ডেঙ্গু হলে করণীয় কি, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়, বেশির ভাগ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং অনেক বাণিজ্যিক পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ডায়াগনস্টিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ গুলো মধ্যে রয়েছে। উচ্চ জ্বর হঠাৎ করে উচ্চ তাপ মাত্রার জ্বর হয় যা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত উঠতে পারে। তীব্র মাথা ব্যথা মাথার সামনের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চোখের পেছনে ব্যথা বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা হয়। পেশি ও গাঁটে ব্যথা শরীরের পেশি ও গাঁটে তীব্র ব্যথা হয়, যা সাধারণত “ব্রেকবোন ফিভার” নামে পরিচিত।
বমি বমি ভাব এবং বমি আক্রান্ত ব্যক্তি বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন বা বমি হতে পারে। ত্বকে র্যাশ অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে। ক্ষুধা মন্দা খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায় এবং দুর্বলতা বাড়তে পারে। রক্ত ক্ষরণ গুরুতর ক্ষেত্রে নাক, মুখ, মাড়ি, বা ত্বকে ছোট ছোট রক্তপাতের চিহ্ন দেখা যেতে পারে। যদি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ ডেঙ্গু গুরুতর অবস্থায় পরিণত হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গু হলে করণীয় কি?
ডেঙ্গু হলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্ব পূর্ণ, কারণ এটি একটি গুরুতর রোগ যা দ্রুত খারাপ অবস্থায় পরিণত হতে পারে। ডেঙ্গু হলে নিম্ন লিখিত পদক্ষেপ গুলো নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডেঙ্গু নির্ণয় করার জন্য রক্ত পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ করুন ডেঙ্গু হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল বেরিয়ে যায়। তাই শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস, স্যালাইন, এবং অন্যান্য তরল গ্রহণ করুন। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করুন জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করবেন না, কারণ এ গুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম কমাতে হবে এবং যতটা সম্ভব শুয়ে থাকতে হবে।
গুরুতর লক্ষণ গুলো দিকে খেয়াল রাখুন যদি তীব্র পেটে ব্যথা, বারবার বমি, নাক বা মুখ থেকে রক্তপাত, অথবা শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়, তাহলে এটি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকুন ডেঙ্গু রোগীকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য মশারি ব্যবহার করুন এবং এমন স্থানে থাকুন যেখানে মশার সংখ্যা কম। সতর্ক থাকতে হবে ডেঙ্গু রোগের অবস্থা দিনে দিনে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই প্রতিদিন রোগীর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা জরুরি। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। উপরের পদক্ষেপ গুলো মেনে চললে রোগীর দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ডায়াগনস্টিক টেস্টিং
ডেঙ্গু হলে করণীয়. বেশির ভাগ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং অনেক বাণিজ্যিক পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ডায়াগনস্টিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
নিউক্লিক অ্যাসিড পরিবর্ধন পরীক্ষা
- সন্দেহ ভাজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষাগারে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
- উপসর্গ শুরু হওয়ার ৭ দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা সিরাম গুলি নিউক্লিক অ্যাসিড পরিবর্ধনে পরীক্ষণ করা উচিত।
- ইমিউনোসায়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু নন স্ট্রাকচারাল প্রোটিন-১ (এনএস-১) অ্যান্টিজেনের সাথে ভাইরাল জিনোমিক সিকোয়েন্স সনাক্ত করে অসুস্থতার প্রথম দিকে (জ্বর শুরু হওয়ার ≤7 দিন পরে) প্রাপ্ত একক অ্যাকিউট-ফেজ সিরাম নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করণ করা যেতে পারে।
- একটি একক ডায়াগনস্টিক নমুনায় এনএস-১ অ্যান্টিজেন দ্বারা ভাইরাসের উপস্থিতি সামঞ্জস্য পূর্ণ ক্লিনিকাল এবং রোগীদের ভ্রমন ইতিহাসে ডেঙ্গু বহন করছে কি না তা পরীক্ষাগারে নিশ্চিত করণ করা হয়।
সেরোলজিক পরীক্ষা
- আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা দ্বারা অতিরিক্ত সংক্রমণ সনাক্ত করতে পারে এবং এটি একটি গুরুত্ব পূর্ণ ডায়াগনস্টিক টুল। জিকার মতো অন্যান্য ফ্ল্যাভিভাইরাস গুলির সাথে ক্রস-রিঅ্যাকটিভিটি ফলাফল গুলো অত্যন্ত জটিল এবং সংক্রমণের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করাও কঠিন।
- পরবর্তী অসুস্থতায় (জ্বর শুরু হওয়ার ≥৪ দিন পরে) ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে আইজিএম ম্যাক-এলিসা-এর মাধ্যমে সনাক্ত করা যেতে পারে। জ্বর শুরু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে উপস্থিত রোগীদের জন্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায় ডেঙ্গু ভাইরাস (এনএস-১) এবং আইজিএম পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- জ্বর শুরু হওয়ার ১ সপ্তাহ পরে উপস্থিত রোগীদের জন্য আইজিএম সনাক্ত করণ সবচেয়ে কার্যকর।
- পিআরএনটিএস অ-নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া শীলতার কারণে সৃষ্ট মিথ্যা-পজিটিভ আইজিএম অ্যান্টিবডি ফলাফল গুলি সমাধান করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে সংক্রামক ভাইরাস সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ক্রস-প্রতিক্রিয়াশীল ফ্ল্যাভিভাইরাস
- অন্য সম্ভাব্য ক্রস-রিঅ্যাকটিভ ফ্ল্যাভিভাইরাস গুলি সঞ্চালিত হয় এমন জায়গায় সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ডেঙ্গু এবং অন্যান্য ফ্ল্যাভিভাইরাস গুলির জন্য আণবিক এবং সেরোলজিক ডায়াগনস্টিক উভয় পরীক্ষা করা উচিত।
- অন্যান্য ফ্ল্যাভিভাইরাস যেমন ইয়েলো ফিভার বা জাপানিজ এনসেফালাইটিস দ্বারা সংক্রামিত বা টিকা নেওয়া লোকেরা ক্রস-রিঅ্যাকটিভ ফ্ল্যাভিভাইরাস অ্যান্টি বডি তৈরি করতে পারে, যা মিথ্যা-পজিটিভ সেরোলজিক ডেঙ্গু ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ফলাফল দেয়।
আইজিজি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
- একটি একক সিরাম নমুনায় এলিসা দ্বারা আইজিএম সনাক্ত করণ ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য উপযোগী নয় কারণ এটি ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের পরে সারা জীবনের জন্য সনাক্ত যোগ্য থাকে।
মশা নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়ির বাইরে ও বাড়ির ভিতরে যা করবেন
বাড়ির বাইরে যা করবেন
১। যেখানে মশা ডিম পাড়ে সেখানে জমে থাকা পানি সরানঃ
- সপ্তাহে একবার টায়ার, বালতি, প্ল্যান্টার, খেলনা, পুল, পাখির স্নান, ফুলের পটল সসার বা আবর্জনার পাত্রের মতো জল ধরে থাকা যে কোনও আইটেম খালি করুন এবং স্ক্রাব করুন, উল্টে দিন বা ঢেকে দিন বা ফেলে দিন। কেন না, মশা পানির কাছে ডিম পাড়ে।
- জল রাখার পাত্রে (বালতি, সিস্টারন, রেইন ব্যারেল) শক্ত ভাবে ঢেকে রাখুন যাতে মশা ডিম পাড়ার জন্য ভিতরে ঢুকতে না পারে।
- ঢাকনা ছাড়া পাত্রের জন্য, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মশার চেয়ে ছোট ছিদ্র যুক্ত তারের জাল ব্যবহার করুন।
- গাছের গর্ত গুলি পূরণ করুন যাতে সে গুলি জল দিয়ে ভরাট না হয়।
- আপনার যদি সেপটিক ট্যাঙ্ক থাকে তবে ফাটল বা ফাঁক মেরামত করুন এবং খোলা ভেন্ট বা নদীর গভীরতা নির্ণয় পাইপ আবরণ করুন যেন একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মশার চেয়ে গর্ত ছোট হয় এমন তারের জাল ব্যবহার করুন।
২। আপনার বাড়ির বাইরে মশার লার্ভা মেরে ফেলুনঃ
- বৃহৎ জলাশয় গুলি কে চিকিত্সা করার জন্য লার্ভি সাইড ব্যবহার করুন যা পানীয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে না এবং ঢেকে দেওয়া বা ডাম্প করা যাবে না।
- লার্ভি সাইড ব্যবহার করার সময়, সর্বদা লেবেল নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
৩। আপনার বাড়ির বাইরে মশা মারুনঃ
- প্রাপ্তবয়স্ক মশা যেখানে আশ্রয় নেয় সেখানে মশা গুলো মারতে আউট ডোর অ্যাডাল্টিসাইড ব্যবহার করুন।
- মশা অন্ধকার বা আর্দ্র জায়গায় যেমন প্যাটিও ফার্নিচারের নিচে বা কার্পোর্ট বা গ্যারেজের নিচে বিশ্রাম নেয়। কীটনাশক ব্যবহার করার সময়, সর্বদা লেবেল নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
বাড়ির ভিতরে যা করবেন
১। আপনার বাড়ির বাইরে বা দূরে মশা রাখতে করতে পারেনঃ
- জানালা এবং দরজা পর্দা ইনস্টল বা মেরামত এবং ব্যবহার।
- গ্যারেজের দরজা সহ দরজা বন্ধ করুন। দরজা খোলা রেখে যাবেন না।
- সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
২। আপনার বাড়ির ভিতরে মশা নিয়ন্ত্রণ করুন।
মশা অন্ধকার বা আর্দ্র জায়গায় যেমন সিঙ্কের নিচে, ঝরনা, পায়খানা, আসবাবের নিচে বা লন্ড্রি রুমে বিশ্রাম নেয়। বাইরে থেকে আপনার ঘরে প্রবেশ করা মশা বাড়ির ভিতরে ডিম পাড়া শুরু করতে পারে। নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিনঃ
- মশার ডিম এবং লার্ভা অপসারণের জন্য সপ্তাহে একবার, খালি করুন এবং স্ক্রাব করুন, উল্টে দিন, ঢেকে দিন বা জল ধারণ করে এমন কোনও জিনিস যেমন ফুলদানি বা ফুলের পাত্রের সসার গুলিকে ফেলে দিন।
- স্ক্রিন ইনস্টল ও মেরামত করার পরে এবং পাত্রে খালি ও স্ক্রাব করার পরেও যদি আপনার বাড়িতে মশা থাকে তাহলে একটি ইনডোর কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- একটি ইনডোর ইনসেক্ট স্প্রে বা ফগার মশাকে মেরে ফেলবে এবং মশা গুলো যাখানে আশ্রয় নেবে সেখানে স্প্রে করবে।
- এই পণ্যগুলি দ্রুত কাজ করে কিন্তু পুনরায় প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
- সর্বদা লেবেল নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
- শুধুমাত্র একটি ইনডোর কীটনাশক ব্যবহার করলে আপনার বাড়ি মশা মুক্ত থাকবে না।
- আপনার বাড়ির অভ্যন্তরের এলাকার চিকিত্সা বা মেরামত করার জন্য একটি কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পেশাদার নিয়োগ করুন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কী খাবেন আর কী খাবেন না?
ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার দ্বারা সৃষ্ট হয়। যদি এডিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় এবং সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হয়, তাহলে সাধারণত চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায়। এরপর, যদি কোনো জীবাণু মুক্ত এডিস মশা এই আক্রান্ত ব্যক্তি কে কামড়ায়, তবে সেই মশা ডেঙ্গু জীবাণু বাহী হয়ে উঠে। এভাবেই ডেঙ্গু এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডেঙ্গু জ্বর হলে খাদ্যাভ্যাসেও বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত দের জন্য কিছু বিশেষ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন। দেখে নিন, কোন খাবার গুলো খাবেন আর কোন খাবার গুলো এড়িয়ে যাবেন
যে খাবার গুলো বেশি করে খাবেন
ডেঙ্গু জ্বর হলে নির্দিষ্ট কিছু খাবার শরীরের সুস্থতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এখানে এমন কিছু খাবারের বিবরণ দেওয়া হলো যা ডেঙ্গু জ্বরে উপকারী:
কমলা ও কমলার রস: কমলা ফল এবং এর রস ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় উপকারী। কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা ইমিউন সিস্টেমকে বলিষ্ঠ করে এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই ভিটামিন সি শরীরের প্রতিরক্ষা মেকানিজম কে উন্নত করে এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
ডালিম: ডালিমে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকার কারণে এটি ডেঙ্গু রোগীর জন্য উপকারী। ডালিমে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্লেটলেট সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডালিম শরীরের ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করতে সহায়ক। ডেঙ্গু জ্বরে প্লেটলেট সংখ্যা কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা।
ডাবের পানি: ডেঙ্গু জ্বরে ডিহাইড্রেশন একটি প্রধান উদ্বেগ। ডাবের পানি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
পেঁপে পাতার জুস: পেঁপে পাতার জুস বিশেষ ভাবে প্লেটলেট সংখ্যা বাড়াতে এবং লিভার ফাংশন উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা পাপাইন এবং কিমোপেইন এনজাইম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং প্লেটলেট বাড়ায়। নিয়মিত ৩০ মিলি পেঁপে পাতার জুস খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং ডেঙ্গুর জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ মিশ্রিত দুধ: হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব হ্রাস করতে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
মেথি: মেথির পাতা বা বীজ ঘুম আনার ক্ষমতা সম্পন্ন, যা ডেঙ্গু জ্বরের সময় বিশ্রামে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি জ্বর হ্রাস এবং দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। তবে, এর ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
ব্রকলি: ভিটামিন ‘কে’ সমৃদ্ধ ব্রকলি প্লেটলেট সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে বলিষ্ঠ করে।
পালংশাক: আইরন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ পালংশাক প্লেটলেট বৃদ্ধি এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কিউই: কিউইফল ভিটামিন ও পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ, যা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে।
ডেঙ্গু জ্বরের সময় যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত
ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরের সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন অত্যন্ত জরুরি। এই অবস্থায় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এমন কিছু খাবারের তালিকা নিম্নরূপ:
তৈলাক্ত ও ভাজাভুজি খাবার: এই ধরনের খাবার বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা যেমন অম্বল, গ্যাস বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে যা ডেঙ্গু জ্বরের সময় এড়িয়ে চলা উচিত।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়: কফি, চা, এবং অ্যালকোহল শরীরের হাইড্রেশনের মাত্রা কমিয়ে ফেলে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
মশলাদার খাবার: মশলাযুক্ত খাবার পাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং পেটের অস্বস্তি বাড়ায়, যা ডেঙ্গু রোগীর জন্য আরও অসুবিধা সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার: চিনি সমৃদ্ধ খাবার শরীরের ইনসুলিনের স্তর দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রসেসড এবং প্যাকেজড খাবার: এই ধরনের খাবার প্রায়শই প্রিজারভেটিভ এবং অতিরিক্ত লবণ সমৃদ্ধ হয়, যা ডেঙ্গু জ্বরের সময় এড়ানো উচিত।
বেশি লবণ যুক্ত খাবার: অতিরিক্ত লবণ শরীরের পানির ব্যালান্সে ব্যাঘাত ঘটায় এবং রক্তচাপের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়: অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় গলা ও পেটের সমস্যা তৈরি করে, যা ডেঙ্গু জ্বরের সময় পান করা একদমই অনুচিত। ডেঙ্গু জ্বরের সময় এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থতার দিকে যেতে পারে।
ডেঙ্গু রোগ নিরাময় ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বরের সময় চিকিৎসার পদ্ধতি এবং শরীরের যত্নের নির্দিষ্ট কৌশল মেনে চলা উচিত, যা নিম্নরূপ:
প্যারাসিটামল: ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল প্রধানত জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে রাখা প্রয়োজন, তবে ৯৭ ডিগ্রি না হলেও সমস্যা নেই। প্রতিদিন চার ডোজে ভাগ করে, প্রতিবারে ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল সেবন করা উচিত। যদি জ্বর ১০২ ডিগ্রির বেশি হয়, তবে একবারে ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। এছাড়া, অন্য কোনো ওষুধ, যেমন এনএসএআইডি (ডাইক্লোফেনাক, ইন্ডোমেথাসিন) এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলি শক, কিডনির ক্ষতি, এবং খাদ্যনালি তে রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
পানি সেবন: ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্রতিদিন অন্তত তিন লিটার পানি পান করা উচিত। এটি ডিহাইড্রেশন এড়াতে এবং শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে, স্যালাইন সলিউশন সেবন করা যেতে পারে।
পুষ্টি: ডেঙ্গু জ্বরে ক্ষুধামন্দা এবং বমির প্রবণতা থাকে। এই সময়ে, ফলের রস পান করা ভালো, কারণ এটি পানির ঘাটতি দূর করে এবং অল্পতেই বেশি ক্যালরি প্রদান করে। এছাড়াও ডেংগু রোগীর স্বাভাবিক খাবার খাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরের ক্লাসিক্যাল এবং গ্রেড-১ হিমোরেজিক অবস্থায় এই চিকিৎসা পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। তবে, গ্রেড-২ হিমোরেজিক অবস্থায় আরও সতর্কতা প্রয়োজন, কারণ এটি যদি শুরুতে সনাক্ত না হয়, তবে গ্রেড-৩ বা গ্রেড-৪ অবস্থা ধারণ করতে পারে, যা শকের ঝুঁকি বাড়ায়। এই অবস্থায়, রক্তচাপ এবং প্রস্রাবের পরিমাণ নিয়মিত মনিটর করা উচিত। ব্লাড প্রেসার মনিটর করে, সিস্টলিক প্রেসার ৯০ এর উপরে রাখা উচিত। এই অবস্থায়, পানি এবং স্যালাইন সলিউশন প্রদান করা প্রয়োজন। যদি পেটের ব্যথা না কমে বা বমি হয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও মারাত্মক হতে পারে।
ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়
ডেঙ্গু হলে ঘরে চিকিৎসা নিতে নিম্নলিখিত করণীয় পদক্ষেপ অনুসরণ করা প্রয়োজন:
প্রচুর পানি পান: ডিহাইড্রেশন এড়ানোর জন্য প্রচুর পানি এবং তরল পান করা জরুরি। পানি ছাড়াও ডাবের পানি, ফলের রস, হারবাল টি বা স্যালাইন পান করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: ডেঙ্গু জ্বরে শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি।
প্যারাসিটামল সেবন: জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশিত ডোজ মেনে চলা উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাবার: হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। ফল, সবজি, ডাল এবং শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে।
মশা থেকে সুরক্ষা: ডেঙ্গু জ্বর মশাবাহিত রোগ। তাই মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। মশারি ব্যবহার করা, মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ: উপসর্গের মাত্রা অনুযায়ী ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত। কোনো অবস্থায় যদি রোগীর অবস্থার অবনতি হয়, যেমন প্রচুর বমি বা তীব্র পেটের ব্যথা, তবে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।
রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা মনিটরিং: ডেঙ্গু জ্বরে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়। তাই নিয়মিত প্লেটলেট কাউন্ট পরীক্ষা করা উচিত।
সচেতনতা বজায় রাখা: ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ ও জটিলতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলি অনুসরণ করে, ঘরে থাকা কালীন ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক যত্ন নেওয়া সম্ভব। তবে, অবস্থা গুরুতর মনে হলে, রোগী কে অবিলম্বে হাসপাতালে নিতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কি করবেন?
বর্তমানে ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত জ্বর, যা মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা বিশেষ করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে ও পরে সক্রিয় থাকে এবং এই সময়ে এডিস মশা বেশি কামড় দেয়। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণ চিকিৎসায় সেরে যেতে পারে, কিন্তু ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর গুরুতর এবং জীবন হানির ঝুঁকি থাকে। বর্ষাকালে এ রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। এডিস মশার প্রজনন রোধ করে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয় গুলি অনুসরণ করা জরুরি:
মশার প্রজননস্থল নির্মূল: এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা জলে প্রজনন করে। আপনার বাড়ি এবং আশেপাশে ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি শেল ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
মশার ডিম অপসারণ: জমা পানির পাত্রে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণ করা গুরুত্ব পূর্ণ। পাত্র গুলি ভালো ভাবে ঘষে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
পানির পাত্র উল্টে রাখা: যেসব পানির পাত্র অব্যবহৃত রয়েছে, সেগুলি উল্টে রাখুন যাতে পানি জমতে না পারে।
মশারি ব্যবহার: দিনে ও রাতে, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়, মশারি ব্যবহার করা জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। সচেতনতা এবং নিয়মিত পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ হ্রাস করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র
- World Health Organization. (2022). Dengue guidelines for diagnosis, treatment, prevention and control. Dengue guidelines, for diagnosis, treatment, prevention and control (who.int)
- Centers for Disease Control and Prevention. (2021). Dengue Testing. Testing for Dengue Virus | Dengue | CDC
- World Health Organization. (2012). Dengue and severe dengue. Dengue and severe dengue (who.int)
- সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস কি স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায় - August 1, 2024
- স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি কী এবং সহজ সমাধান - June 13, 2024
- Sports Physical Therapy - May 9, 2024