বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার নির্ভর কাজের প্রসার ঘটেছে ব্যাপক হারে। অফিস থেকে বাসা, শিক্ষাঙ্গন থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—প্রতিদিনের বেশিরভাগ কাজেই দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক জীবনযাত্রায় অধিকাংশ মানুষই দৈনিক গড়ে ৬-৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন । বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে ঘাড়, কোমর এবং মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি ও স্নায়ুরোগ দেখা দেয় (Lis et al., 2007; Waongenngarm et al., 2018)।
এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সায়াটিক ব্যথা (Sciatica)। সায়াটিকা মূলত একটি স্নায়ুবিক ব্যথা যা সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ বা প্রদাহ থেকে সৃষ্টি হয়। মানবদেহের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘতম নার্ভ হচ্ছে এই সায়াটিক নার্ভ, যা কোমরের নিচের অংশ থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব ও উরুর পিছন দিক দিয়ে হাঁটু হয়ে পায়ের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এই নার্ভের ওপর চাপ পড়লে বা প্রদাহ সৃষ্টি হলে তীব্র ব্যথা, ঝিনঝিন অনুভূতি এবং কখনও অবশভাব তৈরি হয়। এই ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে শুরু করে একপাশের পায়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও গতিশীলতাকে ব্যাহত করে (Ropper and Zafonte, 2015; Stafford, Peng and Hill, 2007)।
কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘক্ষণ ভুল অঙ্গবিন্যাসে বসে থাকার ফলে সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ পড়ে, যা মেরুদণ্ডের ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কে (Intervertebral disc) অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁড়ানো অবস্থায় মেরুদণ্ডের ডিস্কে চাপ থাকে প্রায় ১০০ ইউনিট (baseline), কিন্তু বসে থাকার সময় বিশেষত forward leaning বা slouched posture-এ এই চাপ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪০ থেকে ১৮৫ ইউনিট পর্যন্ত (Wilke et al., 1999)। এর ফলে ক্রমাগত ডিস্কে ক্ষয় সৃষ্টি হয়ে ডিস্ক হার্নিয়েশন বা নার্ভ কম্প্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে, যা সায়াটিকার প্রধান কারণ। বর্তমানে এই সমস্যা শহুরে জনগোষ্ঠীতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সায়াটিক ব্যথার সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞান
মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম স্নায়ু হলো সায়াটিক নার্ভ (Sciatic Nerve)। এটি মূলত lumbar ও sacral region-এর L4 থেকে S3 পর্যন্ত নার্ভ রুট থেকে উৎপন্ন হয়ে নিতম্বের মধ্য দিয়ে নেমে যায়। এরপর এটি উরুর পিছনের অংশ দিয়ে হাঁটুর নিচে বিভক্ত হয়ে tibial nerve এবং common peroneal nerve নামে পায়ের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে (Standring et al., 2005)।
এই নার্ভটি নিম্নাঙ্গের পেশিসমূহের নিয়ন্ত্রণ, হাঁটাচলা, ভারসাম্য বজায় রাখা এবং পায়ের সংবেদনশীলতা প্রদানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যখনই এর কোনো অংশে চাপ লাগে বা প্রদাহ হয়, তখনই ব্যথা, দুর্বলতা, অবশ এবং ঝিনঝিন অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দেয়, যা সায়াটিকা হিসেবে পরিচিত (Ropper & Zafonte, 2015)।
সায়াটিক ব্যথা কিভাবে সৃষ্টি হয়
সায়াটিকা মূলত স্নায়ুতে চাপ লাগলে (nerve compression) বা প্রদাহ (inflammation) থেকে সৃষ্টি হয়। প্রধানত দু’ধরনের মেকানিজম কাজ করে:
(১) মেকানিক্যাল কম্প্রেশন (Mechanical Compression)
সর্বাধিক পরিচিত কারণ হলো ডিস্ক হার্নিয়েশন, যেখানে মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী ডিস্কের ভেতরের নরম অংশ (nucleus pulposus) বাইরের রিং (annulus fibrosus) ভেদ করে বেরিয়ে আসে এবং নার্ভ রুটকে চাপ দেয়। এছাড়াও স্পাইনাল স্টেনোসিস (Spinal Stenosis) ও পাইরিফর্মিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome) থেকেও এই সমস্যা হতে পারে (Mixter & Barr, 1934; Fishman et al., 2002; Genevay & Atlas, 2010)।
(২) কেমিক্যাল ইনফ্ল্যামেশন (Chemical Inflammation)
হার্নিয়েটেড ডিস্ক থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ (যেমন cytokine ও prostaglandin) সরাসরি নার্ভ রুটে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথার মাত্রা তীব্র করে (Olmarker & Rydevik, 1993)।
দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে বসে থাকার সঙ্গে সায়াটিকার সম্পর্ক

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকা, বিশেষ করে ভুল পজিশনে বসা, সায়াটিক ব্যথার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কেন দীর্ঘক্ষণ বসলে এই ব্যথা হয়, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও কারণসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো।
বসে থাকার ফলে মেরুদণ্ডের ডিস্কে চাপ বৃদ্ধি
বসা অবস্থায় মেরুদণ্ডের (বিশেষত lumbar region) ডিস্কে চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়। সাধারণত, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় lumbar disc-এ চাপ থাকে প্রায় ১০০% (baseline)। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বিশেষত forward leaning বা slouched posture-এ এই চাপ ১৪০% থেকে ১৮৫% পর্যন্ত বেড়ে যায় (Wilke et al., 1999)।
এই অস্বাভাবিক চাপের ফলে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের (Intervertebral disc) ক্ষয় (degeneration) এবং ডিস্ক হার্নিয়েশনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সায়াটিক নার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়ে ব্যথা দেখা দেয় (Claus et al., 2009)।
ভুল অঙ্গবিন্যাসে (Poor Ergonomics) বসার প্রভাব
কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সময় অধিকাংশ মানুষ forward bending posture বা slouched posture-এ বসেন। এই ধরনের posture-এ বসে থাকার ফলে লাম্বার ডিস্ক ও লিগামেন্টে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে, যার কারণে নার্ভ রুটে কম্প্রেশন সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের ভুল posture দীর্ঘ মেয়াদে পেশি ও নার্ভে অতিরিক্ত টান সৃষ্টি করে (Lis et al., 2007; Waongenngarm et al., 2018)।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এর ফলে ধীরে ধীরে কোমরের ডিস্কে ক্ষয় সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে সায়াটিকা বা অনুরূপ নিউরোপ্যাথিক ব্যথার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় (Genevay & Atlas, 2010)।
পাইরিফর্মিস পেশির অস্বাভাবিক শক্তভাব (Piriformis Syndrome)
কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে পাইরিফর্মিস পেশি দীর্ঘ সময় সংকুচিত অবস্থায় থাকে। এর ফলে পাইরিফর্মিস পেশির স্পাজম (spasm) সৃষ্টি হয়, যা সায়াটিক নার্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই অবস্থাকে পাইরিফর্মিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome) বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত stretching ও positional break না নিলে এই সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি (Fishman et al., 2002)।
পেশির দুর্বলতা এবং পেশি ভারসাম্যের অভাব
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের পেশিগুলো (বিশেষত Core muscles, Gluteal এবং Hamstring) দুর্বল ও অনমনীয় হয়ে পড়ে। পেশির এই দুর্বলতা এবং ভারসাম্যের অভাব lumbar spine-এ অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করে, যার ফলে ডিস্ক ও নার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত পেশির স্ট্রেচিং ও শক্তিশালীকরণ এক্সারসাইজ না করলে এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে আরও তীব্র হতে পারে (Hayden et al., 2005)।
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সায়াটিক ব্যথার লক্ষণ

কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘসময় ধরে ভুল অঙ্গবিন্যাসে বসে কাজ করার ফলে সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার কারণে মেরুদণ্ড থেকে শুরু হয়ে পা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে বেশ কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দেয়। নিচে এই উপসর্গগুলো উল্লেখ করা হলো:
কোমর থেকে পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া (Radiating Pain): সায়াটিক ব্যথার প্রধান এবং সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হলো কোমরের নিচের অংশ (lumbar region) থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, পায়ের পিছনের দিক হয়ে গোড়ালি পর্যন্ত বিস্তৃত ব্যথা। এই ধরনের ব্যথাকে Radiating Pain বলা হয়। সাধারণত, এই ব্যথা একপাশে বেশি অনুভূত হয়, যা prolonged sitting (দীর্ঘসময় বসে থাকা), forward bending posture বা ভুল অঙ্গবিন্যাসের কারণে বৃদ্ধি পায় (Ropper & Zafonte, 2015; Konstantinou & Dunn, 2008)।
পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি বা অবশভাব (Tingling or Numbness): সায়াটিক নার্ভে চাপ বা প্রদাহের কারণে স্নায়ুর সিগনাল ট্রান্সমিশনে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি (tingling) বা অবশভাব (numbness) হতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর বা একটানা কোনো একটি posture-এ থাকার পর পায়ের আঙ্গুল, পায়ের নিচের অংশ বা গোড়ালিতে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায় (Stafford, Peng & Hill, 2007; Vroomen et al., 2002)।
দীর্ঘক্ষণ বসলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়াঃ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করার সময় ভুল posture এবং দীর্ঘসময় একটানা বসে থাকার কারণে সায়াটিক নার্ভে চাপ বৃদ্ধি পায়।
পেশির দুর্বলতা (Muscle Weakness): তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদি সায়াটিক ব্যথার ক্ষেত্রে পায়ের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে গোড়ালি বা পায়ের আঙ্গুলে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা হাঁটাচলা ও ভারসাম্য বজায় রাখাকে কষ্টকর করে তোলে। অনেক সময় গুরুতর অবস্থায় Foot Drop নামক লক্ষণও দেখা দিতে পারে (Deyo, Rainville & Kent, 1992; Stafford, Peng & Hill, 2007)।
রাতে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাওয়া
অনেকের ক্ষেত্রে রাতে বা বিশ্রামের সময় এই ব্যথা তীব্র হয়ে ওঠে। এর কারণ হলো, সারাদিনের জমে থাকা নার্ভ কম্প্রেশন ও প্রদাহ রাতে বিশ্রামের সময় বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। রাতে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাওয়া সায়াটিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় (Konstantinou & Dunn, 2008)।
ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

দীর্ঘসময় কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট সায়াটিকা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মতে, সঠিক এক্সারসাইজ, আর্গোনমিক্স, এবং সচেতনতা সায়াটিক ব্যথা কমাতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। নিচে করণীয় পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হলো:
Ergonomic Posture Correction (সঠিক অঙ্গবিন্যাস নিশ্চিত করা)
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সঠিক অঙ্গবিন্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক অঙ্গবিন্যাস বলতে বুঝায়:
- কোমর সোজা রেখে বসা (lumbar support ব্যবহার করে)
- মনিটরের উচ্চতা চোখের লেভেলে রাখা
- হাত ও বাহুর সঠিক উচ্চতা এবং মাউসের অবস্থান ঠিক রাখা
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ergonomic posture correction-এর মাধ্যমে সায়াটিকা ও কোমর ব্যথা ৩০-৫০% পর্যন্ত হ্রাস পায় (Waongenngarm et al., 2018)।
Positional Breaks ও Movement Breaks
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট পর পর বসা থেকে উঠে positional breaks নেওয়া এবং কিছু সহজ stretching বা mobility exercises করা সায়াটিকার ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এই breaks গুলো lumbar spine-এ চাপ কমায় এবং নার্ভের ওপর থেকে চাপ হ্রাস করে (Waongenngarm et al., 2018)।
- প্রতি ঘণ্টায় ২–৫ মিনিট হাঁটাচলা করা
- চেয়ার থেকে উঠে pelvic tilt, hamstring stretch, piriformis stretch করা
Therapeutic Stretching Exercises
নিয়মিত therapeutic stretching সায়াটিক নার্ভের গতিশীলতা (nerve mobility) বৃদ্ধি করে এবং পেশির টান কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, hamstring stretching, piriformis stretching, cat-cow stretching, এবং knee-to-chest stretching নিয়মিত করলে সায়াটিকা নিয়ন্ত্রণে আসে (Hayden et al., 2005; Lam et al., 2018)।
- Hamstring Stretch: পায়ের পিছনের মাংসপেশির টান কমাতে
- Piriformis Stretch: পাইরিফর্মিস পেশির চাপ কমাতে
- Knee-to-Chest Stretch: মেরুদণ্ড ও কোমরের চাপ কমাতে
Core Strengthening Exercises
সঠিক ফিজিওথেরাপি এক্সারসাইজের মধ্যে core strengthening বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, core muscle (transversus abdominis, multifidus muscle ইত্যাদি) শক্তিশালী হলে lumbar spine-এর ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নার্ভের ওপর চাপ হ্রাস পায় এবং সায়াটিকার ব্যথা কমে (Gordon & Bloxham, 2016; Shiri et al., 2010)।
- Plank exercise
- Pelvic bridging
- Bird-dog exercise
Manual Therapy ও Mobilization Techniques
Manual & manipulation therapy-তে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট নির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োগ করে মেরুদণ্ডের ডিস্ক ও জয়েন্টের alignment এবং mobility ফিরিয়ে আনেন। গবেষণায় দেখা গেছে, manual therapy ও mobilization সায়াটিক ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর (Petersen et al., 2011)। বর্তমানে ASPC ম্যানুপুলেশন থেরাপি সেন্টারসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক “স্ট্রাকচারাল ডায়াগনোসিস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (SDM)” পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে সমস্যার উৎস নির্ণয় ও সমাধান করা হচ্ছে। ওষুধ ও অস্ত্রোপচার এড়িয়ে স্বল্প সময়ে দীর্ঘমেয়াদি উপশম পাওয়ায় দিন দিন এই থেরাপির চাহিদা বেড়েই চলেছে।
Ergonomic Furniture ব্যবহার
সঠিক ergonomic chair ব্যবহার lumbar spine এর lordosis (স্বাভাবিক বাঁক) ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং কোমরের মাংসপেশির অস্বাভাবিক টান হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ergonomic furniture ব্যবহারে lumbar pressure ৩০–৪০% কমানো সম্ভব (Grandjean & Hunting, 1977)।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও নিয়মিত অনুশীলনের পরামর্শ

সায়াটিক ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকার কারণে এই সমস্যা যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও নিয়মিত অনুশীলনের পরামর্শ নিচে উল্লেখ করা হলো।
নিয়মিত বিরতি নেওয়া (Frequent Breaks)
প্রতি ৩০–৪৫ মিনিট অন্তর অন্তর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো এবং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা stretching করা জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, positional breaks মেরুদণ্ডের ডিস্কের চাপ ৩০–৫০% কমিয়ে দেয় এবং সায়াটিকার ঝুঁকি হ্রাস করে (Waongenngarm et al., 2018)।
Ergonomic Set-up নিশ্চিত করা
কম্পিউটার ও চেয়ার সঠিক উচ্চতায় স্থাপন করলে lumbar spine-এর ওপর চাপ কমে যায়। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করা জরুরি:
- চেয়ারের উচ্চতা: হাঁটু ও কোমর সমান উচ্চতায় থাকতে হবে।
- লাম্বার সাপোর্ট: lumbar curve বজায় রাখার জন্য চেয়ারের সঙ্গে back support থাকা জরুরি।
- মনিটরের উচ্চতা: চোখের সমতলে থাকতে হবে, যাতে forward bending না করতে হয় (Grandjean & Hunting, 1977)।
নিয়মিত Therapeutic Exercise ও Stretching করা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এক্সারসাইজ সায়াটিকার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়ামগুলো হলো:
- Hamstring Stretch: উরুর পিছনের পেশি প্রসারিত করে, নার্ভের চাপ কমায়।
- Piriformis Stretch: পাইরিফর্মিস পেশির টান কমিয়ে সায়াটিক নার্ভে চাপ কমায়।
- Pelvic Tilt ও Cat-cow: lumbar spine mobility উন্নত করে এবং core stability বাড়ায় (Hayden et al., 2005; Lam et al., 2018)।
Core Muscle Strengthening (কোর পেশি শক্তিশালীকরণ)
কোমরের চারপাশের (Core muscle) পেশিগুলো শক্তিশালী হলে lumbar spine-এর ভারসাম্য বজায় থাকে এবং নার্ভের ওপর চাপ কমে যায়। নিচের এক্সারসাইজ গুলো নিয়মিত করা উচিত:
- Plank Exercise: Core stability বৃদ্ধি করে।
- Pelvic Bridging: কোমরের পেশি শক্তিশালী করে।
- Bird-dog Exercise: lumbar spine-এর ভারসাম্য বৃদ্ধি করে (Gordon & Bloxham, 2016; Shiri et al., 2010)।
ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Management)
অতিরিক্ত ওজন lumbar spine-এর ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে, যা সায়াটিক ব্যথার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন কমালে কোমর ব্যথার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। তাই নিয়মিত এক্সারসাইজ ও সুষম খাদ্য গ্রহণ জরুরি (Shiri et al., 2010)।
সঠিক ঘুমের ভঙ্গি (Proper Sleeping Posture)
ঘুমানোর সময় সঠিক posture সায়াটিক ব্যথা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত:
- পাশ ফিরে ঘুমালে হাঁটুর মাঝে একটি বালিশ রাখা
- চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখা (Gordon & Bloxham, 2016)
জীবনধারায় সচেতনতা ও অভ্যাসগত পরিবর্তন
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও সচেতনতার মাধ্যমে সায়াটিক ব্যথা প্রতিরোধ সম্ভব। যেমন:
- ভারি ওজন তোলার সময় সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করা
- দীর্ঘক্ষণ বসা থেকে বিরত থাকা
- নিয়মিত হাঁটাচলা ও stretching exercise করা (Hayden et al., 2005; Gordon & Bloxham, 2016)
বর্তমান যুগে দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও প্রযুক্তির এই ব্যবহার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু পাশাপাশি শারীরিক কিছু ঝুঁকিও সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সায়াটিক ব্যথা। তবে আশার বিষয় হলো— এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ সম্ভব।
- পেটের বাম পাশে ব্যথা কমানোর উপায় - June 19, 2025
- কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কী? - June 19, 2025
- মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোক: ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ - June 18, 2025