বাত ব্যাথা থেকে মুক্তির উপায়, আর্থ্রাইটিস এর লক্ষন. বাত ব্যথা (Arthritis) হলো একধরনের শারীরিক ব্যাধি যেখানে এক বা একাধিক জয়েন্ট আক্রান্ত হয় যার ফলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, ফুলে যায় এবং শক্ত হয়ে যায়। বাত ব্যাথা সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেকোনো বয়সে এটি দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের আর্থ্রাইটিস রয়েছে যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি। তবে নিম্নোক্ত দুই ধরনের বাত ই বেশি দেখা যায়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis) খুবই পরিচিত, সাধারন এবং দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্টের রোগ যা জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হওয়ার কারণে হয়। কার্টিলেজ হল নমনীয় টিস্যু যা জয়েন্টের হাড়গুলির মধ্যে ওজন বন্টনে সাহায্য করে এবং মসৃণভাবে চলাচলে সাহায্য করে। কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে গেলে হাড়গুলি একে অপরের সাথে ঘর্ষণ শুরু করে যা ব্যথা, ফোলাভাব, এবং জয়েন্টের নড়াচড়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis) একটি দীর্ঘমেয়াদী অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজের জয়েন্টগুলির উপর আক্রমণ করে যার ফলে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ), ব্যথা, এবং জয়েন্টের ক্ষতি হয়। এটি শুধু জয়েন্ট নয় বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেমনঃ ত্বক, চোখ, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, এবং রক্তনালীগুলি ইত্যাদি। ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

বাত ব্যাথা | আর্থ্রাইটিস এর লক্ষন

বিভিন্ন প্রকার আর্থ্রাইটিসের (Arthritis) লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ সব ধরনের আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে দেখা যায়। যেমনঃ

জয়েন্টে ব্যথা (Joint Pain): আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে জয়েন্টের ব্যথা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এটি সাধারণত এক বা একাধিক জয়েন্টে অনুভব হয় এবং দিনের বেলা বা কাজকর্মের উপর নির্ভর করে ব্যথা বাড়তে বা কমতে পারে।

জয়েন্টে ফোলাভাব (Joint Swelling): আথ্রাইটিসের প্রধান কারণ হলো ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে তৈরি হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন রোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব টিস্যুর উপর আক্রমণ করে যার ফলে জয়েন্ট ফুলে যায় এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়।

জয়েন্টে কঠোরতা (Joint Stiffness): অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় যার ফলে হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ হয় যা জয়েন্টে ব্যথা এবং কাঠিন্যতা সৃষ্টি করে। সাইনোভিয়াল ফ্লুইড জয়েন্টের নড়াচড়াকে সহজ করে কিন্তু আথ্রাইটিসের কারণে এই তরল হ্রাস পায় এর ফলেও জয়েন্টের কঠোরতা দেখা দিতে পারে। আবার, আথ্রাইটিসের কারণে জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট, টেন্ডন এবং পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা জয়েন্টের নড়াচড়া কঠিন করে তোলে।

জয়েন্টে লালচে ভাব (Redness in the Joint): আথ্রাইটিসের মূল কারণ হলো জয়েন্টের চারপাশের টিস্যুতে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ)। এই ইনফ্লামেশনের (প্রদাহ) ফলে রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয় এবং জয়েন্টের চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকে লালচে ভাব দেখা দেয়।

অনুভূতির পরিবর্তন (Changes in Sensation): আথ্রাইটিসের ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) ফলে জয়েন্টের আশেপাশের স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা অনুভূতির পরিবর্তন ঘটায়। প্রদাহ স্নায়ুকে উত্তেজিত করে বা সংকুচিত করে, যার ফলে ঝিমঝিম বা টান টান অনুভূতি হয়।

জ্বর বা ক্লান্তি (Fever or Fatigue): আথ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) জনিত প্রোটিন (সাইটোকাইন) এর বেড়ে যায়, যা শরীরের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে এবং জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।

কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে

বাত ব্যাথা কিছু কিছু খাবার বাতের ব্যথা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিশেষত, যেসব খাবার শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) সৃষ্টি করে বা ফোলাভাব বাড়ায় এবং লক্ষণগুলোকে আরও তীব্র করে। যেমনঃ

প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods): প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods) বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে, বিশেষত যখন এই খাবারগুলোতে উচ্চমাত্রার শর্করা, ট্রান্স ফ্যাট, সোডিয়াম, এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস থাকে। এই খাদ্য উপাদানগুলো শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) সৃষ্টি করতে পারে, যা বাতের ব্যথাকে তীব্র করতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি (Added Sugars): অতিরিক্ত চিনি বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে কারণ চিনি শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) জনিত প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা বাতের লক্ষনগুলোকে আরও তীব্র করে। বিশেষ করে, পরিশোধিত চিনি এবং মিষ্টি পানীয়গুলো শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) সৃষ্টি করে, যা বাতের ব্যথাকে বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। (2)

সর্বপ্রকার ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fats): ট্রান্স ফ্যাট শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) সৃষ্টি করে যার ফলে  জয়েন্টের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আর্থ্রাইটিসের লক্ষনগুলোকে তীব্র করে তোলে। ট্রান্স ফ্যাট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা সেলুলার ক্ষতির কারণ এই স্ট্রেসের ফলে জয়েন্টের কার্টিলেজ এবং অন্যান্য টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়ে।

লাল মাংস (Red Meat): লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং আয়রন প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে যা জয়েন্টের ব্যথা বাড়াতে সহায়ক। লাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় কিছু উপাদান তৈরি হয়, যেমণঃ হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইন (Heterocyclic Amines) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (Polycyclic Aromatic Hydrocarbons), এগুলো শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রদাহ বাড়িয়ে বাতের উপসর্গগুলোকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। (3)

রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট (Refined Carbohydrates): রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, যেমন সাদা রুটি, পাস্তা, এবং সাদা চিনি, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাইটোকাইনস (Cytokines) উৎপন্ন করতে সহায়ক। এই প্রদাহ জয়েন্টের ব্যথা এবং ফোলাভাব বাড়াতে পারে।

অ্যালকোহল (Alcohol): অ্যালকোহল বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে, কারণ এটি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কিছু প্রকারের আর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলোকে তীব্র করে তুলতে পারে। বিশেষত, যারা গাউট (Gout) বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে (Rheumatoid Arthritis) আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল পান করলে উপসর্গগুলো আরও খারাপ হতে পারে। (4)

মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম (High Sodium): উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম (High Sodium) বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে, কারণ এটি শরীরে ফোলাভাব এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ মাত্রায় সোডিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে জল ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ে, যা জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বাতের উপসর্গগুলোকে তীব্র করে তুলতে পারে।

 

কি খেলে শরীর বাত ব্যথা কমে

বাত ব্যাথা শরীরের ব্যথা কমাতে সহায়ক এমন কিছু খাবার রয়েছে যা প্রদাহ কমায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের ব্যথা কম থাকে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। স্ট্রোকের ঝুঁকিতে কারা আছেন?

ফ্যাটি ফিশ (Fatty Fish): ফ্যাটি ফিশে (Fatty Fish) থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমনঃ স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, ইত্যাদি) একটি প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক, যা আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত অবস্থার উপসর্গগুলি হ্রাস কমাতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল (Antioxidant-Rich Fruits): অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল (যেমনঃ বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি), চেরি, আঙুর ইত্যাদি) প্রদাহ কমাতে এবং কোষগুলির ক্ষতি প্রতিরোধ, শরীরের ব্যথা কমতে সহায়ক।

শাকসবজি (Leafy Greens): শাকসবজিতে থাকা ফাইবার, ভিটামিন C, ভিটামিন K এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, পালং শাক এবং কেল (হেশেল) শাকের মধ্যে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা প্রদাহ কমিয়ে আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপসর্গগুলো হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাদাম এবং বীজ (Nuts and Seeds): আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড এবং চিয়া সিডের মতো বাদাম এবং বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক এর ফলে ব্যথা এবং ফোলাভাব হ্রাস পায়, যা আর্থ্রাইটিসের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

অলিভ অয়েল (Olive Oil): অলিভ অয়েলে থাকা ওলিক অ্যাসিড (Oleic Acid) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যেমন ওলিওক্যান্থাল (Oleocanthal)) প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ওলিওক্যান্থাল ইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহনাশক ওষুধের সাথে তুলনা করা হয়, যা শরীরের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে। অলিভ অয়েল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়িয়ে দেয় যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি প্রদাহ এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

মশলা (Spices): মশলা (যেমনঃ হলুদ এবং আদা) খেলে শরীরের ব্যথা কমতে পারে, কারণ অনেক মশলায় প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী থাকে। এই মশলাগুলো শরীরের প্রদাহ হ্রাস করতে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

গ্রিন টি (Green Tea): গ্রিন টিতে উপস্থিত ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (Epigallocatechin Gallate বা EGCG) নামে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা প্রদাহজনিত এনজাইমগুলির কার্যকলাপ কমাতে সহায়ক। হার্বাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ কমাতে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। (5)

পূর্ণ শস্য (Whole Grains): পূর্ণ শস্য (Whole Grains) (যেমনঃ ওটমিল, ব্রাউন রাইস, এবং কুইনোয়াতে ফাইবার) খেলে শরীরের ব্যথা কমতে পারে, কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়ক। পূর্ণ শস্যের মধ্যে থাকা ফাইবার শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক, যা প্রদাহ কমাতে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।

গ্রীক দই (Greek Yogurt): গ্রীক দই প্রোবায়োটিকস, প্রোটিন, এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ যা শরীরের প্রদাহ হ্রাস করতে, টিস্যু হিলিং দ্রুত করতে এবং হাড় মজবুত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

বাত ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে, যা ব্যথা হ্রাস করতে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। যেমন:

ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Management): ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে কারণ অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে যা ব্যথা এবং প্রদাহ বাড়ায়। ওজন কমানোর মাধ্যমে জয়েন্টের উপর চাপ কমানো যায় যা বাতের উপসর্গগুলোকে হ্রাস করতে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। (6)

নিয়মিত ব্যায়াম (Regular Exercise): নিয়মিত ব্যায়াম করলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কারণ ব্যায়াম শরীরের জয়েন্টগুলির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, পেশীগুলকে শক্তিশালী করে এবং প্রদাহ কমায়। (7)

ঔষধ এবং সাপ্লিমেন্ট (Medications and Supplements): বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্ট সহায়ক হতে পারে। ঔষধ এবং সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ কমানো, এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করা সম্ভব।

  • গ্লুকোসামিন এবং কন্ড্রয়েটিন (Glucosamine and Chondroitin): এগুলো জয়েন্টের কার্টিলেজের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সাপ্লিমেন্টগুলো দীর্ঘমেয়াদে আর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলো হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids): মাছের তেল বা ফ্ল্যাক্সসিড থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে এবং আর্থ্রাইটিসের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়াম (Vitamin D and Calcium): হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত।
  • বোসওয়েলিয়া (Boswellia): এটি একটি প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক সাপ্লিমেন্ট যা আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy): বাতের ব্যথা কমাতে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। সঠিক ভাবে রোগ নির্নয় করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে বাতের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি ম্যানুয়াল থেরাপি নিলে দীর্ঘমেয়াদী জয়েন্টের কার্যক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠান বাত ব্যথার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে অন্যতম ASPC ম্যানুয়াল থেরাপি সেন্টারে (U-64, নুরজাহান রোড, মহাম্মদপুর,ঢাকা-১২০৭) রোগীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা SDM (Stractural Diagnosis & Management) টেকনিকের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে ম্যানুয়াল থেরাপি দিয়ে থাকেন যার ফলে রোগী পূর্বের তুলনায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। (8)

জয়েন্ট সাপোর্ট (Joint Support): জয়েন্ট সাপোর্ট (Joint Support) (যেমন ব্রেস, সাপোর্ট ব্যান্ড, বা কমপ্রেশন গার্মেন্টস) ব্যবহার করে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, কারণ এটি জয়েন্টকে স্থিতিশীল রাখতে এবং অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।

বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায়

বাতজ্বর (Rheumatic Fever) হলো একটি জটিল রোগ যা অ্যান্টিস্ট্রেপ্টোকক্কাল ইনফেকশন (বিশেষত গলা ফোলা) এর কারণে হয়। এটি হৃৎপিণ্ড, জয়েন্ট, ত্বক এবং স্নায়ুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। বাতজ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু উপায় এবং নিয়ম মেনে চললে বাতজ্বর থেকে মুক্তি সম্ভব।

প্রাথমিক চিকিৎসা (Prompt Treatment of Strep Throat): গলা ফোলার প্রাথমিক চিকিৎসা বাতজ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেপ্টোকক্কাল ইনফেকশন সনাক্ত করা গেলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ খেলে বাতজ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি (Antibiotic Therapy): বাতজ্বরের প্রধান কারণ হলো স্ট্রেপটোকক্কাল সংক্রমণ, তাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন) ব্যবহার করা হয়।

প্রদাহনাশক ঔষধ (Anti-inflammatory Medications):

  • অ্যাসপিরিন (Aspirin): বাতজ্বরের চিকিৎসায় অ্যাসপিরিন একটি প্রচলিত প্রদাহনাশক ঔষধ। এটি প্রদাহ, জয়েন্টের ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সহায়ক। বাতজ্বরের চিকিৎসায় অ্যাসপিরিনের উচ্চ মাত্রা ব্যবহার করা হয়, তবে এটি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ঔষধ (NSAIDs):

  • ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)/ ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen): এটি প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ঔষধ ব্যবহার বাতজ্বরের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

কর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids):

  • প্রেডনিসোলন (Prednisolone): যদি বাতজ্বরের কারণে হৃদযন্ত্রের জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি রোধ করে।

 

পালমোনারি এবং কার্ডিয়াক মনিটরিং (Pulmonary and Cardiac Monitoring):

  • কার্ডিয়াক মনিটরিং (Cardiac Monitoring): বাতজ্বর হৃদযন্ত্রের ভ্যাল্ভগুলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজের (Rheumatic Heart Disease) হয়। এই কারণে, কার্ডিয়াক মনিটরিং (ECG, Echocardiography, হার্ট রেট মনিটরিং) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • পালমোনারি মনিটরিং (Pulmonary Monitoring): বাতজ্বরের কারণে ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও প্রভাবিত হতে পারে। পালমোনারি মনিটরিংয়ের (Pulse Oximetry, Pulmonary Function Test, Chest X-ray) মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে বাতজ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র

  1. “Rheumatoid arthritis is an autoimmune disorder that occurs when your immune system mistakenly attacks your own body’s tissues.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/rheumatoid-arthritis/symptoms-causes/syc-20353648
  2. “Sugars and refined carbohydrates can increase inflammation in the body, leading to worsening of arthritis symptoms.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/arthritis/expert-answers/arthritis-diet/faq-20443455
  3. “Red meat can trigger inflammatory responses due to its high levels of saturated fats and purines, leading to increased joint pain in arthritis patients.” https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/foods-that-fight-inflammation
  4. “Alcohol is known to trigger inflammatory responses in the body, which can lead to joint pain and exacerbate arthritis symptoms.” https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/foods-that-fight-inflammation
  5. “Green tea is rich in antioxidants, particularly EGCG, which helps reduce inflammation and may alleviate chronic pain.” https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/foods-that-fight-inflammation
  6. “Maintaining a healthy weight can reduce stress on joints, reduce inflammation, and improve symptoms of arthritis.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/arthritis/in-depth/arthritis-and-weight-loss/art-20206220
  7. “Exercise can improve joint pain and stiffness and increase flexibility, strength, and endurance, helping manage arthritis symptoms effectively.” https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/arthritis/in-depth/arthritis-and-exercise/art-20047971
  8. “Physical therapy can be an effective treatment for arthritis, focusing on exercises and techniques to reduce pain and improve mobility.” https://www.mayoclinic.org/tests-procedures/physical-therapy/about/pac-20385095
Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322