কোমর ব্যথা (Low Back Pain) একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে। এটি সাধারণত কোমরে তীব্র বা মৃদু ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়। এই ব্যথার কারণ হতে পারে মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, পেশি, লিগামেন্ট বা স্নায়ুর কোনো সমস্যা (Maher et al., 2017)। কারো কারো ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে (যেমন তীব্র ব্যথা) আবার অনেকেই দিনের পর দিন কোমর ব্যথা নিয়ে ভুগতে থাকেন (যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা) । এটি মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, চলাচলে অসুবিধা তৈরি করতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বের প্রায় ৭০-৯০% মানুষ তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভোগেন, এবং এটি কর্মক্ষম জনসংখ্যার মধ্যে অক্ষমতার প্রধান কারণ (Hartvigsen et al., 2018)। ২০১৮ সালে The Lancet প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, “কোমর ব্যথা বিশ্বজুড়ে অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ,” এবং এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য খাতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে যান্ত্রিক জীবনধারা, দীর্ঘসময় বসে কাজ করা, ভারী ওজন তোলা, ভুল ভঙ্গিতে চলাফেরা, এবং মানসিক চাপ—এইসব কারণ কোমর ব্যথার প্রকোপ বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও, কোমর ব্যথা কখনো কখনো গুরুতর স্নায়ু বা অস্থিসংক্রান্ত রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যেমন ডিস্ক হার্নিয়েশন, স্পাইনাল স্টেনোসিস বা কডা ইকুইনা সিনড্রোমের মতো সমস্যা কোমর ব্যথার মাধ্যমে জানান দিতে পারে।
এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হলো কোমর ব্যথার বিভিন্ন লক্ষণ এবং প্রকারভেদ সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা, যাতে সাধারণ মানুষ বা রোগীরা সহজেই বুঝতে পারে কোন লক্ষণটি সাধারণ এবং কোনটি গুরুতর বা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
সাধারণ কোমর ব্যথার লক্ষণসমূহ
শুধুমাত্র কোমরে ব্যথা (Localized Pain): ব্যথা যদি শুধুমাত্র কোমরেই হয় তাহলে এই ব্যথা সাধারণত পেশি, লিগামেন্ট, ডিস্ক বা অস্থিসন্ধির (facet joint) হালকা ক্ষয় বা প্রদাহজনিত কারণে হয়ে থাকে।
এ ধরনের ব্যথা হতে পারে—
- চাপা ব্যথার অনুভূতির মতো (dull/aching pain)
- তীব্র বা হঠাৎ খোচা লাগার মতো ব্যথা (sharp/stabbing pain)
এটি সাধারণত ভাড়ী কিছু তুলতে গেলে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বা হঠাৎ ঘুরলে তীব্র হয়।
Foster et al. (2018) জানান, বিশ্বের অধিকাংশ কোমর ব্যথার প্রায় ৮৫%–৯০% “non-specific low back pain”, যার মধ্যে বেশিরভাগই এই ধরনের ব্যথা।
কোমর থেকে পায়ে ছড়ানো ব্যথা (Sciatica / Radiating Pain): এই ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু ও পায়ের পেছন বরাবর নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। একে সাধারণত “সায়াটিকা” বলা হয়। এটি মূলত সায়াটিক নার্ভ–এ চাপ পড়লে ঘটে, যেটি আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় স্নায়ু।
এই ব্যথা:
- বৈদ্যুতিক শক-এর মতো বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতির মতো হতে পারে
- একপাশে ঝিনঝিনি বা অবশভাবও দেখা দিতে পারে
- পায়ে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে
Konstantinou & Dunn (2008) তাদের রিভিউতে বলেছেন, সায়াটিক ব্যথার আক্রমণ জীবনের কোনও এক পর্যায়ে প্রায় ৪৩% লোক অনুভব করে থাকেন, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ডিস্ক হার্নিয়েশনের কারণে হয়।
মাংসপেশিতে জড়তা (Muscle Stiffness & Spasm): কোমরের মাংসপেশি কখনও কখনও শক্ত হয়ে যায় বা হঠাৎ শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থা “muscle spasm” নামে পরিচিত।
- এটি আকস্মিক ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে
- ব্যথার কারণে মেরুদণ্ড সোজা রাখা বা সামনে ঝোকা কঠিন হয়
- ঘুম থেকে উঠে কিংবা হঠাৎ কোনও মুভমেন্টে এই জড়তা বাড়ে
van Dieën et al. (2003) তাদের বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, যেসব রোগী দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথায় ভোগেন, তাদের কোমরের গভীরের পেশিগুলোতে (trunk muscles) অস্বাভাবিক রকমের শক্তি ও স্প্যাজম দেখা যায়, যা চলাফেরার ভারসাম্য হ্রাস করে।
কোমর ব্যথার সঙ্গে স্নায়ুবিক লক্ষণসমূহ (Neurological Symptoms)

পায়ে অবশ বা ঝিনঝিন অনুভূতি (Tingling or Numbness): যখন কোমরের কোন ডিস্ক বা হাড় সায়াটিক নার্ভ বা এর শাখা-স্নায়ুগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে, তখন সংশ্লিষ্ট স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঙ্গ—বিশেষ করে উরু, পা অথবা আঙুলে—অবশভাব (numbness) বা ঝিনঝিন অনুভূতি (tingling or “pins and needles”) দেখা দেয়।
এই অনুভূতি সাধারণত একপাশে হয় এবং ডিস্ক হার্নিয়েশন, স্পাইনাল স্টেনোসিস, বা স্নায়ুতে প্রদাহের কারণে দেখা যায়। অনেকে এটি এমনভাবে বর্ণনা করেন যেন “পায়ে পিঁপড়ে কুটকুট করছে” বা “চামড়া মরে গেছে”।
পায়ে দুর্বলতা (Muscle Weakness): যদি স্নায়ুর উপর দীর্ঘ সময় চাপ পড়ে, তবে পেশির কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রোগী চলা, দাঁড়ানো বা ভারী জিনিস তোলা-তে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন। এটি স্নায়ুজনিত দুর্বলতা (neurogenic weakness) হিসেবে বিবেচিত হয় এবং যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি স্থায়ী হতে পারে।
Lumbar radiculopathy বা cauda equina syndrome থাকলে এই ধরণের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেমন—
- পায়ের পাতা উঁচু করতে না পারা (foot drop)
- পায়ের গোড়ালিতে ভর দিতে না পারা
- হাঁটুতে কাঁপুনি বা খসখসে ভাব দেখা দিলে
রিফ্লেক্সের পরিবর্তন (Changes in Reflexes): স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা অতিরিক্ত চাপ পড়লে পায়ে স্বাভাবিক রিফ্লেক্স (reflexes) কমে যায় অথবা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা হাঁটুর (patellar) এবং অ্যাঙ্কেলের (Achilles) রিফ্লেক্স পরীক্ষা করে থাকেন।
- যদি রিফ্লেক্স কমে যায়, তাহলে সেটা স্নায়ু সংকেতের বাঁধা বা ধীরগতির ইঙ্গিত দেয়
- যদি রিফ্লেক্স বেড়ে যায়, তবে তা হতে পারে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের মধ্যকার সামঞ্জস্যতা না থাকার কারণে
রিফ্লেক্সের এই পরিবর্তন কোমর ব্যথার সাথে স্নায়ুর সম্পৃক্ততা বোঝার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
কোমর ব্যথার গুরুতর রোগের লক্ষণ (Red Flags)

বিশ্রাম বা ঔষধে ব্যথা না কমা: সাধারণ কোমর ব্যথা বিশ্রাম, গরম সেঁক, এক্সারসাইজ বা ওষুধে উপশম হয়। কিন্তু যদি ব্যথা বিশ্রামে না কমে বা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে এটি গুরুতর কোনো অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে।
এই ধরণের ব্যথা অনেক সময় হাড়ের টিউমার, মেরুদণ্ডের সংক্রমণ, অথবা মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার (যেমন – ফুসফুস, প্রোস্টেট বা স্তন ক্যান্সার থেকে মেরুদণ্ডে ছড়ানো) নির্দেশ করতে পারে।
জ্বর বা কাঁপুনি: জ্বর, কাঁপুনি এবং কোমর ব্যথা যদি একসঙ্গে দেখা যায়, তাহলে তা মেরুদণ্ডের সংক্রমণ–এর (যেমন – osteomyelitis, epidural abscess, discitis) লক্ষণ হতে পারে।
বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বা সম্প্রতি সার্জারি হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়।
হঠাৎ ওজন কমা ও রাতে ঘাম হওয়া: অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস, রাতে ঘাম হওয়া, এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা কোমর ব্যথা—এই তিনটি লক্ষণ একত্রে দেখা গেলে তা মেরুদণ্ডে টিউমার বা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
বিশেষ করে যাদের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা আগেও অন্য অঙ্গে ক্যান্সার হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক সতর্কতা নির্দেশ করে।
প্রস্রাব–পায়খানায় সমস্যা (Cauda Equina Syndrome): Cauda equina syndrome (CES) হলো একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে কোমরের নিচের স্নায়ুগুলোতে (cauda equina) হঠাৎ চাপ পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই রোগে প্রধান লক্ষণ হলো—
- প্রস্রাব বা পায়খানা নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা বা হঠাৎ পরিবর্তন
- উরুর ভিতরের অংশ ও যৌনাঙ্গের চারপাশে অবশভাব (saddle anesthesia)
- দুই পায়ে দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা
যদি CES এর লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। দেরি হলে তা স্থায়ী পক্ষাঘাতে পরিণত হতে পারে।
কোমর ব্যথার সময়কাল অনুযায়ী লক্ষণসমূহ

তীব্র ব্যথা (Acute Pain): তীব্র কোমর ব্যথা সাধারণত ৬ সপ্তাহের কম সময় ধরে থাকে এবং এটি সাধারণত কোনো হঠাৎ আঘাত, ভারী কিছু তোলা, ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোয়া, অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে হয়ে থাকে।
এই ব্যথা অনেক সময় “মাসল স্ট্রেইন” বা “লিগামেন্ট স্প্রেইন” এর ফলে হয়, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নির্দিষ্ট রোগ ছাড়াই নিজে নিজে সেরে যায়।
লক্ষণ:• ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়
• সাধারণত একপাশে বেশি অনুভূত হয়
• পেশিতে টান টান অনুভূতি হতে পারে
• বিশ্রাম বা ওষুধে ব্যথা কমে যায়
খ. মাঝারি বা সাব–একিউট ব্যথা (Subacute Pain): যদি কোমর ব্যথা ৬ থেকে ১২ সপ্তাহ ধরে স্থায়ী থাকে, তবে এটি “সাব-একিউট” ব্যথা বলা হয়। এই পর্যায়ে ব্যথা কিছুটা কমে আসলেও পুরোপুরি সেরে ওঠে না। এমন ব্যথা জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় রূপ নিতে পারে।
লক্ষণ:• ব্যথা কিছুটা কমে আসলেও আবার বাড়তে থাকে
• দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা তৈরি করে
• ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট এবং চিকিৎসার প্রয়োজন
গ. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা (Chronic Pain): যখন কোমর ব্যথা ১২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলে, তখন এটি দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা (Chronic Low Back Pain) হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয়, বরং মানসিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
• ডিস্ক ডিজেনারেশন
• স্পাইনাল অস্টিওআর্থ্রাইটিস
• স্নায়ুর অবক্ষয় বা চাপ লাগা
• জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ
লক্ষণ:• দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা
• ঘন ঘন ব্যথা ফিরে আসা
• ব্যথার কারণে কাজ করা, ঘুমানো, চলাফেরা—সবকিছুতে সমস্যা
• হতাশা বা উদ্বেগের লক্ষণও দেখা দিতে পারে
কোমর ব্যথার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত লক্ষণ
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা (Anxiety & Depression): দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা রোগীর মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যখন কেউ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথায় ভোগে এবং তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়, তখন তার মধ্যে দুশ্চিন্তা (anxiety), হতাশা (frustration) এবং অনেক সময় বিষণ্নতা (depression) দেখা দেয়।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, chronic low back pain (দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা) রোগীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার সাধারণ জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। এই ধরনের মানসিক চাপ ব্যথার তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দেয়।
ব্যথা নিয়ে ভয় বা কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা (Fear Avoidance): Fear-avoidance behavior এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে রোগী ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম (যেমন হাঁটা, বসা, সিঁড়ি চড়া বা কাজ করা) এড়িয়ে চলে।
এই আচরণ শরীরকে আরও নিষ্ক্রিয় করে তোলে, পেশির দুর্বলতা সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে ব্যথা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এই মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় “fear-avoidance model of chronic pain”, এবং এটি কোমর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

কোমর ব্যথা রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার সমাধানে ফিজিওথেরাপি একটি নিরাপদ, ওষুধবিহীন এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে শুধু সাধারণ ফিজিওথেরাপি নয়—বর্তমানে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি কিছু বিশেষ পদ্ধতির মধ্যে ASPC Manipulation Therapy-র “SDM (Structural Diagnosis and Management)” কনসেপ্ট বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
SDM কনসেপ্টটি মূলত কোমর ব্যথার মূল কাঠামোগত কারণ শনাক্ত করে তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি শুধুমাত্র ব্যথা কমানো বা পেশি শিথিল করার উপর নির্ভর করে না, বরং এটি ব্যথা যে কারণে হয় সেই জটিল মেকানিক্যাল অসামঞ্জস্য, যেমন: লিগামেন্টের টান, ডিস্কের অবস্থান, জয়েন্টের অকার্যকারিতা বা পেশির ভারসাম্যহীনতা—এসবের সমন্বিত বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা দেয়।
SDM কনসেপ্টে প্রথমে রোগীর এসেসমেন্ট করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে পেশি, জয়েন্ট ও নার্ভের কার্যকারিতা, অঙ্গবিন্যাস ও হাঁটাচলার ধরণ বিশ্লেষণ। এরপর বিশেষ ম্যানিপুলেশন থেরাপি, স্ট্রেচিং, স্ট্যাবিলাইজিং এক্সারসাইজ এবং জীবনযাত্রা কারেকশনের মাধ্যমে রোগীকে ধাপে ধাপে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।
বিশেষ করে যেসব কোমর ব্যথার রোগী দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়েও উপশম পাননি বা যাদের ব্যথা ঘনঘন ফিরে আসে, তাদের ক্ষেত্রে SDM কনসেপ্ট একটি দিকনির্দেশক পথ। এটি কেবল ব্যথা উপশম নয়—রোগ প্রতিরোধ, পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যতে ব্যথার পুনরাবৃত্তি রোধেও কার্যকর। ASPC-তে এই পদ্ধতি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করে অসংখ্য রোগীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি শুধু ব্যথা কমানোর একটি মাধ্যম নয়, বরং এর পেছনের মূল কাঠামোগত কারণ চিহ্নিত করে রোগীকে একটি সচল, কর্মক্ষম ও ব্যথামুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনার একটি বৈজ্ঞানিক ও মানবিক প্রচেষ্টা—যার সর্বাধুনিক রূপ হল SDM কনসেপ্ট।
- পেটের বাম পাশে ব্যথা কমানোর উপায় - June 19, 2025
- কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কী? - June 19, 2025
- মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোক: ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ - June 18, 2025