সায়াটিক নার্ভ (Sciatic nerve) হলো মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও লম্বা স্নায়ু, যা পিঠের নিচের অংশ অর্থাৎ কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব ও উরুর পেছনের দিক দিয়ে পায়ের পেছন দিয়ে নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি কোনো কারণে এই স্নায়ুটির ওপর চাপ পড়ে বা এটি আক্রান্ত হয়, তখন যে ব্যথা তৈরি হয় তাকে সায়াটিক পেইন বা সায়াটিকা বলা হয়। এই ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে শুরু হয়ে এক বা দুই পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর সঙ্গে অনেক সময় ঝিনঝিন অনুভূতি, অবশভাব বা পেশিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয় (Ropper & Zafonte, 2015)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় সায়াটিক পেইনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন (Konstantinou & Dunn, 2008)। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, মোবাইল বা ল্যাপটপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো, ভারী কিছু তোলা কিংবা ভুল অঙ্গবিন্যাস—এইসব কারণ সায়াটিক ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
সায়াটিক ব্যথা বেশ কয়েকটি সাধারণ কারণের কারণে হয়ে থাকে, যেমন:
- কোমরের ডিস্ক সরে যাওয়া বা PLID (Lumbar disc herniation)
- ডিস্কের বার্ধক্যজনিত ক্ষয় (Degenerative disc disease)
- মেরুদণ্ডের সরু হয়ে যাওয়া (Spinal stenosis)
- পাইরিফর্মিস পেশির চাপ (Piriformis syndrome)
- আঘাত বা দীর্ঘদিনের অস্বাস্থ্যকর অঙ্গবিন্যাস (Postural stress)
তবে সব সময় শুধু মেকানিক্যাল কারণেই সায়াটিক ব্যথা হয় না। কখনো কখনো শরীরে ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, কিংবা অন্য কোনো বিপাকীয় বা হরমোনজনিত অসামঞ্জস্য থেকেও এমন ব্যথা দেখা দিতে পারে। এজন্য ব্যথার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
সায়াটিক নার্ভ ব্যথার কারণসমূহ

সায়াটিক পেইন সাধারণত তখনই দেখা দেয়, যখন সায়াটিক নার্ভে কোনোভাবে চাপ পড়ে, নার্ভ সংকুচিত হয় অথবা তার আশপাশে কোনো গঠনগত বা জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। এই ব্যথার পেছনে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় এবং অস্থিসংক্রান্ত কারণ থাকে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো—
লাম্বার ডিস্ক হার্নিয়েশন (Lumbar Disc Herniation): সায়াটিক ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো কোমরে, বিশেষ করে L4-L5 বা L5-S1 ডিস্কের সরে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া। এতে ডিস্কের মাঝের জেলির মতো অংশ (nucleus pulposus) বাইরের শক্ত আবরণ (annulus fibrosus) ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে সায়াটিক নার্ভের গোড়ায় চাপ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
স্পাইনাল স্টেনোসিস (Spinal Stenosis): যখন মেরুদণ্ডের স্নায়ু যাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে যায়, তখন সায়াটিক নার্ভ রুটে চাপ পড়ে। এই অবস্থাটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটি সায়াটিক ব্যথার একটি সাধারণ কারণ।
পাইরিফরমিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome): নিতম্বের গভীরে অবস্থিত পাইরিফর্মিস নামক একটি পেশি যদি সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ দেয় বা তা সংকুচিত করে ফেলে, তাহলে সেখান থেকেও সায়াটিক ব্যথা শুরু হতে পারে। এটি ডিস্ক-সম্পর্কিত নয়, তাই একে “নন-ডিস্কোজেনিক নার্ভ কমপ্রেশন” বলা হয়।
পেশি ও স্নায়ুর ভারসাম্যহীনতা (Neuromuscular Imbalance): শরীরের পেলভিক ফ্লোর, হ্যামস্ট্রিংস অথবা গ্লুটিয়াল পেশিগুলোর টাইট বা দুর্বলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা সায়াটিক নার্ভের স্বাভাবিক গতি ও অবস্থান ব্যাহত করে। এর ফলে স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকেই ব্যথার সূত্রপাত ঘটে।
এই ব্যথার প্রকৃতি বুঝে সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি, যাতে ব্যথা কমে এবং রোগী স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারে।
অস্থিরোগসংক্রান্ত কারণ
স্পন্ডাইলোসিস (Spondylosis)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মেরুদণ্ডের হাড় ও ডিস্ক ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। এই পরিবর্তনের ফলে হাড় ক্ষয় হতে পারে, ডিস্কের ভেতরের জেলী শুকিয়ে যেতে পারে এবং অনেক সময় হাড় বেড়ে যায়। এসব পরিবর্তনের কারণে মেরুদণ্ড থেকে বের হওয়া স্নায়ুগুলোর ওপর চাপ পড়ে এবং পায়ে ব্যথা, অবশভাব বা সায়াটিকার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)
মেরুদণ্ডের ছোট ছোট জয়েন্ট, যেগুলোকে ফ্যাসেট জয়েন্ট বলা হয়, সেগুলো যদি ক্ষয় হতে শুরু করে, অথবা পাশে থাকা লিগামেন্টগুলো মোটা হয়ে যায়, তাহলে স্নায়ু যাওয়ার পথটি (spinal foramina) সরু হয়ে পড়ে। এই সংকীর্ণতা সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে কোমর থেকে পায়ে ব্যথা, ঝিনঝিনি ভাব বা অবশভাব অনুভূত হয়।
নার্ভে চাপ লাগলে কি হয়?
যখন কোনো স্নায়ুর ওপর হাড়, ডিস্ক, লিগামেন্ট বা মাংসপেশির চাপ পড়ে, তখন সেই অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে স্নায়ুতে জ্বালাপোড়া, ফোলা ভাব তৈরি হয় এবং স্নায়ুর বাইরের স্তর ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এতে স্নায়ু ভুল বার্তা বা অতিরিক্ত সংবেদন পাঠাতে থাকে, যা ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়। এই ব্যথা অনেক সময় শুধু কোমরে সীমাবদ্ধ না থেকে নিচের দিকে, অর্থাৎ পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ভূমিকা

ক্যালসিয়াম হলো শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা শুধু হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্যই নয়, স্নায়ু ও পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্যও প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে, ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং পেশির শক্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
স্নায়ু সংকেত আদান–প্রদান:
স্নায়ু যখন কোনো বার্তা পাঠায়, তখন তার মধ্যে ক্যালসিয়াম প্রবেশ করে এবং একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যেটি ওই বার্তা পরবর্তী স্নায়ু কোষে পৌঁছে দেয় (Berridge et al., 2000)। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম না থাকলে স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
পেশি সংকোচন ও শিথিলতা:
আমাদের পেশি যখন সংকুচিত হয়, তখন তার ভেতরের প্রোটিন ফাইবারগুলো একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে ক্যালসিয়ামের সাহায্য নেয়। আবার যখন কাজ শেষ হয়, তখন পেশিকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন (Berchtold et al., 2000)।
এই কারণে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে শরীরে ব্যথা, দুর্বলতা, স্নায়ুবিক সমস্যা এবং অনেক সময় সায়াটিকার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই এসব উপাদানের ঘাটতি প্রতিরোধ ও ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
নিউরো–মাসকুলার ফাংশনে প্রভাব
ভিটামিন ডি মূলত শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণে সহায়তা করে এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। এটি শুধু হাড় মজবুত রাখার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি স্নায়ু ও পেশির মধ্যে সংযোগ এবং স্নায়ু সংবেদন নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক্যালসিয়াম শোষণে ভূমিকা:
যদি শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে, তাহলে অন্ত্র ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, যাকে বলে হাইপোক্যালসেমিয়া, এবং ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে (Holick, 2007)।
নিউরো–মাসকুলার কার্যক্ষমতা:
ভিটামিন ডি পেশি ও স্নায়ু কোষের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে শরীরের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দাঁড়িয়ে থাকা বা চলাফেরার সময় ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হয় (Bischoff-Ferrari et al., 2004)।
অতএব, ভিটামিন ডি শুধু হাড় নয়, বরং শরীরের সামগ্রিক স্নায়ু ও পেশির সমন্বিত কাজের জন্য অপরিহার্য।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কী হয়
যদি শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি না থাকে, তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এসব সমস্যা এমন উপসর্গ তৈরি করে, যা সায়াটিকা বা স্নায়ুজনিত ব্যথার মতো মনে হয়।
প্রথমত, “হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ভঙ্গুরতা দেখা দেয়”, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে হাড় নরম হয়ে যেতে পারে, যাকে বলে অস্টিওম্যালেসিয়া। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সহজেই ব্যথা হয় কিংবা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ে (Rizzoli et al., 2009)।
দ্বিতীয়ত, মাংসপেশিতে ব্যথা ও দুর্বলতা”, তৈরি হয়। বিশেষ করে থাই এবং কোমরের কাছাকাছি অঞ্চলের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একে বলে প্রোক্সিমাল মায়োপ্যাথি, যা ভিটামিন ডি-এর অভাবে ঘটে থাকে (Glerup et al., 2000)। এর ফলে রোগীরা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, বসে থেকে উঠে দাঁড়ানো বা হাঁটার সময় ব্যথা অনুভব করেন, এবং এসব উপসর্গ অনেক সময় সায়াটিকার মতো অনুভূত হয়।
তৃতীয়ত, দীর্ঘদিন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে “স্নায়ুর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়”, বিশেষ করে peripheral নার্ভগুলোর। এর ফলে রোগীর হাতের ও পায়ের পাতা ও আঙুলে ঝিনঝিনে ভাব, জ্বালাপোড়া বা অবশভাব দেখা দিতে পারে, যা নিউরোপ্যাথিক ব্যথার লক্ষণ।
ভিটামিন ডি ঘাটতির সঙ্গে সায়াটিকার মিল:
ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত ঘটে, যার প্রভাবে পেশির শক্তি কমে যায়। বিশেষ করে কোমর, পেলভিস ও থাই ঘিরে থাকা পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে সেগুলো দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা তৈরি করে, যা কোমর থেকে পায়ে ছড়ানো ব্যথার মতো মনে হতে পারে।
“Hypovitaminosis D Myopathy” নামক রোগ হলে রোগীর প্রোক্সিমাল পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে রোগী হাটতে, বসতে-উঠতে, সিঁড়ি ভাঙতে বা ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা বোধ করেন। এইসব সমস্যা অনেক সময় সায়াটিকার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়।
এই কারণে, যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী কোমর বা পায়ের ব্যথার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অস্থির সমস্যা নয়—পুষ্টিগত ঘাটতির দিকেও নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন ডি–এর অভাবজনিত Myopathy এবং Peripheral Neuropathy
ভিটামিন ডি শুধুমাত্র হাড় ও পেশির জন্য নয়, স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পেরিফেরাল নার্ভে প্রদাহ, জ্বালাপোড়া এবং অবশভাবের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে, যা প্রায়ই সায়াটিকা ব্যথার মতো অনুভূত হয় (Shehab et al., 2012)।
- Peripheral Neuropathy রোগীদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম পাওয়া গেছে।
- ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশনের মাধ্যমে অনেকে neuropathic pain-এর উপশম পেয়েছেন।
নিউরোপ্যাথিক ব্যথা বনাম কমপ্রেসিভ সায়াটিক ব্যথার পার্থক্য
এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হলে বুঝতে হবে যে সায়াটিক পেইন সব সময় সায়াটিক নার্ভে মেকানিক্যাল চাপের কারণে হয় না। অনেক সময় এটি স্নায়ুর রাসায়নিক বা প্রদাহজনিত সমস্যার ফলেও হতে পারে (Baron, 2009, Ropper and Zafonte, 2015)।
উপসর্গ | নিউরোপ্যাথিক ব্যথা (Neuropathic Pain) | কমপ্রেসিভ সায়াটিক ব্যথা (Compressive Sciatica) |
ব্যথার ধরণ | ঝাঁঝালো, ঝিঁ ঝিঁ ধরা, জ্বালাপোড়া | তীব্র বা ছড়িয়ে পড়া ব্যথা |
কারণ | স্নায়ুর ক্ষতি বা প্রদাহ | ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস ইত্যাদি |
পরীক্ষা | EMG, Vit D/Ca++, nerve conduction | MRI, CT |
প্রতিক্রিয়া | অনেক সময় পজিশনের সাথে পরিবর্তন হয় না | বসা বা দাড়ানোর ভঙ্গির সাথে বাড়ে |
Sciatica-র সঠিক রোগ নির্ণয়ের গুরুত্ব
Sciatic pain-এর উৎস নির্ধারণে একমাত্র ক্লিনিক্যাল উপসর্গ পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট নয়। কারণ, সায়াটিকা সদৃশ ব্যথা বিভিন্ন অবস্থায় হতে পারে — যেমন:
রোগের নাম | উপসর্গ | মূল পার্থক্য |
লাম্বার ডিস্ক হার্নিয়েশন | কোমর থেকে একপাশে পায়ে ছড়ানো ব্যথা | এমআরআই (MRI)-তে স্পষ্টভাবে ডিস্ক সরে যাওয়া দেখা যায় |
ভিটামিন ডি–এর ঘাটতি | শরীরজুড়ে ব্যথা, থাই ও কোমরের পেশিতে দুর্বলতা | রক্ত পরীক্ষায় ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম পাওয়া যায় |
পিরিফর্মিস সিনড্রোম | নিতম্বে ব্যথা, সায়াটিক নার্ভের পথ ধরে ব্যথা | পায়ের বাহিরে ঘোরানোর সময় ব্যথা বাড়ে (resisted external rotation painful) |
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি | জ্বালাপোড়া, অবশভাব, মোজা বা গ্লাভসের মতো ছড়ানো অনুভুতি | নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি (NCS)-এর মাধ্যমে নির্ণয় করা প্রয়োজন |
ডিফারেনশিয়াল ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ চিহ্নিত না করলে চিকিৎসা ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে।
সায়াটিকার ব্যথায় ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

সায়াটিকার ব্যথা শুধু একটি সাধারণ অসুবিধা নয়—এটি শরীরের গভীরে থাকা স্নায়ুর সমস্যার একটি প্রতিফলন, যা মূলত কোমরের নিচ থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথার প্রকৃত সমাধান সম্ভব তখনই, যখন ব্যথার কারণকে চিহ্নিত করে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ASPC Manipulation Therapy কেবল ব্যথা নয়, বরং ব্যথার মূল কারণ নির্ণয় করে গঠনগত সমস্যার সমাধানে কাজ করে থাকে।
ASPC-তে SDM (Structural Diagnosis and Management) কনসেপ্ট অনুযায়ী ম্যানুয়াল থেরাপি প্রয়োগ করা হয়, যা শুধু ব্যথার উপশমই নয়, ব্যথার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেয়। এখানে প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদা আলাদা থেরাপি পরিকল্পনা তৈরী করা হয়, যাতে তার শারীরিক অবস্থা, ব্যথার ধরন এবং জীবনধারার উপর ভিত্তি করে সঠিক ফিজিওথেরাপি প্রদান করা যায়।
এখানে রোগীকে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ, নার্ভ গ্লাইডিং, মবিলাইজেশন এবং বিভিন্ন অত্যাধুনিক থেরাপির মাধ্যমে শক্তি ও কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। ফলে রোগী শুধু ব্যথামুক্তই হন না, বরং পূনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
সায়াটিকার ক্ষেত্রে ASPC শুধু একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়—এটি একটি পুনরুদ্ধারের পথ, যেখানে ব্যথার নয়, ব্যথার উৎসের সমাধানই মূল লক্ষ্য।
উপসংহার (Conclusion)
যদিও ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি সরাসরি সায়াটিক নার্ভে মেকানিক্যাল চাপ সৃষ্টি করে না, তবে এসব উপাদানের অভাবে শরীরে এমন কিছু উপসর্গ তৈরি হতে পারে যা সায়াটিকার মতো মনে হয়।
তাই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শুধু ব্যথা শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধু ব্যথা কমানোর ওষুধ বা স্টেরয়েড নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হয় না। বরং ফিজিওথেরাপি ও সঠিক পুষ্টি সমন্বিত প্রয়োগেই রোগী দীর্ঘমেয়াদি উপশম ও পুনরায় ব্যথা ফিরে আসা প্রতিরোধ করতে পারেন।
এই সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিই সায়াটিক বা সায়াটিকা সদৃশ ব্যথার ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ দেখায়।
- পেটের বাম পাশে ব্যথা কমানোর উপায় - June 19, 2025
- কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কী? - June 19, 2025
- মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোক: ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ - June 18, 2025