এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) হলো মেরুদণ্ড এবং শারীরিক জয়েন্টগুলোর একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যা সাধারণত কিশোর বা তরুণ বয়সে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে চলাচলে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এটি একটি বাতজনিত রোগ, যেখানে রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই হাড় ও লিগামেন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে মেরুদণ্ড ও স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টে। ধীরে ধীরে এই প্রদাহ ফিউশনের মাধ্যমে মেরুদণ্ডকে শক্ত করে দেয়, ফলে রোগীর দৈনন্দিন কাজকর্ম কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজে দিনদিন এই রোগের প্রভাব বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন ও জিনগত প্রবণতা এই রোগের অন্যতম কারন হিসেবে বিবেচিত হয়।
রোগের কারণ ও প্যাথোফিজিওলজি
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) প্রদাহজনিত রোগ, যার সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি নির্ধারিত নয়। তবে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এই রোগে জিনগত, ইমিউনোলজিক এবং পরিবেশগত উপাদানসমূহ একযোগে ভূমিকা পালন করে।
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসে জিনগত প্রভাব ও HLA-B27 এর ভূমিকা
রোগটির সাথে HLA-B27 জিনের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি আলোচিত। দেখা গেছে, যাদের শরীরে এই জিনটি বিদ্যমান, তাদের মধ্যে এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে এ রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৮০–৯০% রোগীর শরীরে HLA-B27 পাওয়া যায় (Reveille, 2012, Arthritis Research & Therapy)। যদিও এই জিন থাকা মানেই রোগ হবে তা নয়, তবে এটি একটি বড় কারণ। তাছাড়া, পারিবারিক ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারের কারো এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় (Brown et al., 2016, The Lancet).
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: কেন শরীর নিজেকেই আক্রমণ করে?
এ রোগকে অনেক সময় অটোইমিউন রোগ হিসেবে ধরা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষতিকর উপাদানকে আক্রমণ করে। কিন্তু এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজের স্পাইন ও স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টের টিস্যুতে আক্রমণ চালায়। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী সিস্টেমিক ইনফ্লেমেশন তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাড় ও লিগামেন্টে গঠনগত পরিবর্তন আনে (Sieper & Poddubnyy, 2017, The Lancet). এই প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া রোগীর ব্যথা, অস্বস্তি এবং চলাচল সীমিত হওয়ার মূল কারণ।
পরিবেশগত ও সংক্রমণমূলক কারণ
শুধু জিনগত উপাদান বা ইমিউন প্রতিক্রিয়া নয়, পরিবেশগত ও সংক্রমণজনিত কারনেও হতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সংক্রমণ (যেমন Klebsiella pneumoniae) বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ইমিউন সিস্টেমকে অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় করে। এছাড়া আধুনিক বায়োসাইকোসোশাল মডেল অনুযায়ী রোগের অগ্রগতিতে শুধু জীববৈজ্ঞানিক নয়, বরং মানসিক চাপ, জীবনযাত্রার ধরণ, খাদ্যাভ্যাস ও সামাজিক প্রভাবও সমানভাবে কার্যকর।
উপসর্গ ও রোগের গতি
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যার উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্রতা বাড়তে থাকে। রোগটি কেবলমাত্র মেরুদণ্ডকেন্দ্রিক নয়, বরং এটি পুরো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রধান উপসর্গ: কিভাবে চিনবেন এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের শুরু?
রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোমর ও নীচের পিঠের ব্যথা, যা সাধারণত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পরে বেশি অনুভূত হয়। এই ব্যথা স্বাভাবিক মেকানিক্যাল ব্যথার মতো নয়; বরং এটি ইনফ্লেমেটরি ব্যাক পেইন নামে পরিচিত, যা কিছুক্ষণ চলাফেরা বা হালকা ব্যায়ামের পর কিছুটা কমে আসে (Sieper et al., 2009, Annals of the Rheumatic Diseases). এছাড়া ঘাড় ও হিপ জয়েন্টে শক্তভাব (stiffness) অনুভব করা যায়, যা অনেক সময় রোগীকে হাঁটাচলায় বা বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে ব্যথিত ও সীমাবদ্ধ করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে রোগী তার গায়ের গতিশীলতা হারাতে থাকে, বিশেষ করে মেরুদণ্ড, ঘাড়, ও কোমর বাঁকানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়।
মেরুদণ্ড ও শরীরে গঠনগত পরিবর্তন: সময়ের সাথে কী ঘটে?
রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মেরুদণ্ডে গঠনগত পরিবর্তন। স্যাক্রো-ইলিয়াক জয়েন্টে প্রদাহের কারণে ফিউশন বা জয়েন্ট একত্রে জোড়া লেগে যায়, যা ধীরে ধীরে স্পাইন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ এবং লিগামেন্টস ও জয়েন্ট ক্যাপসুলে ক্যালসিয়াম জমার ফলে স্পাইন একসময় শক্ত ও অচল হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে বলা হয় “বাঁশের মতো মেরুদণ্ড” (Bamboo spine)—কারণ এক্স-রেতে স্পাইন দেখতে বাঁশের মতো পরপর সংযুক্ত দেখায় (Braun & Sieper, 2007, The Lancet).
হিপ, শোল্ডার থেকে হার্ট: অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে জটিলতা
AS শুধু জয়েন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও এর প্রভাব পড়ে। প্রায় ৩০-৪০% রোগীর ক্ষেত্রে চোখে ইউভাইটিস (Uveitis) দেখা দেয়, যা চোখের প্রদাহজনিত একটি জটিলতা এবং হঠাৎ চোখে ব্যথা, লালভাব ও ঝাপসা দেখার কারণ হতে পারে। এছাড়া কিছু রোগীর হৃদযন্ত্রের ভালভ বা কন্ডাকশন সিস্টেমে প্রদাহ দেখা যেতে পারে, যার ফলে হৃদপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। একইভাবে ফুসফুসে প্রদাহ বা ফাইব্রোসিস তৈরি হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা যেমন ক্রোনিক ডায়রিয়া বা ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD), এবং কিডনির ফাংশনে পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে।
নিউরোলজিকাল জটিলতা
যখন মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলো ফিউশনের কারণে শক্ত হয়ে যায়, তখন স্পাইনাল স্টেনোসিস দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় স্পাইনাল কর্ড বা নার্ভ রুটের ওপর চাপ পড়ে এবং রোগীর হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঝিনঝিন অনুভব, বা দুর্বলতা দেখা দেয়। কখনো কখনো ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা, হাটার সময় পা টেনে হাটার প্রবণতাও দেখা দেয়। এসব উপসর্গ স্নায়ুর উপর সরাসরি চাপের কারণে হয়ে থাকে, যা উপেক্ষা করলে স্থায়ী অক্ষমতা পর্যন্ত হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতি
ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট
প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস ও ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করে রোগ শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে ব্যথা ও পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য, কারণ ইনফ্লেমেটরি ব্যাক পেইন সাধারণত সকালে বেশি হয় এবং কাজকর্ম শুরু করলে কিছুটা কমে যায়। এছাড়া স্পাইন মুভমেন্ট স্কোর যেমন Schober’s test দ্বারা একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক মেরুদণ্ডের নমনীয়তা কতটা কমেছে তা নির্ণয় করা হয়। এসব ক্লিনিক্যাল সূচক রোগের কার্যকারিতা ও অগ্রগতির সঠিক রেজাল্ট দেয়।
রেডিওলজিক্যাল ও ইমেজিং পরীক্ষা
রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইমেজিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এক্স–রে: প্রথমদিকে স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টে প্রদাহ বা স্যাক্রোইলিয়াইটিস শনাক্ত করা যায়। তবে এক্স-রে-তে পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে সময় লাগে, এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় নাও হতে পারে।
MRI: এটি রোগ নির্ণয়ের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। MRI দ্বারা প্রদাহজনিত লেশন, হাড়ের মজ্জায় ফোলা (bone marrow edema), এবং প্রাথমিক পর্যায়ের ইনফ্লেমেশন ধরা যায়।
CT scan: হাড়ের ক্ষয়, নতুন হাড় গঠন বা ফিউশন বিস্তারিতভাবে দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। যদিও রেডিয়েশন এক্সপোজার বেশি হওয়ায় এটি সীমিত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
ল্যাবরেটরি পরীক্ষাও রোগ নির্ণয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ESR (Erythrocyte Sedimentation Rate) ও CRP (C – reactive protein): এগুলো ইনফ্লামেশন নির্ণয় করে। রোগের তীব্রতা ও সক্রিয়তা বুঝতে এই পরীক্ষা নিয়মিত করা হয়।
HLA-B27: যাদের রক্তে HLA-B27 পজিটিভ থাকে তাদের রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। যদিও এটি এককভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়, তবে শক্তিশালী নির্দেশক।
Rheumatoid Factor (RF): সাধারণত এই পরীক্ষা নেগেটিভ থাকে, যা AS-কে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে পৃথক করতে সাহায্য করে।
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (AS) দীর্ঘমেয়াদী হলেও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত—ঔষধ, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন, জীবনধারার পরিবর্তন এবং সার্জারি।
ঔষধ নির্ভর চিকিৎসা
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী NSAIDs, TNF-α ব্লকার যেমন Etanercept ও Inflixima DMARDs (Disease Modifying Anti-Rheumatic Drugs) যেমন Sulfasalazine প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করে।
ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন
ASPC Manipulation Therapy Centre-এ এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ফিজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট এর মাধ্যমে। এই অ্যাসেসমেন্টে রোগীর মেরুদণ্ড কতটা নড়াচড়া করতে পারছে (spinal mobility), পেশীতে কতটা শক্তভাব রয়েছে, জয়েন্টগুলো কীভাবে কাজ করছে, রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস কতটা সহজ বা সীমাবদ্ধ, এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম (যেমন বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা বা ঝুঁকে কাজ করা) কতটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই এসেসমেন্টের মাধ্যমে রোগীর সমস্যার প্রকৃত অবস্থা ও তার তীব্রতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
পরবর্তী ধাপে কারেশন থেরাপি এবং ম্যানুয়াল ও ম্যানিপুলেশন টেকনিক প্রয়োগ করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত মেরুদণ্ডের শক্তভাব (stiffness) ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে তাকে আরও নমনীয় করে তোলে। ফলে রোগী আগের তুলনায় সহজে নড়াচড়া করতে পারেন, ব্যথা কমে যায় এবং চলাফেরায় আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
শুধু মেরুদণ্ড নয়, এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের কারণে শরীরের অন্যান্য অংশেও বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যেমন—হিপ জয়েন্টে ব্যথা ও শক্তভাব, শোল্ডারের নড়াচড়া কমে যাওয়া, হাঁটুর ব্যথা ও ফোলা, এমনকি বুক প্রসারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, যা রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসকেও প্রভাবিত করে। ASPC-তে বিশেষায়িত থেরাপির মাধ্যমে এই জয়েন্টগুলোর সমস্যাগুলো একে একে সংশোধন করা হয়। প্রতিটি ধাপে রোগীর জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যাতে শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতা ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হয়।
ফলে, নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে রোগী কেবল মেরুদণ্ডেই নয়, বরং পুরো শরীরেই গতিশীলতা ও স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পান। এভাবে ASPC Manipulation Therapy Centre রোগীকে ধাপে ধাপে ব্যথামুক্ত ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
জীবনধারাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা
রোগ নিয়ন্ত্রণে জীবনধারার পরিবর্তনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের স্ট্রেচিং ও অ্যারোবিক এক্সারসাইজ জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখে এবং প্রদাহ কমায়। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাদ্য যেমন ফল, শাকসবজি ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ উপকারী। মানসিক চাপ প্রদাহ বাড়াতে পারে, তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এছাড়া ধূমপান রোগের অগ্রগতি দ্রুত করে—তাই ধূমপান বর্জন অপরিহার্য। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম রোগীর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
সার্জিকাল চিকিৎসা
যেসব রোগীর হিপ জয়েন্ট সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় বা মেরুদণ্ডের গুরুতর বিকৃতি দেখা দেয়, তাদের জন্য সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি রোগীর হাঁটা ও বসার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর। এছাড়া গুরুতর ক্ষেত্রে স্পাইনাল কারেকটিভ সার্জারি করে মেরুদণ্ডের বিকৃতি কিছুটা সংশোধন করে এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করা সম্ভব হয়।
রোগের পূর্বাভাস ও প্রতিরোধ
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস এমন একটি রোগ যা সময়মতো শনাক্ত করা গেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে প্রদাহজনিত পরিবর্তন ও মেরুদণ্ডের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো যায়। এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ, বিশেষ করে রিউমাটোলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের ফলোআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে নিয়মিত স্পাইনাল এক্সারসাইজ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করে এবং চলাফেরার ক্ষমতা দীর্ঘদিন অক্ষুণ্ণ রাখে (Dagfinrud et al., 2008, Cochrane Database of Systematic Reviews)।
উপসংহার
এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (এএস) একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ, যা একবার শুরু হলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়; তবে আধুনিক চিকিৎসা, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি এবং সক্রিয় জীবনধারা অনুসরণের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই সঙ্গে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।
তথ্যসূত্র
- Reveille, J.D., 2012. Genetics of spondyloarthritis—beyond the MHC. Nature Reviews Rheumatology, 8(5), pp.296-304. https://www.nature.com/articles/nrrheum.2012.41
- Brown, M.A., Kennedy, L.G., Macgregor, A.J., Darke, C., Duncan, E., Shatford, J.L., Taylor, A., Calin, A. and Wordsworth, P., 1997. Susceptibility to ankylosing spondylitis in twins the role of genes, HLA, and the environment. Arthritis & Rheumatism, 40(10), pp.1823-1828. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/art.1780401015
- Sieper, J. and Poddubnyy, D., 2017. Axial spondyloarthritis. The Lancet, 390(10089), pp.73-84. https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(16)31591-4/abstract
- Rudwaleit, M.V., Van Der Heijde, D., Landewé, R., Listing, J., Akkoc, N., Brandt, J., Braun, J., Chou, C.T., Collantes-Estevez, E., Dougados, M. and Huang, F., 2009. The development of Assessment of SpondyloArthritis international Society classification criteria for axial spondyloarthritis (part II): validation and final selection. Annals of the rheumatic diseases, 68(6), pp.777-783. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0003496724217404
- Braun, J. and Sieper, J., 2007. Ankylosing spondylitis. The Lancet, 369(9570), pp.1379-1390. https://www.thelancet.com/article/S0140-6736(07)60635-7/abstract
- Dagfinrud, H., Hagen, K.B. and Kvien, T.K., 2008. Physiotherapy interventions for ankylosing spondylitis. Cochrane database of systematic reviews, (1). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD002822.pub3/abstract





