মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ? এটি অনেকের মনে জাগা একটি সাধারণ প্রশ্ন। মাথা ব্যথা একটি বৈশ্বিক সমস্যা, GBD (Global Burden of Disease) এর ২০১৬ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়। আরও দেখা গেছে যে, মাথা ব্যথা ৪.৫ কোটি মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় (YLD – Years Lived with Disability)এবং এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক অক্ষমতাজনিত রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষ টেনশন হেডেক বা দুশ্চিন্তা জনিত মাথা ব্যথায় সমস্যায় ভোগেন। (Stovner, L.J.,et.al.,2019)
মাথা ব্যথা কেন হয়? সাধারণ কারণসমূহ

অনেকেই জানেন না, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? এটি শুধু সাধারণ ক্লান্তির কারণে নাও হতে পারে।
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা (Tension Headache):টেনশন হেডেক বা মানসিক চাপ জনিত মাথা ব্যথা হলো সবচেয়ে সাধারণ প্রকৃতির মাথা ব্যথা, যা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ঘাড় ও মাথার পেশীর সংকোচনের ফলে হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মাথার দুই পাশে অনুভূত হয় এবং এক ধরনের চাপ বা টান টান অনুভূতি সৃষ্টি করে। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে দুশ্চিন্তা করা, কাজের চাপ, ঘাড় ও কাঁধের পেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারনেও মাথা ব্যথা হতে পারে।
চোখের সমস্যা (Vision Issues & Eye Strain):দীর্ঘক্ষণ বই পড়া, কম্পিউটার ব্যবহার করা বা চোখের উপর অবাঞ্চিত আলো, ব্লু-লাইট পরার ফলে চোখের শুষ্কতা এবংদৃষ্টিশক্তর পরিবর্তন হলে চোখের পেশীগুলোর অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, যার ফলে মাথা ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত কপালের সামনে বা চোখের চারপাশে অনুভূব হয়।
পানিশূন্যতা (Dehydration Headache):পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যা মাথার ব্যথা সৃষ্টি করে। এছাড়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা প্রচণ্ড গরমেও পানিশূন্যতার কারণে এই ধরনের মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
অনিদ্রা ও ঘুমের অভাব:ঘুমের ঘাটতি বা অনিয়মিত ঘুমের ফলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না, যা মাথা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। ঘুমের অভাবে নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে, যা মাইগ্রেন এবং টেনশন জনিত মাথা ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা লো প্রেসার:উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) এবং নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension) উভয় অবস্থাতেই মাথা ব্যথা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা সাধারণত মাথার পেছনের দিকে ব্যথা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, নিম্ন রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস ও খাবারের প্রতিক্রিয়া:কিছু খাবার যেমন চকলেট, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং এমএসজি যুক্ত খাবার মস্তিষ্কের রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে এবং মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন বেশি খেলে বা হঠাৎ কমিয়ে দিলে মাথা ব্যথা হতে পারে। এছাড়া, খাবারে অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকলেও মাথা ব্যথার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সাইনাস ইনফেকশন ও ঠান্ডা–জ্বর:বিশেষ করে বসন্ত ও শীতকালে সাইনাস ইনফেকশন ও ঠান্ডা-জ্বর বেশি দেখা যায়। সাধারণত এই ব্যথার সাথে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখের চারপাশে ব্যথা এবং গন্ধের অনুভূতি কমে যেতে পারে।
অতিরিক্ত মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার:দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করলে স্ক্রিনের নীল আলো (Blue Light) চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং ঘাড় ও মাথায় ব্যথা হতে পারে। এই অবস্থাকে Digital Eye Strain বলা হয়, যা বিশেষ করে দিনে ৩-৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ঘাড়ের সমস্যা ও স্পন্ডিলোসিস:ঘাড়ের হাড় ও মাংসপেশিজনিত সমস্যা, যেমন সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, মাথা ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে, ভারী কিছু বহন করলে বা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের ফলে ঘাড়ের পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাথার পিছনে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে?
চিকিৎসকরা বলেন, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? তা বুঝতে হলে এর ধরন ও তীব্রতা বিশ্লেষণ করা জরুরি।
মাইগ্রেন (Migraine) ও মাথা ব্যথা: মাইগ্রেন একটি জটিল নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, যা সাধারণত একপাশে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব, আলোর সংবেদনশীলতা এবং শব্দ অসহনীয়তার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। সাধারণত এটি মাথার একপাশে ব্যথা, চোখে সমস্যা হওয়া, আলোর সংবেদনশীলতা ও বমি বমি ভাবের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। হরমোনাল পরিবর্তন, স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের সমস্যা এবং পরিবেশগত কারণ মাইগ্রেনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। American Migraine Foundation-এর গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১০% পুরুষ এবং ১৮% নারী মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন, যা কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায় (Alkahtani, R.F.,et.al.,2022)। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? এটি আলোর সংবেদনশীলতা ও বমির সাথে প্রকাশ পেতে পারে।
সাইনাস সংক্রমণ (Sinusitis) ও মাথা ব্যথা: সাইনাস সংক্রমণ হলে নাকের অভ্যন্তরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা মাথার সামনের অংশে চাপ দিয়ে ধরে থাকার মতো ব্যথা তৈরি করে। সাধারণত কপালে ও চোখের চারপাশে ব্যথা, নাক বন্ধ থাকা, গন্ধের অনুভূতি হ্রাস, জ্বর এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখা যায়। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অ্যালার্জি এবং ঠান্ডা আবহাওয়া এটির প্রধান কারণ।
উচ্চ রক্তচাপ ও মাথা ব্যথা: উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা সাধারণত মাথার পেছনের দিকে ব্যথা তৈরি করতে পারে। এ ধরনের মাথা ব্যথার সাথে চোখে ঝাপসা দেখা, বমি ভাব এবং অস্থিরতার মতো উপসর্গ দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, ওবিসিটি বা স্থূলতা এবং মানসিক চাপ এর প্রধান কারণ।
স্পন্ডাইলোসিস ও ঘাড় থেকে মাথা ব্যথা: সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস হলো ঘাড়ের হাড় ও ডিস্কের অবক্ষয়জনিত সমস্যা, যা মাথা ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সাধারণত এই সমস্যার ফলে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথার পেছনে ব্যথা এবং কাঁধ ও বাহুতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বয়সজনিত ডিস্ক ক্ষয়, দীর্ঘক্ষণ একইভাবে বসে কাজ করা এবং মোবাইল বা কম্পিউটার বেশি ব্যবহারের ফলে এই সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মস্তিষ্কের টিউমার ও মাথা ব্যথা: মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হলে তা রক্ত সঞ্চালন ও নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। সাধারণত এই ব্যথা ধীরে ধীরে তীব্র হয় এবং সকালে বেশি অনুভূত হয়, পাশাপাশি বমি হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং মেমোরি লসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বংশগত কারণ, জেনেটিক মিউটেশন এবং অতিরিক্ত রেডিয়েশন এক্সপোজার মস্তিষ্কের টিউমারের অন্যতম কারণ।
স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ ও মাথা ব্যথা: স্ট্রোকের সময় মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে অক্সিজেনের অভাবে তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে। সাধারণত এই ব্যথার সাথে মুখ, হাত বা পায়ের দুর্বলতা, কথা বলতে অসুবিধা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং ভারসাম্য হারানোর মতো উপসর্গ দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ধূমপান এবং ডায়াবেটিস স্ট্রোকের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মাথা ব্যথা হলে কি করা উচিত? করণীয় ও প্রতিকার

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? তা নির্ভর করে রোগীর জীবনযাত্রা ও শারীরিক অবস্থার ওপর। মাথা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রতিকার ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ মাথা ব্যথা হলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে তা উপশম করা সম্ভব, তবে যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কিছু কার্যকরী উপায় এবং কখন ডাক্তার দেখানো উচিত তা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
মাথা ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার

নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক ও সহজ উপায়গুলো মাথা ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে:
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ডিহাইড্রেশন মাথা ব্যথার অন্যতম সাধারণ কারণ, যা শরীরে পানির ঘাটতির ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। The Journal of Nutrition-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাণ্য ডিহাইড্রেশনও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে এটি দ্রুত উপশম হয় (Armstrong et al., 2018)। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় বা অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের পর।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুমের অভাব মাইগ্রেন ও টেনশন হেডেকের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি মস্তিষ্কের বিশ্রাম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং স্নায়ুগুলোর অস্বাভাবিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলা এবং ঘুমানোর পরিবেশ আরামদায়ক রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ক্যাফেইন গ্রহণ করুন (মডারেট পরিমাণে): ক্যাফেইন রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে এবং মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে। । তাই দিনে ১-২ কাপ কফি বা চা পান করা যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
ম্যাসাজ ও গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিন: ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মাংসপেশির টান কমিয়ে মাথা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। Journal of Headache and Pain-এর গবেষণা অনুসারে, ঘাড় ও মাথার পেছনের অংশে হালকা ম্যাসাজ করলে টেনশন হেডেকের তীব্রতা কমে যেতে পারে (Wang, Y.,et.al.,2024)। তাই মাথা ব্যথা কমানোর জন্য ঘাড়, কাঁধ ও মাথায় হালকা ম্যাসাজ করা এবং ব্যথার ধরন অনুযায়ী গরম বা ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে।
স্ক্রিনের ব্যবহার সীমিত করুন: দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখের ক্লান্তি সৃষ্টি হয়, যা মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরিবর্তে নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মেডিটেশন ও শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: মানসিক চাপ কমালে টেনশন হেডেক এবং মাইগ্রেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা মাথা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?

কিছু গুরুতর শারীরিক সমস্যা বোঝার জন্য, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ। যদি মাথা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কিছু গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গুরুতর লক্ষণ:
- হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ব্যথা: এটি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
- দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া: এটি মাইগ্রেন, গ্লুকোমা বা ব্রেন টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
- সাথে জ্বর ও ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া: এটি মেনিনজাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।
- বমি বমি ভাব বা দুর্বলতা: এটি উচ্চ রক্তচাপ বা মস্তিষ্কের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
- ট্রমা বা আঘাতজনিত ব্যথা: মাথায় আঘাত পাওয়ার পর যদি ব্যথা না কমে বা বাড়তে থাকে, তবে এটি মারাত্মক হতে পারে।
মাথা ব্যথা রোধে প্রতিদিনের অভ্যাস

মাথা ব্যথা প্রতিদিনের অনিয়মিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের ঘাটতি এবং মানসিক চাপের ফলে হতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে মাথা ব্যথা প্রতিরোধের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে কিছু কার্যকরী দৈনন্দিন অভ্যাস বর্ণনা করা হলো।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: ডিহাইড্রেশন হলে, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? এটি পানিশূন্যতার ইঙ্গিত হতে পারে। পানিশূন্যতা (Dehydration) মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ, যা রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় বা শারীরিক পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত ঘুমানো: ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় না, যা মাথা ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহার কমানো এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা: অনিয়মিত খাবার গ্রহণ বা কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন ক্যাফেইন, চকলেট, অ্যালকোহল, এমএসজি যুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে, কারণ এসব উপাদান মস্তিষ্কের রক্তনালীর কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। তাই স্বাস্থ্যকর শাকসবজি, প্রোটিন ও পর্যাপ্ত পানি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা এবং প্রসেসড ফুড কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ।
স্ক্রিনের ব্যবহার সীমিত করা: দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা Digital Eye Strain সৃষ্টি করে এবং মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই দৈনিক স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনা, নীল আলো (Blue Light) ফিল্টার ব্যবহার করা এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা ও মেডিটেশন করা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ টেনশন হেডেক ও মাইগ্রেনের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য কাজের সময় নিয়মিত বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা: দৈনিক এক্সারসাইজ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা মাথা ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের হালকা-পাতলা এক্সারসাইজ করলে, মাইগ্রেন ও টেনশন হেডেকের মাত্রা কম থাকে । তাই প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ করা মাথা ব্যথা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও কাজ করা: বসার ভুল ভঙ্গির কারণে ঘাড় ও কাঁধের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই মাথা ব্যথা প্রতিরোধে সঠিকভাবে বসা, ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখা এবং দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে না থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত চশমার পাওয়ার পরীক্ষা করা: চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাথা ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে। তাই প্রতি ছয় মাস পরপর চোখের পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী লেন্স পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ।
যেকোনো অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনে, মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ? তা জানতে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
মাথা ব্যথা কি মাইগ্রেনের লক্ষণ?
হ্যাঁ, এটি মাইগ্রেনের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হতে পারে।
মাথা ব্যথা হলে কি MRI করা জরুরি?
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা স্বাভাবিক ওষুধে না কমে, তাহলে ডাক্তার MRI করতে বলতে পারেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠলে মাথা ব্যথা কেন হয়?
এটি অনিদ্রা, পানিশূন্যতা, বা রক্তচাপের সমস্যা থেকে হতে পারে।
কোন খাবার মাথা ব্যথা বাড়াতে পারে?
অতিরিক্ত ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বা গ্লুটেনযুক্ত খাবার মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

