সায়াটিকা হচ্ছে সায়াটিক নার্ভের বিস্তৃতিতে ব্যথা বা, অস্বাভাবিকতা অনুভূত হওয়া। সায়াটিক নার্ভ তৈরি হয় লাম্বার ও স্যাক্রাম মেরুদন্ডস্থ নার্ভ রুট সমূহের সম্বন্বয়ে যা কটি  ও পশ্চাৎ দেশে বিস্তৃত হয়ে দুই পা পর্যন্ত নেমে যায়। মেরুদন্ডের ডিস্ক বৃদ্ধি বা, প্রসারণ এর কারণে ও সায়াটিকা হতে পারে। তাছাড়া সায়াটিক নার্ভে চাপ লাগা বা প্রদাহজনিত কারণে সায়াটিকা হতে পারে। 

সায়াটিকার লক্ষণ সমূহ হচ্ছে তীক্ষ্ণ জ্বালাপোড়ার মত ব্যথা সাথে অবসাদ, অবশ ভাব অথবা ঝিনঝিন করার মত লক্ষণসমূহ থাকতে পারে।

সাধারণত সায়াটিকা এক পাশে হয়ে থাকে,  কোমর থেকে পা পর্যন্ত। সায়াটিকা হলে কিছু অঙ্গের নড়াচড়ায় সমস্যা হয়। কিন্তু সে সমস্ত অঙ্গের সঞ্চালন অব্যাহত থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।  বেশি পরিশ্রম, খেলাধু্‌লা, নড়াচড়া সায়াটিক নার্ভে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে তাই তা এড়িয়ে চলতে হবে এবং ব্যথার সৃষ্টি করে এমন কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলতে হবে। 

আপনার সায়াটিকা থাকলে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম ও কর্মকান্ড যা ব্যাথা সৃষ্টি করে তা এড়িয়ে চলতে হবে। সে সমস্ত ব্যায়াম করতে হবে যা আপনার শক্তি বৃদ্ধি করে ও শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোন কোন ব্যায়াম গুলো করবেন

যে সমস্ত ব্যায়াম এবং কর্মকান্ড সমূহ সায়াটিকা থাকলে পরিহার করতে হবে

যে সমস্ত কার্যক্রম ব্যথা তৈরি করে তার থেকে দূরে থাকুন। কিছু ব্যায়াম সায়াটিকা এর লক্ষণ সমূহ বাড়িয়ে দিতে পারে।  বিশেষ করে যদি  নার্ভে ঘর্ষণ লাগে, পিঠে চাপ পড়ে বা, নার্ভের উপর চাপ পড়ে। তখন ঐ সব স্থানের শক্তি নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এগুলো নিরাপদে ও আস্তে আস্তে করতে হবে।

বেশি জোর দিয়ে কোন কর্মকান্ড করা যাবে না যা লক্ষণসমূহ বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।  তাছাড়া, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাও লক্ষণসমূহ কে বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং যখন সম্ভব হালকা ব্যায়াম করুন। 

এখানে সায়াটিকা থাকলে যেসব ব্যায়াম বা কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে তার তালিকা দেয়া হলো 

১। সামনে ঝুঁকে বসা বা দাড়ানোঃ  এই কাজ আপনার পিঠের নিচের অংশে কটি দেশ ও হারভেস্টিং মাংসপেশিতে টান তৈরি করে এবং পিটকে শক্ত করে সাইটিকা বাড়িয়ে দেয়।

২। হার্ডল স্ট্রেচ বা সীমার অতিরিক্ত পেশী প্রসারণ করাঃ এ কাজে আপনার পিঠ, পশ্চাৎদেশ ও হ্যামস্ট্রিং এর পেশী তন্তু ছিঁড়ে যায়, কটিদেশ মোচড় খায় যখন আপনি সামনের দিকে ঝুঁকে এসব করেন।

৩। পা ও মেরুদন্ডের সাহায্যে বৃত্ত তৈরি করুন ব্যায়ামঃ এই ব্যায়ামে আপনার সায়াটিক নার্ভে অত্যধিক চাপ পরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

৪। ডাবল লেগ লিফট/ জোড়া পা উঠানোঃ চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা উঠানো-নামানো একই সাথে এই ব্যায়াম পেটের ও পায়ের মাংশপেশীকে কর্মক্ষম করে। কিন্তু এটা সায়াটিকার সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে দেয়।

৫। রিভল্ভড ট্রায়াঙ্গেল পোজঃ  এই ব্যায়াম আপনার মেরুদন্ড, কটিদেশ এবং হ্যামস্ট্রিং কে টান তান করে যেটা সায়াটিকার লক্ষণকে বাড়িয়ে দেয়। 

৬। বারপিজ ব্যায়ামঃ এই উচ্চশক্তির ব্যায়াম পিঠ ও কোমরের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। বার বার সামনে ঝোঁকা ও লাফানো সায়াটিয়াকার লক্ষণসমূহ বাড়িয়ে দেয়।

৭। Bent-over row বেন্ট ওভার রোঃ ভার উত্তোলোন ব্যায়াম কোমরের ক্ষতি করে। বিশেষ করে যদি আপনি এটা মেরুদন্ড ভাঁজ করে করেন। এক্ষেত্রে ডিস্ক প্রলাপ্স ও হয়ে থাকে। 

৮। ভার বা ওজন সহ উবু হয়ে বসাঃ এই ক্ষেত্রে নার্ভ ও ডিস্কে অনেক চাপ পড়ে এবং এটা পায়েও অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। 

৯। সাইকেল চালানোঃ সাইকেলিং এ মেরুদন্ড ও সায়াটিকা নার্ভে চাপ পড়ে বিশেষ করে সিট যদি শক্ত হয়। সামনে ঝুঁকে সাইকেল চালালে নার্ভে চাপ পড়ে যদি সীট ও হ্যান্ডেলের পজিশন ঠিকভাবে না থাকে। 

০। উচ্চ শক্তির খেলাধুলাঃ সকল ধরনের ভারী খেলাধুলা এড়িয়ে চলুন, এক্ষেত্রে তড়িৎ নড়াচড়ায়

শরীরে হঠাৎ অস্বাভাবিক টান পরে ফলে ব্যথা বাড়ে। তাই সায়াটিকা হলে ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস, দৌড়ানো, উচ্চ ক্ষমতার শারিরীক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার সায়াটিকা থাকলে কি কি ব্যায়াম করা উচিত?

অনেক ধরনের ব্যায়াম আছে, যা সায়াটিকার চিকিৎসায় ব্যবহ্নত হয়। ব্যায়াম সফট টিস্যুকে মেরামত করে, নার্ভস সিস্টেমকে সুস্থ্য রাখে এবং ব্যথা কমায়। 

প্রতিদিনই কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা দরকার। হাঁটা ও সাঁতার কাটা সায়াটিকার জন্য খুব কার্যকরী। হাঁটার সময় সমতল জায়গা ব্যবহার করতে হবে। উঁচু-নিচু, খাড়া-ঢালু স্থান পরিহার করতে হবে। 

পা ও কোমরের মাংসপেশির শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। আপনার দেহভঙ্গি, বসা ও হাঁটার ধরন সঠিকভাবে করতে হবে। পেশী প্রসারণ ব্যায়াম করতে হবে এবং ব্যথা তৈরি হলে বন্ধ করতে হবে। 

যেসব ব্যায়াম ব্যথা তৈরি করে সেগুলো পরিহার করতে হবে। খুবই খুবই আস্তে আস্তে হালকাভাবে ব্যায়াম করতে হবে। তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে, স্ট্রেস কমাতে হবে, প্ররযাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

এরপর একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তিনি আপনাকে আপনার অবস্থাভেদে কার্যকরী ব্যায়াম, শক্তিবৃদ্ধি শরীরের অসমতা দূরীকরণে নির্দেশনা দিবেন।

তথ্যসূত্রঃ

Follow me
Nov 06, 2022

ট্রিগার ফিঙ্গার

ট্রিগার ফিঙ্গার: ঘুম থেকে উঠে মুঠো করা আঙুলগুলোকে খুলতে গিয়ে দেখলেন, আঙ্গুল…
Jul 05, 2022

ডেঙ্গু হলে করণীয় কি?

ডায়াগনস্টিক টেস্টিং বেশিরভাগ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং অনেক বাণিজ্যিক পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ডায়াগনস্টিক…
Jan 26, 2023

কারা মেনিনজাইটিসের ঝুঁকিতে আছেন, বয়স ভেদে মেনিনজাইটিস এর লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং ফিজিওথেরাপি ব্যবস্থাপনা

কারা মেনিনজাইটিস হবার ঝুঁকিতে আছেন? মেনিনজাইটিসের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. টিকা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

পরামর্শ নিতে 01975451525