ আঘাতের মধ্যে রয়েছে রোটেটর কাফ টিয়ার, ফ্র্যাকচার, সার্জারি এবং কাঁধ এর মোভমেন্ট না করা।

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিভক্ত-ক্যাটাগোরিকাল প্রকারভেদঃ

  • হিমায়িত বা বেদনাদায়ক পর্যায়-১:

এই পর্বটি সাধারণত ৩ থেকে ৯ মাসের মত স্থায়ী হয়। একটি তীব্র ব্যথা দ্বারা শুরু হয় তারপর গ্লেনোহুমেরাল জয়েন্টে সাইনোভাইটিস এর আবির্ভাব হয় এবং সোল্ডারজেন্ট তার মোভমেন্ট হারিয়ে ফেলে।

  • হিমায়িত বা ট্রানজিশনাল পর্যায়-2:

এই পর্বটি সাধারণত ৪ থেকে ১২ মাসের মত স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে সোল্ডার জয়েন্ট তার সকল মোভমেন্ট হারিয়ে ফেলে, কিন্তু ধীরে ধীরে কাঁধের ব্যথা কমে যায় এই পর্যায়ে।

  • গলানো বা রিগ্রেশন পর্যায়-৩:

এই পর্বটি সাধারণত ১২ থেকে ২৪ মাসের মত স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে সোল্ডার জয়েন্ট তার সকল মোভমেন্ট একেবারে হারিয়ে ফেলে, কিন্তু ব্যথা থাকে না বললেই চলে এই পর্যায়ে।

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস এর সাধারণ প্রতিবন্ধকতাঃ

  • তীব্র ব্যথা এবং রাতে ঘুমের সমস্যা হয়
  • তীব্র ব্যথা হয় মোভমেন্টের সময় এবং প্রায়ই বিশ্রামে ব্যথা থাকে
  • বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ঘূর্ণন এর সময় জয়েন্টে ব্যথা হয়
  • ত্রুটিপূর্ণ পোশ্চার দেখা যায়
  • প্রলম্বিত এবং সামনের দিকে টিপযুক্ত স্ক্যাপুলা দেখ যায়
  • গোলাকার কাঁধ দেখ যায়
  • উঁচু এবং সুরক্ষিত কাঁধ দেখে মনে হয়
  • চলাফেরার সময় হাতের নড়াচড়া কমে যায়
  • সাধারণ পেশী দুর্বলতা দেখ যায়
  • স্ক্যাপুলার পেশীর অত্যধিক ব্যবহার ফলে গ্লেনোহুমেরাল পেশীগুলির দুর্বল  হয়ে পড়ে
  • কাঁধের পেশি ট্র্যাপিজিয়াস এবং পোস্টেরিয়র সার্ভিকাল পেশীতে ব্যথার আর্বিভাব ঘটে।

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস এর সাধারণ কার্যকরী সীমাবদ্ধতা বা অক্ষমতাঃ

  • মাথার উপরে, মাথার পিছনে, পাশ থেকে এবং পিছনের দিকে হাত নিতে পারে না। যেমন জ্যাকেট বা কোট পরা বা মহিলারা তাদের পিঠের পিছনে অন্তর্বাস বাঁধাতে আসুবিধায় পড়ে
  • প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত দেওয়া বা  মানিব্যাগ বের করতে বা রাখতে সমস্যা হয়
  • গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বের করে এটিএম মেশিন ব্যবহার করতে সমস্যা হয়
  • স্ব-সজ্জা, যেমন চুল আঁচড়ানো, দাঁত ব্রাশ করা, মুখ ধোয়া এবং খাবারের পাত্র মুখে আনার সাথে সাথে ব্যথা হয়
  • ওজনযুক্ত বস্তু যেমন থালা-বাসন আলমারিতে তুলতে অসুবিধা হয়

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিসের ঝুঁকির কারণ সমুহঃ 

  • ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস
  • হাইপো/হাইপার থাইরোডিজম
  • হাইকোলেস্টরল
  • সোল্ডার এর ইনজুরি/ র্সাজারি
  • অটো ইমিউনি ডিজিস
  • স্ট্রোক
  • রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস নির্ণয় পদ্ধতি:

  • হিস্ট্রি বা রোগীর এই রোগের গল্প শুনে।
  • ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমে।
  • স্পেশাল টেস্ট এর মাধ্যমে।
  • সহায়ক কিছু পরিক্ষার মাধ্যমে, যেমন- এক্স-রে, এম আর আই, ইত্যাদি।
  • রোগ নির্নয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য যে রোগের কথা মাথায় রাখতে হবে- সোল্ডার ডিজলোকেশন, বার্সাইটিস ও টেন্ডিনাইটিস, অ্যাক্রমিয়-ক্লাভিকুলার জয়েন্ট ডিসফাংশন এবং ক্যান্সার

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস এর চিকিৎসা

১। নন-সার্জিকাল

  • ফিজিওথেরাপি
  • এক্সট্রা কোরপোরাল শক ওয়েভ থেরাপি
  • ক্যালসিটোনিন
  • অ্যান্টি ইনফ্লামমেটোরিস ড্রাগ
  • আল্ট্রাসোনোগ্রাফি গাইডেড হাইড্রো ডিসটেশন
  • ইন্ট্রা আরটিকুলার কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন
  • ক্যাপসুলার ডিসটেনশন ইনজেকশন
  • আল্ট্রাসোনোগ্রাফি গাইডেড হাইড্রো ডিসটেশন
  • হায়ালুরোনিক এসিড ইনজেকশন
  • রিহ্যাবিলিটেশন
  • হোম অ্যাডভাইস

২। সার্জিকাল

  • ম্যানিপুলেশন আন্ডার অ্যানেস্থেশিয়া
  • আর্থোসকোপিক রিলিজ অ্যান্ড রিপেয়ার

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস এর পুনর্বাসন প্রোটোকলঃ

  • হিমায়িত বা বেদনাদায়ক পর্যায়-১:
  • রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া
  • বেদনাদায়ক কার্যকলাপ/ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন বা এড়িয়ে চলুন
  • ওয়ার্মিং-আপ এবং কুলিং-ডাউন
  • কাজের আগে স্ট্রেচিং বা পেশি প্রসারিত করন
  • কাজের পরে বিশ্রাম নেয়া
  • মোডালিটিস
  • আর্দ্র তাপ
  • কোল্ড প্যাক
  • ROM বা রেঞ্জ অব মোশন ব্যায়ামঃ কম তীব্রতা, স্বল্প সময়কাল, ১-৫ সেকেন্ড, দিনে ২-৩ বার, ব্যথামুক্ত, প্যাসিভ, AAROM বা এক্টিভ অ্যাসিস্টেড রেঞ্জ অব মোশন
  • পেন্ডুলাম (১ মিনিট ঘড়ির কাঁটার দিকে, ১ মিনিট ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে)
  • দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের internal rotation
  • দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের horizontal adduction   
  • দাঁড়ানো অথবা বসা অবস্থায় pulley for elevation
  • চিত হয়ে শুয়ে হাতের forward flexion using own hand
  • চিত হয়ে শুয়ে হাতের external rotation using pipe/stick  
  •  দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের extension in standing using pipe/stick
  • ম্যানুয়াল থেরাপিঃ
  • নিম্ন – গ্রেড মোবিলাইজেশন (গ্রেড I বা II)
  • পজিশনাল স্ট্রেচিং বা পেশি প্রসারিত করন
  • পেশি শক্তি বৃদ্ধি করণ:
  • আইসোমেট্রিক, ৫ সেকেন্ড ধরে, ১০ বার, প্রাচীরের বিপরীতে হাত দিয়ে চাপ দেয়া।
  • হিমায়িত বা ট্রানজিশনাল পর্যায়-২ঃ
  • রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া
  • বেদনাদায়ক কার্যকলাপ/ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন বা এড়িয়ে চলুন
  • ওয়ার্মিং-আপ এবং কুলিং-ডাউন
  • কাজের আগে স্ট্রেচিং বা পেশি প্রসারিত করন
  • কাজের পরে বিশ্রাম নেয়া
  • মোডালিটিস
  • আর্দ্র তাপ
  • কোল্ড প্যাক
  • ROM বা রেঞ্জ অব মোশন ব্যায়ামঃ কম ওজন, দীর্ঘ সময়কাল, ৫-১৫ সেকেন্ড, দিনে ২-৩ বার, ব্যথামুক্ত, প্যাসিভ, AAROM বা এক্টিভ অ্যাসিস্টেড রেঞ্জ অব মোশন থেকে এক্টিভ রেঞ্জ অব মোশন এ রুপান্তর করতে হবে।
  • পর্যায়-১+ থেরাপিউটক এক্সারসাইজ গুলোর সময়কাল এবং দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
  • ম্যানুয়াল থেরাপিঃ
  • পর্যায়-১+
  • মোবিলাইজেশন সর্বনিন্ম থেকে সর্বোচ্চ
  • পি এন এফ
  • মোভমেন্ট উইন্থ মোবিলাইজেশন
  • পেশি শক্তি বৃদ্ধি করণ:
  • থেরাব্যান্ড ব্যাবহারের মাধ্যমে
  • গলানো বা রিগ্রেশন পর্যায়-৩:
  • রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া
  • বেদনাদায়ক কার্যকলাপ/ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন বা এড়িয়ে চলুন
  • ওয়ার্মিং-আপ এবং কুলিং-ডাউন
  • কাজের আগে স্ট্রেচিং বা পেশি প্রসারিত করন
  • কাজের পরে বিশ্রাম নেয়া
  • মোডালিটিস
  • আর্দ্র তাপ
  • কোল্ড প্যাক
  • ROM বা রেঞ্জ অব মোশন ব্যায়ামঃ পর্যায়-২+ বেশি ওজন + দীর্ঘ সময়কাল + দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি + ইন্ড রেঞ্জ প্রেসার বা চাপ বৃদ্ধি করন।
  • ম্যানুয়াল থেরাপিঃ
  • পর্যায়-২+
  • সর্বোচ্চ পর্যায়ের মোবিলাইজেশন + সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্থির মোবিলাইজেশন 
  •  সোল্ডার গ্লাইডিং
  • পেশি শক্তি বৃদ্ধি করণ:চিকিৎসকের বা প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী।

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিসের প্রতিরোধ

অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিসের নিম্নলিখিত পদ্ধতি দ্বারা প্রতিরোধ করা যেতে পারে:

  • প্রতিদিন আপনার কাঁধ এবং পিঠের  বা শরীরের পিছনের পেশী প্রসারিত বা স্ট্রেচিং করুন।
  • আপনার টেন্ডন প্রসারিত বা স্ট্রেচিং করুন। বিভিন্ন টেন্ডন প্রসারিত বা স্ট্রেচিং করার জন্য হাত এবং তালু ঘুরিয়ে সঠিক ভাবে করুন।
  • ডেস্কে বা টেবিলে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় ভাল এরগনোমিক্স অনুশীলন করা যেতে পারে অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিসের প্রতিরোধে।
  • একটি সুস্থ ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখা খুবই গুরুত্ব অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিস প্রতিরোধে।
  • আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেঞ্জ-অফ-মোশন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা যেতে পারে অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলিটিসের প্রতিরোধে।
  • আপনার যদি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত থাকেন তবে এটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, প্রয়োজনে ডেয়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিন
  • প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট এর পরামর্শ নিন আর নিজেকে সুস্থ রাখুন।

তথ্যসূত্রঃ

Dr. Sapia Akter
পরামর্শ নিতে 01877733322