ডিস্ক প্রল্যাপ্স কি নিজে নিজেই সেরে যায়? পি এল আইডি বা ডিস্ক হার্নিয়েশন হচ্ছে মেরুদন্ডের এমন একটি রোগ, যেক্ষেত্রে মেরুদন্ডের ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের এনিউলাস ফাইব্রোসাসটি ফেটে গিয়ে বা ক্ষত হয়ে ভিতরের কোমল নিউক্লিয়াস পালপোসাসটি বের হয়ে আসে এবং পার্শ্ববর্তী নার্ভ রুটে চাপ দেয়। যার ফলে হাত বা পায়ে ব্যথা, অবশ হয়ে যাওয়া বা দুর্বলতা দেখা দেয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোমড় বা ঘাড়ের দিকে হয়ে থাকে।
কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কি ডিস্ক হার্নিয়েশন সেরে উঠতে পারে?
হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ডিস্ক হার্নিয়েশন কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে থাকে। এটিকে প্রায়শই “স্পন্টেনিয়াস হিলিং” হিসাবে ধরে নেয়া হয়। এই প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। গবেষণায় দেখা যায় যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হার্নিয়েটেড ডিস্ক কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়। “সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ড জার্নালে” প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে কোমড়ের ডিস্ক হার্নিয়েশন বিশেষ ক্ষেত্রে শতকরা ১৭% থেকে ৯৬% শতাংশ পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভাল হয়। যাইহোক, হার্নিয়েশনের মাত্রা, অবস্থান এবং রুগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে ক্ষতিগ্রস্ত ডিস্ক এর সেড়ে উঠা নির্ভর করে।
প্রদাহ কমে যাওয়া
প্রাথমিকভাবে, ডিস্ক হার্নিয়েশনের ফলে নার্ভের চারপাশে উল্লেখযোগ্য প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। সময়ের সাথে সাথে, এই প্রদাহ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায় এবং লক্ষণগুলিও হ্রাস পায়।
শরীরের স্বতস্ফূর্ত হিলিং প্রক্রিয়া
শরীরের নিজস্ব নিরাময় ক্ষমতার মাধ্যমে ডিস্কের বের হয়ে আসা জেল পুনরায় শোষণ করে ফেলে। যার ফলে হার্নিয়েশন এর মাত্রা কমে যায় এবং পার্শ্ববর্তী নার্ভের উপর চাপ কমায়।
ব্যথা অভিযোজন
শরীর সময়ের সাথে সাথে ব্যথার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, যা ব্যথার তীব্রতা কমিয়ে দেয়। এর অর্থ এই নয় যে ডিস্ক হার্নিয়েশন সেরে গিয়েছে, বরং শরীর তার পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
চলাফেরার ধরণ পরিবর্তন
রুগীরা অজান্তেই ব্যথার যন্ত্রণায় তাদের চলাচলের ধরণ বিকৃত করে থাকে যা তার ব্যথার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। যেমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু কিছু কাজে ব্যথা বেড়ে যায় তখন রুগীরা চেষ্টা করে সেগুলো এড়িয়ে চলতে বা অন্যভাবে করতে। উদাহরণস্বরূপ বেশিরভাগ ডিস্ক প্রোল্যাপ্স এর রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোমড় একপাশে বেকে যায় যার একমাত্র কারন হচ্ছে রোগী তীব্র ব্যথায় একপাশে ভড় দিয়ে হেটেছে। অর্থাৎ রোগী তার শরীরে এক পাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে।
সুতরাং, ডিস্কের সেড়ে ওঠা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন হার্নিয়েশনের মাত্রা এবং অবস্থান, রুগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ধরণ এবং বয়স। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যদিও ডিস্ক প্রোল্যাপ্স এর লক্ষণগুলি সময়ের সাথে সাথে কমে যেতে পারে, তবে এর অর্থ এই নয় যে ডিস্কটি সম্পূর্ণরূপে সেড়ে গিয়েছে।য়ের
হার্নিয়েটেড ডিস্কের ফলে যেসকল সমস্যা ঘটে থাকে

হার্নিয়েটেড ডিস্কের মেডিক্যাল ইফেক্ট নির্ভর করে মেরুদন্ডের যে অংশে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স ঘটে এবং এটি নিকটবর্তী নার্ভ রুটে চাপ দিচ্ছে কিনা তার উপর। “জার্নাল অফ পেইন রিসার্চ”-এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে কোমড়ের ডিস্ক হার্নিয়েশনের ফলে ঘন ঘন কোমড় ব্যথা এবং সায়াটিকা হয়ে থাকে।
- মেরুদন্ডের যেসকল অংশে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘাড় এবং কোমড়। তুলনত্মূলভাবে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স পিঠের দিকে কম হয়ে থাকে।
- যখন কোমড়ে হার্নিয়েশন ঘটে এবং সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ দেয়, তখন এটিকে সায়াটিকা বলা হয়। সায়াটিকা হলে ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে চলে যায় এবং পায়ে ঝিন-ঝিন, ভার-ভার অবশ-অবশ হয়ে আসে।
- যদি ডিস্ক হার্নিয়েশন ঘাড়ের মেরুদন্ডে হয় তাহলে ঘাড়ে ব্যথা হবে এবং ঘাড় থেকে ব্যথাটি হাতের দিকে চলে যায়, হাতে ঝিন-ঝিন, ভাড়-ভাড় এবং অবশ হয়ে আসে এবং হাত দুর্বল হয়ে যায়।
- ব্যথার পরিমাণ সামান্য যন্ত্রণা থেকে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে এবং একসময় শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়। এটা নির্ভর করে ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের মাত্রা এবং যে সকল নার্ভ রুটে চাপ লেগে আছে সেটার উপরল।
- কিছু ক্ষেত্রে ডিস্কের জেলটি বের হয়ে সরাসরি স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ দেয় যার ফলে কউডা ইকুইনা সিন্ড্রোম দেখা দেয় এবং এতে করে রোগীর প্রশ্রাব পায়খানা ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে এবং পা দুর্বল হয়ে যায়।
- ব্যথা এবং নার্ভের সমস্যা ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডিস্ক হার্নিয়েশন একজন মানুষের জীবনযাত্রার ধারা কে ব্যাহত করে। রুগী ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না এবং তার দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হয়। অনেকসময় দেখা যায় রুগী ব্যথার যন্ত্রণায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
ডিস্ক প্রোল্যাপ্স হলে ব্যথা কেন হয়
1. নার্ভ রুটে চাপ লাগলে
- ডিস্কের এই বের হয়ে আসা অংশটি স্পাইনাল কর্ড এবং স্পাইনাল ক্যানেলের ভেতরে থাকা নার্ভে চাপ প্রয়োগ করে যার ফলে ব্যথা, অবশ লাগা, ঝিন-ঝিন, ভাড়-ভাড় এবং পেশী দুর্বলতা দেখা দেয়।
- উদাহরণ স্বরূপ, কোমরের ডিস্ক হার্নিয়েশন হলে যদি সায়াটিক নার্ভে চাপ দেয় এটাকে সায়াটিকা বলা হয়। হলে ব্যথাটি কোমড় থেকে পায়ের দিকে নেমে যায়।
2. নার্ভ রুটের এরিয়াতে প্রদাহজনিত প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
“দ্য স্পাইন জার্নাল” এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে ডিস্ক হার্নিয়েশনের ফলে প্রদাহ জনিত প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায় যা কিনা সংশ্লিষ্ট নার্ভে জ্বালাপোড়া তৈরি করে এবং এতে করে ব্যথা হয়।
• ডিস্কের নিউক্লিয়াস পালপোসাসে প্রদাহজনক প্রোটিন থাকে।
• যখন একটি ডিস্ক হার্নিয়েট হয়, তখন এই প্রোটিনগুলি বেরিয়ে যায় এবং নার্ভ রুটের সংস্পর্শে এসে প্রদাহ এবং জ্বালা সৃষ্টি করে, যার ফলে তীব্র ব্যথা হয়।
• এই প্রোটিনের প্রতি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া ডিসকোজেনিক ব্যথা তৈরি করে।
ডিস্ক হার্নিয়েশনের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ

১। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা
সাধারণত দেখা যায় যে কোন রোগের ক্ষেত্রে আমরা ওষুধের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে সাধারণত ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs), কর্টিকোস্টেরয়েড এবং পেশী নমনীয় করার ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ নারকোটিক জাতীয় ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২। ফিজিওথেরাপী
ডিস্ক হার্নিয়েশন এর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমে ডিস্ক হার্নিয়েশন বা পি এল আইডি রোগীর ফিজিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা প্ল্যান তৈরি করে থাকেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে ম্যানুপুলেশন, মবিলাইজেশন, স্ট্রেচিং, মাংসপেশীর শক্তি বাড়ানো, পশ্চার কারেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের টেকনিক প্রয়োগ করা হয়। । তাপ এবং কোল্ড থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপী, ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ও প্রয়োগ করা হয়।
৩। লাইফস্টাইল পরিবর্তন
অতিরিক্ত ওজন মেরুদন্ডের ডিস্কের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং ডিস্ক হার্নিয়েশন এর প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং ডিস্ক হার্নিয়েশন প্রতিরোধ করতে আমাদের অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।দীর্ঘ সময় অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গিতে বসে থাকা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা এবং এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকা যেগুলো কিনা ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪। অস্ত্রোপচার বা অপারেশন
পি এল আইডি রোগের ক্ষেত্রে গতানুগতিক চিকিৎসা পদ্ধতি যখন ব্যথা কমাতে ব্যর্থ হয় ঠিক তখনই অপারেশন করা জরুরি হয়ে ওঠে। তবে যদি চারটি লক্ষণ থাকলে বুঝা যাবে যে অপারেশন জরুরি। এগুলো হচ্ছে রোগী প্রস্রাব ধরে রাখতে পারবে না, পায়খানা ধরে রাখতে পারবে না, পায়ের পাতায় ভড় করে হাটতে পারবে না এবং পায়ের গোড়ালি ভর করে হাটতে পারবে না। অপারেশন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে যেগুলো সাধারণত করা হয়ে থাকে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাইক্রোডিসসেক্টমি, ল্যামিনেক্টমি বা ল্যামিনোটমি, স্পাইনাল ফিউশন, কৃত্রিম ডিস্ক প্রতিস্থাপন, এন্ডোস্কপিক ডিসসেক্টমি, পারকিউটেনিয়াস ডিস্ক ডিকম্প্রেশন।
ডিস্ক হার্নিয়েশন হলে চিকিৎসা না নিলে যা হতে পারে
ডিস্ক হার্নিয়েশন হলে আমরা যদি কোন চিকিৎসার সরনাপন্ন না হই তাহলে সাধারণত দুইটা ব্যপার ঘটতে পারে। রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যেতে পারে, যেমন ২৪ ঘন্টাই ব্যথা থাকবে এবং নার্ভের ক্ষতি হবে। যা কিনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্যরালাইসিস এর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিপরীতভাবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বলে সময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলির উন্নতি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শরীর বের হয়ে আসা এর বাড়তি অংশগুলোকে পুনরায় শোষণ করে, যার ফলে হার্নিয়েশনের মাত্রা এবং নার্ভের উপর চাপ কমে যায়।
ডিস্ক প্রল্যাপ্স হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেভাবে সাড়া দেয়
প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান নিঃসরণ
ডিস্কের অভ্যন্তরীণ অংশ, নিউক্লিয়াস পালপোসাসে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যখন নিউক্লিয়াস পালপোসাস বের হয়ে নার্ভ রুটে চাপ দেয়, তখন এই উপাদানগুলো নার্ভরুটে প্রদাহ এবং জ্বালাপোড়া করতে পারে। এই প্রদাহের ফলে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, অসাড়তা এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ইমিউন কোষ এর প্রতিক্রিয়া
ইমিউন সিস্টেম হার্নিয়েটেড ডিস্ক এর বের হয়ে আসা উপাদানের সাথে প্রতিক্রিয়া করে। ডিস্ক হার্নিয়েশন এরিয়াতে শ্বেত রক্ত কণিকার মাত্রা বেড়ে যায় যারা কিনা সেখানে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম এবং কেমিকেল নিঃসরণ ঘটায় এগুলো ডিস্কের বের হয়ে আসা অংশকে ভাংতে সাহায্য করে এবং সেগুলোর অপসারণ ঘটায়। এই প্রক্রিয়াটি প্রদাহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং হার্নিয়েটেড ডিস্কের লক্ষণগুলিতে সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
ফ্যাগোসাইটোসিস
এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কিছু কোষ, যা ফ্যাগোসাইট নামে পরিচিত, এরা বের হয়ে আসা ডিস্ক এর বাড়তি অংশ এবং ফরেন বডিকে খেয়ে ফেলে। এতে করে হার্নিয়েটেড ডিস্ক এর আকাড় সময়ের সাথে সাথে আকারে হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে সমস্যাগুলোও কমে যায়।
হিলিং এবং ডিস্ক মেরামত
প্রদাহজনক ধাপের পরে, শরীর একটি হিলিং প্রক্রিয়া শুরু করে। এর ফলে ডিস্কের আক্রান্ত স্থানে স্কার টিস্যু তৈরি হয়, যা হার্নিয়েটেড ডিস্ক উপাদান বের হয়ে আসা প্রতিরোধ করে। তবে স্কার টিস্যু যদি অতিরিক্ত তৈরী হয় তাহলেও ডিস্ক হার্নিয়েশন এর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
ডিস্ক হার্নিয়েশন রোধে পানির ভূমিকা
গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ইন্টারভারটেব্রাল ডিস্কে পানির পরিমাণ শতকরা ৬৬% থেকে ৮৬%। যার দরুণ ডিস্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় পানির ভূমিকা অপরিহার্য। সময়ের সাথে সাথে হার্নিয়েটেড ডিস্ককে সাড়িয়ে তোলার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, এই হিলিং প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো:
হার্নিয়েটেড ডিস্ক উপাদানের অবক্ষয়
যখন ডিস্ক হার্নিয়েশন হয়, তখন ইমিউন সিস্টেম ডিস্ক এর বের হয়ে আসা অংশকে ফরেন বডি হিসেবে চিহ্নিত করে। তখন আক্রান্ত স্থানে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, হার্নিয়েটেড ডিস্ক উপাদানকে নষ্ট এবং অপসারণের জন্য সেখানে রোগ প্রতিরোধক কোষের আগমণ ঘটে। এই নষ্ট বা ক্ষয়ে যাওয়া ডিস্ক উপাদান থেকে পানি নিঃসরণ হয়।
জল পুনঃশোষণ
আমাদের শরীর অবক্ষয়িত হার্নিয়েটেড ডিস্ক উপাদান থেকে নির্গত জল শোষণ করে নেয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে হার্নিয়েশনের আকার ছোট হতে থাকে এবং নার্ভের উপর চাপও কমতে থাকে।
অভিস্রবণ
সাধারণত ডিস্কগুলি একটি অসমোটিক গ্রেডিয়েন্ট বজায় রাখে যা তাদের পানি শোষণ করতে সাহায্য করে। ডিস্কের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকলে তা ডিস্কের সঠিক উচ্চতা বজায় রাখে এবং ডিস্কের বিকৃতি রোধ করে, যা পরোক্ষভাবে ডিস্ক হার্নিয়েশন হবার ঝুকি কমিয়ে দেয়।
ডিস্কের সেড়ে ওঠা এবং ডিস্ক হার্নিয়েশনের লক্ষণ কমে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য
- ডিস্ক হিলিং বলতে ডিস্ক এর স্বাভাবিক আকৃতি ফিরে পাওয়াকে বোঝায়। এটি খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, বিশেষ করে ডিস্ক হার্নিয়েশনের ক্ষেত্রে।
- অপরদিকে উপসর্গের উপশম বলতে ব্যথা, অবশ লাগা এবং দুর্বলতার মত লক্ষণগুলো কমে যাওয়া বোঝায়।
- অনেক ক্ষেত্রে, শরীর সময়ের সাথে সাথে ডিস্ক হার্নিয়েশনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, যার ফলে লক্ষণগুলি কমে যায়। এর মানে এই নয় যে ডিস্ক তার স্বাভাবিক গঠনে ফিরে এসেছে; এতে করে পুনরায় লক্ষণগুলো বেড়ে যাতে পারে।
- এমনকি উপসর্গগুলি কমে গেলে বা চলে গেলেও, এক্স-রে বা এম আর আইতে ডিস্ক হার্নিয়েশন এর উপস্থিতি থাকতে পারে।
- অতএব, এটা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে উপসর্গের অনুপস্থিতির অর্থ এই নয় যে ডিস্কটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। এর মানে হচ্ছে যে শরীর হার্নিয়েশনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
চিকিৎসা না করলে যে সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে
- ক্রমাগত নার্ভের জ্বালাপোড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা হওয়া।
- একটানা নার্ভে চাপ লেগে থাকার কারণে হাত বা পায়ে অসাড়তা বা দুর্বলতা বেড়ে যাওয়া।
- গুরুতর ক্ষেত্রে, চাপ লেগে থাকা নার্ভটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এতে করে শরীরের সংশ্লীষ্ট অংশটি অবশ হয়ে যায়।
- কউডা ইকুইনা সিন্ড্রোম – ডিস্ক হার্নিয়েশন হয়ে যদি মেরুদন্ডের স্পাইনাল কর্ডের নিচের দিকে চাপ লেগে থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী প্রস্রাব-পায়খানা ধরে রাখতে পারে না এবং পায়ের গোরালী ও পায়ের পাতায় ভড় দিয়ে হাটতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে ইমারজেন্সি অপারেশনের সরণাপন্ন হতে হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা অনুসারে আমরা দেখলাম যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স কোন চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যায়। তবে এর অর্থ এই নয় যে হার্নিয়েটেড ডিস্ক সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়েছে, বরং আমাদের শরীর হার্নিয়েশনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বা হার্নিয়েশনের মাত্রা কমে গিয়েছে, যার ফলে ব্যথা কমে যায়। এর মানে এই নয় যে আমরা না সমস্যা নিয়ে বসে থাকব। ডিস্ক হার্নিয়েশন এর ঝুকি কমাতে এবং পুনরায় ডিস্ক হার্নিয়েশন হওয়া রোধ করতে চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই।