ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষন. ক্যান্সার হল এমন একটি জটিল রোগ যেখানে শরীরের কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়। স্বাভাবিক কোষ নিয়ন্ত্রিত উপায়ে বিভাজিত হয় এবং যখন তাদের কাজ শেষ হয়, তখন মারা যায়। তবে ক্যান্সার কোষগুলি এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না; তারা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই প্রক্রিয়াটিকে মেটাস্ট্যাসিস (metastasis) বলা হয়।

ক্যান্সার কিভাবে হয়

ক্যান্সার শরীরের কোষের ডিএনএ-তে পরিবর্তনের (মিউটেশন) মাধ্যমে হয়। ডিএনএ হলো সেই উপাদান যা কোষের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, এবং যখন এই ডিএনএ-তে পরিবর্তন ঘটে, তখন কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। ফলস্বরূপ, কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হতে শুরু করে এবং টিউমার গঠন করে, যা ক্যান্সারের মূল কারণ। কিছু ক্যান্সার সলিড টিউমার বা গুটি তৈরি করে, আবার কিছু ক্যান্সার (যেমন লিউকেমিয়া) রক্ত এবং হাড়ের অস্থিমজ্জায় ঘটে এবং টিউমার সৃষ্টি করে না।

ক্যান্সারের কারণসমূহ

জেনেটিক মিউটেশন: জেনেটিক মিউটেশন ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। জেনেটিক মিউটেশন বলতে ডিএনএ-এর সেই পরিবর্তনগুলোকে বোঝায়, যা কোষের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত করে, ফলে কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। মিউটেশন দুই ধরনের হতে পারে: বংশগত মিউটেশন, যা পিতামাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং জন্মের সময় থেকেই উপস্থিত থাকে, এবং অধিকৃত মিউটেশন, যা জীবদ্দশায় ঘটে এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টর যেমন তামাক, রেডিয়েশন, এবং রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে ঘটে। এই মিউটেশনগুলো কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন প্রোটো-অংকোজিন (proto-oncogenes) এবং টিউমার সাপ্রেসর জিন (tumor suppressor genes)। প্রোটো-অংকোজিন মিউটেশন দ্বারা অংকোজিনে রূপান্তরিত হয়, যা কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, এবং টিউমার সাপ্রেসর জিন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াগুলির ফলেই ক্যান্সার গঠিত হয় ()।

তামাক ব্যবহার: তামাক ব্যবহার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ফুসফুস ক্যান্সারসহ মুখ, গলা, অন্ননালী, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, মূত্রথলি এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। তামাকের ধোঁয়ায় প্রায় ৭০টি ক্যান্সারসৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা ডিএনএ-তে মিউটেশন ঘটায় এবং কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধূমপায়ী ব্যক্তিদের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এছাড়া, গুটখা, খৈনি, জর্দা ইত্যাদির মতো চিবানো তামাকজাত দ্রব্যও মুখ এবং গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের (secondhand smoke) সংস্পর্শেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তামাক ব্যবহার কমিয়ে বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব ()।

রেডিয়েশন: রেডিয়েশন ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষত, উচ্চমাত্রার আয়নাইজিং রেডিয়েশন শরীরের কোষের ডিএনএ-তে ক্ষতি করতে পারে, যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। রেডিয়েশন বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে, যেমন চিকিৎসাগত পরীক্ষায় ব্যবহৃত এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এবং রেডিওথেরাপি, পাশাপাশি পারমাণবিক বিকিরণ এবং কিছু প্রাকৃতিক উৎস। বিশেষ করে, রেডিয়েশন থেরাপির সময় রোগীরা যে রেডিয়েশনের সম্মুখীন হন, তা নির্দিষ্ট টিউমার চিকিৎসায় সহায়ক হলেও, পরে জীবনের কোনো পর্যায়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পারমাণবিক দুর্ঘটনা বা পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণের কারণে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের লিউকেমিয়া এবং থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অতএব, রেডিয়েশনের সঙ্গে সংস্পর্শে আসার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং অপ্রয়োজনীয় রেডিয়েশন পরীক্ষা এড়িয়ে চলা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে ()।

রাসায়নিক পদার্থ: কিছু রাসায়নিক পদার্থ, বিশেষ করে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত পদার্থগুলো, ডিএনএ-তে মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম, যা কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, বেনজিন (benzene) এবং অ্যাসবেস্টস (asbestos) এর মতো রাসায়নিক পদার্থগুলি দীর্ঘ সময় ধরে সংস্পর্শে থাকলে লিউকেমিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, কিছু কীটনাশক এবং তেলজাতীয় রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা ত্বক, ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, সুরক্ষামূলক গিয়ার ব্যবহার করা, এবং কাজের পরিবেশে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ভাইরাস এবং ইনফেকশন: ভাইরাস এবং ইনফেকশন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) প্রধানত জরায়ুর ক্যান্সার, পেনাইল ক্যান্সার, এবং অ্যানাল ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস (HBV এবং HCV) দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের মাধ্যমে লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, এপস্টাইন-বার ভাইরাস (EBV) কিছু ধরনের লিম্ফোমা এবং ন্যাসোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত। হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV) সংক্রমণ রোগীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন কাপোসিস সারকোমা এবং নন-হজকিন লিম্ফোমা। এছাড়া, হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পাকস্থলীতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ধরনের ভাইরাস এবং ইনফেকশন থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা গ্রহণ, নিরাপদ জীবনযাত্রা এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে ()।

আরও পড়ুন  এসিএল ইনজুরি কি, এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ: দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে যদি শরীরে প্রদাহ হয় তাহলে কোষের ডিএনএ এর ক্ষতি হতে পারে এবং এই ক্ষতি কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রনিক প্রদাহজনিত রোগ যেমন ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিসের কারণে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ লিভারে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা লিভার ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রদাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলি পুনরায় তৈরি হওয়ার সময় কোষ বিভাজনের হার বৃদ্ধি পায়, যা মিউটেশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং ক্যান্সার গঠনের পথ প্রশস্ত করে। এই কারণে, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হরমোন: হরমোন ক্যান্সারের কারণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন স্তন এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যখন শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় বা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রায় থাকে, তখন এটি টিস্যুগুলির অতিরিক্ত বৃদ্ধি এবং বিভাজনকে উদ্দীপিত করে, যা কোষের ডিএনএ-তে মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়। একইভাবে, পুরুষদের ক্ষেত্রে, অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের উচ্চমাত্রা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। হরমোনের প্রভাবের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, জীবনযাত্রা, এবং অন্যান্য ঝুঁকির ওপর। হরমোন ভিত্তিক থেরাপি এবং কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলও হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, হরমোন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। শ্বাসকষ্ট হলে করনীয় ও প্রতিকার | দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়

ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে

ক্যান্সার একটি ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না। ক্যান্সার মূলত কোষের ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে হয়, যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজন ঘটায়। এই মিউটেশনগুলো বংশগত হতে পারে বা জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণ যেমন তামাক ব্যবহার, রেডিয়েশন, রাসায়নিক পদার্থ, বা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হতে পারে। যদিও কিছু ভাইরাস, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এবং হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তবুও এই ভাইরাস সংক্রমণ মানেই ক্যান্সার হবে এমনটি নয়, এবং এটি ছোঁয়াচে নয়। তাই, ক্যান্সারের রোগীদের সঙ্গে মেলামেশা, তাদের পরিচর্যা করা, বা সামাজিক মেলামেশায় অংশগ্রহণ করা একেবারেই নিরাপদ ()।

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষন

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর লক্ষণগুলি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, অবস্থান, এবং এর বৃদ্ধি কেমন তার ওপর। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারে দেখা যেতে পারে। নিচে ১০টি সাধারণ ক্যান্সারের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

অবসাদ (Fatigue): ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অবসাদ (Fatigue) একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। অবসাদ ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে, যার মধ্যে ক্যান্সার নিজেই একটি কারণ এছাড়াও চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি) এবং মানসিক চাপও অন্তর্ভুক্ত। এই অবসাদ সাধারণ ক্লান্তির চেয়ে অনেক বেশি তীব্র এবং বিশ্রামের পরেও কাটে না। এটি রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্যান্সার চিকিৎসার সময় অবসাদ রোগীর শরীরের শক্তি এবং পুষ্টির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে, যা প্রায়শই পূরণ হয় না এবং এই অবস্থাকে আরও তীব্র করে। অবসাদ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত অসুবিধাজনক, কারণ এটি তাদের চিকিৎসার কার্যকারিতা কমাতে পারে এবং মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।

অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস (Unexplained Weight Loss): অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি সাধারণ এবং উদ্বেগজনক লক্ষণ। ক্যান্সার শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, যার ফলে শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে পুষ্টি এবং শক্তি ব্যবহার করতে শুরু করে। এই কারণে, রোগীরা প্রায়ই খাবারে অরুচি অনুভব করেন এবং শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে, যা কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটে। ওজন হ্রাস ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে, বিশেষত যদি তা অল্প সময়ের মধ্যে ৫% বা তার বেশি ওজন কমে যায়। ক্যান্সারের কারণে শরীরে মেটাবলিক চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং একই সঙ্গে টিউমার শরীরের পুষ্টি শোষণ করে, ফলে রোগী দ্রুত ওজন হারাতে পারেন। এই ধরনের ওজন হ্রাস প্রায়শই ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা, অবসাদ, এবং সাধারণ স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে হয়, যা চিকিৎসার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

মাসখানেকের বেশি স্থায়ী কাশি বা গলা ব্যথা (Persistent Cough or Hoarseness): মাসখানেকের বেশি স্থায়ী কাশি বা গলা ব্যথা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ, বিশেষত ফুসফুস, গলা, বা খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। ক্যান্সারের কারণে শ্বাসনালী বা গলায় টিউমার তৈরি হলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ব্যথা দেখা দিতে পারে, যা সাধারণ ওষুধে উপশম হয় না। এই কাশি শুষ্ক হতে পারে বা কখনও কখনও কফের সঙ্গে রক্তও থাকতে পারে। গলা ব্যথা প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন গুরুতর মনে না হলেও, এটি ক্রমাগত বাড়তে পারে এবং গিলতে অসুবিধা বা কথা বলতে কষ্ট হতে পারে। যদি কাশি বা গলা ব্যথা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে এবং এর সাথে ওজন হ্রাস, অবসাদ, বা শ্বাসকষ্টের মতো অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়, তবে এটি ক্যান্সারের সংকেত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন  দাঁতের ব্যথায় করণীয়

খাবারে অরুচি ও হজমের সমস্যা (Loss of Appetite or Indigestion): খাবারে অরুচি ও হজমের সমস্যা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আরেকটি সাধারণ লক্ষণ, বিশেষত যাদের পাকস্থলী, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, বা অন্ত্রের ক্যান্সার হয় তাদের ক্ষেত্রে। ক্যান্সার শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকীয় কার্যক্রমকে বিঘ্ন ঘটায়, যার ফলে রোগীরা প্রায়ই খাবারে অরুচি অনুভব করেন এবং পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। টিউমার যদি মেটাবোলিক সিস্টেমের কোনো অংশে অবস্থান করে, তাহলে হজমের প্রক্রিয়াটি ধীর হয়ে যেতে পারে বা ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে পেটে অস্বস্তি, গ্যাস, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, এবং খাদ্য হজমের সমস্যার সৃষ্টি হয়। খাবারে অরুচি এবং হজমের সমস্যার ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা ওজন হারাতে শুরু করেন এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা বা গুটি (Unusual Lumps or Swelling): ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শরীর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে বা গুটি উঠতে পারে। এটি মূলত সেই স্থানে ঘটে যেখানে টিউমার গঠন শুরু হয়, এবং এটি শরীরের যেকোনো অংশে দেখা দিতে পারে। ফোলা বা গুটি সাধারণত মসৃণ বা শক্ত হতে পারে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথাহীন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে স্তনে গুটি অনুভূত হতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে। ফুসফুস, গলা, বা ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিক গুটি দেখা দিতে পারে। এছাড়া, লিম্ফোমার মতো কিছু ক্যান্সারে লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে, যা গলার পাশে, বগলে বা কুঁচকিতে ফোলা ভাব দেখায়।

রাতে ঘাম হওয়া (Night Sweats): যাদের লিম্ফোমা এবং ব্লাড ক্যান্সার হয় তাদের ক্ষেত্রে রাতে ঘাম হতে পারে। এই ধরনের ঘাম সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার কারণে ঘটে, যা ক্যান্সারের প্রভাবে অথবা ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। রাতের এমন পর্যায়ের ঘাম হয় যেন রোগী ঘুমানোর সময় প্রচন্ড পরিমাণে ঘামতে থাকেন, যার ফলে পোশাক এবং বিছানা ভিজে যায়। এই ঘাম প্রায়ই এতটাই তীব্র হয় যে রোগীকে রাতে পোশাক পরিবর্তন করতে হয়। ক্যান্সারের কারণে শরীরে মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলস্বরূপ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে এবং ঘাম হতে পারে। যদি রাতের ঘামের সাথে অন্য কোনো লক্ষণ, যেমন ওজন হ্রাস, জ্বর, বা ক্লান্তি দেখা দেয়, তবে এটি ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে।

রক্তপাত বা রক্তমিশ্রিত নিঃসরণ (Unexplained Bleeding or Discharge): রক্তপাত বা রক্তমিশ্রিত নিঃসরণ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি গুরুতর লক্ষণ। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার টিউমারের উপস্থিতির কারণে রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে রক্তপাত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কাশি বা থুতুর সঙ্গে রক্ত আসতে পারে, যা হেমোপটিসিস নামে পরিচিত। একইভাবে, কোলন বা রেক্টাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় রক্তপাত দেখা দিতে পারে। এছাড়া, জরায়ুর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সময়কালের বাইরেও রক্তপাত হতে পারে, যা সাধারণত অস্বাভাবিক রক্তপাত হিসেবে পরিচিত। মূত্রথলি বা কিডনির ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মূত্রে রক্ত দেখা দিতে পারে। ক্যান্সারের কারণে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তক্ষরণের এই ধরনের লক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত, কারণ এটি ক্যান্সারের অগ্রগতি নির্দেশ করতে পারে।

পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি (Persistent Pain): যকৃত, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, বা অন্ত্রের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রোগীদের পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়। টিউমার যখন এই অঙ্গগুলিতে বৃদ্ধি পায়, তখন তা আশেপাশের টিস্যু বা অঙ্গে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা কখনও কখনও মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং প্রায়শই এটি ক্রমাগত হয়। পেটের ব্যথা কখনও কখনও খাবার গ্রহণের পর বাড়তে পারে এবং এর সাথে বমি বমি ভাব, হজমের সমস্যা, বা ওজন হ্রাসের মতো অন্যান্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

ত্বকের পরিবর্তন (Skin Changes): ত্বকের পরিবর্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি সাধারণ লক্ষণ, বিশেষত ত্বকের ক্যান্সার (যেমন মেলানোমা) এবং কিছু অভ্যন্তরীণ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। ত্বকের পরিবর্তনগুলির মধ্যে তিল বা মোলের আকার, রঙ, বা আকৃতির পরিবর্তন, নতুন তিলের সৃষ্টি, অথবা ত্বকের কোনো অংশে ঘা বা ক্ষত যা দীর্ঘ সময় ধরেও সারে না। ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন প্রাথমিক সংকেত হতে পারে এবং দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা জরুরি। ত্বকের পরিবর্তন কেবল ত্বকের ক্যান্সারের ইঙ্গিত নয়, কিছু অভ্যন্তরীণ ক্যান্সারও ত্বকে লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যকৃতের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যেতে পারে, যা জন্ডিস নামে পরিচিত।

গলদা বা গ্রন্থির ফোলা (Swollen Lymph Nodes): লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে গলার গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে যেখানে ক্যান্সার লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে। লিম্ফ নোড বা গ্রন্থি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবে, ক্যান্সার কোষগুলি যখন লিম্ফ নোডে পৌঁছে যায়, তখন সেগুলি ফুলে যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে শক্ত হয়ে যায়। এই ফোলা গ্রন্থি সাধারণত গলার পাশে, বগলে, বা কুঁচকিতে অনুভূত হয়। কখনও কখনও এই ফোলা অংশগুলো ব্যথাহীন হতে পারে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সময়ের সাথে সাথে আকারে বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুন  মাসল স্পাজমের চিকিৎসা

ক্যান্সার কি ভাল হয়

ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, এর অবস্থান, রোগ নির্ণয়ের সময়কাল, এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য অবস্থার ওপর। কিছু ধরনের ক্যান্সার, যেমন ত্বকের প্রাথমিক পর্যায়ের মেলানোমা বা স্তনের প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার, প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলে এবং যথাযথভাবে চিকিৎসা করা হলে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। অন্যান্য ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, পুরোপুরি নিরাময় করা সবসময় সম্ভব না হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।

ক্যান্সার চিকিৎসায় সাধারণত সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, এবং টার্গেটেড থেরাপির মতো বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ ক্যান্সারের সফল নিরাময়ের সম্ভাবনা বাড়ায়। তবে, নিরাময়যোগ্যতার ক্ষেত্রে ক্যান্সারের প্রকারভেদ, আক্রমণের তীব্রতা, এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া মূল ভূমিকা পালন করে ()।

ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরকে শক্তি সরবরাহ করে, ইমিউন সিস্টেমকে দৃঢ় করে, এবং ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য খাদ্য তালিকায় নিম্নলিখিত উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন কোষ মেরামত এবং শরীরের টিস্যু পুনর্নির্মাণে সহায়ক। ক্যান্সার রোগীদের জন্য মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম, দই, এবং বিন্স (beans) প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে।

ফল এবং শাকসবজি: বিভিন্ন ধরনের রঙিন ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। যেমন, বেরি, বাঁধাকপি, পালং শাক, এবং টমেটো।

পূর্ণ শস্য (Whole grains): পুরো শস্য যেমন ব্রাউন রাইস, ওটমিল, এবং গমের রুটি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সরবরাহ করে।

স্বাস্থ্যকর চর্বি: স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, এবং বাদামে বিদ্যমান মোনো এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

স্ন্যাকস: ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন ক্ষুধামন্দা হতে পারে, তাই ছোট ছোট স্ন্যাকস যেমন ফলের স্মুদি, গ্রিক দই, এবং প্রোটিন বার রোগীদের পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা করতে পারে।

হাইড্রেশন: প্রচুর পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। এছাড়াও, হালকা স্যুপ, ব্রথ, এবং ভেষজ চা পান করা যেতে পারে।

আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: রক্তস্বল্পতা এড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, ডাল, এবং পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, দই, এবং চিজ হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র

  1. Cavenee, W.K. and White, R.L., 1995. The genetic basis of cancer.Scientific American272(3), pp.72-79. https://www.jstor.org/stable/24980374
  2. Vineis, P., Alavanja, M., Buffler, P., Fontham, E., Franceschi, S., Gao, Y.T., Gupta, P.C., Hackshaw, A., Matos, E., Samet, J. and Sitas, F., 2004. Tobacco and cancer: recent epidemiological evidence.Journal of the National Cancer Institute96(2), pp.99-106. https://academic.oup.com/jnci/article-abstract/96/2/99/2520973
  3. Shuryak, I., Sachs, R.K. and Brenner, D.J., 2010. Cancer risks after radiation exposure in middle age.Journal of the National Cancer Institute102(21), pp.1628-1636. https://academic.oup.com/jnci/article-abstract/102/21/1628/899165
  4. Zur Hausen, H., 2007.Infections causing human cancer. John Wiley & Sons. https://books.google.com/books?hl=en&lr=&id=RXqkc6RVZOoC&oi=fnd&pg=PR5&dq=Infections+That+Can+Lead+to+Cancer&ots=VSEPDpTuAr&sig=D–KVcRI8kWfRqehzMexpLyNOYk
  5. Welsh, J.S., 2011. Contagious cancer.The oncologist16(1), pp.1-4. https://academic.oup.com/oncolo/article-abstract/16/1/1/6400611
  6. Zugazagoitia, J., Guedes, C., Ponce, S., Ferrer, I., Molina-Pinelo, S. and Paz-Ares, L., 2016. Current challenges in cancer treatment.Clinical therapeutics38(7), pp.1551-1566. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0149291816301631
পরামর্শ নিতে 01877733322