সারভাইক্যাল রিবস হলো একটি অতিরিক্ত পাঁজরের হাড় যা মানুষের ঘাড়ের (সারভাইক্যাল) কশেরুকার সঙ্গে গঠিত হয়। সাধারণত, মানুষের ঘাড়ে সাত টি কশেরুকা থাকে এবং এদের সঙ্গে পাঁজরের হাড় থাকে না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ঘাড়ের সপ্তম কশেরুকার (C7) সঙ্গে একটি অতিরিক্ত পাঁজরের হাড় গঠিত হতে পারে, যা সারভাইক্যাল রিবস নামে পরিচিত।
সারভাইক্যাল রিবস সাধারণত দুই পাশে (ডান ও বাম) থাকতে পারে, কিন্তু অনেক সময় শুধুমাত্র এক পাশেও থাকতে পারে। এটি সাধারণত কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না, তবে কিছু ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত হাড় টি নিকটস্থ স্নায়ু এবং রক্তনালী তে চাপ সৃষ্টি করে, যা হাতের বা কাঁধের ব্যথা, অসাড়তা, এবং দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। এই উপসর্গ গুলি কে থোরাসিক আউটলেট সিন্ড্রোম (Thoracic Outlet Syndrome) বলা হয়।
ঘাড়ে অতিরিক্ত হাড় গজানোর কারণ
ঘাড়ে অতিরিক্ত হাড় গজানো, যেমন সারভাইক্যাল রিবস, একটি জন্মগত বা কনজেনিটাল অ্যানোমালি (Congenital Anomaly), অর্থাৎ এটি জন্মগত সমস্যা। এর সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে এটি বিভিন্ন জেনেটিক এবং পরিবেশ গত কারণে হতে পারে। কিছু কারণ যা এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
জেনেটিক ফ্যাক্টর: বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এটি প্রধানত জেনেটিক মিউটেশন এবং পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়, তবে সেই ব্যক্তির মধ্যেও এই সমস্যার উদ্ভবের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিছু নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন, যা হাড়ের গঠন ও বিকাশের জন্য দায়ী, তাতে ত্রুটি থাকলে এই ধরনের অতিরিক্ত হাড় গজাতে পারে। এর ফলে সারভাইক্যাল রিবসের মতো অস্বাভাবিক হাড়ের গঠন হতে পারে, যা প্রায়শই কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না। তবে কখনও কখনও এটি স্নায়ু বা রক্তনালী তে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা, অসাড়তা, এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
হাড় বেড়ে যায় কেন
এম্ব্রায়োনিক ডেভেলপমেন্টের সময় সমস্যা গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের হাড়ের বিকাশের সময় কোনো ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে অতিরিক্ত হাড় গঠিত হতে পারে। সাধারণত, ভ্রূণের বিকাশের প্রথম দিকে যে কোষ গুলি পাঁজরের হাড় তৈরি করে, তারা যদি ভুল ভাবে বিকশিত হয় বা তাদের মাইগ্রেশন সঠিক ভাবে না ঘটে, তবে এটি সারভাইক্যাল রিবসের মতো অতিরিক্ত হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই সমস্যা টি এমব্রিয়োজেনেসিসের (embryogenesis) একটি ক্রম বিকাশ জনিত ত্রুটির ফলাফল, যেখানে হক্স (Hox) জিনের বিকৃত কার্যক্রমের কারণে অতিরিক্ত হাড় গঠনের সম্ভাবনা থাকে। এই হক্স জিনগুলি ভ্রূণের শরীরের বিভিন্ন অংশের সঠিক স্থান ও আকৃতি নির্ধারণে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এম্ব্রায়োনিক ডেভেলপমেন্টের সময় এই ধরনের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত পাঁজর, যেমন সারভাইক্যাল রিবস, গঠিত হতে পারে যা প্রায়শই কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না (1)।
পরিবেশগত কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের দ্বারা নেওয়া কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, ধূমপান, এলকোহল গ্রহণ, অপুষ্টি, কিংবা বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ ভ্রূণের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা হাড়ের অস্বাভাবিক গঠন বা অতিরিক্ত হাড় গঠনের কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি, যেমন ভিটামিন ডি বা ফোলেটের অভাব, ভ্রূণের হাড়ের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে এবং অতিরিক্ত হাড় গঠনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। মাতৃ স্বাস্থ্যের অবস্থা ও পরিবেশ গত চাপও এই অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে, যা সারভাইক্যাল রিবসের মতো কঞ্জেনিটাল অ্যানোমালির উদ্ভব ঘটাতে পারে (2)।
হরমোনাল অসামঞ্জস্য গর্ভাবস্থায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ভ্রূণের হাড়ের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে, যা সারভাইক্যাল রিবসের মতো অতিরিক্ত হাড় গঠনের কারণ হতে পারে। বিশেষত, এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার (endocrine disruptors) নামে পরিচিত কিছু রাসায়নিক উপাদান, যেমন বিসফেনল এ (BPA) এবং থ্যালেটস (phthalates), মায়ের শরীরে প্রবেশ করে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
এই ধরনের হরমোনাল পরিবর্তন ভ্রূণের হাড়ের সঠিক গঠনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং অস্বাভাবিক হাড় গঠনের সম্ভাবনা তৈরি করে। এছাড়াও, মায়ের শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়া বা ঘাটতি, ইনসুলিন জনিত সমস্যা, কিংবা অন্যান্য হরমোন জনিত অসামঞ্জস্য ভ্রূণের এম্ব্রায়োনিক ডেভেলপমেন্টের সময় হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে (3)।
ঘাড় অস্টিওফাইট কারণ?
ঘাড়ে অস্টিওফাইট (Osteophyte), যা সাধারণত ‘বোন স্পার’ (bone spur) নামে পরিচিত, হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি যা সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাড়ের ক্ষয় জনিত রোগের ফলে ঘটে। এটি শরীরের যে কোনো হাড়ের জোড়ায় হতে পারে, তবে ঘাড়ে বা সারভাইক্যাল স্পাইনে এটি বেশির ভাগ হয়ে থাকে। অস্টিওফাইটের কারণ গুলির মধ্যে প্রধান কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো
ডিজেনারেটিভ চেঞ্জ বা বার্ধক্য জনিত পরিবর্তন বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের কশেরুকা গুলির মধ্যে অবস্থিত ডিস্ক এবং কার্টিলেজ ক্ষয় হতে শুরু করে, যা সারভাইক্যাল স্পাইনে ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজের (degenerative disc disease) সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় কশেরুকার মধ্যে থাকা কার্টিলেজের পৃষ্ঠ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে হাড়ের ঘর্ষণ বৃদ্ধি পায়। ঘর্ষণের ফলে শরীর প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অতিরিক্ত হাড় তৈরি করে, যা অস্টিওফাইট হিসেবে গঠিত হয়।
এই অতিরিক্ত হাড় বা বোন স্পার মূলত জোড়ার চার পাশে গড়ে ওঠে এবং এটি সাধারণত কোনো উপসর্গ সৃষ্টি না করলেও, কখনও কখনও স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঘাড়ে ব্যথা, অসাড়তা বা দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। এই ডিজেনারেটিভ চেঞ্জগুলি প্রাথমিক ভাবে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে শুরু হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় (4)।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো জয়েন্টের ক্রোনিক ডিজেনারেটিভ রোগ, যা জোড়ার কার্টিলেজ ক্ষয়, জয়েন্টের চারপাশের হাড়ের গাঠনিক পরিবর্তন এবং সংলগ্ন টিস্যু গুলোর প্রদাহ সৃষ্টি করে। ঘাড়ের ক্ষেত্রে, এটি সারভাইক্যাল স্পাইনে কার্টিলেজের ক্ষয় প্রক্রিয়া শুরু করে এবং ঘর্ষণের ফলে শরীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সেই জায়গার ক্ষতিপূরণ করতে অতিরিক্ত হাড় তৈরি করে, যা অস্টিওফাইট বা বোন স্পার হিসেবে পরিচিত। আপনি কি মেরুদন্ড এর সমস্যায় ভুগছেন
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে ঘাড়ের জয়েন্ট গুলির চার পাশের কার্টিলেজ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে হাড়ের ঘর্ষণ বাড়িয়ে দেয় এবং এই অবস্থায় অস্টিওফাইট তৈরি হয়, যা অনেক সময় স্নায়ু বা রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঘাড়ে ব্যথা, অসাড়তা, হাতের দুর্বলতা এবং গতিশীলতার সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।
ট্রমা বা আঘাত যখন ঘাড়ে আঘাত জনিত কারণে মেরুদণ্ডের হাড় বা জয়েন্টে ক্ষতি হয়, তখন শরীর প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি মেরামত করার জন্য অতিরিক্ত হাড় বা বোন স্পার তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায়, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর চার পাশে অস্বাভাবিক ভাবে হাড়ের বৃদ্ধি ঘটে, যা অস্টিওফাইট হিসেবে পরিচিত।
ঘাড়ে আঘাত বা ট্রমা যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা, খেলাধুলায় আঘাত বা উচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া প্রভৃতি ঘটনার ফলে মেরুদণ্ডে আকস্মিক চাপে ক্ষতি হতে পারে এবং সেই ক্ষতি মেরামত করতে শরীর হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়াও, বারংবার আঘাত বা ঘাড়ে দীর্ঘ সময় ধরে চাপ প্রয়োগ করার ফলেও অস্টিওফাইট গঠিত হতে পারে (5)।
বারবার আঘাত বা অতিরিক্ত চাপ ঘাড়ের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে বার বার একই ধরনের চাপ পড়লে বা একই ধরনের মুভমেন্ট পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে ঘাড়ের কশেরুকা এবং জোড়া গুলি তে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরনের চাপ সাধারণত ভারী জিনিস বহন করা, দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ঘাড় নিচু রাখা, কিংবা খেলাধুলা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের সময় অস্বাভাবিক ভঙ্গিমায় ঘাড় কে ব্যবহার করা ইত্যাদি কারণে হতে পারে। এই পুনরাবৃত্ত আঘাত বা চাপের ফলে ঘাড়ের কার্টিলেজের ক্ষয় হয়, এবং শরীর সেই স্থান মেরামত করার জন্য অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায়, যা অস্টিওফাইটের রূপ নেয়।
জেনেটিক ফ্যাক্টর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক প্রভাবের কারণে কিছু ব্যক্তির মধ্যে অস্টিওফাইট গঠনের প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে অস্টিওফাইট বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকে, তবে সেই ব্যক্তির মধ্যেও এই সমস্যার সম্ভাবনা বেশি। কিছু নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন, যা হাড়ের গঠন, কার্টিলেজের মেরামত এবং জোড়ার স্নায়বিক বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাতে ত্রুটি থাকলে অস্টিওফাইট গঠনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এই জেনেটিক ফ্যাক্টর গুলি শরীরে কার্টিলেজের পরিমাণ ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে হাড়ের স্বাভাবিক গঠনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে এবং অস্টিওফাইটের সৃষ্টি হয়।
পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের অভাব – শারীরিক কার্যকলাপের অভাবে ঘাড়ের মাংসপেশি, লিগামেন্ট এবং জয়েন্ট গুলির কার্য ক্ষমতা কমে যায়, যা মেরুদণ্ডের ওপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকা বা অপ্রতুল শারীরিক কার্যকলাপের ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের কাঠামো গুলি দুর্বল হয়ে যায়, যা ঘাড়ের কশেরুকা গুলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং কার্টিলেজের ক্ষয় প্রাপ্তি ঘটায়।
এর ফলে শরীর প্রাকৃতিক ভাবে এই ক্ষয় প্রাপ্ত স্থান গুলো মেরামত করতে গিয়ে অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায়, যা অস্টিওফাইট হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ না থাকলে ঘাড়ের জোড়া গুলির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, যা কার্টিলেজের সুস্থতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করে (6)।
মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় হলে কি করা উচিত?
মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়, যা সাধারণত ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ বা স্পন্ডাইলোসিস নামে পরিচিত, একটি সাধারণ রোগ যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘটে। এই সমস্যায় মেরুদণ্ডের কশেরুকার ডিস্ক বা হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে, যা ব্যথা, অসাড়তা, এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ের ক্ষেত্রে কিছু করণীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো
ওষুধ সেবন- মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ের কারণে সৃষ্ট ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে ওষুধ সেবন একটি সাধারণ এবং কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) বা ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) সেবন করা যেতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen) ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, মাংসপেশি শিথিলকারী (muscle relaxants) ওষুধ যেমন সাইক্লোবেনজাপ্রিন (Cyclobenzaprine) মাংসপেশির খিঁচুনির সমস্যা কমাতে কার্যকর। স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য গ্যাবাপেন্টিন (Gabapentin) বা প্রেগাবালিন (Pregabalin) ওষুধও ব্যবহৃত হতে পারে।
ফিজিওথেরাপি- মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। ফিজিওথেরাপি মূলত ব্যথা কমানো, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বৃদ্ধি, পেশির শক্তি বাড়ানো, এবং দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরণের ব্যায়াম, যেমন ম্যাকেঞ্জি এক্সারসাইজ (McKenzie exercises), পিঠ ও ঘাড়ের স্ট্রেচিং এবং শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম প্রয়োগ করা হয়।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ফিজিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন এবং কারেকশন থেরাপির মাধ্যমে ঘাড়ের মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকে রোগী কে মুক্তি পেতে সহায়তা করেন। এই থেরাপির মাধ্যমে মেরুদণ্ডের কাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মাংসপেশির শক্তি বাড়ানো হয়, যা সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বার, এবং ক্লিনিক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ফিজিওথেরাপি সেবা দেওয়া হয়।
তবে, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বর্তমানে ASPC ম্যানিপুলেশন থেরাপি সেন্টার ( হাউস #U64, নূর জাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-1207 ) এক মাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধুমাত্র ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান করে থাকে। এখানে Structural Diagnosis & Management (SDM) টেকনিক ব্যবহার করে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কারেকশন থেরাপি প্রদান করা হয়, যার ফলে রোগী দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সুস্থতা লাভ করে।
সার্জারি যদি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিই কাজ না করে এবং ব্যথা খুব তীব্র হয় বা স্নায়ু জনিত সমস্যা দেখা দেয়, তবে শেষ পর্যায়ে সার্জারি করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে ক্ষয় প্রাপ্ত ডিস্ক বা হাড়ের কিছু অংশ অপসারণ করা হয়।
লাইফস্টাইল পরিবর্তন ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা উচিত, কারণ এই গুলো রক্ত সঞ্চালন এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সঠিক ভঙ্গিতে বসা, দাঁড়ানো এবং শোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করলে মাঝে মধ্যে উঠে দাঁড়ানো বা কিছুক্ষণ হাঁটা জরুরি। ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে কাজ করা এবং ঘুমানোর সময় উপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করা উচিত।
ব্যথা বা অস্বস্তি কমানোর জন্য মেরুদণ্ডের আক্রান্ত স্থানে গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক। অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের ওপর চাপ বাড়ায়, যা হাড় ক্ষয়ের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
- Mallo, M., 2018. Reassessing the role of Hox genes during vertebrate development and evolution. Trends in Genetics, 34(3), pp.209-217. https://www.cell.com/trends/genetics/fulltext/S0168-9525(17)30209-3
- Selevan, S.G., Kimmel, C.A. and Mendola, P., 2000. Identifying critical windows of exposure for children’s health. Environmental health perspectives, 108(suppl 3), pp.451-455. https://ehp.niehs.nih.gov/doi/abs/10.1289/ehp.00108s3451
- Miller, M.D., Crofton, K.M., Rice, D.C. and Zoeller, R.T., 2009. Thyroid-disrupting chemicals: interpreting upstream biomarkers of adverse outcomes. Environmental health perspectives, 117(7), pp.1033-1041. https://ehp.niehs.nih.gov/doi/abs/10.1289/ehp.0800247
- Lawrence, R.C., Felson, D.T., Helmick, C.G., Arnold, L.M., Choi, H., Deyo, R.A., Gabriel, S., Hirsch, R., Hochberg, M.C., Hunder, G.G. and Jordan, J.M., 2008. Estimates of the prevalence of arthritis and other rheumatic conditions in the United States: Part II. Arthritis & Rheumatism, 58(1), pp.26-35. https://acrjournals.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/art.23176
- Vaccaro, A.R. ed., 2003. Fractures of the cervical, thoracic, and lumbar spine (Vol. 17, p. 751). New York: M. Dekker. https://api.taylorfrancis.com/content/books/mono/download?identifierName=doi&identifierValue=10.1201/b14040&type=googlepdf
- Gorelick, M., Brown, J.M.M. and Groeller, H., 2003. Short-duration fatigue alters neuromuscular coordination of trunk musculature: implications for injury. Applied Ergonomics, 34(4), pp.317-325. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0003687003000395
- পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ - February 23, 2025
- পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ? - February 18, 2025
- ডিস্ক প্রলাপ্স নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা: ডিস্ক প্রলাপ্স মানেই কি সার্জারি লাগবে? - February 15, 2025