এমসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি. এমসিএল (মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট) ইনজুরি হলো হাঁটুর অভ্যন্তরের একটি সাধারণ লিগামেন্ট জনিত আঘাত, যা সাধারণত হাঁটুতে জোড়ে আঘাত লাগলে বা হাটুতে হঠাৎ মোচড় লাগলে হয়ে থাকে। এই ইনজুরির ফলে হাঁটুর ভিতরের অংশে তীব্র ব্যথা, ফোলা ভাব, হাঁটতে বা দাঁড়াতে সমস্যা এবং হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।

লিগামেন্ট ইনজুরির কারণ

লিগামেন্ট ইনজুরির কারণ, সাধারণত হঠাৎ করে অতিরিক্ত টান, মচকানো বা তীব্র চাপের কারণে ঘটে থাকে। কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

হঠাৎ মোচড়ানো বা বাঁকানো: খেলাধুলা বা দৈনন্দিন কার্যকলাপের সময় হঠাৎ দিক পরিবর্তন বা দ্রুত গতি পরিবর্তনের ফলে লিগামেন্টে এই ধরনের চাপ পড়ে। উদাহরণ স্বরূপ, ফুটবল বা বাস্কেটবলের মতো খেলায় দ্রুত বাঁক নেওয়ার সময় হাঁটুর লিগামেন্টে মোচড় লাগে, যা সহজেই ইনজুরির কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে লিগামেন্ট অস্বাভাবিক ভাবে প্রসারিত বা মচকাতে বাধ্য হয়, যা লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে এবং ইনজুরির ঝুঁকি বাড়ায়। হঠাৎ বাঁকানো বা মোচড়ানো ইনজুরির ক্ষেত্রে আক্রান্ত অঙ্গে ব্যথা, ফোলা এবং চলাচলের সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

বাহ্যিক আঘাত: ফুটবল, রাগবি, বাস্কেটবল বা মার্শাল আর্টের মতো খেলায় শারীরিক সংঘর্ষ বা সজোরে আঘাত লিগামেন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই আঘাত সামনা সামনি বা একপাশ থেকে আসতে পারে, যার ফলে লিগামেন্ট মচকে যায় বা ছিঁড়ে যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ফুটবলে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ের আঘাত হাঁটুর লিগামেন্ট কে আহত করে, বিশেষ করে এমসিএল বা এলসিএল লিগামেন্টে সমস্যা বেশি হয়। এমন আঘাতের ফলে লিগামেন্ট অস্বাভাবিক ভাবে প্রসারিত হয় বা ছিঁড়ে যায়, যা হাঁটু বা সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কার্যকারিতা ও স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটায়।

এমসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি

হাইপারএক্সটেনশন: সাধারণত খেলাধুলা বা ভারী ব্যায়ামের সময় হাঁটু, কনুই বা আঙুলের মতো সংযোগ স্থল অতিরিক্ত প্রসারিত হলে লিগামেন্টের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়, যা লিগামেন্ট কে ছিঁড়ে ফেলতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, জাম্পিং বা ভার উত্তোলনের সময় হাঁটু অতিরিক্ত সোজা হয়ে গেলে বা পিছনের দিকে অতিরিক্ত বাঁকালে এমসিএল বা এলসিএল লিগামেন্টে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। হাইপার এক্সটেনশন জনিত ইনজুরিতে লিগামেন্ট অঙ্গের স্থিতিশীলতা হারায় এবং চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও ব্যথা দেখা দিতে পারে, যা সুস্থ ভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।

শরীরের অতিরিক্ত ওজন: যাদের শরীর একটু ভাড়ী হয় অর্থাৎ অতিরিক্ত ওজন থাকলে হাঁটু, গোড়ালি এবং পিঠের লিগামেন্ট গুলোর ওপর স্থায়ীভাবে বাড়তি চাপ পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করে এবং হাটুকে আঘাত প্রবণ করে তোলে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে চলাচলের সময় লিগামেন্ট গুলোকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়, বিশেষত সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা বা ভারী বস্তু বহনের সময়। এই অতিরিক্ত ওজন শরীরের যেকোনো স্থানে লিগামেন্টের ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং ইনজুরির ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত ওজন বহন করলে লিগামেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজে মচকে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা হাঁটা-চলার ক্ষমতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ার লক্ষণ

পুরাতন আঘাত: পূর্বে কোনো লিগামেন্ট ইনজুরি হয়ে থাকলে, সেটি সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা পর্যন্ত বা পুনরায় শক্তিশালী হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই স্থানে আবারও ইনজুরির সম্ভাবনা থেকে যায়। সাধারণত লিগামেন্টের সেড়ে ওঠার সময় কাল দীর্ঘ হয়, এবং এ সময়ে হালকা চাপেও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এমনকি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলাকালীন অতিরিক্ত চাপ বা ভুল ব্যায়াম করলে পুনরায় ইনজুরির ঝুঁকি থাকে। আগের ইনজুরি লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা এবং কার্যকারিতা হ্রাস করে, যা সামান্য মোচড় বা চাপেও আবারো ছিঁড়ে যেতে পারে।

হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার লক্ষণ

সঠিক স্ট্রেচিং এবং ওয়ার্ম-আপের অভাব: ব্যায়াম বা খেলাধুলার আগে সঠিক ভাবে স্ট্রেচিং এবং ওয়ার্ম-আপ না করলে পেশী ও লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা কমে যায়, ফলে আকস্মিক মুভমেন্ট বা চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই অবস্থায় দেহের বিভিন্ন জয়েন্ট যেমন হাঁটু, গোড়ালি বা কাঁধের লিগামেন্ট সহজেই মচকে যাতে পারে এমনকি ছিঁড়েও যেতে পারে। স্ট্রেচিং এবং ওয়ার্ম-আপ শরীর কে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে এবং জয়েন্ট গুলো কে স্থিতিস্থাপক করে তোলে, যা ইনজুরির ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। সঠিক প্রস্তুতি ছাড়াই শারীরিক কার্যক্রম শুরু করলে লিগামেন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ইনজুরির কারণ হতে পারে।

পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার লক্ষণ

লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করা যায় এবং শারীরিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এই লক্ষণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

তীব্র ব্যথা: লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সংযোগস্থলে হঠাৎ একটি তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হয়, যা সাধারণত অঙ্গটির স্বাভাবিক নড়াচড়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এই ব্যথা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও তীব্র হতে পারে এবং হাঁটা, দাড়ানো বা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গটি সোজা বা বাঁকানো কঠিন হয়ে পড়ে। আঘাতের জায়গায় এই ব্যথা স্থায়ী ভাবে থাকতে পারে এবং সামান্য চাপেও তা বাড়তে পারে।

ফোলা ভাব: লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সংযোগস্থলের আশেপাশে তরল জমে যায়, যা ফোলাভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফোলাভাবের কারণে আঘাত প্রাপ্ত অংশটি ফুলে ওঠে এবং স্পর্শ করলে মৃদু ব্যথা অনুভূত হয়। কখনও কখনও ফোলা ভাব এতটাই বেড়ে যায় যে, পায়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং পা সোজা রাখা বা বাঁকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

স্থিতিশীলতার অভাব: লিগামেন্ট পেশী এবং হাড়কে সঠিক ভাবে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু এটি ছিঁড়ে গেলে পা দুর্বল ও অস্থিতিশীল মনে হয়। এর ফলে আক্রান্ত অংশে হঠাৎ করে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় পা মচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা বা পায়ের ওপর চাপ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই অস্থিতিশীলতা পায়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয় এবং আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করা কষ্টকর হয়।

নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা: লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে পায়ে ব্যথা এবং ফোলা ভাব এতটাই তীব্র হতে পারে যে, হাঁটু ভাঁজ করা, সোজা করা বা অন্য কোনো দিকের নড়াচড়া কষ্টকর হয়ে যায়। এই সীমাবদ্ধতার কারণে হাঁটা, দাঁড়ানো বা ভারসাম্য বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে। এমনকি সামান্য নড়াচড়াতেও তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে স্বাভাবিক চলাচল অসম্ভব করে তোলে।

শব্দ শোনা: পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার সময় একটি উল্লেখ যোগ্য লক্ষণ হতে পারে আঘাতের মুহূর্তে শব্দ শোনা, যা সাধারণত একটি “পপ” বা “ক্র্যাক” ধরনের শব্দ হিসেবে অনুভূত হয়। এই শব্দটি মূলত লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে ঘটে এবং এটি আঘাতের গুরুতরতার ইঙ্গিত দিতে পারে। খেলাধুলা বা শারীরিক কার্যকলাপের সময় হঠাৎ মোচড় বা অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই ধরনের শব্দ শোনা যেতে পারে। শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে পায়ে তীব্র ব্যথা এবং অস্থিতিশীলতা অনুভূত হয়, যা পরবর্তী চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে।

রক্ত ক্ষরণ বা নীলচে দাগ: লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সংযোগস্থলের আশেপাশের টিস্যু গুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা চামড়ার নিচে জমে গিয়ে কালো বা নীলচে রঙ ধারণ করে। আঘাত প্রাপ্ত স্থান টি ফোলাভাব

সহ লালচে বা নীলচে দাগে আচ্ছাদিত হতে পারে, যা ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে। এটি আঘাতের কয়েক ঘণ্টা পর থেকে আরও স্পষ্ট দেখা দেয় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয়।

লিগামেন্ট ইনজুরি চিকিৎসা

লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসা মূলত ইনজুরির মাত্রার উপর নির্ভর করে এবং এতে বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করা হয়। সাধারণত লিগামেন্ট ইনজুরির ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পরবর্তী পুনর্বাসন প্রয়োজন হয়। নিচে লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসার কিছু প্রধান ধাপ উল্লেখ করা হলো:

বিশ্রাম (Rest): লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া বা মচকানোর ফলে আক্রান্ত অঙ্গের উপর চাপ দিলে তা ইনজুরিকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে। ইনজুরির পরপরই যে স্থানে আঘাত লেগেছে সেটিকে স্থির রেখে চলাফেরা করা উচিৎ ও ভার বহনের মতো কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশ্রামের মাধ্যমে জয়েন্টের ফোলা ভাব কমে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু গুলো পুনরায় জোড়া লাগানোর সুযোগ পায়। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত অংশ কে কমপক্ষে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়ার পরামর্শ দেন (১)। বিশ্রাম লিগামেন্টের সঠিক ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য, যা পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। হঠাৎ আঘাত পেলে কি করবেন?

বরফ সেঁক (Ice): বরফ সেঁক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দ্রুত ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে সহায়ক। ইনজুরির পরপরই আঘাত প্রাপ্ত স্থানে বরফ সেঁক দিলে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায়, ফলে ফোলাভাব কমে এবং ব্যথা উপশম হয়। বরফ সেঁক দেওয়ার জন্য সাধারণত একটি তোয়ালের মধ্যে বরফ পেঁচিয়ে আঘাতের স্থানে ১৫-২০ মিনিট ধরে সেঁক দেওয়া হয়, যা প্রতিদিন কয়েক বার করা যেতে পারে। বরফ সরাসরি ত্বকের উপর না রেখে কাপড়ে মোড়ানো উচিত, যাতে ত্বকের ক্ষতি হবার ঝুঁকি না থাকে।

ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ (Compression): কমপ্রেশনের জন্য সাধারণত একটি ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা কমপ্রেশন র‍্যাপ ব্যবহার করা হয়, যা ইনজুরিপ্রাপ্ত অংশে আলতো ভাবে পেঁচানো হয়। এই চাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে অতিরিক্ত রক্ত ও তরম পরিমাণে কম জমা হয় এবং ফোলা ভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ব্যান্ডেজটি খুব বেশি টাইট করা উচিত নয়, কারণ এটি রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং অতিরিক্ত চাপ দিলে ব্যথা বাড়তে পারে।

উচুস্থানে রাখা (Elevation): আঘাত প্রাপ্ত অঙ্গ টি হৃদপিণ্ডের উচ্চতার উপরে রাখলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে রক্ত ও তরল জমার পরিমাণ হ্রাস পায়, ফলে ফোলা ভাব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। সাধারণত বিশ্রামের সময় একটি বালিশ বা কুশন ব্যবহার করে পা বা হাত উঁচুতে রাখা হয়, যাতে রক্তপ্রবাহ সঠিক ভাবে পরিচালিত হয় এবং আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ফোলাভাব ও ব্যথা কমে। বিশেষজ্ঞরা ইনজুরির পর প্রাথমিক কয়েক দিন আক্রান্ত অঙ্গকে উঁচুতে রাখার পরামর্শ দেন, কারণ এটি লিগামেন্ট দ্রুত সেরে ওঠার জন্য সহায়ক।

পেইন ম্যানেজমেন্ট: প্রাথমিক ভাবে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ হিসেবে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রক্সেন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে কার্যকর। তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তিশালী ব্যথা নাশক ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া বরফ সেঁক এবং বিশ্রাম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফিজিওথেরাপি: লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং পুনর্বাসন-সহায়ক পদ্ধতি, যা ধীরে ধীরে আক্রান্ত অঙ্গের স্বাভাবিক গতি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ইনজুরির প্রাথমিক ধাপ পার হওয়ার পর ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেশী ও লিগামেন্টকে পুনরায় শক্তিশালী করা হয়, যা ভবিষ্যতে ইনজুরির ঝুঁকি হ্রাস করে। ফিজিওথেরাপি সেশনে সাধারণত হালকা স্ট্রেচিং এবং মুভমেন্ট এর এক্সারসাইজ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা লিগামেন্টে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দ্রুত আরোগ্যে লাভে সহায়তা করে। ধীরে ধীরে শক্তি ও ভারসাম্য উন্নত করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করানো হয়, যা আক্রান্ত অঙ্গের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনে এবং পুনরায় চলাচলের সক্ষমতা প্রদান করে। ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশনা অনুসারে সঠিকভাবে এই ব্যায়াম গুলো করলে দীর্ঘ মেয়াদে অঙ্গের স্থায়ী শক্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়।

সার্জারি: গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরির ক্ষেত্রে, যখন লিগামেন্ট সম্পূর্ণরূপে ছিঁড়ে যায় বা অন্যান্য চিকিৎসা কার্যকর হয় না, তখন সার্জারি একটি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে ওঠে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে হাঁটু বা অন্যান্য সংযোগস্থলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং দৈনন্দিন কাজ বা চলাচল ব্যাহত হতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্ট পুনরায় সংযুক্ত করা বা প্রতিস্থাপন করা হয়, যা ইনজুরিপ্রাপ্ত অংশের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহায়ক। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়, যাতে অঙ্গটি আবারো সম্পূর্ণ শক্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে পায়।

তথ্যসূত্র

  1. American Academy of Orthopaedic Surgeons, 2021.AAOS Essentials of Musculoskeletal Care. Jones & Bartlett Learning. https://books.google.com/books?hl=en&lr=&id=sn46EAAAQBAJ&oi=fnd&pg=PP1&dq=American+Academy+of+Orthopaedic+Surgeons+(AAOS),+%22Sprains,+Strains+and+Other+Soft-Tissue+Injuries&ots=Ac4i1zA2w3&sig=elpLwWmpZ0qhSOn4FcDSC6JTtEE

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322