কানের ঝি ঝি শব্দ বা রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার, যা মেডিকেল এর পরিভাষায় টিনিটাস নামেই অধিক পরিচিত। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত এক বা দুই কানেই শো শো শব্দ বা ঝি ঝি আওয়াজ অনুভব করেন অনেকটা বাহিরের কোনো অডিটরি ঊদ্দীপনা ছাড়াই।

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস বিভিন্ন কারনেই হতে পারে, তন্মদ্ধে কানের ইনফেকশন, মেনিয়ার’স ডিজিজ, ভাস্কুলার ডিজিজ, নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডার, কানের ভেতরের গঠনগত সমস্যা এবং বিভিন্ন মাংশপেশী সংক্রান্ত সমস্যা অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা ভারসাম্যহীনতা রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এর কারন হিসেবে কাজ করে যেমনঃ দুশ্চিন্ত, উদ্বেগ, মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি।

১৯৮৯ সালের এক্সেলসসন এবং রিংডাল এর গবেষণায় উঠে এসেছে ১৫ শতাংশ এডাল্ট জনমানুষের এটি অতি সাধারন এক উপসর্গ যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে এক সমস্যার সম্মুখীন করে থাকে। বাগুলে (২০১৩) এর গবেষণা থেকে জানা যায়, টিনিটাস বিভিন্ন কারনে এবং বিভিন্ন রকমের হতে পারে। ধরনের দিক থেকে এর দুটি প্রধান ভাগ রয়েছে যা ব্যক্তি নির্ভর ও পরীক্ষা নির্ভর।

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস অনেকাংশেই ব্যক্তি নির্ভর অরথাত টিনিটাস এ আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো শব্দ বা না শোনার অনুভূতি প্রকাশ করবে। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে কানের ভিতর পরিমাপ যোগ্য কিছু অনুভূতি রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস এর কারন বলে পরিগনিত হতে পারে; যেমন রক্তপরিবহনের দিক পরিবর্তন। এক্ষেত্রে আমরা সেটাকে পরিক্ষা নির্ভর টিনিটাস হিসেবেই গন্য করব।

কিছু রিস্ক ফ্যাক্ট্র ব্যক্তি নির্ভর টিনিটাস এর জন্য দায়ী বলে বিভিন্ন গবেষনায় উঠে এসেছে; যেমনঃ শ্রবনশক্তি হারিয়ে ফেলা, অটোটক্সিক মেডিকেশন, হেড ইনজুরি এবং ডিপ্রেশন। এছাড়াও বিভিন্ন অটোলজিকাল কন্ডিশন; যেমনঃ অত্যধিক শব্দ, সারভাইকাল স্পাইন এর ডিস্ফাংশ্ন অথবা টেম্পেরোমেন্ডিবুলার জয়েন্ট এর ডিস্ফাংশ্ন এর জন্য দায়ী।

 যেসব অবস্থায় রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস অন্যন্য রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় বা যেসব বিষয় লক্ষণীয়ঃ

৭৫ শতাংশ এর বেশী একটি উপসর্গ হিসেবে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার টিনিটাস পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাদের শ্রবনহীনতা দেখা দেয় তাদের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার টিনিটাস দেখা যায়। সেক্ষেত্রে বলা যায় টিনিটাস ও শ্রবনহীনতা একে অপরের সাথে জড়িত। যেমনঃ

১। বয়সজনিতঃ বয়সজনিত শ্রবনহীনতায় প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনকে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এ আক্রান্ত হতে দেখা যায় যাদের বয়স ৬৫ বছরের অধিক।

২। অতিরিক্ত শব্দ দুষন অথবা বিকট আওয়াজ এর সম্মুক্ষীন হওয়াঃ অতিরিক্ত শব্দদুষন অথবা অধিক শব্দ যুক্ত স্থানে কাজ করার দরুন শ্রবনহীনতা ও রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস উভয়ই হতে পারে।

৩। অটোটক্সিক মেডিকেশনঃ বেশ কিছু ওষুধ সেবনের কারনে কান এর ক্ষতি হতে পারে। আপনি যদি ধারনা করে থাকেন আপনি রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস এ আক্রান্ত তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এর নিকট আপনার সেবন করা ওষুধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করুন।

৪। মেনিয়ের’স ডিজিজঃ এই ক্রনিক কানের ডিজঅর্ডারটি আপনার শ্রবনের ও ভারসাম্যের ক্ষতি করবে বলে কিছু গবেষনায় উঠে এসেছে।

৫। অতিরিক্ত কানের মোম ক্ষরন বা সেরামেন ক্ষরনঃ অনেকসময় দেখা যায় অতিরিক্ত সেরামেন বা মোম এর ক্ষরন এর কারনে কানে কম শোনা রোগ দেখা যায় ।

এছাড়াও এলারজি, অটোস্ক্লেরোসিস, এনিমিয়া, আথেরোস্ক্লেরোসিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস কী কোনো জটিল রোগের লক্ষন?

খুব কম ক্ষেত্রেই এক কানে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস নিরদেশ করে যে কানে টিউমার রয়েছে যা গ্লোমাস টিম্পেনিকাম নামে পরিচিত। রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এর সাথে যদি হাটায় অসুবিধা, কথা বলায় ও ভারসাম্যহীনতা থাকে তবে ধারণা করা হয় তা নিউরোলোজিকাল কোন অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া অতি জরুরী।

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এ আক্রান্ত বোঝার জন্য যেসব পরীক্ষা জরুরিঃ

১। শারীরিক পরীক্ষাঃ

একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কানের সত্যিকার অর্থেই যে সমস্যার কারনে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস হচ্ছে তা খুজে বের করতে সাহায্য করেন ।এছাড়া পালসেটিভ টিনিটাস ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।

২। মেডিকেল হিষ্ট্রিঃ

অতীত ইতিহাস সাধারণত রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবারে অন্য কারো এই সমস্যা বা বধিরতা আছে কিনা, কাজের পরিবেশ তথা কাজের সময় শব্দ দূষণ হয় কিনা, হঠাত বিকট কোনো শব্দ এর কারনে এই সমস্য তৈরি হয়েছে কিনা তাও নিরুপন করা হয়। এছাড়াও অতীতে কোন ওষুধ সেবনের কারনে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা এটিও এখানে অন্তর্ভুক্ত।

৩। হিয়ারিং টেস্ট বা অডিওমেট্রিঃ

এই পরিক্ষার মাধ্যমে জানা যায় আপনার বা আমার শ্রবণ ক্ষমতা সীমা কত, এছাড়াও কতটুকু জোরে বা আস্তে শব্দ আমরা শুনতে পারি বা সহ্য করতে পারি। এ সকল কিছুই অডিওগ্রাম এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

৪। টিম্পেনোমেট্রিঃ

এই পরিক্ষার মাধ্যমে দর্শনীয় এক প্রকার যন্ত্র দিয়ে ইয়ারড্রাম চেক করা হয়, যা টিম্পেনোগ্রাম এ পরির্দশিত হয়।

৫। এম আর আইঃ

 এই পরীক্ষা একটি স্বচ্ছ ধারনা দেয় পুরো শরীরের যার মধ্যে কান ও অন্তর্ভুক্ত ।

যদি এসকল পরীক্ষার মাধ্যমে নিরুপন হয় যে, শ্রবণ ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় নি তাহলে সাধারণত কিছু রিকমেন্ডেশন রয়েছে যা হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার দিয়ে থাকেন; যেমনঃ হেয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র, সাঊন্ড জেনারেট্র, কিছু রিলাক্সেশ্ন কৌশল,কাউন্সিলিং ইত্যাদি।

কিভাবে আপনি রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা  টিনিটাস প্রতিরোধ করতে পারবেন?  

কর্মক্ষেত্রেঃ আপনি হয়ত কন্সট্রাকশ্ন বা নির্মাণ এলাকায় কাজ করেন অথবা আপনার পাশে উচ্চশব্দ যুক্ত যন্ত্র সচল আছে, এই সময় আপনি ইয়ারপ্লাগ বা ইয়ারবাড ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যমাগারেঃ আধুনিক জিমনেশিয়াম বা ব্যমাগারে উচ্চ শব্দে গান বা মিউজিক বাজানো হয় আপনাকে মোটিভেট করার জন্য, সেক্ষেত্রেও আপনি ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনার ওয়ার্ক আউট এমন স্থানে করুন যেখানে মিউজিক এর তীব্রতা তুলনামূলক কম।

জনাকীর্ণ স্থান ও অধিক যানবাহন চলাচল করে এমন স্থান গুলোতে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার  রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা  টিনিটাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

দীরঘক্ষন ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শোনা বা কন্টেন্ট উপভোগ করা থেকে বিরত থাকাও রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস কি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মধ্যমে দূর করা সম্ভব?

গবেষনায় উঠে এসেছে সঠিক কারন নির্ণয় এবং এর ধরন যদি সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায় তাহলে     ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কার্যকরভাবে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এর চিকিৎসা সম্ভব।

গবেষনায় আরো দেখা যায় টিনিটাস এবং মাংশপেশীর জটিলতার এক যোগসূত্র রয়েছে; যেমন মাংশপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং মায়োফেশিয়াল ট্রিগার পয়েন্ট ডেভেলপ করা। এসব ইমপেয়ারমেন্ট এর উপস্থিতির কারনে কানের আশেপাশে সোমাটোসেন্সরি পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যা ঝি ঝি অনুভুতির জন্য দায়ী।

যেসকল মাস্কুলোস্কেলেটাল ডিজঅর্ডার রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস এর সাথে সম্পরকযুক্ত তা হলঃ

১। সারভাইকাল স্পাইন এর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া বা অধিক নড়াচড়া

২। সাব-অক্সিপিটাল, ট্রাপিজিয়াস এর উপরের অংশ, লেভেট্র স্কাপুলি অথবা স্টারনোক্লেইডোমাস্টয়েড মাংশপেশির মায়োফেশিয়াল ট্রিগার পয়েন্ট তৈরি হওয়া

৩। টেম্পেরোমেন্ডিবুলার জয়েন্ট ডিজঅর্ডার

৪। ফরওয়ার্ড হেড পোশ্চার এবং ফরওয়ার্ড রাউন্ড শোল্ডার এর উপস্থিতি

উল্লেখিত ডিজঅর্ডার গুলোর সবগুলোই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে দূর করা সম্ভব এবং তা রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার টিনিটাস এর অনুভূতি দূরীকরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তা গবেষনা বলছে।  

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস কি পুরোপুরি চলে যায়?

ফিজিওথেরাপিস্ট রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস হবার জন্য দায়ী যে কারন তার সবগুলোই দুরীভুত করতে পারেন, যখন তারা তা পারেন না তখন তারা কিছু কৌশল অবলম্বন এর মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে পারেন।

সাধারণত রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস এর চিকিৎসায় যে সকল ফিজিওথেরাপি বহুল প্রচলিতঃ

রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস ওষুধ সেবনের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন এক্সারসাইজ ও পাশাপাশি শৃঙ্খলা বদ্ধ জীবনযাপন। নিচে কিছু ফিজিওথেরাপি যা রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা  টিনিটাস এর চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত তা উল্লেখ করা হলঃ

১। সারভাইকাল মুভমেন্ট ও মাংশপেশির সংকোচনঃ এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রিপিটিটিভ সারভাইকাল মুভমেন্ট ও মাংশপেশির সংকোচন অন্তর্ভুক্ত এই সকল মুভমেন্ট এক্টিভ্লি বা প্যাসিভ্লি ডিজিজ কন্ডিশনের উপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করা হয়।এই থেরাপির মাধ্যমে ঘাড়ের মাংশপেশি শক্তি লাভ করে এবং তা সারভাইকাল স্পাইন এর মবিলিটি স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। এটি সাধারণত ঘাড়ের মাংশপেশির কারনে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস হলে অধিক কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

২। স্ট্রেচিং, পোশ্চারাল ট্রেইনিং এবং আকুপাংচারঃ সাধারণত কিছু স্ট্রেচিং এবং পোশ্চার কারেকশ্ন রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস এ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আকুপাংচার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক হিলিং প্রসেস ত্বরান্বিত করে।

৩। ইলেক্ট্রোথেরাপিঃ টেনস (TENS) যা এক ধরনের ইলেক্ট্রিক স্টিমুলেশ্ন । সাধারণত সারভাইকাল-২ এর নার্ভ ও টিস্যু ক্ষতিগ্রস্থ হলে রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার  বা টিনিটাস হয়ে থাকে এক্ষেত্রে টেনস এর মত ইলেক্ট্রিক স্টিমুলেশণ অনেক কার্যকরী।  

এছাড়াও কগনিটিভ বিহ্যভিওরাল থেরাপি, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ খুবই ভালো কাজ করে।  

সর্বোপরি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে সঠিক এসেস্মেন্ট এবং চিকিৎসায় রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার বা টিনিটাস থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

রেফারেন্সঃ

Wu, D., Ham, D. and Rosedale, R., 2020. Physiotherapy assessment and treatment of chronic subjective tinnitus using mechanical diagnosis and therapy: a case report. Journal of Manual & Manipulative Therapy28(2), pp.119-126.

Michiels, S., De Hertogh, W., Truijen, S. and Van de Heyning, P., 2014. Physical therapy treatment in patients suffering from cervicogenic somatic tinnitus: study protocol for a randomized controlled trial. Trials15(1), pp.1-6.

Cima, R.F.F., Mazurek, B., Haider, H., Kikidis, D., Lapira, A., Noreña, A. and Hoare, D.J., 2019. A multidisciplinary European guideline for tinnitus: diagnostics, assessment, and treatment. Hno67(1), pp.10-42.

https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/14164-tinnitushttps://www.hear-the-world.com/en/knowledge/hearing/tinnitus-causes-symptoms-and-treatment

Follow me

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

পরামর্শ নিতে 01975451525