সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? — এ প্রশ্নটি বহু রোগীর মনে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায়। সায়াটিকা এমন এক ধরনের ব্যথা, যা সাধারণত কোমরের নিচ থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব হয়ে পায়ের পেছন দিক দিয়ে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা সরাসরি সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ পড়ার কারণে হয়ে থাকে এর ফলে কখনো রগে টান ধরা বা ঝিনঝিন হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার পায়ের কিছু অংশ অবশও হয়ে যেতে পারে। সাধারণত এক পা এতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং হঠাৎ শরীর সোজা করা, অনেকক্ষণ বসে থাকা বা ভারী কিছু তোলার সময় ব্যথা বাড়তে পারে।

এই রোগটি নিয়ে বহু মানুষের মনে একটি প্রশ্ন প্রায়শই থাকে—এই ব্যথা কি একবারে ভালো হয়ে যায়? না কি এটি সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়? প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ব্যথা শুরু হলে তা যেমন দৈনন্দিন চলাফেরায় অসুবিধা তৈরি করে, তেমনি মানসিক দুশ্চিন্তাও বাড়িয়ে তোলে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, অনেকে আবার একবার ব্যথা কমে গেলেই ভাবেন যে আর কোনো সমস্যা নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে—সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে ব্যথা আবার ফিরে আসতে পারে, এমনকি জটিল অবস্থাও তৈরি হতে পারে।

সায়াটিকার কারণসমূহ

সায়াটিকার কারণসমূহ
সায়াটিকার কারণসমূহ

সায়াটিকা কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, মূলত যেসব কারণে সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ পড়ে সেগুলোই এই ব্যথার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন:

হার্নিয়েটেড ডিস্ক (Herniated Disc): মেরুদণ্ডে থাকা হাড় বা কশেরুকাগুলোর (vertebrae) মাঝে ডিস্ক থাকে, যা এক ধরনের জেলির মতো নরম পদার্থযুক্ত। কোনো কারণে এই ডিস্ক ফেটে গেলে বা সরে গেলে সেটি কাছের স্নায়ু বা রগে, বিশেষত সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ দেয় এর ফলে কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। এটি সায়াটিকার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হিসেবে পরিচিত। (Katz et al., 2022)

স্পাইনাল স্টেনোসিস (Spinal Stenosis):মেরুদণ্ডের হাড় বা কশেরুকাগুলোর যে ছিদ্র দিয়ে রগ বা স্নায়ুগুলো শরীরের নিচের দিকে যায়, কোনো কারণে সেই ফাঁকা সংকুচিত হয়ে গেলে তাকে স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়। এই সংকোচন স্নায়ুগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সায়াটিক নার্ভ আক্রান্ত হলে কোমর ও পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়। এই সমস্যা সাধারণত মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। (Katz and Harris, 2008)

ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ (Degenerative Disc Disease):বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো স্বাভাবিক নমনীয়তা ও গঠন হারিয়ে ফেলে। এর ফলে ডিস্ক সংকুচিত হয়, ফেটে যায় বা জায়গা পরিবর্তন করে, যা স্নায়ুর উপর চাপ ফেলতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (Wang et al., 2016)

পিরিফর্মিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome):নিতম্বে অবস্থিত পাইরিফর্মিস নামক একটি ছোট পেশি যদি অস্বাভাবিকভাবে শক্ত হয়ে যায়, তবে এটি নিচ দিয়ে যাওয়া সায়াটিক নার্ভে চাপ ফেলতে পারে। এতে পায়ের পেছনে ব্যথা, অবশভাব বা জ্বালাভাব অনুভূত হতে পারে। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবুও এটি সায়াটিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। (Fishman et al., 2002)

আঘাত ও অন্যান্য কারণ: দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে বা নিতম্বে আঘাত পেলে স্নায়ু বা রগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া টিউমার, সংক্রমণ, দীর্ঘক্ষণ ভুলভাবে বসে থাকা, ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত স্থূলতা—এসব কারণেও সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো গর্ভাবস্থার শেষ দিকে নারীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে (Casagrande et al., 2015)।

সায়াটিকার ব্যথার প্রকৃতি

সায়াটিকার ব্যথার প্রকৃতি
সায়াটিকার ব্যথার প্রকৃতি

সায়াটিকার ব্যথা প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে একরকম হয় না। কারও ব্যথা হয় হঠাৎ করে, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে বাড়ে। কখনো ব্যথা সহনীয় থাকে, আবার কখনো এত তীব্র হয় যে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এই ভিন্নতা নির্ভর করে ব্যথার মূল কারণ, রোগীর বয়স, দৈনন্দিন অভ্যাস ও শারীরিক অবস্থার উপর।

তীব্র অথবা মৃদু বা অল্প ব্যথা:সায়াটিকার ব্যথা কারও কারও ক্ষেত্রে হালকা টান ধরা বা জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে এমন তীব্র হতে পারে যেন পায়ের স্নায়ুতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। তীব্র ব্যথা সাধারণত দেখা যায় যখন নার্ভে হঠাৎ বেশি চাপ পড়ে, যেমন হার্নিয়েটেড ডিস্কের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, মৃদু ব্যথা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষত যাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন। (Johnson and Mortimore, 2023)

ব্যথা কি স্থায়ী না অস্থায়ী?

সায়াটিকার ব্যথা অনেক সময় নিজে নিজেও কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি তা স্বল্পমাত্রায় হয় এবং কোনো বড় ধরনের ডিস্ক সমস্যা না থাকে। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদে থেকে যেতে পারে অথবা বারবার ফিরে আসতে পারে। যাঁরা কাজের সময় অনেকক্ষণ বসে থাকেন, ভারী জিনিস তোলেন বা ব্যায়াম করেন না, তাঁদের মধ্যে এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা অনুসরণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

ব্যথার ওঠানামা ও জীবনধারার প্রভাব

সায়াটিকার ব্যথা সবসময় একই রকম থাকে না। এটি মাঝে মাঝে কমে যায়, আবার হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। বেশি সময় এক জায়গায় বসে থাকলে, সোজা হয়ে দাঁড়ালে, সিঁড়ি ভাঙলে, বা ভারী কিছু তোলার সময় ব্যথা বেড়ে যায়। আবার নিয়মিত হাঁটা, হালকা ব্যায়াম, আরামদায়ক অবস্থায় ঘুমানো ইত্যাদি করলে ব্যথা অনেকটা কমে আসে। যাঁরা নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন এবং সঠিক ভঙ্গিতে বসেন ও চলাফেরা করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যথা দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় (Woolf and Åkesson, 2007) ।

চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ

চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ
চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ

অনেকে ভাবেন, সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? অথচ ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসা নিতে দেরি করেন।

ঔষধ:প্রাথমিক ভাবে সায়াটিকার ব্যথা কমাতে একজন নিউরোজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল, ইবুপ্রোফেন, অথবা ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এই ওষুধগুলো স্নায়ুর আশেপাশে থাকা প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কখনো কখনো চিকিৎসক মাংসপেশি শিথিলকারী ওষুধ অথবা স্নায়ু ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কিছু বিশেষ ওষুধ (যেমন গ্যাবাপেন্টিন) লিখে থাকেন।

ফিজিওথেরাপি:সায়াটিকার ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ম্যানুয়াল থেরাপি একটি কার্যকর ও প্রভাবশালী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত (Darlow et al., 2015)।

স্পাইনাল ম্যানিপুলেশন তীব্র কোমর ব্যথা ও সায়াটিকার মতো স্নায়ুজনিত ব্যথা সাময়িকভাবে কিছুটা উপশম পেতে সাহায্য করে। (Rubinstein et al., 2012; Bronfort et al., 2004)

সায়াটিকার ব্যথা থেকে দ্রুত আরাম পেতে ম্যানুয়াল থেরাপি বর্তমানে একটি অত্যন্ত কার্যকর ও জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ করে বাংলাদেশে ASPC ম্যানুপুলেশন থেরাপি সেন্টার এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এখানে SDM (Structural Diagnosis and Management) নামে একটি বিশেষ এসেসমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর সমস্যার উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। তারপর অভিজ্ঞ থেরাপিস্টরা বিশেষ চিকিৎসা কৌশল প্রয়োগ করে রোগীর পেশি, হাড় ও স্নায়ুর ভারসাম্য ফিরিয়ে আনেন। এতে শুধু ব্যথাই কমে না, বরং সমস্যা যেন আবার ফিরে না আসে, সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ খেয়ে সাময়িক আরাম মিললেও ব্যথা আবার ফিরে আসে। কিন্তু ASPC ম্যানুপুলেশন থেরাপি সেন্টারে ব্যথার মূল কারণকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা দেওয়া হয়, ফলে রোগী দ্রুত সুস্থতা অনুভব করেন এবং ভবিষ্যতে সায়াটিকার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—কোনো অস্ত্রোপচার বা ওষুধ ছাড়াই একদম প্রাকৃতিকভাবে রোগ নিরাময়ের পথ খুলে দেয়।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন:সায়াটিকার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জীবনধারার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘসময় একটানা বসে থাকা, ভুল ভঙ্গিতে বসা, অতিরিক্ত ওজন, এবং ঘুমের অনুপযুক্ত ভঙ্গি – এসব বিষয় স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে ব্যথা বাড়ায়। তাই:

  • সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও দাঁড়ানো
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
  • শক্ত বিছানায় সোজা হয়ে ঘুমানো
  • নিয়মিত হালকা হাঁটা ও পেশি সচল রাখা

অপারেশন:সব ধরনের চিকিৎসা প্রয়োগের পরও যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয়, বা পেশি শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তবে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণত নিচের পরিস্থিতিগুলোতে অস্ত্রোপচারের কথা বিবেচনা করা হয় (Schmid et al., 2023):

  • দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ব্যথা যেটি কোনো ওষুধ বা থেরাপিতে কমছে না
  • পায়ে শক্তি বা অনুভূতি হারিয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব বা মল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি হওয়া (Cauda Equina Syndrome)

ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ঠিক হয়ে যেতে পারে?

সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? — হ্যাঁ, তবে তার জন্য ধৈর্য, চিকিৎসা ও নিয়ম মানা জরুরি।

সায়াটিকা অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই একেবারে ভালো হয়ে যায়, যদি তারা শুরু থেকেই চিকিৎসা নেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং দৈনন্দিন জীবনে সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখেন। ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি, ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ এবং জীবনধারায় সচেতনতা বেশিরভাগ সময়েই উপসর্গ কমিয়ে আনে এবং স্নায়ুর উপর চাপ কমায়। যাঁদের ডিস্কে বড় কোনো ক্ষতি নেই কিংবা যাঁরা অল্প বয়সী ও সক্রিয় জীবনযাপন করেন, তাঁদের মধ্যে সুস্থতার হার অনেক বেশি। (Albert and Manniche, 2012)

সব রোগী একরকম নন। অনেক সময় সায়াটিকার উপসর্গ প্রথমে কিছুদিনের জন্য সেরে গেলেও পরে আবার ফিরে আসে। বিশেষ করে যাঁরা পেশাগত কারণে দীর্ঘসময় বসে থাকেন, ভারী কাজ করেন বা ব্যায়াম করেন না, তাঁদের মধ্যে এই ব্যথা পুনরায় দেখা দেয়ার ঝুঁকি থাকে।
এছাড়া যারা আগে থেকেই মেরুদণ্ডের জটিলতা যেমন – ডিজানারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ বা স্পাইনাল স্টেনোসিসে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যথা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।

পুনরায় ব্যথা ফিরে আসার ঝুঁকি:

অনেকেই চিন্তিত থাকেন, সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? নাকি এটা আজীবন লেগে থাকবে।

সায়াটিকার মূল কারণ যেমন ডিস্কে সমস্যা বা রগে চাপ – যদি সম্পূর্ণভাবে না ঠিক হয়, তাহলে ব্যথা ফেরত আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবার, অনেকেই ব্যথা কিছুটা কমলেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেন কিংবা এক্সারসাইজ করেন না। এতে করে স্নায়ুর উপর আগের মতো চাপ আবার সৃষ্টি হয়।
যেসব রোগীর শরীরে আগে থেকেই স্পাইনাল স্টেনোসিস বা ডিস্ক ক্ষয়জাতীয় সমস্যা থাকে, তাঁদের মধ্যে পুনরাবৃত্তি হবার আশঙ্কা বেশি।

দীর্ঘসময় বসে থাকা, ভারী জিনিস তোলা ইত্যাদি:

দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করা, বিশেষ করে যদি চেয়ার বা বসার ভঙ্গি ঠিক না হয়, তবে তা কোমর ও মেরুদণ্ডের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এতে সায়াটিক নার্ভে পুনরায় চাপ পড়ে এবং ব্যথা ফিরে আসে।
ভারী কিছু তোলা, হঠাৎ করে ঝুঁকে কিছু তোলা, কিংবা সঠিক উপায়ে না তুললে ডিস্কের অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে, যা আবারও নার্ভে চাপ সৃষ্টি করে।
তাছাড়া, যারা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়, এক্সারসাইজ করেন না, বা অতিরিক্ত ওজন বহন করেন—তাঁদের মধ্যে পুনরায় সায়াটিকা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। (Shiri et al., 2014)

প্রতিরোধের উপায়

প্রতিরোধের উপায়
প্রতিরোধের উপায়

যাঁরা জিজ্ঞেস করেন সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়?, তাঁদের আশ্বস্ত করা যায় যে শতকরা ৯০% রোগী উন্নতি অনুভব করেন।

এক্সারসাইজ ও ফিজিওথেরাপির নিয়মিত চর্চা

সায়াটিকার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত এক্সারসাইজ করা, বিশেষ করে কোমর ও পিঠের পেশি শক্তিশালী রাখার জন্য কিছু নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ।
হালকা স্ট্রেচিং, পিঠের পেশি দৃঢ়করণ, নিতম্বের পেশি সচল রাখা—এসব ব্যায়াম নার্ভের উপর চাপ কমায় এবং ডিস্ককে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে।
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করলে শুধু ব্যথা প্রতিরোধ নয়, বরং শরীরের সামগ্রিক সচলতাও বাড়ে। (Siraj and Dadgal, 2022)

সঠিক আসনভঙ্গি

সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? — হ্যাঁ, তবে নিয়ম না মানলে তা আবার ফিরে আসতে পারে।

অফিসে বসে কাজ করা হোক বা বাসায় আরাম করা—সব সময় সোজা হয়ে বসা এবং কোমরকে ঠিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কুঁজো হয়ে বসা, কোমর বাঁকিয়ে বসা কিংবা অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়ে। তাই পিঠ সোজা রেখে বসা এবং প্রয়োজন হলে পিঠের পিছনে বালিশ বা সাপোর্ট ব্যবহার করাই শ্রেয়। (Kett, Sichting and Milani, 2021)

ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন শরীরের মেরুদণ্ড ও ডিস্কের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পেটের আশেপাশে চর্বি জমলে তা শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং নিচের অংশের স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে।
ওজন কমালে কেবল ব্যথা কমে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ু ও পেশির উপর চাপ হ্রাস পায়, ফলে সায়াটিকা প্রতিরোধ সহজ হয়।

নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও সক্রিয় জীবনযাপন

শরীরকে সব সময় সচল রাখা সায়াটিকার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে মাঝেমধ্যে উঠে হেঁটে নেওয়া, সিঁড়ি ব্যবহার করা, হালকা এক্সারসাইজে অভ্যস্ত হওয়া—এসব অভ্যাস নার্ভের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
শুধু ব্যথা কমানোর জন্য নয়, বরং সারা শরীরকে সুস্থ রাখতে সক্রিয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (Shiri et al., 2010)

সুতরাং যারা ভাবছেন, সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি স্থায়ীভাবে ভালো হয়? — তাদের জন্য উত্তর হলো: হ্যাঁ, তবে সচেতন ও নিয়মিতভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।

সায়াটিকা এমন একটি স্নায়বিক সমস্যা যা জীবনযাত্রার গুণগত মানকে অনেকটা ব্যাহত করতে পারে। তবে ভালো বিষয় হলো—এই ব্যথা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকা সম্ভব।

এই ব্যথা কারো ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়, আবার কারো ক্ষেত্রে বারবার ফিরে আসতে পারে। এর ফলাফল একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন—কোনো রোগী হয়তো শুধু ব্যায়াম ও কিছু ওষুধেই ভালো হয়ে যান, আবার কেউ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পরও মাঝেমধ্যে ব্যথায় ভোগেন। এটি নির্ভর করে রোগীর বয়স, শরীরের গঠন, আগের শারীরিক সমস্যাগুলো এবং তারা চিকিৎসা ও জীবনধারার নিয়মগুলো কতটা আন্তরিকভাবে মেনে চলছেন তার উপর।

সায়াটিকার জন্য চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধাপে ধাপে চিকিৎসা গ্রহণ, যেমন—ব্যথা কমানোর ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, এবং প্রয়োজন হলে অপারেশন। কিন্তু শুধু চিকিৎসা গ্রহণ করলেই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে দরকার সঠিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং নিজের দেহের প্রতি যত্নশীল মনোভাব।

সবশেষে বলা যায়, সায়াটিকা থেকে মুক্তি পাওয়ার চাবিকাঠি হলো—সচেতনতা, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ। আর এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলেই একজন ব্যক্তি সায়াটিকার হাত থেকে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

পরামর্শ নিতে 01877733322