নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ. নিউমোনিয়া রোগের কারন কি? নিউমোনিয়া কেন হয়? নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের একটি সংক্রমণ ব্যাধি যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের আক্রমনে হয়ে থাকে। এই সংক্রমণ ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলোতে (অ্যালভিওলাই) ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) সৃষ্টি করে, যা তরল বা পুঁজ দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায় ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। নিউমোনিয়া হালকা থেকে শুরু করে গুরুতর হতে পারে এবং উপসর্গগুলি ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্যেগত অবস্থা এবং সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে।
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ / নিউমোনিয়া রোগের কারন কি
নিউমোনিয়া রোগের প্রধানত বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণকারী জীবাণুর কারনে হয়ে থাকে, যা ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হয়। যেমনঃ
ব্যাকটেরিয়া
স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া (Streptococcus pneumoniae): প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। (1)
হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus influenzae): এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে শিশুদের সংক্রমণের কারণ হতে পারে। (1)
মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া (Mycoplasma pneumoniae): এটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা সাধারণত তরুণদের মধ্যে দেখা যায়। (1)
ভাইরাস
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস: এই ভাইরাসটি সাধারণ ফ্লু সৃষ্টি করে এবং নিউমোনিয়ার কারণও হতে পারে। (2)
রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস (RSV): বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের মধ্যে রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটাতে পারে। (2)
সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2): কোভিড-১৯ এর ভাইরাস যা গুরুতর নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। (2)
ছত্রাক
- হিস্টোপ্লাজমা (Histoplasma) এবং ক্রিপ্টোকক্কাস (Cryptococcus): এ জীবাণুগুলো যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল সেসব ব্যক্তিদের মধ্যে নিউমোনিয়া ঘটাতে পারে।
- অ্যাসপিরেশন: অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া তখন ঘটে যখন খাবার, পানীয়, বমি, বা লালা ভুলক্রমে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে
নিউমোনিয়া সংক্রামক হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে নিউমোনিয়ার কারণ এবং সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী।
সংক্রামক নিউমোনিয়া
ভাইরাল নিউমোনিয়া: যেসব ভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটায়, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, SARS-CoV-2 (কোভিড-১৯ এর কারণ), এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, সেগুলো সাধারণত সংক্রামক। ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত কাশি, হাঁচি, বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। (3)
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া: ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া (Streptococcus pneumoniae) বা মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া (Mycoplasma pneumoniae) দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং এটি কাশি বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তবে এটি ভাইরাল নিউমোনিয়ার মতো এতটা সংক্রামক নয়। (4)
অসংক্রামক নিউমোনিয়া
অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া: এই ধরনের নিউমোনিয়া তখন ঘটে যখন খাদ্য, পানীয়, বমি বা লালা ফুসফুসে প্রবেশ করে। এটি সংক্রামক নয় এবং সাধারণত অসুস্থতা বা খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়ার কারণে ঘটে। হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষন / নিউমোনিয়া হলে কি হয়
নিউমোনিয়া হলে শরীরের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটে, যা ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলিতে (অ্যালভিওলাই) প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তরল বা পুঁজ জমে। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। নিউমোনিয়া হলে সাধারণত নিম্নলিখিত পরিবর্তন এবং লক্ষণগুলি দেখা যায়:
শ্বাসকষ্ট: নিউমোনিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল শ্বাসকষ্ট। ফুসফুসের সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, যা রোগীর দৈনন্দিন কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। নিউমোনিয়া হলে ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলোতে (অ্যালভিওলাই) তরল বা পুঁজ জমা হয়, যার ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অবস্থার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, এবং রোগীকে ঘন ঘন এবং ছোট ছোট শ্বাস নিতে হয়। শারীরিক পরিশ্রম বা সামান্য হাঁটা চলার করলে শ্বাসকষ্টের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। (6)
কাশি: নিউমোনিয়ার অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো কাশি। ফুসফুসে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা বা পুঁজ জমা হয়, যা কাশির মাধ্যমে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। এই কাশি প্রাথমিকভাবে শুষ্ক হতে পারে, তবে কিছুদিন পর এটি শ্লেষ্মাযুক্ত বা কফযুক্ত হয়ে যায়। শ্লেষ্মার রং হলুদ, সবুজ, বা কখনো রক্তমিশ্রিতও হতে পারে।
জ্বর: নিউমোনিয়ার একটি সাধারণ এবং উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো জ্বর। ফুসফুসে সংক্রমণ বা প্রদাহের প্রতিক্রিয়ায় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যার ফলস্বরূপ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। নিউমোনিয়ার কারণে জ্বর সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে আসে, যা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হতে পারে। জ্বরের সাথে সাথে শরীরে কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
বুকে ব্যথা: বুকে ব্যথা হওয়া নিউমোনিয়ার আরেকটি লক্ষণ, যা ফুসফুসের সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে ঘটে। এই ব্যথা সাধারণত শ্বাস নেওয়ার সময় বা কাশি দেয়ার সময় তীব্র হয়, কারণ ফুসফুসের চারপাশের প্লুরাল পেশির প্রদাহ এ ব্যথার উৎস হতে পারে। বুকে ব্যথা কখনও কখনও তীক্ষ্ণ বা ছুরিকাঘাতের মতো অনুভূত হতে পারে, এবং এটি রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথে আরও তীব্র হতে পারে।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: নিউমোনিয়া হলে শরীর ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে যায়। ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা প্রচুর পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে। এ কারণে রোগী সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করে এবং দৈনন্দিন কাজগুলো করতে দুর্বল বোধ করে। নিউমোনিয়ার কারণে শরীরের অন্যান্য সিস্টেমগুলোও প্রভাবিত হতে পারে, যা দুর্বলতা এবং শক্তিহীনতা বাড়িয়ে দেয়। এই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা শুধু শারীরিক কার্যক্রমেই প্রভাব ফেলে না, মানসিকভাবেও রোগীকে অবসন্ন করে তোলে।
শরীরে ব্যথা: নিউমোনিয়ার হলে শরীরে ব্যথা হতে পারে, যা সাধারণত সংক্রমণের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে হয়। এই ব্যথা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে মাংসপেশী এবং সন্ধিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। রোগী সাধারণত মাংসপেশীতে চাপ বা সংকোচন অনুভব করে, যা দৈনন্দিন কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। শরীরে ব্যথা এবং অস্বস্তি নিউমোনিয়ার সময় শরীরের সাধারণ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়, এবং এটি রোগীর ক্লান্তি ও দুর্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া: নিউমোনিয়ার সময় কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গগুলো সাধারণত ভাইরাল নিউমোনিয়ার সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত, তবে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রেও ডায়রিয়া হতে পারে। সংক্রমণের কারণে শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যার ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। বমি বমি ভাবের কারণে রোগী খাবার গ্রহণে অনীহা অনুভব করে, যা পুষ্টির অভাব ঘটাতে পারে। ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত তরল এবং ইলেকট্রোলাইট হারায়, যা শরীরকে আরও দুর্বল করে তোলে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস: অনেক নিউমোনিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পায়। ফুসফুসে সংক্রমণ এবং প্রদাহের ফলে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোতে (অ্যালভিওলাই) তরল বা পুঁজ জমা হয়, যা অক্সিজেন-কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময়কে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে, ফুসফুস থেকে রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবাহিত হয় না, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার কারণে রোগীর ত্বক, ঠোঁট, এবং নখ নীলচে হয়ে যেতে পারে, যা সায়ানোসিস নামে পরিচিত।
মানসিক বিভ্রান্তি: নিউমোনিয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে মানসিক বিভ্রান্তি, যা বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ফুসফুসে সংক্রমণ এবং শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, যা মানসিক বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। এটি রোগীর আচরণে অসামঞ্জস্যতা, বিভ্রান্তি, এবং কখনও কখনও হতাশা বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক বিভ্রান্তির কারণে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে এবং পরিবেশ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে পারেন না।
নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা / নিউমোনিয়া হলে করনীয় কি
নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা রোগের কারণ, তীব্রতা, এবং রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। নিচে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অ্যান্টিবায়োটিক
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরুর পরে উপসর্গগুলি দ্রুত উন্নতি করে। উদাহরণ: অ্যামোক্সিসিলিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ক্লারিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি। (6)
ভাইরাল নিউমোনিয়া: ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়, তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড-১৯ এর মতো কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণ: ওসেলটামিভির (Tamiflu) ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য। (7)
সাপোর্টিভ চিকিৎসা
- জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- হাইড্রেশন: প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। হালকা স্যুপ এবং গরম পানি রোগীকে আরাম দিতে পারে।
অক্সিজেন থেরাপি: শ্বাসকষ্ট বেশি হলে এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে অক্সিজেন থেরাপি বা ভেন্টিলেটর ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
হাসপাতালে ভর্তি: নিউমোনিয়া গুরুতর পর্যায়ে গেলে বা রোগীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন হতে পারে। যদি নিউমোনিয়া প্লুরাল ইফিউশন বা অ্যাবসেসের মতো জটিলতার সৃষ্টি করে, তবে ফুসফুসের তরল নিষ্কাশন বা সার্জিকাল ইন্টারভেনশন প্রয়োজন হতে পারে। বাত ব্যাথা থেকে মুক্তির উপায় | বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় | কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি রোগীর ফুসফুসে জমে থাকা সেক্রেশন বা শ্লেষ্মা বের করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চেস্ট ফিজিওথেরাপি (Chest Physiotherapy বা CPT) বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা নিষ্কাশনে সহায়তা করে, যা শ্বাস নিতে কষ্ট কমাতে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। (9)
- পোশ্চারাল ড্রেনেজ (Postural Drainage): রোগীকে বিভিন্ন অবস্থানে রাখা হয় যাতে শ্লেষ্মা সহজে ফুসফুস থেকে বের হয়ে আসে। এই পদ্ধতিটি বিশেষভাবে কার্যকর যদি ফুসফুসের কোনও নির্দিষ্ট অংশে শ্লেষ্মা জমা হয়ে থাকে।
- পারকাশন এবং ভাইব্রেশন (Percussion and Vibration): ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর বুকের এবং পিঠের নির্দিষ্ট অংশে আলতো চাপ দিয়ে বা কম্পন তৈরি করে শ্লেষ্মা লুজ করেন, যাতে কাশি দিলে সহজেই শ্লেষ্মা বের হয়ে আসতে সাহায্য করে।
- ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ (Deep Breathing Exercises): রোগীকে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করানো হয়, যা ফুসফুসের বায়ুপ্রবাহ উন্নত করে এবং শ্লেষ্মা নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
- এয়ারওয়ে ক্লিয়ারিং টেকনিক (Airway Clearing Techniques): এ কৌশলগুলি শ্বাসনালী পরিষ্কার করে শ্লেষ্মা হালকা করে তোলে এবং রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে।
নিউমোনিয়া হলে কি খাবার খেতে হয়
নিউমোনিয়া হলে সঠিক খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পুষ্টিকর খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক হতে পারে। নিম্নলিখিত খাবারগুলো নিউমোনিয়ার সময় উপকারী হতে পারে (10)। যেমনঃ
তরল খাবার
পানি: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি, কারণ এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সহায়তা করে। স্যুপ: চিকেন স্যুপ, সবজি স্যুপ বা লাইট ব্রথ তরল হিসাবে কার্যকর, যা গলা নরম করে এবং সহজে হজম হয়। হারবাল চা: আদা চা বা পুদিনা চা গলা ব্যথা কমাতে এবং কাশি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার
ফলমূল: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন কমলা, লেবু, আঙ্গুর, কিউই ইত্যাদি খেতে পারেন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। সবজি: ব্রোকলি, পালং শাক, গাজর, এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ, যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। প্রোটিন: চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম, এবং লেবু খেতে পারেন, যা শরীরের মাংসপেশীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই খাওয়া ভালো, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন ডি: সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তবে ডিমের কুসুম এবং তৈলাক্ত মাছ থেকেও এটি পাওয়া যেতে পারে। জিঙ্ক: বাদাম, বীজ, এবং গোটা শস্য থেকে জিঙ্ক পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যেসব খাবার পরিহার করা উচিৎ
মশলাদার এবং তৈলাক্ত খাবার: এগুলো শ্বাসনালিতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট বাড়ায়।
শীতল বা ঠান্ডা খাবার: ঠান্ডা পানীয় এবং আইসক্রিম এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শ্বাসনালীতে সমস্যা বাড়াতে পারে।
বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস
খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং শরীরের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণ করুন। নিউমোনিয়ার সময় শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে এসব খাবার খাওয়া উচিত এবং যেকোনো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
উপসংহার
নিউমোনিয়া একটি গুরুতর রোগ, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত চিকিৎসার প্রধান ভিত্তি, এবং অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা উপসর্গ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্র
- “Pneumonia is caused by a variety of infectious agents, including bacteria, viruses, and fungi. The most common are: Streptococcus pneumoniae, Haemophilus influenzae type b (Hib), and respiratory syncytial virus (RSV).” https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia
- “Pneumonia is most commonly caused by bacterial, viral, and fungal infections. Common bacterial pneumonia is caused by Streptococcus pneumoniae, while viral pneumonia can be caused by influenza virus and respiratory syncytial virus (RSV).”
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pneumonia/symptoms-causes/syc-20354204 - “Pneumonia can be contagious, depending on the cause of the infection. Most cases of pneumonia are spread by respiratory droplets when a person coughs or sneezes.” https://www.cdc.gov/pneumonia/index.html
- “Pneumonia is usually spread through coughs, sneezes, or close contact with an infected person. However, not all forms of pneumonia are contagious.” https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia
- “Pneumonia symptoms can include cough, fever, and difficulty breathing. The symptoms can vary from mild to severe, and some cases may require hospitalization.” https://www.cdc.gov/pneumonia/symptoms-and-diagnosis.html
- “Signs and symptoms of pneumonia may include chest pain when you breathe or cough, confusion or changes in mental awareness (in adults age 65 and older), cough, which may produce phlegm, fatigue, fever, sweating and shaking chills, and nausea, vomiting or diarrhea.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pneumonia/symptoms-causes/syc-20354204
- “Pneumonia treatment depends on the cause of the pneumonia, how severe it is, and the patient’s age and overall health. Antibiotics are used to treat bacterial pneumonia, while antiviral or antifungal medications are used to treat viral and fungal pneumonia, respectively.” https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia
- “Treatment for pneumonia involves curing the infection and preventing complications. Specific treatments depend on the type and severity of your pneumonia, your age, and your overall health.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pneumonia/diagnosis-treatment/drc-20354208
- “Chest physiotherapy, including techniques such as postural drainage and percussion, can be beneficial in managing pneumonia, especially in patients with significant mucus production or difficulty clearing their airways. https://www.merckmanuals.com/professional/pulmonary-disorders/pulmonary-rehabilitation/chest-physiotherapy
- “It’s important to eat a healthy diet during recovery from pneumonia. Focus on foods rich in vitamins, minerals, and antioxidants to support your immune system, such as fruits, vegetables, and lean proteins.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pneumonia/in-depth/nutrition-for-pneumonia-recovery/art-20473671
- পিঠে ব্যথার কারণ ও করণীয় - September 7, 2024
- ৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস – ASPC আয়োজিত ফ্রি হেলথ ক্যাম্প - September 4, 2024
- মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার | মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ - September 2, 2024