fbpx

আপনার ঘাড় ৭ টি কশেরুকা দিয়ে গঠিত যা মাথার খুলি থেকে উপরের কাধ পর্যন্ত বিস্তৃত। ঘাড়ের সার্ভাইক্যাল অংশের ডিস্ক দুইটি কশেরুকার হাড়ের মধ্যে কুশন হিসেবে কাজ করে। আপনার ঘাড়ের হাড়, লিগামেন্ট এবং পেশীগুলি আপনার মাথাকে ধরে রাখে এবং চারপাশে তাকাতে সাহায্য করে। ঘাড়ের হাড়ে, মাংসপেশি, লিগামেন্ট, ডিস্ক বা যে কোন অংশে কোন অস্বাভাবিকতা, প্রদাহ, বা আঘাতের ফলে  ঘাডড়ে ব্যথা বা ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে, দুর্বল দেহ ভঙ্গি বা ভুল অবস্থানে ঘাড়ের অত্যধিক ব্যবহার, ঘাড়ে আঘাত, খেলাধুলা, বা হুইপ্লাশ ইনজুরি থেকেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।

ঘাড়ের ব্যথা বেশির ভাগ সময় ঘাড়ের উপরের দিকে বা নিচের দিকে করে, অবস্থানের সাথে এটির পরিবর্তন হয়। তবে শুয়ে থাকলে ঘাড়ের ব্যথা বাড়ে ও অনেক সময় ঘাড়ের ব্যথার রোগী উপরে তাকাতে পারে না। তবে যদি আপনার ঘাড়ে ব্যথা হয় যা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, গুরুতর হয়, ঘাড়ের ব্যথা ঘাড় থেকে কাধ, বাহু, বা হাতের অঙ্গুল পর্যন্ত চলে আসে, সাথে ঝি ঝি বা অবশ অবশ থাকে বা অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল দূর্বলতা বা উপসর্গ সাথে থাকে, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঘাড় ব্যথায় কি করবে?

খুব বেশি সময় ধরে এক অবস্থানে বসে থাকবেন না। আপনি এক জায়গায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বসে না থাকা থেকে উঠে ২ থেকে ৩ মিনিট হাঁটা চলা করুন এবং যথেষ্ট পরিমাণে ঘুরে বেড়ান।আপনি কম্পিউটার  ব্যবহারের সময় মনিটরের বরাবর তাকান এবং মোবাইল ব্যবহারের সময় ঘাড় ঝুকে তাকাবেন না। তাহলে আপনি খুব দ্রুতই আপনি আপনার ঘাড়কে স্বাস্থ্যকর অবস্থানে নিয়ে আসতে পারবেন।আপনার শরীর সমন্বয় করে চলুন। আপনি কম্পিউটারের মনিটর চোখের এমন স্তরে রাখুন যাতে আপনার ঘাড়ে কোন চাপের সৃষ্টি না হয়। আপনি সমতল ভাবে না বসে ৪৫° কোণ হয়ে বসুন।

এমন কিছু এক্সারসাইজ আছে যা আপনি আপনার বাসায় শুয়ে,  অফিসের ডেস্কে বসে বা গাড়িতে থেকেই খুব সহজেই করতে পারবেন যা আপনার ঘাড় ব্যথা কমাতে বা  প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

ব্যথা কমানোর জন্য স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ

  • ১। আপনি বসে থাকা অবস্থায় পিছনের দিক বরাবর ১০ বার উপরের  দিকে ধীরে ধীরে তাকান।
  • ২। আপনি বসে থাকা অবস্থায় ২ হাত পিছনের দিকে নিয়ে একসাথে ধরে রাখুন, আপনার দুই কাঁধকে পিছনের দিকে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন  এবং  ১০বার করে পুনরাবৃত্তি করুন।  
  •  ৩।আপনি গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় পিছনে হেলান দিয়ে চিবুক নিচের দিকে নামান, লক্ষ্য রাখবেন যেন আপনার ঘাড় সামনে ঝুকে না যায়। এটি আপনার মাংসপেশির টান করতে সহায়তা করে।
  •  ৪। প্রতিটি এক্সারসাইজ ১০ বার করুন। ১মিনিটের বিশ্রাম করুন এবং ২ সেট করুন।

ঘুমানোর আগে এবং পরে ঘাড়ের যত্ন নিন

ঘাড় ব্যথা যদি আপনাকে বিরক্ত করে তাহলে আপনার ঘুমের অবস্থানের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। আপনি আরামদায়ক স্থানে না শুয়ে স্বাভাবিক ভাবে তোয়ালে গোল করে ঘাড়ের নিচে দিয়ে  চিৎ হয়ে শুয়ে থাকুন।

যখন আপনি আপনার ঘাড় উচু বা নিচু করে শুয়ে থাকেন, বা ভুল অবস্থানে ঘুমান তখন আপনার ঘাড় উচু নিচু বা এক দিকে ঘুরে থাকে। যার ফলে ঘাড়ে চাপ পরে এবং ব্যথা তৈরি হয়।

ঘাড় ব্যথার ছোট ও সাধারণ কারণগুলির জন্য সহজ প্রতিকারগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল:-

  • ১। ব্যথার স্থানে তাপ বা বরফ লাগান। প্রথমে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার জন্য বরফ ব্যবহার করুন তারপরে তাপ ব্যবহার করুন। বরফের কুঁচি কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ৭মিনিট থেকে ৯মিনিট ঘাড়ের ব্যথাযুক্ত মাংসপেশিতে লাগান। উষ্ণ শাওয়ার, গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে বা হিটিং প্যাড দিয়ে ১০মিনিট তাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ত্বকের আঘাত এড়ানোর জন্য হিটিং প্যাড বা বরফের ব্যাগ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না।
  • ২। ব্যথা সহ্য না হলে উপশমকারী  ওভার-দ্য-কাউন্টার  ঔষধ বা প্যারাসিটামল নিন।
  • ৩। ঘাড়ের উপর থেকে নিচে,ডান পাশ থেকে বাম পাশে এবং বাম কান থেকে ডান কানে ধীরে ধীরে রেঞ্জ-অফ-মোশন ব্যায়াম করুন। এটি ঘাড়ের পেশীকে আলতো প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
  • ৪। আপনার  পরিবারের কাউকে দিয়ে আস্তে আস্তে বেদনাদায়ক স্থানে  ম্যাসেজ করান।
  • ৫। অতিরিক্ত গদি সম্পন্ন বিছানায় ঘুমাবেন না এবং আরামদায়ক বালিশও ব্যবহার করবেন না।
  • ৬। যে আপনাকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন অস্বস্তি দূর করতে ঘুমানোর সময় কি গলায়  কোন অন্য কিছু ব্যবহার করা যাবে কি না। তবে খেয়াল রাখবেন দীর্ঘদিন যেন ব্যবহার না করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আপনার ঘাড়ের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • ৭। রাতে একটি ভালো ঘুম দিন। ঘুমের সমস্যা পেশীবহুল ব্যথা সহ বিভিন্ন অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়।

ঘাড় ব্যথার কারণে কাঁধে ব্যথায় করনীয়

ঘাড়ের কারণে কাঁধে ৪০%  ব্যথা হতে পারে আবার কাঁধের কারণে ঘাড়ে ৪০% ব্যথা  হতে পারে। যখন কাঁধের ব্যথার চিকিৎসা  করতে যাবেন যখন তখন শুধু কাঁধের চিকিৎসা না করে ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসাও করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে ঘাড়ের  ব্যথা আর কাঁধের ব্যথা সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘাড়ের মাংশপেশির টান কমানোর ব্যায়াম

এই ব্যায়ামটি আপনার ঘাড় এবং কাঁধে টান কমানোর  একটি সহজ উপায়।

  •  ১)আপনি সোজা হয়ে তাকিয়ে চিবুক আপনার বুকের দিকে নামান,যাতে করে আপনি আপনার ঘাড়ের পিছনে  টান অনুভব করেন। ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ১০ বার করুন, দিনে ২থেকে ৩বার করুন।
  • ২)আপনার ঘাড়ের এক পাশে হাত দিয়ে ডান দিকে ও বাম দিকে মাথা কাত করুন। ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ১০ বার করুন এবং দিনে ২থেকে ৩বার করুন।
  • ৩) এই ব্যায়াম গুলো ৭দিন ধরে করুন। উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বুকের প্রসার

এই ব্যায়াম আপনার কাঁধে নমনীয়তা এবং গতিশীলতার পরিধি বাড়ায়।

১)দাঁড়ানোর সময়, উভয় হাত দিয়ে আপনার পিঠের পিছনে একটি ব্যায়াম ব্যান্ড, স্ট্র্যাপ বা তোয়ালে ধরে রাখুন।

২)আপনার কাঁধের ব্লেডগুলি একে অপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় আপনার বুক জুড়ে বিস্তৃত করুন।

৩)আপনার চিবুক তুলে সিলিং এর দিকে তাকান।

৪)৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখুন।

৫)৩-৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

বসা মোচড়

এই ব্যায়াম আপনার কাঁধ এবং ঘাড় প্রসারিত করে। এই অনুশীলনের সময় আপনার পা সামনের দিকে রাখুন। আপনার নীচের অংশে মোচড় শুরু করতে দিন।

১)আপনার হাঁটুর নিচে সরাসরি আপনার গোড়ালি সহ একটি চেয়ারে বসুন।

২)আপনার শরীরের উপরের অংশটি ডানদিকে বাঁকুন, আপনার বাম হাতের পিছনে আপনার উরুতে আনুন।

৩)আপনার ডান হাত নিচে রাখুন যেখানে এটি আরামদায়ক।

৪)৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই অবস্থান ধরে রাখুন।

৫)বাম দিকে পুনরাবৃত্তি করুন।

৬)প্রতিটি পাশ ৩-৫ বার করুন।

Follow me

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

× পরামর্শ নিতে মেসেজ করুন