অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ, যা মূলত মেরুদণ্ড এবং স্যাক্রোইলিয়াক (SI) জয়েন্টকে আক্রান্ত করে। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘসময় ধরে পিঠে ব্যথা ও মেরুদণ্ডে জড়তা বা শক্তভাব অনুভব করা। এটি ধীরে ধীরে মেরুদণ্ডের নড়াচড়া বা নমনীয়তা কমিয়ে দেয় এবং শরীরের ভঙ্গিমা বা গঠনে পরিবর্তন আনতে পারে।
রোগীরা সাধারণত কোমর, নিতম্ব এবং হিপ জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেন। এছাড়াও, অনেকের হাত-পা বা শরীরের অন্যান্য জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলাভাব (পেরিফেরাল আর্থ্রাইটিস), লিগামেন্ট ও টেন্ডনে ব্যথা (এনথেসাইটিস), এবং কখনো কখনো আঙুল ফুলে গিয়ে সসেজের মতো আকার ধারণ করে (ড্যাকটাইলাইটিস)।
স্পন্ডিলাইটিস সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়, এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কোমর ও নিতম্বের ব্যথা এবং কাঠিন্যতা, যা সকালে বা বিশ্রামের পর বেশি অনুভূত হয়। এই রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো জোড়া লেগে যেতে পারে, যার ফলে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা হ্রাস পায় এবং শরীরের ভঙ্গিমায় পরিবর্তন আসে।
স্পন্ডিলাইটিস কেন হয়
(ক) জেনেটিক কারণ (Genetic Predisposition)
- HLA-B27 জিন: অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের মধ্যে HLA-B27 জিনের উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। যদিও রক্তে এই জিনটি থাকা সত্ত্বেও সবাই অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস -এ আক্রান্ত হন না, তবে এই জিনের উপস্থিতি রোগের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। Brown et al., 2016
- অন্যান্য জিনগত উপাদান: ERAP1, IL1A, এবং IL23R সহ আরও কিছু জিনের পরিবর্তন অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস -এর সাথে সম্পর্কিত। এই জিনগুলো ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (Reveille, 2011)।
(খ) অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া (Autoimmune Response)
- অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুল করে নিজের টিস্যুকে আক্রমণ করে। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে হাড় জোড়া লাগতে থাকে (Smith & Colbert, 2014)।
(গ) সংক্রামক কারণ (Infectious Triggers)
- কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যেমন সালমোনেলা, শিগেলা, এবং ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া, অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এ ভূমিকা রাখতে পারে। এই সংক্রমণগুলি ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে (Taurog et al., 2016)।
(ঘ) জীবনযাত্রার ধরন (Lifestyle Factors)
- ধূমপান: ধূমপান অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে এবং রোগের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে (Chung et al., 2012)।
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: নিয়মিত এক্সারসাইজের অভাব মেরুদণ্ডের নমনীয়তা হ্রাস করতে পারে এবং ব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে (Passalent et al., 2010)।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অপর্যাপ্ত পুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে, যা অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে (Mauro et al., 2020)।
লক্ষণ ও উপসর্গ (Symptoms)

১. ঘাড়, পিঠ ও কোমরে ভিতরে ব্যথা: অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এর প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো পিঠ, কোমর ও নিতম্বের ভিতরে ব্যথা এবং কাঠিন্যতা, যা সকালে বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর বেশি অনুভূত হয়। এই ব্যথা সাধারণত চলাফেরা বা এক্সারসাইজের মাধ্যমে কমে যায়, কিন্তু বিশ্রামে বাড়ে (Sieper et al., 2009)।
২. জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া: মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলোতে প্রদাহের ফলে সেগুলো শক্ত ও অনমনীয় হয়ে যায়, যা মেরুদণ্ডের নমনীয়তা হ্রাস করে এবং চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করে (Braun & Sieper, 2007)।
৩. বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট: রোগটি রিব-কেইজের জয়েন্টগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এটি ফুসফুসের প্রসারণ সীমিত করে, ফলে রোগীরা গভীর শ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন (van der Heijde et al., 2017)।
৪. কুঁজো হয়ে যাওয়া বা শরীরের গঠন বিকৃতি: রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একত্রিত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা পরিবর্তিত হয়ে কুঁজো হয়ে যেতে পারে।
৫. চোখে প্রদাহ (ইরিটিস, ইউভাইটিস): অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে ইউভাইটিস বা চোখের প্রদাহ দেখা যায়, যা চোখের লালচে ভাব, ব্যথা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা এবং ঝাপসা দৃষ্টির কারণ হতে পারে (Stolwijk et al., 2015)।
৬. ক্লান্তিভাব ও রাত্রে ঘুমের ব্যাঘাত: প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া এবং ব্যথার কারণে রোগীরা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এছাড়া, রাতে ব্যথা বেড়ে যাওয়া ও অস্বস্তির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা ক্লান্তিভাব আরও বাড়িয়ে তোলে (Rudwaleit et al., 2009)।
রোগ নির্ণয় (Diagnosis)
১. এক্স-রে ও এমআরআই (X-ray & MRI)
এক্স–রে: মেরুদণ্ড ও স্যাক্রোইলিয়াক (SI) জয়েন্টে প্রদাহজনিত পরিবর্তন বা হাড়ের সংযুক্তি (ankylosis) নির্ণয়ে এক্স-রে ব্যবহৃত হয়। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই পরিবর্তনগুলো এক্স-রে-তে স্পষ্ট নাও হতে পারে (Rudwaleit et al., 2009)।
এমআরআই: প্রাথমিক পর্যায়ে প্রদাহ শনাক্ত করতে এমআরআই অত্যন্ত কার্যকর। এটি SI জয়েন্ট ও মেরুদণ্ডে প্রদাহজনিত পরিবর্তনগুলি বিস্তারিতভাবে প্রদর্শন করে, যা এক্স-রে-তে দেখা যায় না (Sieper et al., 2009)।
২. HLA-B27 জিন পরীক্ষা
HLA-B27 একটি জেনেটিক মার্কার, যা অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৮০-৯০% ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে। এই জিনের উপস্থিতি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তবে এটি একমাত্র নির্ণায়ক নয়, কারণ HLA-B27 পজিটিভ হলেও সবাই অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এ আক্রান্ত হন না (Brown et al., 2016)।
৩. রক্তের প্রদাহ সূচক (ESR ও CRP)
ESR (Erythrocyte Sedimentation Rate) ওCRP (C-reactive Protein): এই দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে প্রদাহের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের মধ্যে এই মানগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে এগুলো অ-নির্দিষ্ট এবং অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি পেতে পারে (Braun & Sieper, 2007)।
৪. ফিজিক্যাল ফাংশনাল স্কোর (BASDAI ও BASFI)
BASDAI (Bath Ankylosing Spondylitis Disease Activity Index): এই স্কোরের মাধ্যমে রোগের সক্রিয়তা নির্ণয় করা হয়। এটি রোগীর ক্লান্তি, ব্যথা, জয়েন্টের ফোলা, এবং সকালের কঠোরতা মূল্যায়ন করে।
BASFI (Bath Ankylosing Spondylitis Functional Index): এই স্কোরের মাধ্যমে রোগীর দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়, যেমন হাঁটা, বসা, দাঁড়ানো ইত্যাদি (van der Heijde et al., 2017)।
চিকিৎসার ধরন (Treatment Approaches)

(ক) ঔষধগত চিকিৎসা (Pharmacological Treatment)
• NSAIDs (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs)
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে NSAIDs যেমন ইবুপ্রোফেন ও ন্যাপ্রোক্সেন ব্যবহৃত হয়, যা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে, যেমন হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা।
• DMARDs (Disease-Modifying Anti-Rheumatic Drugs)
সালফাসালাজিন এবং মেথোট্রেক্সেট peripheral joints (যেমন হাঁটু, গোড়ালি) আক্রান্ত হলে ব্যবহৃত হয়। তবে, axial involvement (মেরুদণ্ড ও SI জয়েন্ট) এর ক্ষেত্রে এদের কার্যকারিতা সীমিত।
• Biologics
যখন NSAIDs কার্যকর হয় না, তখন Biologics ব্যবহৃত হয়, যেমন:
- Anti-TNF এজেন্টস: ইনফ্লিক্সিম্যাব, এটানারসেপ্ট, অ্যাডালিম্যুম্যাব ইত্যাদি, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- IL-17 ইনহিবিটারস: সেকুকিনুম্যাব এবং ইক্সেকিজুম্যাব, যা ইমিউন প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
• Corticosteroids
প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে স্বল্পমেয়াদী corticosteroids ব্যবহৃত হয়। তবে, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে, যেমন সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, হাড় ক্ষয় ইত্যাদি।
(খ) ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন (Physiotherapy & Rehabilitation)
ফিজিওথেরাপি অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যথা কমাতে, নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে এবং দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে (Dagfinrud et al., 2008)।
- স্ট্রেচিং ও মবিলাইজেশন এক্সারসাইজ: মেরুদণ্ডের নমনীয়তা রক্ষা করে।
- Posture correction: সঠিক ভঙ্গিমা শিখানো হয়, যা কুঁজো হওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- Breathing exercises: বুকে ব্যথা বা স্টিফনেস কমাতে সাহায্য করে।
(গ) অস্ত্রোপচার (Surgical Intervention)
যখন ঔষধ ও ফিজিওথেরাপি পর্যাপ্ত নয়, তখন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়:
- Hip replacement: হিপ জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিস্থাপন করা হয়।
- Spinal osteotomy: মেরুদণ্ডের বিকৃতি সংশোধনের জন্য হাড় কেটে পুনঃসংযোজন করা হয়।
ASPC Manipulation Therapy এর ভূমিকা

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ, যা মেরুদণ্ড ও স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টকে আক্রান্ত করে। এই রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি ও ম্যানুয়াল থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের Agrani Specialized Physiotherapy Centre (ASPC) এই ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান, যা ডা. এম শাহাদাত হোসেন (পিটি) এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
ASPC-এর চিকিৎসা পদ্ধতি
১. SDM (Structural Diagnosis & Management)
SDM একটি কাঠামোগত এসেসমেন্ট পদ্ধতি, যা রোগীর মেরুদণ্ড ও জয়েন্টের বায়োমেকানিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যথার মূল কারণ নির্ণয় করে। এই পদ্ধতি মেরুদণ্ডের গঠনগত সমস্যা চিহ্নিত করে এবং উপযুক্ত থেরাপি নির্ধারণে সহায়তা করে।
২. ম্যানিপুলেশন থেরাপি
ASPC-তে মেরুদণ্ডের জয়েন্ট ও সফট টিস্যুতে ম্যানুয়াল থেরাপি টেকনিক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যথা, স্টিফনেস ও নার্ভ চাপ লাগা কমানো হয়। এই থেরাপি PLID, স্পন্ডিলাইটিস, সায়াটিকা এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডজনিত সমস্যার জন্য কার্যকর।
ASPC-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য
- সার্জারি ছাড়াই উন্নত চিকিৎসা: PLID, স্পন্ডিলাইটিস ও জয়েন্ট ব্যথার জন্য অপারেশন ছাড়াই উন্নত চিকিৎসা প্রদান।
- আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট: ASPC-এর থেরাপিস্টরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যা রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করে।
- রোগীর সন্তুষ্টি ও ফলাফল: চিকিৎসার ফলাফল রোগীদের ব্যথা হ্রাস, গঠন ঠিক রাখা, এবং দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনে।
জীবনধারার পরিবর্তন ও সেলফ-কেয়ার (Lifestyle Modification & Self-Care)

(ক) নিয়মিত এক্সারসাইজ: ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বজায় রাখতে এবং ব্যথা ও কাঠিন্যতা কমাতে সহায়ক। অল্প পরিশ্রমের এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম এবং তাই চি এই রোগীদের জন্য উপকারী। নিয়মিত এক্সারসাইজ রোগীদের দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং কাজের অক্ষমতা হ্রাস করে (Passalent et al., 2010)।
(খ) সঠিক ভঙ্গিমা বজায় রাখা: সঠিক ভঙ্গিমায় বসা, দাঁড়ানো এবং ঘুমানো মেরুদণ্ডের বিকৃতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য সঠিক ভঙ্গিমা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বক্রতা প্রতিরোধ করতে পারে (van der Heijde et al., 2017)।
(গ) ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ড ও জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথা ও প্রদাহ বাড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত এক্সারাইজের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য উপকারী (Mauro et al., 2020)।
(ঘ) ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান এবং মদ্যপান অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান মেরুদণ্ডের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে এবং রোগের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে পারে। মদ্যপান হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে এবং ওষুধের কার্যকারিতা কমায় (Chung et al., 2012)।
(ঙ) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ প্রদাহ বৃদ্ধি করে, যা অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস-এর উপসর্গগুলোকে খারাপ করতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক (Budgell, 2000)।
(চ) পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত এবং ভাল মানের ঘুম অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাব ক্লান্তি, ব্যথা এবং প্রদাহ বাড়াতে পারে। প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত (Rudwaleit et al., 2009)।
উপসংহার
স্পন্ডিলাইটিস একটি জটিল, দীর্ঘস্থায়ী এবং জীবনব্যাপী চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন ব্যাধি। এটি পুরোপুরিভাবে নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, শরীরের গঠন রক্ষা এবং জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব। ASPC-এর মতো আধুনিক ম্যানিপুলেশন থেরাপি সেন্টার সমূহ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- পেটের বাম পাশে ব্যথা কমানোর উপায় - June 19, 2025
- কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কী? - June 19, 2025
- মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোক: ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ - June 18, 2025