পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ, তা বুঝতে হলে প্রথমে ব্যথার ধরন ও অবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। গোড়ালি আমাদের শরীরের ভারসাম্য ও ওজন বহন করে প্রতিদিনের চলাফেরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁটা, লাফানো, এমনকি দাঁড়ানোর সময়ও গোড়ালির উপর বিশাল চাপ পড়ে। তাই এই অংশে কোনো ধরনের ব্যথা হলে তা স্বাভাবিক কাজকর্মে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৫-২০% মানুষ জীবনের কোনো এক সময়ে গোড়ালির ব্যথায় ভুগেন (Thomas et al., 2019)।

বিশেষত খেলোয়ার, যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হন (Menz et al., 2018)।

গোড়ালির ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে পেশি বা লিগামেন্টের আঘাত, আর্থ্রাইটিস, নার্ভজনিত সমস্যা, বা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ওজন বহনের কারণে ব্যথার সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও এটি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার লক্ষণও হতে পারে, যা চিকিৎসা না করলে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে।

Table of Contents hide

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন হয়? (What Causes Ankle Pain?)

বিভিন্ন কারণে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে—আঘাত, প্রদাহ, স্নায়বিক সমস্যা কিংবা সংক্রমণের ফলে। ব্যথাটি কখনো হঠাৎ শুরু হতে পারে, আবার কখনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। নিচে পায়ের গোড়ালি ব্যথার সম্ভাব্য কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।

মাসকুলোস্কেলেটাল সমস্যা (Musculoskeletal Causes)

এ ধরনের ব্যথা সাধারণত পেশি, লিগামেন্ট এবং টেন্ডনের সমস্যার কারণে হয়।

গোড়ালি মচকে যাওয়া (Ankle Sprain): হঠাৎ ভুলভাবে পা মচকানো বা ভারসাম্য হারালে লিগামেন্ট অতিরিক্ত প্রসারিত হলে বা ছিঁড়ে গেলে ব্যথা, ফোলা এবং চলাচলের অসুবিধা দেখা দেয়। খেলাধুলা, ভারী কাজ করা, বা উচু হিলের জুতা পরার সময় এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।

অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস (Achilles Tendinitis): অ্যাকিলিস টেন্ডন আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় টেন্ডন, যা গোড়ালি ও পায়ের নমনীয়তা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত হাঁটা, দৌড়ানো বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে এই টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সাধারণত ব্যথাটি গোড়ালির পিছনের দিকে অনুভূত হয়, বিশেষত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর।

প্লান্টার ফ্যাসাইটিস (Plantar Fasciitis): পায়ের পাতার নিচে একটি শক্ত টিস্যু (প্লান্টার ফ্যাসা) আছে, যা হাঁটার সময় শক অ্যাবজর্বার হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত হাঁটা, শক্তপোক্ত জুতা ব্যবহার, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে এই টিস্যুর প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত সকালে প্রথম পা ফেলার সময় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, যা কিছুক্ষণ হাঁটার পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

হাগলান্ডস ডিফরমিটি (Haglund’s Deformity): গোড়ালির পিছনের হাড় বেড়ে যাওয়া বা ক্যালসিয়াম জমার কারণে এটি হয়। শক্ত জুতা বা উচু হিল পরলে ব্যথা বাড়তে পারে।

আর্থ্রাইটিস ও প্রদাহজনিত সমস্যা (Inflammatory & Arthritic Causes)

যেসব রোগে জয়েন্টের প্রদাহ বা ক্ষয় হয়, সেগুলোও গোড়ালির ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis): এটি বয়সজনিত জয়েন্ট ক্ষয়জনিত রোগ, যেখানে কার্টিলেজ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ব্যথা সাধারণত ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে এবং সকালের দিকে বেশি অনুভূত হয়।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই জয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত দুই পায়ের গোড়ালিতে একসাথে ব্যথা হয় এবং ফোলাভাব থাকতে পারে (Smolen et al., 2020)।

গাউট (Gout): যদি পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ রাতে বেশি অনুভূত হয়, তবে এটি গাউট বা প্রদাহজনিত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড জমে গেলে এটি জয়েন্টে স্ফটিক তৈরি করে এবং তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত রাতে শুরু হয় এবং পায়ের আঙুল ও গোড়ালিতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

সেরোনেগেটিভ স্পন্ডাইলোআর্থ্রোপ্যাথি (Seronegative Spondyloarthropathy): এটি প্রদাহজনিত একটি জয়েন্ট ডিজঅর্ডার, যা পায়ের গোড়ালিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। কিশোর ও তরুণদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

স্নায়বিক কারণ (Neurological Causes)

স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

টার্সাল টানেল সিনড্রোম (Tarsal Tunnel Syndrome): গোড়ালির ভেতরের দিকে টিবিয়াল নার্ভ এ চাপ লাগলে  এটি ঘটে। ব্যথার পাশাপাশি ঝিনঝিন অনুভূতি বা অবশভাব দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, অসামঞ্জস্যপুর্ণ জুতা পরা বা পায়ের গঠনগত ত্রুটি থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।

পেরোনিয়াল নার্ভ ইনজুরি (Peroneal Nerve Injury): দীর্ঘক্ষণ একইভাবে বসে থাকা, পায়ে আঘাত লাগা বা অপারেশনের পর পেরোনিয়াল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি পায়ের সামনের ও বাইরের অংশে ঝিনঝিন অনুভূতি ও দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।

সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগ (Infectious & Systemic Causes)

বিভিন্ন সংক্রমণ বা শারীরিক সমস্যার কারণে গোড়ালির ব্যথা হতে পারে।

সেপটিক আর্থ্রাইটিস (Septic Arthritis): এটি জয়েন্টে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়। সাধারণত হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হওয়া, ফোলাভাব এবং জ্বর হতে পারে (Mathews et al., 2021)।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (Diabetic Neuropathy): দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা গোড়ালি ও পায়ের ব্যথার অন্যতম কারণ। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে অনুভূতি কমিয়ে দেয়, যার ফলে অনেক সময় রোগীরা ব্যথা টের পান না এবং পায়ে ক্ষত তৈরি হতে পারে।

কোন লক্ষণগুলি চিন্তার কারণ হতে পারে? (What Are the Red Flag Symptoms?)

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ নির্ণয়ের জন্য শারীরিক পরীক্ষা, ইমেজিং, এবং নিউরোলজিকাল টেস্ট অপরিহার্য। গোড়ালির ব্যথা সাধারণত বিশ্রামের মাধ্যমে কমে যায়। তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ আছে, যা গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে এবং অবহেলা করা উচিত নয়। যদি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কোন লক্ষণগুলি চিন্তার কারণ হতে পারে

১. অনেকদিনের পুরনো বা তীব্র ব্যথা যা বিশ্রামেও কমে না

সাধারণত আঘাতজনিত ব্যথা কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়। কিন্তু যদি ব্যথা ছয় সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং বিশ্রাম নিলেও কমতে না চায়, তাহলে এটি আর্থ্রাইটিস, স্ট্রেস ফ্র্যাকচার বা নার্ভের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। (Maher et al., 2017)। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিসের কারণেও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অবিরাম ব্যথা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি অস্থিসংক্রান্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

২. ব্যথার সাথে জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ

যদি পায়ের গোড়ালিতে লালচে ভাব, ফোলা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর সাথে জ্বর থাকে, তাহলে এটি সংক্রমণের (Septic Arthritis) লক্ষণ হতে পারে (Mathews et al., 2021)।

ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে জয়েন্ট ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে এটি স্থায়ী অক্ষমতা তৈরি করতে পারে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চামড়ার নিচে পুঁজ জমা হওয়া, ক্ষতস্থান থেকে তরল নিঃসরণ হওয়া বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা জরুরি।

৩. গোড়ালিতে ভারসাম্যহীনতা বা পায়ের কার্যক্ষমতা হ্রাস

হঠাৎ যদি গোড়ালির শক্তি কমে যায় বা ভারসাম্য রক্ষা করতে সমস্যা হয়, তাহলে এটি স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। পেরোনিয়াল নার্ভ ইনজুরি বা টার্সাল টানেল সিনড্রোমের কারণে এমনটা হতে পারে। এই সমস্যাগুলো সাধারণত স্নায়ুর সংকোচন বা আঘাতের ফলে দেখা দেয়। হাঁটার সময় যদি পা দুর্বল লাগে বা ভারসাম্যহীন মনে হয়, তাহলে এটি স্নায়বিক দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। পায়ের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে কি না, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এমন সমস্যা দেখা দিলে ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG) ও নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট (NCV) করিয়ে নেওয়া উচিত।

৪. পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া বা অবশভাব

পায়ের গোড়ালিতে যদি ঝিনঝিন অনুভূতি, অবশভাব বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়, তাহলে এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণ হতে পারে। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে পায়ের ব্যথার অনুভূতি কমে যায় এবং সংবেদনশীলতা কমে গেলে পায়ে ক্ষত তৈরি হতে পারে যা সহজে সারে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও ওষুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। পায়ের যত্ন নেওয়া ও নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করাও অপরিহার্য।

৫. আঘাতের পর পা ফোলা বা ভাঙার শঙ্কা

যদি পায়ে আঘাতের পর তীব্র ফোলাভাব দেখা যায়, পা লাল হয়ে যায়, হাঁটতে কষ্ট হয় বা পা মচকানোর শব্দ শোনা যায়, তাহলে এটি ফ্র্যাকচারের লক্ষণ হতে পারে। সাধারণত উচ্চ স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, খেলার সময় আঘাত পাওয়া বা সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলে এমন সমস্যা হতে পারে। ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে সাধারণত পায়ের স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তিত মনে হয় এবং ব্যথার কারণে পা মাটিতে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে X-ray করিয়ে নেওয়া এবং প্রয়োজনে প্লাস্টার, ব্রেস বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো উচিৎ।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা প্রতিরোধের উপায় (How to Prevent Ankle Pain?)

সঠিক ব্যায়াম, আর্চ-সাপোর্টযুক্ত জুতা ব্যবহার এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। গোড়ালির ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক জীবনযাত্রা, নিয়মিত এক্সারসাইজ, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক জুতা ব্যবহার করলে গোড়ালির স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। নিচে গোড়ালি ব্যথা প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

সঠিক জুতা নির্বাচন করুন

গোড়ালির স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক জুতা পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুপযুক্ত বা শক্ত জুতা ব্যবহারের ফলে গোড়ালির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো মানের আর্চ-সাপোর্টযুক্ত জুতা গোড়ালির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

  • গোড়ালির জন্য আরামদায়ক জুতা পরুন।
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে অর্থোটিক ইনসোল বা কম্প্রেশন মোজা ব্যবহার করুন।
  • খেলাধুলার জন্য বিশেষায়িত জুতা পরুন, যেমন দৌড়ানোর জন্য রানিং শু।
  • খুব বেশি শক্ত বা একেবারে নরম জুতা এড়িয়ে চলুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

অতিরিক্ত ওজন শরীরের প্রতিটি জয়েন্ট, বিশেষ করে গোড়ালির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের অতিরিক্ত ১ কেজি ওজন গোড়ালিতে প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি চাপ তৈরি করে, যা জয়েন্ট ও কার্টিলেজ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন এবং পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন ও সবজি খান।
  • নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা।
  • ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন, হঠাৎ করে ডায়েট পরিবর্তন করবেন না।

পায়ের স্ট্রেচিং ও এক্সারসাইজ করুন

নিয়মিত স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম গোড়ালির পেশি ও লিগামেন্টকে শক্তিশালী করে, যা ইনজুরি ও ব্যথার ঝুঁকি কমায়। প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস প্রতিরোধেও এটি কার্যকর।

  • প্রতিদিন গোড়ালির স্ট্রেচিং করুন, বিশেষ করে হাঁটার আগে ও পরে।
  • ক্যাফ মাসল স্ট্রেচ এবং টাওয়েল স্ট্রেচিং অভ্যাস করুন।
  • ব্যালান্স ও স্ট্যাবিলিটি বাড়ানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়ানোর অনুশীলন করুন।

অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ওভার-ইউজ এড়িয়ে চলুন

অতিরিক্ত হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলাধুলার ফলে পায়ের লিগামেন্ট ও টেন্ডনে অতিরিক্ত স্ট্রেস পড়তে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।

  • নিজের ক্ষমতা বুঝে পরিশ্রম করুন, একবারে অতিরিক্ত চাপ দেবেন না।
  • দৌড়ানো বা হাঁটার আগে ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল-ডাউন স্ট্রেচিং করুন।
  • বেশি হাঁটা বা দৌড়ানোর মাঝে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
  • হঠাৎ করে শরীরচর্চার মাত্রা না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আঘাত প্রতিরোধ করুন

গোড়ালির ইনজুরি অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই দৈনন্দিন জীবনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

  • খেলাধুলার সময় গোড়ালির সুরক্ষার জন্য ব্রেস ব্যবহার করুন।
  • অসমতল বা পিচ্ছিল স্থানে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন।
  • ভারী বস্তু তুলতে হলে সঠিক পদ্ধতিতে তুলুন, যাতে গোড়ালির উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  • ব্যথা অনুভব করলে অবিলম্বে বিশ্রাম নিন এবং অবহেলা করবেন না।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে? (When Should You See a Doctor?)

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

গোড়ালির ব্যথা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং সঠিক বিশ্রাম ও চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা অবহেলা করা উচিত নয়। নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:

পায়ের গোড়ালি মচকানোর পর ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

পায়ের গোড়ালি মচকে গেলে সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ব্যথা কমতে শুরু করে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা সম্ভব হয়। তবে, যদি ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে এটি গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরি বা স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে, যদি হাঁটার সময় ব্যথা আরও বেড়ে যায় বা পা মাটিতে রাখার সময় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে এটি লিগামেন্টের গ্রুরুতর টান লাগা (Grade 2-3 Sprain) বা হাড় ভেংগে যাওয়ার (Stress Fracture) লক্ষণ হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে বরফ সেক দেওয়া, পা উঁচু করে রাখা এবং বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তবে, ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে এক্স-রে বা এমআরআই করানো উচিত, যাতে করে কোনো গুরুতর সমস্যা হয়েছে কিনা সেটা দেখা যায় । যদি গোড়ালির নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়, পা ফোলা থাকে, বা ভারসাম্যহীনতা অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং স্বাভাবিক হাঁটা-চলার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

ব্যথার সাথে গোড়ালিতে তীব্র ফোলা বা লালচে ভাব থাকলে

গোড়ালিতে তীব্র ফোলা, লালচে ভাব এবং উষ্ণতা অনুভূত হলে এটি একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে, যদি ফোলার পাশাপাশি ব্যথাও বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরেও না কমে, তাহলে এটি সংক্রমণ (Infection) বা সেপটিক আর্থ্রাইটিসের (Septic Arthritis) ইঙ্গিত দিতে পারে। সংক্রমণের কারণে জয়েন্টে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে প্রদাহ বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

এছাড়া, গাউট বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ফোলাভাব, ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত ব্যাধির অংশ হতে পারে। অন্যদিকে, যদি ফোলা একপাশের গোড়ালিতে বেশি হয় এবং ব্যথার সঙ্গে ভারভার অনুভূতি দেখা দেয়, তাহলে এটি ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস (DVT)-এর লক্ষণ হতে পারে, যেখানে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।

যদি ফোলা এবং ব্যথা বিশ্রাম নেওয়ার পরেও কমে না, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ ধরনের সমস্যার কারণ চিহ্নিত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা (CRP, ESR, Uric Acid) এবং আলট্রাসাউন্ড প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ ধরা পড়লে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি শুরু করা উচিত, যাতে সংক্রমণ শরীরে আরও না ছড়ায়। দীর্ঘস্থায়ী ফোলা বা ব্যথার ক্ষেত্রে, রিউমাটোলজিস্ট বা অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা যা স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত করছে

গোড়ালিতে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা হলে এবং তা স্বাভাবিক হাঁটা বা দৌড়ানো বাধাগ্রস্ত করলে, এটি পায়ের কাঠামোগত কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। সাধারণত প্লান্টার ফ্যাসাইটিস, অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা অনুভূত হয়। প্লান্টার ফ্যাসাইটিসের ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম পা ফেলতেই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়, যা ধীরে ধীরে কমে আসে। অন্যদিকে, অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস হলে গোড়ালির পিছনের অংশে টান ধরা বা ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে হাঁটার সময়।

হ্যাগলান্ডস ডিফরমিটি থাকলে গোড়ালির হাড়ের পিছনের অংশে অস্বাভাবিক হাড় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা হাঁটার সময় জুতার সাথে ঘষা লেগে ব্যথা তৈরি করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলা করলে ব্যথা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। যদি ব্যথার কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা কঠিন হয়ে যায় এবং বিশ্রামেও ব্যথা কমে না, তাহলে এটি কোনো গুরুতর লিগামেন্ট, টেন্ডন বা হাড়ের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যায় দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে, পায়ের নির্দিষ্ট পেশি ও লিগামেন্ট শক্তিশালী করার জন্য বিশেষায়িত এক্সারসাইজ করা উচিত। পাশাপাশি, এক্স-রে বা এমআরআই পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে হাড়ের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না বা টেন্ডন ইনজুরির কোনো প্রমাণ আছে কি না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ফিজিওথেরাপি, জুতার পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

যদি ব্যথার সাথে পায়ের অনুভূতি বা শক্তি কমে যায় (Peripheral Neuropathy)

যদি পায়ের ব্যথার সঙ্গে অনুভূতি কমে যায়, ঝিনঝিনে ভাব অনুভূত হয় বা পায়ের শক্তি হ্রাস পায়, তবে এটি স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি থাকলে পায়ের সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যায়, ফলে ছোটখাট আঘাত বা ক্ষতও অনেক সময় বোঝা যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা শুরুতে তেমন ব্যথা সৃষ্টি করে না, তবে দীর্ঘ সময় অবহেলা করলে সংক্রমণ বা পায়ের আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

টার্সাল টানেল সিনড্রোম থাকলে গোড়ালির ভিতরের অংশে স্নায়ু চাপে পড়ে ব্যথা ও অবশভাব অনুভূত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যথা সাধারণত রাতের বেলা বেশি অনুভূত হয় এবং গোড়ালি থেকে পায়ের পাতার দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ধরনের সমস্যায় সঠিকভাবে স্নায়ুর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। EMG বা NCV টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, স্নায়ুর কোনো স্থানে সংকোচন বা ক্ষতি হয়েছে কিনা। যদি ডায়াবেটিস থাকে, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং পায়ের যত্ন নিতে হবে, যাতে কোনো ক্ষত তৈরি না হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ফিজিওথেরাপি ও উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা (How is Ankle Pain Treated?)

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ বুঝতে হলে রোগীদের নিজস্ব লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ, তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর। কিছু ব্যথা স্বল্পমেয়াদী এবং বিশ্রাম ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নিচে গোড়ালির ব্যথার বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রাথমিক চিকিৎসা (Self-Management & Home Remedies)

গোড়ালির ব্যথা যদি হালকা থেকে মাঝারি হয়, তাহলে বাড়িতেই কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করে উপশম পাওয়া সম্ভব।

RICE থেরাপি – ব্যথা কমানোর কার্যকর কৌশল: RICE থেরাপি বলতে বোঝায় Rest (বিশ্রাম), Ice Therapy (বরফ সেক), Compression (সংকোচন), Elevation (উঁচু করে রাখা)। এটি দ্রুত ব্যথা ও ফোলা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

  • বিশ্রাম (Rest): হাঁটা বা ওজন বহন করা এড়িয়ে চলুন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরুদ্ধারের সুযোগ পায়।
  • বরফ সেক (Ice Therapy): প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট করে ২-৩ বার বরফ সেক দিলে ব্যথা ও ফোলা কমে।
  • সংকোচন (Compression): ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা গোড়ালি ব্রেস ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
  • উঁচু করা (Elevation): পা উঁচু করে রাখলে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং ফোলা দ্রুত কমে।

ব্যথানাশক ওষুধ (Pain Relievers): ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) ব্যবহৃত হয়।

  • ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) ইত্যাদি ব্যথা কমাতে কার্যকর।
  • দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার ক্ষেত্রে কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন কার্যকর হতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।

গোড়ালির ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং: নিয়মিত এক্সারসাইজ পেশি ও লিগামেন্টকে নমনীয় ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।

  • Plantar Fascia Stretching – গোড়ালির নিচের টিস্যুকে নমনীয় রাখে।
  • Achilles Tendon Stretch – অ্যাকিলিস টেন্ডনের টান কমাতে কার্যকর।
  • Toe-to-Wall Stretch – গোড়ালির মচকানো বা টান কাটাতে সহায়ক।

ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন (Physiotherapy & Rehabilitation)

গুরুতর ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী আর্থ্রাইটিস বা পুনরাবৃত্তিমূলক ইনজুরির ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন

স্ট্রেন্দেনিং ও মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ: গোড়ালির পেশি ও লিগামেন্টকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু বিশেষ এক্সারসাইজ কার্যকর।

  • টিবিয়ালিস পোষ্টেরিওর ও টিবিয়ালিস অ্যান্টেরিওর স্ট্রেন্থেনিং – গোড়ালির স্থিতিশীলতা বাড়ায়।
  • ব্যালেন্স ও প্রোপ্রিওসেপ্টিভ ট্রেনিং – ইনজুরি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

নিউরোমাসকুলার ট্রেনিং (Neuromuscular Training) ও ব্যালেন্স এক্সারসাইজ: গোড়ালির নার্ভ ও পেশির সংযোগ উন্নত করার জন্য নিউরোমাসকুলার ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ।

  • BOSU Ball Exercise – গোড়ালির ভারসাম্য ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • Single Leg Balance Exercise – গোড়ালির স্ট্যাবিলিটি উন্নত করে।

কাস্টমাইজড অর্থোটিক্স ও ব্রেসিং: প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিসের ক্ষেত্রে অর্থোটিক ইনসোল বা এংকেল ব্রেস ব্যথা কমাতে সহায়ক।

সার্জারি কখন প্রয়োজন?

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ সঠিক সময়ে নির্ণয় করা হলে, অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সার্জারি এড়ানো যায়। সাধারণত ৯০-৯৫% গোড়ালির ব্যথা চিকিৎসা বা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে কিছু গুরুতর পরিস্থিতিতে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরি বা গোড়ালির ফ্র্যাকচার: যদি গোড়ালির লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে যায় বা হাড় ভেঙে যায়, তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

  • Ankle Ligament Reconstruction – লিগামেন্ট পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Fracture Fixation Surgery – প্লেট, স্ক্রু বা রড ব্যবহার করে হাড় ঠিক করা হয়।

দীর্ঘস্থায়ী আর্থ্রাইটিসের জটিলতায় (Arthrodesis or Joint Replacement): দীর্ঘমেয়াদী আর্থ্রাইটিস থাকলে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে Joint Fusion (Arthrodesis) বা Joint Replacement Surgery করতে হতে পারে।

  • Arthrodesis (Joint Fusion) – গোড়ালির অস্থিসন্ধিগুলো স্থির করে দেয়।
  • Ankle Joint Replacement – চলাফেরার ক্ষমতা বজায় রেখে ব্যথা কমানোর জন্য উন্নত পদ্ধতি।

উপসংহার (Conclusion)

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কিসের লক্ষণ সঠিকভাবে চিনতে পারলে, রোগীরা দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যথানাশক ওষুধের উপর নির্ভর না করে ফিজিওথেরাপি, জীবনধারা পরিবর্তন এবং ব্যায়াম দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে সহায়ক হতে পারে। সঠিক জুতা ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আর্চ সাপোর্টযুক্ত জুতা বা অর্থোটিক ইনসোল ব্যবহার করলে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস এবং গোড়ালির অতিরিক্ত চাপজনিত ব্যথা কমতে পারে। নিয়মিত এক্সারসাইজ গোড়ালির পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং ইনজুরি প্রতিরোধে সহায়ক হয়।

এক্সারসাইজের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ করাও খুব জরুরি, কারণ অতিরিক্ত ওজন গোড়ালির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা আর্থ্রাইটিস ও প্লান্টার ফ্যাসাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সার্জারি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ বেশিরভাগ গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসা রিহ্যাবিলিটেশন, ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322