কিডনি রোগীর খাবার

কিডনি রোগীর খাবার তালিকা

কিডনি রোগীর খাবার তালিকা. আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকেন তবে আপনি কোন ধরনের খাবার গ্রহন করেন এবং কোন ধরনের পানীয় পান করেন তা দেখা এবং পর্যালোচনা করা খুবই জরুরী।

কারণ আপনার কিডনি আপনার শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ কে অপসারণ করবে কিন্তু আপনি যদি কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকেন তবে এটি আর সেভাবে বর্জ্য পদার্থ কে অপসারণ করতে পারবে না, যে ভাবে এটির বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করার কথা ছিল।

কিডনি রোগ একটি সাধারণ রোগ বা সমস্যা, যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১০% মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কিডনি শরীরের একটি ছোট অঙ্গ যার আকৃতি দেখতে শিমের বিচির মতো। এটি বর্জ্য পদার্থ কে পরিশোধন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হরমোন নিঃসরণ, শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য, প্রস্রাব তৈরি এবং অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, জেনেটিক্স, লিঙ্গ এবং বয়স কিডনি রোগীর ঝুঁকি বহু গুনে বাড়িয়ে দেয়। রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করা এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালী গুলির ক্ষতি করে, যার ফলে কিডনি সর্বোত্তম ভাবে কাজ করতে পারে না আর তখনই রক্তে খাদ্যের বর্জ্য পদার্থ জমা হয় এবং শরীরে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয়।

অতএব, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই একটি বিশেষ ধরনের ডায়েট অনুসরণ বা কিডনি রোগীর খাবার কেমন হবে তা জানা এবং মানা প্রয়োজন।

প্রত্যেকে মানুষেই আলাদা এবং তাদের পুষ্টির চাহিদাও আলাদা। একটি গাইড হিসাবে আমাদের এই তথ্য ব্যবহার করুন এবং কিডনি রোগীর খাবার হিসাবে আপনার জন্য সঠিক কিডনি- বান্ধব খাবার তৈরির পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরার্মশ নিন।

কিডনি রোগীর খাবার বা কিডনি-বান্ধব খাওয়ার পরিকল্পনা হল খাওয়ার এমন একটি উপায় যা আপনার কিডনি কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে এবং শারীরিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যা থেকে  মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। এতে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা আপনার কিডনি তে খাদ্য পরিপাক হতে সহজ হয়।

কিডনি রোগীর খাবার নির্বাচনের আগে নীচের পদক্ষেপ গুলি আপনাকে, আপনার কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রন করার সাথে সাথে সঠিক ভাবে খাদ্য গ্রহন করতে ও সাহায্য করবে। কিডনি রোগে আক্রান্ত সকল মানুষের জন্য এই ধাপ গুলো মেনে চলা অতীব জরুরী। আর এই ধাপ গুলো অনুসরন করলে তরল ও কিছু খনিজ যেমন- সোডিয়াম,পটাসিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন, যা আপনার শরীরে উচ্চ মাত্রায় তৈরি হবে না।

আরও পড়ুনঃ কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি রোগীর সঠিক খাবার নির্বাচনের ধাপ

ধাপ-১কম লবণ এবং সোডিয়াম যুক্ত খাবার বেছে নিন এবং প্রস্তুত করুন
ধাপ-২কম ফসফরাস যুক্ত খাবার এবং তরল পানীয় পান করুন
ধাপ-৩সঠিক পরিমাণে পটাসিয়াম যুক্ত খাবার বেছে নিন এবং গ্রহন করুন
ধাপ-৪সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক ধরনের প্রোটিন গ্রহন করুন
ধাপ-৫আপনার হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন এবং গ্রহন করুন
ধাপ-৬অ্যালকোহল জাতীয় খাবার সীমাবদ্ধ করুন
ধাপ-৭সঠিক ধরনের চর্বি যুক্ত খাবার নির্বাচন করুন এবং গ্রহন করুন
ধাপ-৮এমন খাবার নির্বাচন করুন যেখানে আপনার জন্য খাদ্যের ক্যালোরি সঠিক পরিমানে আছে।
ধাপ-৯বোতল জাত তরল পানীয় পণ্য পান করা সীমিত করুন
ধাপ-১০নোনতা খাবার গ্রহনে এড়িয়ে চলুন
ধাপ-১১শস্য জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাবার গ্রহন করুন
ধাপ-১২ড্যাশ ডায়েট মেনে চলুন

এইখানে ড্যাশ ডায়েট বলতে বুঝানো হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করার জন্য খাদ্যের একটি তালিকা গত পদ্ধতি। এটি ফল, সবজি, কম চর্বি যুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, শস্য জাতীয় খাবার, মাছ, মুরগী, মটর শুটি, বীজ এবং বাদাম সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এতে সোডিয়াম, শর্করা, মিষ্টি, চর্বি এবং লাল মাংসের পরিমাণ কম থাকে।

আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত

১। সোডিয়াম প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামের কম।

২। পটাশিয়াম প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামের কম।

৩। ফসফরাস প্রতিদিন ৮০০-১০০০ মিলিগ্রামের কম।

৪। প্রোটিন হল আরেকটি পুষ্টি বা যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সীমিত করতে হবে, কারণ ক্ষতি গ্রস্থ কিডনি প্রোটিন বিপাক থেকে বর্জ্য পণ্য গুলি পরিষ্কার করতে পারে না।

কিডনি রোগীদের খাবার তালিকা হল

১। ফুলকপি এক কাপ (১২৪ গ্রাম) রান্না করা ফুলকপিতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১৯ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৭৬ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ৪০ মিলিগ্রাম
২। বাঁধাকপি এক কাপ (৭০ গ্রাম) কাটা বাঁধাকপিতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১১৯ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৮ মিলিগ্রাম  
৩। মূলা আধা কাপ (৫৮ গ্রাম) টুকরো মূলায় রয়েছে সোডিয়ামঃ ২৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৩৫ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১২ মিলিগ্রাম
৪। শালগম আধা কাপ (৭৮ গ্রাম) রান্না করা শালগমে রয়েছে সোডিয়ামঃ ১২.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৩৮ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ২০ মিলিগ্রাম  
৫। মাশরুম এক কাপ (১৪৫ গ্রাম) রান্না করা মাশরুমে রয়েছে। সোডিয়ামঃ 6 মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ 170 মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ 42 মিলিগ্রাম
৬। বেলমরিচ একটি ছোট লাল বেল মরিচে (৭৪ গ্রাম) রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৫৬ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৯ মিলিগ্রাম  
৭। পেঁয়াজ একটি ছোট পেঁয়াজে (৭০ গ্রাম) রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১০২ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ২০ মিলিগ্রাম
৮। রসুন রসুনের তিনটি কোষে (৯ গ্রাম) রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ৩৬ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৪ মিলিগ্রাম
৯। ক্র্যানবেরি এক কাপ (১০০ গ্রাম) তাজা ক্র্যানবেরিতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ২ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ৮০ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১১ মিলিগ্রাম
১০। ব্লুবেরি এক কাপ (১৪৮ গ্রাম) তাজা ব্লুবেরিতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১১৪ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৮ মিলিগ্রাম
১১। বাকওয়াট আধা কাপ (৮৪ গ্রাম) রান্না করা বাকওয়াটে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৩.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ৭৪ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ৫৯ মিলিগ্রাম
১২। বুলগুর আধা কাপ (৯১গ্রাম) বুলগুর পরিবেশনে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৪.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ৬২ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ৩৬ মিলিগ্রাম
১৩। লালআঙ্গুর  আধা কাপ (৭৫ গ্রাম) লাল আঙ্গুরে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১.৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৪৪ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৫ মিলিগ্রাম
১৪। আনারস এক কাপ (১৬৫ গ্রাম) আনারসের খন্ডে রয়েছে সোডিয়ামঃ ২ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১৮০ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৩ মিলিগ্রাম  
১৫। ম্যাকাডামিয়া বাদাম এক আউন্স (২৮ গ্রাম) ম্যাকাডামিয়া বাদামে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১.৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১০৩ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ৫৩ মিলিগ্রাম
১৬। আরগুলা এক কাপ (২০ গ্রাম) কাঁচা আরগুলাতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৬ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ৭৪ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১০ মিলিগ্রাম
১৭। জলপাই তেল এক টেবিল চামচ (১৩.৫ গ্রাম) জলপাই তেলে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ০.৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ০.১ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ০ মিলিগ্রাম
১৮। ডিমের সাদা অংশ দুটি বড় ডিমের সাদা অংশে (৬৬ গ্রাম) রয়েছে। সোডিয়ামঃ ১১০ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ১০৮ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১০ মিলিগ্রাম  
১৯। সমুদ্র খাদ্য তিন আউন্স (৮৫ গ্রাম) রান্না করা সমুদ্রের খাদ্যে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৭৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ২৭৯ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ২১১ মিলিগ্রাম
২০। চামড়া বিহীন মুরগি তিন আউন্স (৮৪ গ্রাম) চামড়া বিহীন মুরগিতে রয়েছে। সোডিয়ামঃ ৬৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়ামঃ ২১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাসঃ ১৯২ মিলিগ্রাম

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে করনীয়

উপরে কিডনি রোগীর খাবার বা কিডনি-বান্ধব খাবার গুলি রেনাল ডায়েট অনুসরণ করা লোকেদের জন্য চমৎকার পছন্দের এবং আপনি আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য সর্বোত্তম ডায়েট অনুসরণ করছেন কি না তা নিশ্চিত করতে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা ডায়েটিশিয়ানের সাথে আপনার পছন্দের খাবার গুলি নিয়ে আলোচনা করুন।

কিডনির ক্ষতির ধরনের উপর নির্ভর করে কিডনি রোগীর খাবার পরিবর্তিত হয়, সেখানে প্রচুর সুস্বাদু খাবার রয়েছে যা একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম, কিডনি-বান্ধব খাবার বা কিডনি রোগীর খাবার পরিকল্পনার সাথে খাপ খেয়ে যায়।

তথ্যসূত্রঃ

  1. Alcohol and Public Health. (2020). Alcohol and Kidney Damage.
  2. Kalantar-Zadeh, K., Gutekunst, L., Mehrotra, R., Kovesdy, C.P., Bross, R., Shinaberger, C.S., Noori, N., Hirschberg, R., Benner, D., Nissenson, A.R. and Kopple, J.D., 2010. Understanding sources of dietary phosphorus in the treatment of patients with chronic kidney disease. Clinical Journal of the American Society of Nephrology, 5(3), pp.519-530. https://journals.lww.com/CJASN/Fulltext/2010/03000/Understanding_Sources_of_Dietary_Phosphorus_in_the.20.aspx
  3. National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases. (2017). Eating Right for Chronic Kidney Disease.
  4. National Kidney Foundation. (2020). About Chronic Kidney Disease.
  5. National Kidney Foundation. (2021). Potassium and Your CKD Diet.
Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322