ঘাড় ব্যথা হল এমন এক ধরনের সমস্যা , যা ঘাড়ের পেশি, লিগামেন্ট, জয়েন্ট, ডিস্ক ও নার্ভের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী, এটি শতকরা ৩০-৫০% মানুষের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে প্রভাব ফেলে (Hoy et al., 2010)

যারা ল্যাপটপ/কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে, ভারী কাজ করে, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করে (Text Neck Syndrome), বা অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গিতে ঘুমায় তাদের ঘাড় ব্যথা ৬ সপ্তাহ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহ বা তারো বেশি সময় যাবত স্থায়ী হতে পারে। কখনো ভেবে দেখেছেন কি এই ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ হতে পারে!

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘাড় ব্যথা সাময়িকভাবে হয়ে থাকে এবং নিজে থেকেই সেড়ে যেতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে, যেমন:

  • সার্ভাইক্যাল রেডিকুলোপ্যাথি (Cervical Radiculopathy) – এই ক্ষেত্রে ঘাড়ের মেরুদন্ডের ডিস্ক বা হাড়ের স্পার (osteophyte) নিকটবর্তী নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হাতে ব্যথা, দুর্বলতা, বা ঝিন-ঝিন অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  • সার্ভাইক্যাল মায়েলোপ্যাথি (Cervical Myelopathy) – যেখানে সরাসরি ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ডে চাপ লাগে, ফলে হাত ও পায়ে দূর্বলতা, ভারসম্যহীনতা, এবং মোটর নিয়ন্ত্রণের সমস্যা দেখা দেয়।
  • আঘাতজনিত ইনজুরি (Whiplash Injury) – গাড়ি দূর্ঘটনায় বা আকস্মিক ধাক্কায় ঘাড়ের মাংসপেশি, লিগামেন্ট বা ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা ও পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
  • ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ (Degenerative Disc Disease, DDD) – যেখানে মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো বয়সজনিত কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফলে ঘাড় শক্ত হয়ে যায় এবং নড়াচড়া করলে ব্যথা অনুভূত হয়।

বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্টে “Structural Diagnosis & Management (SDM)” পদ্ধতি ঘাড় ব্যথার নির্ণয় ও চিকিৎসায় কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Table of Contents hide

Structural Diagnosis & Management (SDM) কী?

SDM একটি সমন্বিত বিশ্লেষণমূলক এসেসমেন্ট পদ্ধতি, যা ঘাড় ব্যথার মূল কাঠামোগত (structural) কারণ চিহ্নিত করে এবং রোগীর শারীরিক, নিউরোমাসকুলার, এবং বায়োমেকানিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট থেরাপিউটিক চিকিৎসা নির্ধারণ করে।

Structural Diagnosis & Management

SDM-এ মূল তিনটি ধাপ রয়েছে:

1. গঠনগত বিশ্লেষণ (Structural Analysis):

  • পেশি, লিগামেন্ট, ডিস্ক, নার্ভ ও জয়েন্টের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়।
  • কোন কাঠামো ব্যথার মূল উৎস তা শনাক্ত করা হয় ।

2. ন্যাচারাল মুভমেন্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ (Natural Movement Pattern Analysis):

  • বাধাগ্রস্থ জয়েন্টের গতিবিধি (Restricted Range of Motion) ও অস্বাভাবিক চলাচলের ধরন পরিমাপ করা হয়।
  • পেশির ভারসাম্যহীনতা ও জয়েন্টের অ্যালাইনমেন্ট সমস্যা বিশ্লেষণ করা হয়।

3. ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (Management Plan):

  • ম্যানুয়াল থেরাপি, মবিলাইজেশন, নিউরোডাইনামিক টেকনিক, মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ, এবং অর্গানোমিক মডিফিকেশন করা হয়।

ঘাড় ব্যথার সাধারণ লক্ষণ ও ধরন

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ, তা নির্ভর করে ব্যথার ধরন, ব্যথা কতদিন ধরে আছে, এবং এর সাথে আর কোনো উপসর্গ রয়েছে কিনা তার উপর।

ঘাড় ব্যথার সাধারণ লক্ষণ ও ধরন

ব্যথার প্রকৃতি

1. শুধুমাত্র ঘাড়ে ব্যথা (Local Pain): শুধুমাত্র ঘাড়ের নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা হয়, যা সাধারণত পেশিতে টান লাগা, ফ্যাসেট জয়েন্ট ডিজফাংশন বা সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে হয়ে থাকে। কারণ:

  • Cervical Myofascial Pain Syndrome (CMPS) – পেশির অতিরিক্ত চাপ বা দুর্বলতার ফলে ট্রিগার পয়েন্ট সৃষ্টি হয়।
  • Facet Joint Dysfunction – ঘাড়ের ছোট জয়েন্টগুলোর নড়াচড়া কমে গেলে ব্যথা হতে পারে।
  • Cervical Spondylosis – ঘাড়ের ডিস্কগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হলে হাড়ের গঠনগত পরিবর্তন ব্যথার কারণ হতে পারে।

2. যে ব্যথা কাঁধ, বাহু বা আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে (Referred Pain): ব্যথার মূল উৎস ঘাড় থেকে হলেও, এটি কাঁধ, বাহু, বা আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাধারণত সার্ভাইক্যাল রেডিকুলোপ্যাথি বা নার্ভে চাপ লাগলে হয়। কারণ:

  • Cervical Radiculopathy (Nerve Root Compression) – ঘাড়ের নার্ভ রুট চাপে পড়ে ব্যথা হাতের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে।
  • Herniated Cervical Disc – ঘাড়ের মেরুদন্ডের ডিস্কের জেলী বের হলে নার্ভে চাপে পড়ে ব্যথা ও ঝিনঝিন অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  • Thoracic Outlet Syndrome (TOS) – কাঁধের নার্ভ ও রক্তনালীতে চাপ পড়লে হাত অবশ হয়ে যেতে পারে।

3. জ্বালাপোড়া ব্যথা (Neuropathic Pain): এ ব্যথাটি নার্ভের কারণে হয় এবং এটি বৈদ্যুতিক শক, ঝিনঝিন অনুভূতি, বা ব্যথা সারা বাহুতে ছড়িয়ে পড়ার মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। কারণ:

  • Cervical Radiculopathy & Myelopathy – ঘাড়ের নার্ভের ক্ষতির ফলে ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে।
  • Diabetic Neuropathy – দীর্ঘদিন যাবৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হয়। যার ফলে হাত ও পায়ে ঝিনঝিন, ভাড়-ভাড়, অবশ ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়।

4. ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া (Stiffness): ব্যথার সাথে সাথে ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা, ঘাড় বাঁকালে ব্যথা বেড়ে যাওয়া, এবং ঘাড়ের মুভমেন্ট কমে যাওয়া। কারণ:

  • Cervical Spondylosis & Osteoarthritis – জয়েন্টের ডিগ্রেডেশনের কারণে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
  • Facet Joint Syndrome – ঘাড়ের ছোট জয়েন্টে ইনফ্লেমেশন হলে মুভমেন্ট কমে যায়।
  • Postural Strain & Muscle Imbalance – দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে বা স্ট্রেসের কারণে পেশির স্টিফনেস দেখা যায়।

অন্যান্য লক্ষণ

1. মাথাব্যথা (Cervicogenic Headache): ঘাড়ের কারণে মাথাব্যথা হওয়া, যা সাধারণত ঘাড়ের পেশি ও ফ্যাসেট জয়েন্ট থেকে রেফার্ড পেইনের কারণে হয়। কারণ:

  • Upper Cervical Dysfunction – C1-C3 জয়েন্টের মিসঅ্যালাইনমেন্ট হলে মাথাব্যথা দেখা দেয়।
  • Trapezius & Sternocleidomastoid Muscle Strain – এই পেশিগুলো শক্ত হয়ে গেলে ও টান পড়লে মাথায় ব্যথা হতে পারে।

2. মাথা ঘোরা (Cervical Vertigo): ঘাড়ের কারণে মাথা ঘোরার সমস্যা, যা সার্ভিকাল স্পাইন ও ভেস্টিবুলার সিস্টেমের মধ্যে সংযোগজনিত কারণে হয় (Minguez-Zuazo et al., 2016)। কারণ:

  • Cervical Proprioceptive Dysfunction – ঘাড়ের জয়েন্ট থেকে মস্তিষ্ক ভুল সংকেত পেলে শারীরিক ভারসাম্য ব্যাহত হয়।
  • Vertebrobasilar Insufficiency (VBI) – ঘাড়ে রক্ত সঞ্চালন কম হলে মাথা ঘোরাতে পারে।

3. হাত-পায়ে অবশভাব বা দুর্বলতা: হাত ও পায়ের কোনো অংশ অবশ হয়ে যাওয়া বা দুর্বলতা অনুভব করা, যা সাধারণত সার্ভিকাল মায়েলোপ্যাথি বা নার্ভ রুট কমপ্রেশনজনিত কারণে হয়ে থাকে। কারণ:

  • Cervical Myelopathy – মেরুদণ্ডের কেন্দ্রীয় অংশ সংকুচিত হলে হাত-পায়ের দুর্বলতা হয়।
  • Cervical Radiculopathy – ঘাড়ের নার্ভ চাপে পড়লে হাতে ঝিনঝিনে অনুভূতি হয়।
  • Peripheral Neuropathy – নার্ভের সমস্যা হলে হাত-পায়ে অবশভাব দেখা দিতে পারে। ঘাড় ব্যথার প্রকৃতি এবং সম্পর্কিত লক্ষণগুলোর মাধ্যমে ঘাড়ের সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। ASPC Manipulation Therapy সেন্টার এ SDM (Structural Diagnosis & Management) কনসেপ্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে এসেসমেন্ট ও রোগ নির্ণয় করা হয়।

ঘাড় ব্যথার কারণসমূহ (কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে)

ঘাড় ব্যথার কারণসমূহ

ঘাড় ব্যথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে, যা পেশি, জয়েন্ট, মেরুদণ্ডের ডিস্ক এবং স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। নিচে ঘাড়ের ব্যথার সম্ভাব্য কারণ এবং এই ব্যথা কমানোর জন্য ASPC Manipulation Therapy-তে ব্যবহৃত Structural Diagnosis & Management (SDM) পদ্ধতি অনুযায়ী বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

A. পেশি ও জয়েন্ট সংক্রান্ত কারণA. পেশি ও জয়েন্ট সংক্রান্ত কারণ

  1. Cervical Myofascial Pain Syndrome (MPS): এটি ঘাড়ের পেশিতে ছোট ছোট শক্ত গাঁঠের মতো জমে থাকা অংশের কারণে ব্যথা হয়, যা সাধারণত পেশিতে অতিরিক্ত টান বা চাপের ফলে তৈরি হয়।
  2. Facet Joint Dysfunction: ঘাড়ের ফেসেট জয়েন্টের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া বা স্টিফনেস, যা বিশেষ করে সকালে বেশি অনুভূত হয়।

B. মেরুদণ্ড ও ডিস্কজনিত কারণ

  1. Cervical Spondylosis & Degenerative Disc Disease (DDD): বয়সজনিত কারণে মেরুদণ্ড ডিস্কের ক্ষয় হয় এবং ওস্টিওফাইট (হাড়ের স্পার) বৃদ্ধি পায়, যা ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে।
  2. Herniated Cervical Disc: ডিস্ক ফেটে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করলে ব্যথা এবং অবশভাব দেখা যায়।

C. স্নায়বিক কারণ

  1. Cervical radiculopathy: ঘাড় থেকে হাত এবং আঙুল পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে, যা নার্ভে চাপের কারণে হয়।
  2. Cervical Myelopathy: মেরুদণ্ডের কেন্দ্রীয় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাত ও পায়ের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

D. ট্রমা বা আঘাতজনিত কারণ

Whiplash Injury: দুর্ঘটনাজনিত কারণে ঘাড়ের পেশি এবং লিগামেন্টে আঘাতের ফলে যে ব্যথা তৈরী হয়।

ঘাড় ব্যথার নির্ণয়: SDM-ভিত্তিক এসেসমেন্ট (Structural Diagnosis & Management Approach)

ঘাড়ের ব্যথা নির্ণয়ের জন্য Structural Diagnosis & Management (SDM) পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে একটি নির্দিষ্ট এসেসমেন্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যথার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে সহজে কার্যকর চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। এখন এই পদ্ধতির প্রতিটি ধাপ সহজভাবে আলোচনা করা হলঃ

A. ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট

  1. Postural Analysis: ঘাড় ও মেরুদণ্ডের অ্যালাইনমেন্ট পর্যবেক্ষণ করা হয় যেমনঃ ফরোয়ার্ড হেড পজিশন বা স্কোলিওসিস শনাক্ত করা হয়। অস্বাভাব অ্যালাইনমেন্টের কারণে সৃষ্ট পেশী ও জয়েন্টের অতিরিক্ত চাপ এবং সম্ভাব্য ব্যথার উৎস নির্ধারণ করা।
  2. Palpation & Trigger Point Assessment: হাতের স্পর্শ দিয়ে ঘাড়ের পেশি ও টিসুর অবস্থা বোঝা হয়। কোথাও ব্যথার গাঁঠ বা স্পর্শে বেশি ব্যথা লাগে এমন জায়গা আছে কি না, তা খুঁজে বের করা হয়। যেখানে ব্যথা হচ্ছে তার মূল কারণ খুঁজে বের করা হয় এবং কোন পেশিতে টান বা চাপ রয়েছে তা নির্ধারণ করা হয়।
  3. Cervical Range of Motion (ROM) Test: ঘাড় কতটা নড়াচড়া করতে পারে তা পরীক্ষা করা হয়, যেমন সামনে ঝোঁকা, পিছনে বাঁকানো, দুই পাশে মোড়ানো এবং ডান-বাম ঘোরানো। ঘাড়ের নড়াচড়ায় কোনো বাধা আছে কিনা বা কোন কোন নড়াচড়ায় ব্যথা বেশি হয় তা খুঁজে বের করা হয়।
  4. Neurological Examination: ঘাড়ের সমস্যার প্রভাব বোঝার জন্য রিফ্লেক্স, অনুভূতি এবং হাতের শক্তি পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি, নার্ভের কোনো দুর্বলতা বা ক্ষতিকর লক্ষণ আছে কিনা তা দেখা হয়। স্নায়ুতে বা রগে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা যাচাই করা হয় এবং স্নায়ু ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়।

B. ইমেজিং (প্রয়োজনে)

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ, তা নির্ণয় করতে গেলে সঠিক ইতিহাস গ্রহণ, শারীরিক পরীক্ষা, এবং প্রয়োজনীয় ইমেজিং জরুরি।

  1. X-ray: সার্ভাইক্যাল মেরুদণ্ডের রেডিওগ্রাফি করা হয়। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস বা হাড়ের অনান্য পরিবর্তন এই পরিক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।
  2. MRI: ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) করে মেরুদণ্ডের টিস্যু, ডিস্ক, এবং স্নায়ুর বিস্তারিত ছবি নেওয়া হয়। ডিস্ক সরে যাওয়া, স্নায়ুতে চাপ পড়া বা অন্য কোনো টিসুর সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা হয়।
  3. EMG/NCV: স্নায়ু ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG) এবং নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি (NCV) টেস্ট করা হয়। এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে স্নায়ুর শক্তি এবং সিগনাল কত দ্রুত চলাচল করে তা বোঝা যায়। ঘাড়ের স্নায়ুতে কোনো চাপ আছে কিনা এবং স্নায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হয়।

ASPC Manipulation Therapy-তে SDM ভিত্তিক ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা

ASPC Manipulation Therapy তে SDM ভিত্তিক ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা

ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় Structural Diagnosis & Management (SDM) পদ্ধতির আওতায় ASPC Manipulation Therapy বিভিন্ন থেরাপিউটিক কৌশল প্রয়োগ করে। নিচে এই পদ্ধতির বিভিন্ন উপাদান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

A. ম্যানুয়াল থেরাপি ও ম্যানিপুলেশন

  • Cervical Mobilization & Manipulation: ঘাড়ের জয়েন্ট ও ডিস্কের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের জন্য মোবিলাইজেশন ও ম্যানিপুলেশন প্রয়োগ করা হয়। জয়েন্টের নড়াচড়া সহজ করা, পেশির চাপ বা টান কমানো এবং ব্যথা দূর করা। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘাড়ের ব্যথা ও নড়াচড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে সার্ভাইক্যাল ম্যানিপুলেশন এবং মোবিলাইজেশন পদ্ধতি বেশ কার্যকর (Hurwitz et al., 1996)।
  • Myofascial Release Therapy (MFR): পেশি ও টিসুর টান কমানোর জন্য পেশি ও ফাস্যা রিলিজ এবং স্ট্রেচিং করা হয়। পেশি আরও নরম ও সহজে নড়াচড়ার উপযোগী করা, রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো এবং ব্যথা কমানো হয়। মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ থেরাপি রোগীদের ব্যথা কমাতে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে (Ajimsha et al., 2015)
  • Trigger Point Dry Needling: পেশির টান ও ব্যথা কমানোর জন্য ট্রিগার পয়েন্টে সরু সূঁচ ঢোকানো হয় যেটা ড্রাই নিডিলিং নামে সুপরিচিত। এই পদ্ধতিতে ট্রিগার পয়েন্টের সক্রিয়তা বন্ধ করে, পেশির স্বাভাবিক কাজ ফিরিয়ে আনে এবং ব্যথা কমে যায়। ড্রাই নিডিলিং পদ্ধতি মায়োফ্যাসিয়াল ট্রিগার পয়েন্টের কারণে হওয়া ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

B. নন-ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি

  • Neuro Dynamic Mobilization: স্নায়ুর স্বাভাবিক নড়াচড়া ও কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ ধরনের ব্যায়াম বা কৌশল ব্যবহার করা হয়। স্নায়ুর উপর থেকে চাপ কমানো, স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজ ফিরিয়ে আনা এবং ব্যথা কমানো হয়। নিউরোডাইনামিক মোবিলাইজেশন পদ্ধতি স্নায়ুর কারণে হওয়া ব্যথা কমাতে এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে (Shacklock, 2005)
  • Cervical Stabilization Excise: ঘাড়ের পেশি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার জন্য বিশেষ ধরনের এক্সারসাইজ করানো হয়। ঘাড়ের স্থিতিশীলতা বাড়ানো, পেশির শক্তি ও ভারসাম্য উন্নত করা এবং ব্যথা প্রতিরোধ করা হয়। সার্ভিকাল স্ট্যাবিলাইজেশন এক্সারসাইজ ঘাড়ের ব্যথা কমাতে এবং স্বাভাবিক কাজকর্মের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে (Wu et al., 2020)

C. এক্সারসাইজ ও রিহ্যাবিলিটেশন

  • Postural Correction & Ergonomic Training: সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং কাজের জায়গা সঠিকভাবে সাজানোর মাধ্যমে ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ কমানো সম্ভব। এতে পেশির ভারসাম্য ঠিক থাকে, ব্যথা প্রতিরোধ করা যায় এবং বিদ্যমান ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সঠিক ভঙ্গি ও কাজের পরিবেশের সঠিক সেটআপ ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে (Alias et al., 2015)
  • Proprioceptive Training & Gait Correction: ঘাড়ের স্থিতিশীলতা এবং শরীরের ভারসাম্য উন্নত করতে বিশেষ ধরনের এক্সারসাইজ করা হয়, যা পেশির সঠিক সমন্বয় বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই এক্সারসাইজের মাধ্যমে চলাফেরার ধরণ (গেইট) ঠিক হয়, যাতে শরীরের ভারসাম্য ভালো থাকে এবং ঘাড়ের উপর চাপ কমে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
  • তীব্র ব্যথা যা ৩ সপ্তাহেও কমছে না: যদি ঘাড়ের ব্যথা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে এবং সাধারণ চিকিৎসায় ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • হাত-পায়ে দুর্বলতা, ঝিনঝিন অনুভূতি বা ভারসাম্যহীনতা: যদি ঘাড়ের ব্যথার পাশাপাশি হাত বা পায়ে শক্তি কমে যায়, ঝিনঝিনে অনুভূতি হয় বা শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে এটি স্নায়ুর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • জ্বর বা আকস্মিক ওজন কমে যাওয়া: যদি ঘাড়ের ব্যথার সাথে জ্বর আসে বা ওজন কমতে থাকে, তাহলে এটি কোনো সংক্রমণ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

ঘাড়ের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে অনেক গুরুতর কারণ থাকতে পারে। যদি প্রশ্ন হয় ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ, তবে উত্তর হতে পারে সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস, ডিস্ক হেরনিয়েশন, বা ট্রিগার পয়েন্টের সমস্যা। ছোটখাটো আঘাত বা পেশির টান থেকে শুরু করে স্নায়ুর জটিল সমস্যা, সংক্রমণ বা হাড়ের গঠনগত সমস্যাও এর কারণ হতে পারে। তাই ঘাড় ব্যথাকে হালকাভাবে না নিয়ে এর প্রকৃতি, স্থায়ীত্ব এবং অন্য কোনো উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

যদি ব্যথা কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, হাতে-পায়ে দুর্বলতা বা ঝিনঝিন অনুভূতি দেখা দেয়, অথবা জ্বর ও অযাচিত ওজন কমে যায়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে অনেক জটিলতা এড়ানো যায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়। নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল থাকুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বিলম্ব করবেন না।

Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়

কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের…
পরামর্শ নিতে 01877733322