ডিস্ক প্রলাপ্স বা হার্নিয়েটেড ডিস্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ও বিভ্রান্তিকর ভুল ধারণাগুলোর মধ্যে একটি হলো: ডিস্ক প্রলাপ্স হলে সার্জারি ছাড়া নিরাময় সম্ভব নয় বা সার্জারি না করলে আজীবন ব্যথা থাকবে। তবে বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০-৯৫% ডিস্ক প্রলাপ্স রোগী কোনো সার্জারি ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান (Hwang et al., 2018)

চিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কেবলমাত্র কিছু গুরুতর ও জটিল ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হয়, যা মোট রোগীর ৫-১০% এর বেশি নয় (Weber et al., 2017)

তাহলে এই ভুল ধারণার পেছনের কারণ কী? কেন অনেক মানুষ মনে করেন যে ডিস্ক প্রলাপ্স হলে সার্জারি ছাড়া উপায় নেই? আসুন, এই ভুল ধারণার বিভিন্ন কারণ ও বাস্তব সত্য বিশদভাবে বিশ্লেষণ করি।

Table of Contents hide
5 ডিস্ক প্রলাপ্স সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

ডিস্ক প্রলাপ্স কী এবং এটি কীভাবে হয়?

মেরুদণ্ড (Spine) মূলত একাধিক কশেরুকা (Vertebra) দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে নরম জেলির মতো পদার্থ (Intervertebral Disc) থাকে। এই ডিস্কগুলো শক অ্যাবজর্বার (Shock Absorber) বা স্প্রিং এর মতো কাজ করে এবং মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।

ডিস্ক প্রলাপ্স বা হার্নিয়েটেড ডিস্ক তখনই হয় যখন এই ডিস্কের বাইরের স্তর দুর্বল বা ফেটে গিয়ে ভেতরের জেলি বেরিয়ে আসে। এটি পার্শ্ববর্তী নার্ভ বা রগের ওপর চাপ দিতে পারে, ফলে ব্যথা, ঝিনঝিন অনুভূতি, অসাড়তা (Numbness) এবং পেশি দুর্বলতা দেখা দেয়।

সার্জারি নিয়ে ভুল ধারণার কারণসমূহ

১. সাধারণ মানুষের ধারণা: মেরুদণ্ডের সমস্যা মানেই সার্জারি!

অনেকেরই ধারণা, মেরুদণ্ডে কোনো সমস্যা হলে সার্জারি ছাড়া সেটি সারানো সম্ভব নয়

বাস্তবতা: ডিস্ক প্রলাপ্সের চিকিৎসার প্রথম ধাপই হলো নন-সার্জিক্যাল পদ্ধতি, যার মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, এক্সারসাইজ এবং জীবনধারা পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব পদ্ধতিই সফলভাবে রোগীকে সুস্থ করে তোলে।

২. ভয় ও অজ্ঞতা: “ডিস্কের সমস্যা মানেই স্থায়ী ব্যথা থাকবে”

রোগীরা প্রায়শই ভয় পান যে ডিস্কের সমস্যা হয়েছে মানে আমি আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবো না, এবং এটাই তাদের দ্রুত সার্জারির দিকে ঠেলে দেয়।

বাস্তবতা: ডিস্ক প্রলাপ্স হলে ব্যথা শুরুতে বেশ তীব্র হতে পারে তবে বেশিরভাগ রোগী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন, এবং ব্যথা ধাপে ধাপে কমে যায় (Alshammari et al., 2021)। চিকিৎসা গ্রহণের পর অনেক রোগী সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন

৩. কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হয়

যদিও বেশিরভাগ রোগী সার্জারি ছাড়াই সুস্থ হয়ে যান, তবে কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি ৬-১২ সপ্তাহের নন-সার্জিক্যাল চিকিৎসার পরও ব্যথা কমে না
  • যদি রোগীর পায়ের বা হাতের পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করা কঠিন হয়
  • যদি রোগীর প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় (Cauda Equina Syndrome)
  • যদি ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে দৈনন্দিন কাজ করা সম্ভব না হয়

বাস্তবতা: উপরোক্ত সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু এটি ডিস্ক প্রলাপ্স রোগীদের মাত্র ৫-১০% ক্ষেত্রে হয়ে থাকে

৪. কিছু ডাক্তার ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দেয়

কিছু ডাক্তার এবং হাসপাতাল রোগীদের সার্জারির পরামর্শ দিতে বেশি আগ্রহী, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং লাভজনক (Weber et al., 2017)। ফলে তারা রোগীদের বলে “সার্জারি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই”

বাস্তবতা: রোগীকে অবশ্যই দ্বিতীয় মতামত (Second Opinion) নেওয়া উচিত এবং সার্জারি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি চেষ্টা করা উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এক্সারসাইজ ও ফিজিওথেরাপি দিয়েই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়

ডিস্ক প্রলাপ্সের নন-সার্জিক্যাল চিকিৎসা (প্রথম ধাপ)

যেহেতু বেশিরভাগ ডিস্ক প্রলাপ্স রোগী সার্জারি ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাই চিকিৎসার প্রথম ধাপে নন-সার্জিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

১. বিশ্রাম ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিবর্তন

  • প্রচণ্ড ব্যথার সময় কয়েকদিন বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।
  • তবে দীর্ঘসময় শুয়ে থাকলেও পেশি দুর্বল হয়ে যায়, তাই যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসতে হবে।
  • ভারী বস্তু তোলা বা মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. ব্যথানাশক ওষুধ ও চিকিৎসা

  • NSAIDs (যেমন ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন) ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যেতে পারে।
  • কখনও কখনও চিকিৎসক স্টেরয়েড ইনজেকশন (Epidural Steroid Injection) দিতে পারেন যা প্রদাহ কমায়।

৩. ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি ডিস্ক প্রলাপ্সের অন্যতম কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

  • স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ – মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
  • কোর স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ – কোমরের পেশিকে শক্তিশালী করলে ডিস্কের ওপর চাপ কমে যায়।
  • ম্যানুয়াল থেরাপি – ম্যানুয়াল ও ম্যানিপুলেশন থেরাপি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
  • প্রদাহ কমাতে বরফ দেওয়া যেতে পারে।

৪. জীবনধারা পরিবর্তন

  • সঠিক অঙ্গবিন্যাস (Posture) বজায় রাখা।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
  • সঠিকভাবে বসা এবং ভারী বস্তু তোলার নিয়ম মেনে চলা (Weber et al., 2017)

বেশিরভাগ রোগী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে এসব চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ডিস্ক প্রলাপ্স প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু এটি একটি বহুল প্রচলিত সমস্যা, তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

১. এক্সারসাইজ ও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বজায় রাখা

  • নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে মেরুদণ্ডের পেশিগুলো শক্তিশালী থাকে এবং ডিস্কের ওপর চাপ কম পড়ে। Daniela (2017) গবেষণায় দেখিয়েছেন, সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি মেরুদণ্ডের ডিস্ক হেলথ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • হাঁটা, সাঁতার কাটা, এবং স্ট্রেচিং ডিস্কের সুস্থতার জন্য উপকারী। Deyo & Mirza (2016) গবেষণায় দেখিয়েছেন, এক্সারসাইজ না করলে ডিস্কের বয়সজনিত ক্ষয় অনেক দ্রুত হয়।

২. সঠিক অঙ্গবিন্যাস বজায় রাখা

  • সোজা হয়ে বসা ও দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মেরুদণ্ডের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কমায় (Jhawar et al., 2006)
  • কাজের সময় Lumbar Support বা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করলে মেরুদণ্ডের ডিস্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব (Siccoli et al., 2022)

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

  • গবেষণায় দেখা গেছে, বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বেশি হলে ডিস্ক প্রলাপ্সের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায় (Ucar et al., 2021)
  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে মেরুদণ্ডের ডিস্কের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ক্ষয়প্রক্রিয়া দ্রুততর করে (Schumann et al., 2010)

৪. ভারী বস্তু তোলার সঠিক কৌশল জানা

  • গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক নিয়মে ভারী বস্তু না তুললে ডিস্কের ওপর সরাসরি চাপ পড়ে এবং এটি প্রলাপ্সের কারণ হতে পারে (Zielinska et al., 2021)
  • হাঁটু ভাঁজ করে বসে ভারী জিনিস তুলতে হবে, সামনে ঝুঁকে নয় (Kara et al., 2005)

ডিস্ক প্রলাপ্স সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

ডিস্ক প্রলাপ্স সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

১. ডিস্ক প্রলাপ্স কি?

মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকা নরম জেলির মতো অংশকে ডিস্ক বলা হয়। যখন এই ডিস্ক তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়, তখন তাকে ডিস্ক প্রলাপ্স বলা হয়।

২. ডিস্ক প্রলাপ্স কেন হয়?

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিস্কগুলো দুর্বল হতে থাকে। অতিরিক্ত ওজন, ভারী জিনিস তোলা, হঠাৎ বাঁকা হওয়া বা সামনে ঝোকা, এবং ধূমপানও ডিস্ক প্রলাপ্সের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. ডিস্ক প্রলাপ্স হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

ডিস্ক প্রলাপ্সের প্রধান লক্ষণ হলো কোমরের ব্যথা, যা নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. ডিস্ক প্রলাপ্স কি নিজে নিজেই সেরে যায়?

হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে ডিস্ক প্রলাপ্স নিজে নিজেই সেরে যায়। বিশ্রাম, ব্যথা কমানোর ওষুধ, এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে, যদি ব্যথা তীব্র হয় বা স্নায়ুর কার্যকারিতা কমে যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৬. ডিস্ক প্রলাপ্সের চিকিৎসায় কি কি পদ্ধতি আছে?

ডিস্ক প্রলাপ্সের চিকিৎসায় কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে:
বিশ্রাম ও ওষুধ: ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ এবং পেশি শিথিল করার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি: বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট এর তত্ত্বাবধানে ম্যানুয়াল থেরাপি নেওয়ার পরে তারা কিছু এক্সারসাইজ শিখিয়ে দেবেন, যা আপনার মেরুদণ্ডের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। ফলে রোগী দ্রুত ডিস্ক প্রলাপ্স থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন।
সার্জারি: যদি অন্যান্য চিকিৎসায় কাজ না হয়, তবে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

৭. সার্জারি কি সবসময় প্রয়োজন হয়?

না, ডিস্ক প্রলাপ্সের ক্ষেত্রে সার্জারি সবসময় প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ মানুষ কনজারভেটিভ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যান। তবে, কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:

1. যদি ব্যথা ৬-১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে এবং কনজারভেটিভ চিকিৎসায় কাজ না হয়।
2. যদি নার্ভের কার্যকারিতা কমে যায় (যেমন, পা দুর্বল হয়ে যাওয়া বা প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হওয়া)।
3. যদি ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠে।

৮. ডিস্ক প্রলাপ্স প্রতিরোধের উপায় কি?

ডিস্ক প্রলাপ্স প্রতিরোধের জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:

1. সঠিক ভঙ্গিতে বসুন এবং দাঁড়ান।
2. ভারী জিনিস তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন, কোমর বাঁকিয়ে নয়।
3. নিয়মিত ব্যায়াম করুন, বিশেষ করে পেটের এবং কোমড়ের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম।
4. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
5. ধূমপান পরিহার করুন।

৯. ডিস্ক প্রলাপ্স হলে কি ধরনের এক্সারসাইজ করা উচিত?

ডিস্ক প্রলাপ্স হলে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সারসাইজ করা উচিত। তারা আপনার অসুস্থতার জন্য উপযুক্ত এক্সারসাইজ নির্বাচন করতে সাহায্য করবেন। সাধারণত, পেটের এবং কোমড়ের পেশি শক্তিশালী করার এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং, এবং হাঁটাচলার মতো হালকা এক্সারসাইজ উপকারী হতে পারে।

১০. ডিস্ক প্রলাপ্স কি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য?

হ্যাঁ, ডিস্ক প্রলাপ্স সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

১১. ডিস্ক প্রলাপ্স হওয়ার কারণে কি সারাজীবন ব্যথা থাকবে?

ডিস্ক প্রলাপ্সের জন্য সবসময় দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা হবে এমন কোনো বিষয় নেই। বেশিরভাগ রোগী সঠিক চিকিৎসা, বিশ্রাম এবং এক্সারসাইজের মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। তবে, কিছু রোগী দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যা ফিজিওথেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

১২. ডিস্ক প্রলাপ্স কি তরুণদেরও হতে পারে?

হ্যাঁ, ডিস্ক প্রলাপ্স শুধু বয়স্কদের নয়, তরুণদের মধ্যেও হতে পারে। সঠিকভাবে ভারী বস্তু না তোলা, দীর্ঘসময় বসে থাকার অভ্যাস, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা তৈরি করতে পারে।

১৩. ডিস্ক প্রলাপ্সের ফলে কি পেশি দুর্বল হতে পারে?

হ্যাঁ, ডিস্ক প্রলাপ্সের ফলে নার্ভে চাপ পড়লে পেশি দুর্বল হতে পারে। বিশেষত পায়ে দুর্বলতা, হাঁটাচলার সমস্যা, এবং পেশির অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

১৪. ডিস্ক প্রলাপ্স হলে কি শারীরিক কার্যক্রমে কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে?

ডিস্ক প্রলাপ্স হলে কিছু সময়ের জন্য শারীরিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে, চিকিৎসার মাধ্যমে এ ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপি ও নিয়মিত এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে শারীরিক কার্যক্রমে আবার পূর্ণ সক্ষমতা ফিরে আসতে পারে।

১৫. কি ধরনের খাবার ডিস্ক প্রলাপ্স রোগীদের জন্য উপকারী?

ডিস্ক প্রলাপ্সের রোগীদের জন্য অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যেমন মাছ, ওয়ালনাট, শাকসবজি, এবং ফলমূল উপকারী হতে পারে। এছাড়া, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, দই এবং পনির মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথা

ডিস্ক প্রলাপ্স মানেই সার্জারি লাগবে – এটি একটি ভুল ধারণা। বেশিরভাগ রোগী সার্জারি ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ডিস্ক প্রলাপ্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই আতঙ্কিত না হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং নিয়ম মেনে চলাই হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322