মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার। মাথা ব্যাথা মূলত দুই প্রকারের হতে পারে: প্রাথমিক বা প্রত্যক্ষ মাথা ব্যাথা এবং সেকেন্ডারি বা পরোক্ষ মাথা ব্যাথা। প্রাথমিক মাথা ব্যাথা হলো এমন ব্যাথা, যে ব্যথার জন্য অন্য কোন শারীরিক সমস্যা দায়ী নয়। এ রকম কয়েক টি উদাহরণ হলো মাইগ্রেন, টেনশন-টাইপ মাথা ব্যাথা, এবং ক্লাস্টার মাথা ব্যাথা। মাইগ্রেন সাধারণত মাথার এক পাশে তীব্র ব্যথা হলে শুরু হয় এবং পাশাপাশি বমি বমি ভাব, আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে।

মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

টেনশন-টাইপ মাথা ব্যাথা হলে সাধারণত মাথার চারপাশে ব্যান্ডের মতো চাপ সৃষ্টি করে এবং এটি স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। ক্লাস্টার মাথা ব্যাথা খুবই তীব্র এবং চোখের চারপাশে বা মাথার এক পাশে হয়, যে ব্যথা একটানা কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে হতে পারে।

সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা হলো এমন ব্যাথা, যা শরীরের অন্য কোনো সমস্যা বা অসুস্থতার কারণে হয়। এই ধরনের ব্যাথা সাধারণত সাইনাস ইনফেকশন, উচ্চ রক্তচাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, বা চোখের সমস্যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, মাথা ব্যাথা গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন ব্রেইন টিউমার, মেনিনজাইটিস, বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথা সাধারণত প্রাইমারি মাথা ব্যাথার তুলনায় বেশি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ

মাথা ব্যাথার কারণ গুলো বেশ বৈচিত্র্যময় এবং প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মাথা ব্যাথার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নিচে মাথা ব্যাথার সাধারণ কিছু কারণ আলোচনা করা হলো:

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ যাবৎ মানসিক চাপ, টেনশন বা স্ট্রেস এ থাকি, তখন এটি শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে মাথা ব্যাথা হতে পারে। এই ধরনের মাথা ব্যাথা কে টেনশন-টাইপ মাথা ব্যাথা বলা হয়, যা মাথার চারপাশে চাপের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে। মানসিক চাপের ফলে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন বেড়ে যায়, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ কে প্রভাবিত করে এবং মাথা ব্যাথা বাড়িয়ে দেয়। অত্যধিক উদ্বেগ বা চিন্তিত থাকলে, মানসিক এবং শারীরিক উভয় ভাবেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে তারতম্য ঘটায় এবং মাথা ব্যাথা বাড়িয়ে দেয়।

ঘুমের অভাব: ঘুমের অভাবে শরীরের কর্টিসল হরমোনের স্তর বেড়ে যায়, যা স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং মাথা ব্যথা কে উদ্দীপিত করে। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এই ধরনের মাথা ব্যাথার প্রকোপ কমানো সম্ভব।

চোখের সমস্যা: দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার স্ক্রিন, মোবাইল, বা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। এই ধরনের ব্যাথা সাধারণত “এস্থেনোপিয়া” বা চোখের ক্লান্তি হিসেবে পরিচিত, যা মাথার সামনের অংশে চাপের মতো ব্যাথার সৃষ্টি করে। এছাড়াও, চশমার প্রয়োজনীয়তা বা সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার না করলেও মাথা ব্যাথা হতে পারে। চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যাগুলি মাইগ্রেন বা অন্যান্য ধরনের মাথা ব্যাথা কে প্রভাবিত করে। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা এবং সঠিক চশমা ব্যবহার করে এই ধরনের মাথা ব্যাথা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ডিহাইড্রেশন: ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানি শূন্যতা মাথা ব্যাথার একটি নগণ্য কিন্তু গুরুত্ব পূর্ণ কারণ। যখন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে না, তখন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যা মাথা ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণে মস্তিষ্কের চারপাশের টিস্যু গুলো সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং মাথা ব্যাথা শুরু হয়। ঘাড় ব্যথার কারণ | মাত্র ১ মিনিটে সমাধান (ভিডিও সহ)

খাদ্যাভ্যাস: কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং পানীয় যেমন ক্যাফেইন, এলকোহল, চকলেট, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার মাইগ্রেন বা অন্যান্য ধরনের মাথা ব্যাথা ট্রিগার করতে পারে। বিশেষত, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ বা হঠাৎ করে ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করলেও মাথা ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও, খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উপস্থিতি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা মাথা ব্যাথার ঝুঁকি বাড়ায় ()।

আরও পড়ুন  আপনার সায়াটিকা থাকলে যে ১০টি ব্যায়াম করবেন না

হরমোনাল পরিবর্তন: মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে মাথা ব্যাথা হতে পারে। মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা, মেনোপজ, এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলের মতো হরমোনাল পরিবর্তনের সময় মাইগ্রেনের মতো মাথা ব্যাথার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রার তারতম্য মস্তিষ্কের রক্তনালী গুলির কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করে, যার ফলে মাথা ব্যাথা উদ্দীপিত হয়। মাসিক চক্রের আগে এবং মাসিক চলাকালীন সময়ে এস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার ফলে অনেক মহিলাদের মাইগ্রেনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হাইপারটেনশন: উচ্চ রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালী গুলি তে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়, যা মাথা ব্যাথার উদ্রেক করতে পারে। এই ধরনের মাথা ব্যাথা সাধারণত মাথার পিছনের দিকে বা গলার উপরের অংশে অনুভূত হয় এবং এটি প্রায়ই একটি মৃদু থেকে তীব্র ব্যাথা হিসেবে দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, হাইপারটেনশন জনিত মাথা ব্যাথা হঠাৎ করে শুরু হতে পারে এবং এর সাথে চোখে ঝাপসা দেখা, বমি বমি ভাব, বা মাথা ঘোরা তে পারে।

মাইগ্রেন: মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের কারণ গুলো জটিল এবং এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে ধারণা করা হয় যে এটি মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ যেমন সেরোটোনিনের তারতম্যের সাথে সম্পর্কিত। মাইগ্রেন প্রায়শই কিছু নির্দিষ্ট কারণ দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়, যেমন মানসিক চাপ, হরমোনাল পরিবর্তন, কিছু খাবার বা পানীয়, ঘুমের অভাব, এবং পরিবেশ গত কারণ। মাইগ্রেনের সাথে প্রায়শই অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি বমি ভাব, বমি, এবং আলো বা শব্দের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদন শীলতা হয়ে থাকে।

সাইনাস ইনফেকশন: সাইনাস হলো মাথার হাড়ের ভেতরে থাকা বায়ু পূর্ণ গহ্বর, যা নাকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যখন এই সাইনাস গুলো তে প্রদাহ বা ইনফেকশন হয়, তখন সাইনাসের ভিতরে স্রাব জমে এবং চাপ সৃষ্টি করে, যা মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। এই ধরনের মাথা ব্যাথা সাধারণত মাথার সামনের দিকে বা চোখের চারপাশে অনুভূত হয় এবং মাথা নিচু করলে বা সামনের দিকে ঝুঁকলে ব্যাথা বৃদ্ধি পেতে পারে। সাইনাস ইনফেকশন জনিত মাথা ব্যাথার সাথে প্রায়শই নাক বন্ধ হওয়া, মুখের চাপ, গলা ব্যথা, এবং জ্বরের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।

আঘাত: মাথায় আঘাত লাগা বা ট্রমা মাথা ব্যাথার একটি গুরুতর কারণ হতে পারে। মাথায় আঘাত লাগার ফলে মস্তিষ্ক বা তার আশেপাশের টিস্যু গুলি তে আঘাতের কারণে মাথা ব্যাথা শুরু হতে পারে। এই ধরনের ব্যাথা সাধারণত মাথায় আঘাতের পর পরই শুরু হয়, তবে কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরেও দেখা দিতে পারে।

মাথা ব্যাথা হলে করনীয়

মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও করণীয় পদক্ষেপ আছে যা দ্রুত উপশম পেতে সহায়ক। গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যথার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে মাথা ব্যথার বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সেগুলো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মাথা ব্যথার চিকিৎসা পদ্ধতি

১. ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ (Over-the-Counter Medications): মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সাধারণ ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যেমন “প্যারাসিটামল (Paracetamol)” এবং “নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs)” যেমন আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) বা ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen)। এগুলো সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং দ্রুত ব্যথা উপশমে সহায়ক।

২. ট্রিপটানস (Triptans): মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ট্রিপটানস (Triptans) যেমন সুমাট্রিপটান (Sumatriptan), রিজাট্রিপটান (Rizatriptan), এবং জোলমিট্রিপটান (Zolmitriptan) একটি সুপরিচিত ওষধ। ট্রিপটানস মাইগ্রেনের আক্রমণ কমাতে এবং মাথার রক্তনালী সংকুচিত করতে কাজ করে, যা মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

৩. অ্যান্টি-সিজার ওষুধ (Anti-Seizure Medications): কিছু অ্যান্টি-সিজার ওষুধ, যেমন “টপিরামেট (Topiramate)” এবং “গ্যাবাপেন্টিন (Gabapentin)”, মাইগ্রেন এবং ক্লাস্টার হেডেকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধ গুলো মস্তিষ্কের নার্ভের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাথা ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টি-সিজার ওষুধ গুলো মাইগ্রেন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে ()।

আরও পড়ুন  শিশুদের হাম কেন হয় এবং শিশুদের হাম হলে কি করনীয়

৪. বেটা ব্লকার (Beta Blockers): বেটা ব্লকার, যেমন “প্রোপ্রানলল (Propranolol)” এবং “মেটোপ্রোলল (Metoprolol)”, মাইগ্রেনের প্রতিরোধ মূলক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধ গুলো রক্তচাপ কমায় এবং মস্তিষ্কের রক্তনালীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যা পুনরাবৃত্তিমূলক মাইগ্রেনের আক্রমণ রোধ করতে সহায়ক।

৫. অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (Antidepressants): কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, যেমন “অ্যামিট্রিপটাইলিন (Amitriptyline)”, টেনশন হেডেক এবং মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধ গুলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং নোরেপিনেফ্রিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট মাইগ্রেন এবং টেনশন হেডেকের প্রতিরোধ মূলক চিকিৎসায় কার্যকর ()।

৬. বায়োফিডব্যাক থেরাপি (Biofeedback Therapy): বায়োফিডব্যাক থেরাপি হল একটি ওষুধ বিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মাথা ব্যথা কমাতে এবং মাথাব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি তে শারীরিক প্রতিক্রিয়া সমূহ যেমন পেশীর উত্তেজনা, হার্ট রেট, এবং শরীরের তাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বায়োফিডব্যাক থেরাপি টেনশন হেডেক এবং মাইগ্রেনের উপশমে সহায়তে করে ()।

৭. অ্যাকুপাংচার (Acupuncture): অ্যাকুপাংচার একটি প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরের নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে সূঁচ ঢুকিয়ে ব্যথা উপশম করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাকুপাংচার মাইগ্রেন এবং টেনশন হেডেকের চিকিৎসায় সাহায্য করে এবং এটি একটি নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত ()।

৮. জীবনধারা পরিবর্তন (Lifestyle Changes): মাথা ব্যথার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় জীবন ধারা পরিবর্তন গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ কমানোর বিভিন্ন কৌশল যেমন যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন মাথা ব্যথার আক্রমণের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে সাহায্য করে।

মাথা ব্যথা কমানোর উপায়

মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য অনেক ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা প্রাকৃতিক ভাবে এবং নিরাপদে ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। এই ঘরোয়া উপায় গুলো সহজেই অনুসরণ করা যায় এবং এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নিচে মাথা যন্ত্রণা কমানোর কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় এবং তাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. পর্যাপ্ত পানি পান করা (Drink Plenty of Water): পানিশূন্যতা (Dehydration) মাথা যন্ত্রণার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং মাথা ব্যথা কমতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পানি পান করা মাথা যন্ত্রণার তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব উভয়ই কমাতে পারে ()।

২. ঠান্ডা বা উষ্ণ সেঁক (Cold or Warm Compress): মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য ঠান্ডা বা উষ্ণ সেঁক অত্যন্ত কার্যকর। ঠান্ডা সেঁক মাথার রক্তনালী গুলির সংকোচন ঘটায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা বিশেষ ভাবে “মাইগ্রেনের” ক্ষেত্রে উপকারী। অন্য দিকে, উষ্ণ সেঁক মাংস পেশী শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে, যা “টেনশন হেডাকের” ক্ষেত্রে কার্যকর।

৩. আদা চা পান করা (Ginger Tea): আদা প্রাকৃতিক ভাবে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণা গুণ সমৃদ্ধ, যা মাথা যন্ত্রণা কমাতে সহায়ক। গবেষকদের মতে, আদার উপাদান মাইগ্রেনের মতো মাথা যন্ত্রণার উপশমে সহায়ক এবং ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে ()। প্রতিদিন এক বা দুই কাপ আদা চা পান করলে মাথা যন্ত্রণা কম হয়।

৪. পিপারমিন্ট অয়েল ব্যবহার (Use Peppermint Oil): পিপারমিন্ট অয়েল মাথা যন্ত্রণা কমাতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কার্যকর। পিপারমিন্ট অয়েলের মেনথল উপাদান ঠান্ডা অনুভূতি প্রদান করে এবং পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে। গবেষণায় বলে যে, পিপারমিন্ট অয়েল টেনশন হেডেকের ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা প্রশমনে সহায়ক ()। কপালে এবং কানের পেছনে কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল মালিশ করলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।

৫. লেবু ও মধুর মিশ্রণ (Lemon and Honey Mixture): লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণাগুণ সমৃদ্ধ, যা মাথা যন্ত্রণা কমাতে সহায়ক। এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং মাথা ব্যথা কমে যায়।

আরও পড়ুন  রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা, টিনিটাস বা কানের ঝিঝি শব্দ এবং ফিজিওথেরাপি

৬. যোগ ব্যায়াম এবং ডিপ ব্রিদিং (Yoga and Deep Breathing): যোগ ব্যায়াম এবং ডিপ ব্রিদিং বা শ্বাসের ব্যায়াম মাথা যন্ত্রণা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এই ধরনের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।

৭. ম্যাসাজ থেরাপি (Massage Therapy): মাথা যন্ত্রণা কমানোর জন্য হালকা ম্যাসাজ একটি অত্যন্ত উপকারী ঘরোয়া পদ্ধতি। কপাল, ঘাড়, এবং মাথার পেছনে হালকা ম্যাসাজ করলে পেশী শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, যা মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৮. চকোলেট বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়ানো (Avoid Chocolate and Caffeinated Drinks): কিছু ক্ষেত্রে চকোলেট বা ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় মাথা যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। গবেষণা বলে, অতি মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করলে মাথা ব্যথার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং এটি মাইগ্রেনের আক্রমণ বাড়াতে পারে ()। তাই মাথা যন্ত্রণা কমাতে এই ধরনের খাবার এড়ানো উচিত।

তথ্যসূত্র

  1. Martin, V.T. and Vij, B., 2016. Diet and headache: part 1.Headache: The Journal of Head and Face Pain56(9), pp.1543-1552. https://headachejournal.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1111/head.12953
  2. Silberstein, S.D., Neto, W., Schmitt, J., Jacobs, D. and MIGR-001 Study Group, 2004. Topiramate in migraine prevention: results of a large controlled trial.Archives of Neurology61(4), pp.490-495. https://jamanetwork.com/journals/jamaneurology/article-abstract/785602
  3. Jackson, J.L., Shimeall, W., Sessums, L., DeZee, K.J., Becher, D., Diemer, M., Berbano, E. and O’Malley, P.G., 2010. Tricyclic antidepressants and headaches: systematic review and meta-analysis.Bmj341. https://www.bmj.com/content/341/bmj.c5222.short
  4. Nestoriuc, Y., Rief, W. and Martin, A., 2008. Meta-analysis of biofeedback for tension-type headache: efficacy, specificity, and treatment moderators.Journal of consulting and clinical psychology76(3), p.379. https://psycnet.apa.org/record/2008-06469-003
  5. Linde, K., Allais, G., Brinkhaus, B., Manheimer, E., Vickers, A. and White, A.R., 2009. Acupuncture for migraine prophylaxis. Cochrane Database of Systematic Reviews, (1). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD001218.pub2/abstract
  6. Spigt, M.G., Kuijper, E.C., Van Schayck, C.P., Troost, J., Knipschild, P.G., Linssen, V.M. and Knottnerus, J.A., 2005. Increasing the daily water intake for the prophylactic treatment of headache: a pilot trial.European journal of neurology12(9), pp.715-718. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1111/j.1468-1331.2005.01081.x
  7. Maghbooli, M., Golipour, F., Moghimi Esfandabadi, A. and Yousefi, M., 2014. Comparison between the efficacy of ginger and sumatriptan in the ablative treatment of the common migraine.Phytotherapy research28(3), pp.412-415. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/ptr.4996
  8. Göbel, H., Schmidt, G. and Soyka, D., 1994. Effect of peppermint and eucalyptus oil preparations on neurophysiological and experimental algesimetric headache parameters.Cephalalgia14(3), pp.228-234. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1046/j.1468-2982.1994.014003228.x
  9. Juliano, L.M. and Griffiths, R.R., 2004. A critical review of caffeine withdrawal: empirical validation of symptoms and signs, incidence, severity, and associated features.Psychopharmacology176, pp.1-29. https://link.springer.com/article/10.1007/s00213-004-2000-x
0 0 প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা
পোস্ট রেটিং
0 মন্তব্য
প্রতিক্রিয়া
সমস্ত প্রতিক্রিয়া দেখুন
পরামর্শ নিতে 01877733322