সায়াটিকা কি
সায়াটিকা কি, কেন হয় এবং এর চিকিৎসা. মুরগি জবাইয়ের পর গলার ভেতরে একটি রগ থাকে (মহিলারা পরিষ্কার করে) একই রকম রগ আমাদের আছে, যাহা ঘাড় থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত মেরুদন্ডের ভেতর দিয়ে চলে গেছে একে বলে স্পাইনাল কর্ড।
এই স্পাইনাল কর্ড থেকে কিছু রগ কোমর দিয়ে বের হয়ে পায়ে গেছে। এটি কে বলা হয় নার্ভ। রোগীদের বোঝার স্বার্থে একে আমরা রগ বলি। এদের মধ্যে একটি নার্ভের নাম সায়াটিকা। কোমর থেকে বের হয়ে চলে গেছে পায়ের নিচ পর্যন্ত। এটি সাধারনত – অনুভূতি চলাফেরা কে নিয়ন্ত্রণ করে।
সায়াটিকা এটি যখন চাপ খায় তখন এর নাম সায়াটিকা বলে। এই সায়াটিকা নার্ভ টি তে কোন সমস্যা হলে যেকোনো সময় মানুষ অকেজো হয়ে যেতে পারে। সায়াটিকা নার্ভ যদি কোনো কারণে চাপ খায় তাহলে পায়ে বা কোমর পর্যন্ত ব্যথা হবে। বেশির ভাগ রোগীর দাঁড়াতে বা হাঁটতে খুব কষ্ট হবে।
বেশির ভাগ রোগী বিছানায় বিশ্রামে যেতে হয়। স্লিপাড ডিস্ক বা ডিস্ক প্রলাপ্স সায়াটিকা নার্ভে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, ডিস্ক প্রলাস্প হলে হিসেবে দেখা গেছে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। জন্মগত কারণ যেমন কোমরে স্পাইনাবাইফিডা, স্কোলিওসিস, কোমর সোজা ইত্যাদি যাহা নার্ভের উপরে চাপ দেয়। কোমরে বা নার্ভের আশে পাশে টিউমার হলে। আপনার সায়াটিকা থাকলে যে ১০টি ব্যায়াম করবেন না
সায়াটিকা ট্রামাটিক বা আঘাত জনিত কারণে নার্ভে চাপ
ট্রামাটিক বা আঘাত জনিত কারণে নার্ভে চাপ পরলে প্রচন্ড ব্যথা হয়। অন্যান্য কেমিক্যাল জনিত বিক্রিয়ার কারণে অথবা অপারেশনের পর সায়াটিক নার্ভ চাপ পড়লে। যেমন পুজ বা ফোরা জাতীয় সমস্যায় স্পান্ডিলোসিস বা কোমড়ে বাত জাতীয় সমস্যা কোমরের হাড় বেড়ে গিয়ে নার্ভে চাপ খেলে ব্যথা পায়ে চলে যায় ডিস্ক প্রলাপ্সের কারণে নিচে সায়াটিকা হয় সেটি মানুষ কে বেশি ভোগায়। ডিস্কের মধ্যে যে জেলির মত পদার্থ সে তাহা নিউক্লিয়াস পলপোসাস।
নার্ভ বা স্নায়ু অথবা রগে চাপ দেয় ফলে ব্যথা পায়ে চলে যায়।
এটি যখন বাইরে বের হয়ে এসে পার্শ্ববর্তী নার্ভ বা স্নায়ু অথবা রগে চাপ দেয় ফলে ব্যথা পায়ে চলে যায়। এই চাপ খাওয়ার নার্ভের নাম সায়াটিকা নার্ভ। এটি যখন চাপ খায় তখন এর নাম সায়াটিকা বলে। অনেকে দেখা যায় কোমর বাঁকা, তাদের সমস্যা কোমর থেকে পা পর্যন্ত এতে ছড়িয়ে যায়।
এরা অনেক সময় স্কোলিওসিস ( মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাওয়া ), স্পন্ডাইলোলিসথিসিস ( মেরুদন্ডের হাড় একটা থেকে আরেকটা স্লিপ বা সরে যাওয়া ) ইত্যাদির কারণে ও পায়ের ব্যথা ভুগে থাকেন। সায়াটিকা কি এবং কেন হয় ও সমস্যার সমাধান
কারণ এ সকল সমস্যায় সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়ে। অনেক সময় বাচ্চা হবার সময় বেশির ভাগ মহিলারা কোমরে প্রচন্ড ব্যথা হয়। অনেকে আবার বাচ্চা হওয়ার আগেও কোমরে ব্যথা থাকে। এ সময় সায়াটিক নার্ভে চাপ লেগে ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে।
অনেক মহিলাই জরায়ু তে টিউমার থাকার কারণে কোমর ব্যথা অনুভব করে অথবা ওভারিতে টিউমার হলে সায়াটিকা নার্ভে চাপ পরে ফলে রোগী কোমর ও পায়ে ব্যথা অনুভব করেন। কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়
সায়াটিকা কেন হয়
সায়াটিকা তখন হয় – যখন সায়াটিকা স্নায়ুর উপর চাপ বা জ্বালা সৃষ্টি হয়। এই স্নায়ু টি আমাদের কোমর থেকে শুরু করে নিতম্ব এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত। কোমরের একটি ডিস্ক যখন তার স্বাভাবিক স্থানে থেকে সরে যায় বা ফেটে যায়, তখন সেটি সায়াটিকা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা সায়াটিকার অন্যতম সাধারণ কারণ।
সাধারণত নিম্নোক্ত কারণ গুলো সায়াটিকার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় – হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, ডিস্ক ডিজিজ (মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করে), পিরিফরমিস সিন্ড্রোম (বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের ডিস্ক গুলো ক্ষয় প্রাপ্ত হতে শুরু করে, যা সায়াটিক স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে) |
সায়াটিকা সারানোর উপায়
সায়াটিকা সারানোর উপায় | সায়াটিকার চিকিৎসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিছু সাধারণ পদ্ধতির উল্লেখ করা হলো যা সায়াটিকার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে |
শারীরিক ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি, ব্যথানাশক ওষুধ, ম্যাসাজ, থেরাপি – এই পদ্ধতি গুলি ছাড়া ও, নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা, সঠিকভাবে শোয়া এবং কাজের সময় সঠিক আসন বজায় রাখার মতো প্রাত্যহিক অভ্যাস গুলি সায়াটিকার উপসর্গ গুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সব সময়ই একটি যোগ্য ফিজিওথেরাপি পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সায়াটিকা কি ভালো হয়
সায়াটিকা, সাধারণত সায়াটিকার চিকিৎসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নতি করতে পারে/ভালো হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা ও জীবন যাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নতি সম্ভব। সায়াটিকার প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ুর উপর চাপ কমানো এবং পেশীর শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়।
সায়াটিকার উপসর্গ গুলি অনেক ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে | বিশেষ করে যদি রোগী সঠিক ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম ও জীবন যাত্রার পরিবর্তন করেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে সায়াটিকা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে |
যদি সায়াটিকা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় বা চিকিৎসার পরও উন্নতি না হয়, তাহলে উন্নত চিকিৎসা – যেমন থেরাপি বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জীবন যাত্রার পরিবর্তন নিয়মিত ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সায়াটিকা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সুতরাং সায়াটিকা ভালো হতে পারে | তবে এটি নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতি এবং জীবন যাত্রার উপর। এক্ষেত্রে সবসময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সাইটিকা বাতের লক্ষণ কি?
সায়াটিকার প্রধান লক্ষণ হলো সায়াটিক স্নায়ু বরাবর ব্যথা, যা কোমর থেকে শুরু করে নিতম্ব, উরু, পায়ের পেছন দিক দিয়ে নিচ পর্যন্ত ব্যথা হতে পারে। সায়াটিকার ক্ষেত্রে যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় – তা বাতের লক্ষণের মতো হলেও কিছুটা আলাদা। সায়াটিকার সাধারণ লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো
ব্যথা – কোমর, নিতম্ব, উরু, বা পায়ের পিছনের অংশে তীব্র বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ব্যথাটি সাধারণত এক পায়ে বেশি অনুভূত হয় এবং তা হাঁটা, বসা বা শোয়ার সময় বাড়তে পারে।
ঝিঁঝিঁ অনুভূতি – পায়ের নিচের দিকে ঝিঁঝিঁ অনুভূতি দেখা যেতে পারে, যা পুরো পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে
পেশীর দুর্বলতা – পায়ের পেশীতে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে, যা হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
পায়ের আঙ্গুলে বা গোড়ালি তে ব্যথা – পায়ের আঙ্গুলে বা গোড়ালিতে হঠাৎ করে ব্যথা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে হাটা বা দাঁড়ানোর সময়।
জ্বালা পোড়া অনুভূতি – স্নায়ুর উপরে চাপ পড়ার ফলে জ্বালা পোড়া বা পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।
কোমরের ব্যথা – কোমরের নিচের অংশে ব্যথা থাকতে পারে, যা কোমরের গতি সীমাবদ্ধ করতে পারে।
ব্যথা বাড়া বা কমা – সময়ের সাথে সাথে ব্যথার তীব্রতা পরিবর্তন হতে পারে। কোনো সময় ব্যথা কমে আসতে পারে, আবার কোনো সময় তা তীব্র হতে পারে।
বাতের ক্ষেত্রে সাধারণত অস্থিসন্ধির
জয়েন্ট চার পাশে ব্যথা ও ফোলা ভাব দেখা যায়, এবং এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে, যেখানে সায়াটিকার ব্যথা মূলত কোমর থেকে পা পর্যন্ত হয়) তবে যদি সায়াটিকার লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করা যায়।
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024
- হাঁটু ব্যথার জন্য কার্যকারী ব্যায়াম গুলো জেনে নিন - November 28, 2024
- লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়? ও স্পন্ডাইলোসিস কি? - November 5, 2024