যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা। যক্ষ্মা (Tuberculosis বা TB) হলো একটি সংক্রামক রোগ যা মূলত ফুসফুস কে আক্রান্ত করে, তবে শরীরের অন্য অঙ্গ গুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি মূলত Mycobacterium tuberculosis ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয়। ঘনবসতি পূর্ণ এবং অনুন্নত অঞ্চলে যক্ষ্মার প্রকোপ তূলনামূলক ভাবে বেশি।
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ গুলির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে দীর্ঘ দিনের কাশি (সাধারণত তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে), কাশির সাথে রক্ত আসা, বুকে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘাম হওয়া এবং জ্বর আসা। এটি সংক্রামিত ব্যক্তির কাছ থেকে বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, যেমন কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় ব্যাকটেরিয়া বাতাসে মুক্ত হয়ে অন্যদের সংক্রামিত করতে পারে।
ফুসফুসীয় যক্ষ্মার লক্ষণ
দীর্ঘস্থায়ী কাশি দীর্ঘস্থায়ী কাশি ফুসফুসীয় যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ (টিবি) অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এই কাশি সাধারণত তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে। প্রথমে এটি শুকনো কাশি হিসেবে শুরু হতে পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে কাশির সাথে কফ আসতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে কফের সাথে রক্তও আসতে পারে, যা যক্ষ্মার একটি গুরুতর লক্ষণ (1)।
কাশির সাথে রক্ত আসা কাশির সাথে রক্ত আসা (Hemoptysis) ফুসফুসের যক্ষ্মার (টিবি) একটি গুরুতর লক্ষণ। এটি ঘটে যখন ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে কাশি দেয়ার সময় কফের সাথে রক্ত বের হয়। যক্ষ্মার ফলে ফুসফুসের টিস্যু গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং প্রদাহ বা সংক্রমণ ফুসফুসের রক্তনালী গুলির ক্ষতি করে, যার ফলে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে।
বুকের ব্যথা: যক্ষ্মার সংক্রমণে ফুসফুসের টিস্যু এবং চার পাশের অংশ গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। ফুসফুসের আচ্ছাদন বা প্লুরা (pleura) আক্রান্ত হলে বা প্রদাহিত হলে এই ব্যথা তীব্র হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত তীব্র বা খোঁচানো ধরনের হয় এবং কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বুকের ব্যথার পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণ, যেমন দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাশির সাথে রক্ত আসা, ওজন কমে যাওয়া, জ্বর, এবং রাতে ঘামও হতে পারে।
ওজন কমে যাওয়া যক্ষ্মা হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ফলে শরীরের শক্তি খরচ হয় এবং রোগীর মেটাবলিজম বেড়ে যায়, যা ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাশির সাথে রক্ত আসা, এবং অসুস্থতা অনুভব করার ফলে খাবারের প্রতি রুচি কমে যেতে পারে, যা আরও দ্রুত ওজন কমানোর দিকে ধাবিত করে।
জ্বর: জ্বর সাধারণত নিম্ন-মাত্রায় হয় এবং বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে বা রাতে তীব্র হতে পারে। অনেক সময় রোগীর শরীরে রাতে ঘাম হতে পারে, যা “নাইট সোয়েটস” নামে পরিচিত। এই ভাবে জ্বর আসা এবং রাতে ঘাম হওয়া যক্ষ্মার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
রাতে ঘাম হওয়া – যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ – রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রাতে ঘুমানোর সময় অতিরিক্ত ঘামতে পারেন, যা কখনও কখনও এতটাই বেশি হয় যে পোশাক এবং বিছানা ভিজে যায়। রাতে ঘাম হওয়া সাধারণত যক্ষ্মার কারণে হওয়া দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের সাথে সম্পর্কিত। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঘটে থাকে। থাইরয়েড কি ও কারণ – লক্ষণ এবং নিরাময়ের উপায়
ক্ষুধামন্দা যক্ষ্মা সংক্রমণের কারণে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগীর খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয় এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।
লিম্ফ নোডের স্ফীতি এক্সট্রাপালমোনারি যক্ষ্মা তখন ঘটে যখন যক্ষ্মার সংক্রমণ ফুসফুসের বাইরে শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। যক্ষ্মা সংক্রমণ হলে সাধারণত ঘাড়, কুঁচকি, বা বগলের লিম্ফ নোড গুলিতে স্ফীতি বা ফোলা দেখা দিতে পারে, যা “লিম্ফাডেনাইটিস” (Lymphadenitis) নামে পরিচিত। লিম্ফ নোডের স্ফীতি সাধারণত মসৃণ, নরম, হতে পারে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি শক্ত এবং ব্যথা যুক্ত হয়ে উঠতে পারে। কখনও কখনও আক্রান্ত লিম্ফ নোড গুলিতে পুঁজ জমা হতে পারে এবং সংক্রমণ বাড়লে নোড গুলো ফেটে গিয়ে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
পিঠে বা মেরুদণ্ডের ব্যথা পিঠে বা মেরুদণ্ডের ব্যথা (Back or Spinal Pain) এক্সট্রাপালমোনারি যক্ষ্মার (টিবি) একটি সাধারণ লক্ষণ। যক্ষ্মা যদি মেরুদণ্ড বা হাড়ে সংক্রমণ ঘটায়, তখন এটিকে “স্পাইনাল টিউবারকুলোসিস” বা “পট’স ডিজিজ” (Pott’s Disease) বলা হয়। মেরুদণ্ডে যক্ষ্মার সংক্রমণ হলে, এটি মেরুদণ্ডের হাড় এবং ডিস্কের চার পাশে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পিঠে তীব্র বা ক্রমাগত ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং অনেক সময় অন্যান্য হাড়ে বা জয়েন্টেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মূত্র সংক্রান্ত সমস্যা যখন যক্ষ্মার সংক্রমণ ফুসফুসের বাইরে কিডনি, মূত্রথলি, বা মূত্রনালি তে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই ধরনের যক্ষ্মা কে “জেনিটোইউরিনারি টিউবারকুলোসিস” (Genitourinary Tuberculosis) বলা হয়। এই সংক্রমণ কিডনি বা মূত্রনালি তে হলে রোগী প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া (ডিজিউরিয়া), প্রস্রাবে রক্ত আসা (হেমাচুরিয়া), এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ (ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্ড আরজেন্সি) অনুভব করতে পারেন। কখনও কখনও প্রস্রাব পরিমাণে কম হতে পারে বা মূত্র বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, কিডনি সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোমরে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
মাথা ব্যথা এবং মানসিক পরিবর্তন মাথা ব্যথা এবং মানসিক পরিবর্তন এক্সট্রাপালমোনারি যক্ষ্মার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন যক্ষ্মার সংক্রমণ মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে, সংক্রমণ কে “টিউবারকুলাস মেনিনজাইটিস” (Tuberculous Meningitis) বলা হয়, যা মস্তিষ্কের আবরক মেমব্রেন বা মেনিনজেস কে প্রভাবিত করে। এই অবস্থায় রোগী তীব্র মাথা ব্যথা, মানসিক বিভ্রান্তি, ঘন ঘন ক্লান্তি, স্মৃতিভ্রম, মেজাজ পরিবর্তন, অথবা আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মতো লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। এই ধরনের সংক্রমণের ফলে রোগী বিষণ্ণতা, অস্থিরতা, অথবা দৃষ্টিভ্রমের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
হাড়ে ব্যথা হাড়ে ব্যথা হওয়া এক্সট্রাপালমোনারি যক্ষ্মার একটি লক্ষণ, যা তখন ঘটে যখন যক্ষ্মার সংক্রমণ হাড় বা জয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের সংক্রমণ কে “অস্টিওআর্টিকুলার টিউবারকুলোসিস” (Osteoarticular Tuberculosis) বলা হয়। যক্ষ্মা সংক্রমণের কারণে হাড়ের টিস্যু তে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা আক্রান্ত হাড় বা জয়েন্টে তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্যথা ক্রমাগত বা স্থায়ী হতে পারে এবং প্রায়ই রাতে বা বিশ্রামের সময় বাড়ে। এছাড়া, হাড়ে যক্ষ্মা হলে ফোলা ভাব, হাড়ের দুর্বলতা, এবং জয়েন্টের সঞ্চালনে অসুবিধা দেখা দিতে পারে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁটা-চলা করতে বা দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা অনুভব করেন।
যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষার নাম
যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ (টিবি) রোগের নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়, যা রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং সংক্রমণের ধরণ নির্ধারণে সহায়ক। যক্ষ্মা রোগের সাধারণ পরীক্ষা গুলি হলো
স্পুটাম পরীক্ষা (Sputum Test) স্পুটাম (কফ) সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া (Mycobacterium tuberculosis) সনাক্ত করা হয়। এটি যক্ষ্মার প্রাথমিক এবং সবচেয়ে প্রচলিত পরীক্ষা।
টিউবারকুলিন স্কিন টেস্ট (Tuberculin Skin Test বা Mantoux Test) টিউবার কুলিন নামক এক ধরনের প্রোটিন ত্বকের নিচে ইনজেক্ট করা হয়। যদি রোগীর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু থাকে, তাহলে ইনজেকশন প্রদানের স্থানে ফুলে উঠতে পারে। তবে, এই পরীক্ষা অতীতে টিবির বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া থাকলেও পজিটিভ ফলাফল দেখাতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা (Interferon-Gamma Release Assays বা IGRAs) যক্ষ্মার উপস্থিতি সনাক্ত করতে রক্তের স্যাম্পল ব্যবহার করে করা হয়। দুটি প্রধান আইজিআরএ পরীক্ষা হলো
- কোয়ান্টিফেরন-TB গোল্ড (QuantiFERON-TB Gold)
- T-SPOT.TB টেস্ট
চেস্ট এক্স-রে (Chest X-ray) ফুসফুসে সংক্রমণের চিহ্ন দেখতে চেস্ট এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। যক্ষ্মার ফলে ফুসফুসের টিস্যু তে ক্ষত বা গাঁট দেখা যেতে পারে।
সিবি-নাট (CB-NAAT) বা জিন এক্সপার্ট (GeneXpert) একটি দ্রুততর এবং সঠিক পরীক্ষা, যা টিবি জীবাণু এবং ওষুধ প্রতিরোধের উপস্থিতি নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি কফের নমুনায় মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণুর ডিএনএ সনাক্ত করে।
বায়োপসি (Biopsy) শরীরের অন্যান্য অংশে এক্সট্রাপালমোনারি যক্ষ্মা সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট টিস্যু বা লিম্ফ নোড থেকে বায়োপসি করা যেতে পারে।
এফএনএসি (Fine Needle Aspiration Cytology) লিম্ফ নোডের মতো শরীরের আক্রান্ত অংশ থেকে সূক্ষ্ম সূঁচের মাধ্যমে টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।
টিবি রোগের ঔষধের নাম
যক্ষ্মা (টিবি) রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সাধারণ ঔষধ গুলি মূলত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যক্ষ্মার চিকিৎসা ছয় মাস থেকে নয় মাস পর্যন্ত চলতে পারে এবং এতে একাধিক ঔষধের সংমিশ্রণ করা হয়। যেমন
ইসোনিয়াজিড (Isoniazid বা INH) যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ওষুধ, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও প্রজনন প্রতিরোধ করে।
রিফ্যাম্পিসিন (Rifampicin) এটি ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ প্রতিলিপির প্রক্রিয়া কে বাধাগ্রস্ত করে যক্ষ্মার জীবাণু ধ্বংস করে।
পাইরাজিনামাইড (Pyrazinamide) যক্ষ্মার জীবাণু কে দ্রুত ধ্বংস করতে সহায়ক এবং চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর।
ইথাম্বুটল (Ethambutol) এটি যক্ষ্মার জীবাণুর কোষ প্রাচীর গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং অন্যান্য ওষুধ গুলির কার্যকারিতা বাড়ায়।
স্ট্রেপ্টোমাইসিন (Streptomycin) ইনজেকশন যোগ্য অ্যান্টি বায়োটিক যা গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
(টিবি) রোগের ঔষধ সঠিক নিয়মে এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী খাওয়া খুবই গুরুত্ব পূর্ণ, কারণ সঠিক ভাবে ঔষধ সেবন না করলে যক্ষ্মা রোগের জীবাণুর মধ্যে রেজিস্ট্যান্স তৈরী হতে পারে। সাধারণত যক্ষ্মার চিকিৎসা দুটি ধাপে পরিচালিত হয় ইনটেনসিভ ফেজ (প্রাথমিক পর্যায়) এবং কন্টিনিউয়েশন ফেজ (পরবর্তী পর্যায়)।
টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
ইনটেনসিভ ফেজ (প্রাথমিক পর্যায়)
- এই পর্যায়ে প্রথম ২ মাসে চার টি প্রধান ঔষধ (ইসোনিয়াজিড, রিফ্যাম্পিসিন, পাইরাজিনামাইড, এবং ইথাম্বুটল) এক সঙ্গে প্রতিদিন বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন গুলোতে সেবন করতে হয়।
- এই সময় রোগী কে প্রতিদিন এক বার সকালে খালি পেটে ঔষধ খেতে হয়, কারণ খালি পেটে ঔষধের শোষণ ভালো হয়।
- এ পর্যায়ে রোগীর লক্ষণ গুলোর উন্নতি হওয়া শুরু হয় এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
কন্টিনিউয়েশন ফেজ (পরবর্তী পর্যায়)
- এই পর্যায়ে সাধারণত পরবর্তী ৪-৭ মাস ইসোনিয়াজিড এবং রিফ্যাম্পিসিন এই দুটি ঔষধ প্রতিদিন অথবা সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন গুলোতে খেতে হয়।
- প্রতিদিন খালি পেটে (খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা খাবারের দুই ঘণ্টা পর) ঔষধ খাওয়া উচিত।
ঔষধ খাওয়ার সময় যে নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে
নিয়মিত ঔষধ খাওয়া চিকিৎসকের নির্দেশিত সময় এবং নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া গুরুত্ব পূর্ণ। কোনো ডোজ বাদ দেওয়া উচিত নয় এবং একবার খাওয়া ভুলে গেলে পরের দিন দ্বিগুণ ডোজ খাওয়া উচিত নয়।
ডটস পদ্ধতি অনুসরণ করা (Directly Observed Treatment, Short-course – DOTS) পদ্ধতির মাধ্যমে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা নির্ধারিত ব্যক্তির সামনে ঔষধ খাওয়া নিশ্চিত করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে রোগী নিয়মিত ভাবে এবং সঠিক ভাবে ঔষধ খাচ্ছে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা যদি কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যেমন বমি, মাথা ঘোরা, জন্ডিসের লক্ষণ (চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া), বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা চিকিৎসকের নির্দেশিকা মেনে পুরো চিকিৎসা কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে, এমন কি যদি রোগী সুস্থতা বোধ করে তবুও চিকিৎসা বাদ দেয়া যাবে না।
টিবি রোগ কি ভাল হয়
হ্যাঁ, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ টিবি (যক্ষ্মা) রোগ পুরো পুরি ভালো হয়, যদি এটি সময় মতো সঠিক ভাবে চিকিৎসা করা হয়। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় প্রধানত অ্যান্টি টিবি ওষুধের একটি নির্দিষ্ট কোর্স ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত ৬-৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা যদি সঠিক ভাবে হয় এবং রোগী যদি চিকিৎসকের নির্দেশিত সময় পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যায়, তাহলে যক্ষ্মা রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যক্ষ্মা রোগীর প্রায় ৮৫% সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হতে পারে। টিবি রোগের চিকিৎসা পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন ইসোনিয়াজিড (Isoniazid), রিফ্যাম্পিসিন (Rifampicin), পাইরাজিনামাইড (Pyrazinamide), এবং ইথাম্বুটল (Ethambutol)। এই ওষুধগুলি মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ব্যাকটেরিয়া কে ধ্বংস করে এবং সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে (2)।
তবে, ( যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ) যক্ষ্মা রোগের সঠিক ভাবে চিকিৎসা সম্পন্ন করতে হবে এবং ওষুধের কোর্স মাঝ পথে বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ, যদি ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করা হয়, তবে ব্যাকটেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে, যা চিকিৎসা জটিল করে তুলতে পারে।
তথ্যসূত্র
- World Health Organization, 2004. Tuberculosis fact sheet:(Revision, March 2004).Weekly Epidemiological Record= Relevé épidémiologique hebdomadaire, 79(13), pp.125-128. https://apps.who.int/iris/bitstream/handle/10665/232440/WER7913_125-128.PDF
- World Health Organization, 2004. Tuberculosis fact sheet:(Revision, March 2004).Weekly Epidemiological Record= Relevé épidémiologique hebdomadaire, 79(13), pp.125-128. https://apps.who.int/iris/bitstream/handle/10665/232440/WER7913_125-128.PDF
- ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ - February 9, 2025
- সায়াটিকা সারানোর উপায় - January 30, 2025
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024