টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট কি?

হিপ রিপ্লেসমেন্ট হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাত প্রাপ্ত হিপ জয়েন্ট অর্থাৎ কোমরের নীচের অংশের হাড় (নিতম্বের হাড়) সার্জারির সাহায্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে সার্জেন হিপ জয়েন্টটি বাদ দিয়ে কৃত্রিম হিপ জয়েন্ট বসিয়ে দেন।

এই কৃত্রিম হিপ জয়েন্ট সাধারণত উচ্চ মানের দামী ধাতু বা প্লাস্টিকের তৈরী হয়।সম্পূর্ণ হিপ রিপ্লেসমেন্ট তখনই করা হয় যখন অন্যান্য সমস্ত রকম চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো কাজ হয়না এবং রোগীর অবস্থার কোনো রকম উন্নতি দেখা যায় না।

এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য হল ক্ষতিগ্রস্ত হিপ জয়েন্টটি অপসারণ করা, যাতে রোগীর শারীরিক অস্বস্তি, যন্ত্রনা এবং নড়াচড়ার অসুবিধা দূর করা যায়। তার সাথে সাথে, এই চিকিৎসা রোগীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা ফিরিয়ে রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। হিপ বারসাইটিস

হিপ জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণ?

হিপ জয়েন্ট ক্ষতির প্রধান এবং সাধারণ কারণ হল অস্টিওআর্থ্রাইটিস, যা তরুণাস্থির ক্ষয়জনিত রোগ। এই অবস্থায়, শরীরের তরুণাস্থি, যা হাড়ের শেষ অংশগুলোকে আচ্ছাদন করে থাকে এবং সন্ধি গঠন করে, তা ক্রমাগত ক্ষয় হতে থাকে। ফলে হাড় ও হাড়ের সন্ধিগুলির মধ্যে ঘর্ষণ বেড়ে যায়, যা ব্যথা, স্টিফনেস, এবং চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি করে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস হিপ জয়েন্টের ক্ষতির একটি প্রধান কারণ হলেও, এছাড়াও বেশ কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে হিপ রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন পড়তে পারে:

  • রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত: এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ যা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ এবং ক্ষতি ঘটায়, বিশেষ করে হিপ জয়েন্টে। এই প্রদাহ তরুণাস্থির ক্ষয় ঘটায় এবং জয়েন্টের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
  • পোস্ট ট্র্ম্যাটিক আর্থ্রাইটিস বা আঘাত পাবার ফলে সৃষ্ট বাত: এই রোগ তখন হয় যখন হিপ জয়েন্টে কোনো ধরনের আঘাত বা চোট পাওয়ার পর তা ঠিকমত সারে না। এই আঘাত জয়েন্টে ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা এবং অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অস্টিওনেক্রোসিস: এই রোগ হলে, হাড়ের কোষে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়, যা হাড়ের টিস্যুর মৃত্যু ঘটায়। এটি হিপ জয়েন্টের ক্ষতি এবং অবশেষে জয়েন্টের বিকৃতি ঘটাতে পারে।
  • হাড় ভেঙে যাওয়া বা সরে যাওয়া: হিপ জয়েন্টের আশপাশের হাড় ভেঙে গেলে বা সরে গেলে, এটি জয়েন্টের স্থিতিস্থাপকতা এবং কার্যকারিতা হ্রাস করে। এই ধরনের ক্ষতি সার্জিকাল ইন্টারভেনশন ছাড়া ঠিক করা কঠিন হতে পারে।
  • ছোটোবেলায় কোনো আঘাত বা চোট পাওয়া: শৈশবে বা কিশোর বয়সে হিপ জয়েন্টে আঘাত পাওয়া ভবিষ্যতে জয়েন্টের ক্ষতি এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

উপরোক্ত কারণগুলির কোনো একটি বা একাধিকের ফলে হিপ জয়েন্টের ক্ষতি ঘটলে, রোগীর জীবনমান উন্নত করার জন্য এবং ব্যথা ও অসুবিধা হ্রাস করার জন্য হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট কখন করতে হয়?

শুধুমাত্র ব্যথা বা হাড়ের শক্তভাব থাকলেই চিকিৎসকেরা টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট অপারেশনের সুপারিশ করেন না। সাধারণত রোগীর শারীরিক অবস্থা ও উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যার দ্বারা উপসর্গগুলির অন্তর্নিহিত কারণ সঠিকভাবে জানা যায়। এই উপসর্গগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরও অসহ্য যন্ত্রনা হওয়া
  • তরুণাস্থি ক্ষয়ের ফলে কোমরে এবং হিপ জয়েন্টে ব্যথা হওয়া এবং প্রদাহ
  • হাঁটা চলায় অসুবিধা
  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাধারণ নড়াচড়ায় অসুবিধা
  • ব্যথা ও অস্বস্তির কারণে ঘুম না হওয়া
  • হিপ জয়েন্ট ও কোমরের হাড় শক্ত হয়ে আটকে যাওয়া

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট কেন করা হয়?

যখন কারও উরুসন্ধি (হিপ জয়েন্ট) এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় যে সাধারণ নড়াচড়া করা দুর্ভর হয়ে পড়ে এবং তীব্র ব্যথায় ভোগে, এমনকি যদি ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপির মতো সংবেদনশীল চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো উন্নতি না আনে, তখন চিকিৎসকরা সাধারণত সম্পূর্ণ হিপ প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এই প্রক্রিয়াটি অস্টিও-আর্থারাইটিসের কারণে সাধারণত প্রয়োজন হয়, যদিও অন্যান্য বিভিন্ন কারণেও হিপ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে। এই অন্যান্য কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ যা জয়েন্টের আস্তরণে প্রদাহ এবং ক্ষয় ঘটায়, যার ফলে হিপ জয়েন্টে গুরুতর ব্যথা এবং অক্ষমতা সৃষ্টি হয়।
  • হিপ ফ্র্যাকচার: উরুসন্ধির হাড় ভেঙে গেলে বা ফ্র্যাকচার হলে তা সঠিকভাবে না জোড়া লাগলে হিপ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • সেপ্টিক আর্থারাইটিস: এটি একটি জীবাণু সংক্রমণ যা জয়েন্টে প্রদাহ এবং ক্ষতি ঘটায়। হিপ জয়েন্টে এই ধরনের সংক্রমণ হলে হিপ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।
  • অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এটি একটি বিরল প্রদাহজনিত রোগ যা মেরুদণ্ড এবং হিপ জয়েন্টে প্রদাহ এবং স্টিফনেস ঘটায়।
  • বোন ডিসপ্লেজিয়াস (হাড়ের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হওয়া): এটি জন্মগত রোগ যেখানে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়, যা হিপ জয়েন্টে অসম চাপ সৃষ্টি করে। এই অস্বাভাবিকতাগুলি হিপ জয়েন্টের অস্থিরতা এবং ক্ষতি ঘটায় যা হিপ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনকে ত্বরান্বিত করে।

এই সমস্ত রোগের ক্ষেত্রে হিপ প্রতিস্থাপন জীবন মানের উন্নতি এবং ব্যথা হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। এটি একটি জটিল সার্জিকাল প্রক্রিয়া যা ক্ষতিগ্রস্ত হিপ জয়েন্টকে কৃত্রিম উপাদান দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে, যার ফলে রোগী আরও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং ব্যথামুক্তভাবে নড়াচড়া করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ হিপ জয়েন্ট অস্টিওআর্থারাইটিসস

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি প্রয়োগের সময় কী হয়?

হিপ প্রতিস্থাপন সার্জারি, যা মেডিকেল পরিভাষায় টোটাল হিপ আর্থ্রোপ্লাস্টি নামেও পরিচিত। এটি একটি জটিল অপারেশন যা মূলত ক্ষয়ে যাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত বা অসুস্থ হিপ জয়েন্টকে একটি কৃত্রিম জয়েন্ট দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য এবং উরুসন্ধির কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়, যাতে রোগীর জীবনের মান উন্নত হয়।

সার্জারির প্রক্রিয়া শুরু হয় যখন সার্জন রোগীর হিপের সামনে (anterior approach) অথবা পাশে (lateral or posterior approach) একটি ছেদ করেন। অপারেশনের এই পদ্ধতি নির্বাচন সার্জনের অভিজ্ঞতা, রোগীর অবস্থা, এবং সার্জারির সম্ভাব্য জটিলতার উপর নির্ভর করে।

ছেদ করার পর, সার্জন হিপ জয়েন্টের আশেপাশের মাংসপেশি ও টিস্যুকে সরিয়ে নেন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বা অসুস্থ হিপ বল এবং সকেট অংশটি পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এরপর অসুস্থ বা নষ্ট হয়ে যাওয়া উরুসন্ধির বল ও সকেট অংশটি সাবধানতার সাথে বের করে আনা হয়।

পরবর্তীতে, সার্জন কৃত্রিম জয়েন্ট বা প্রস্থেটিক ডিভাইস ইনস্টল করেন। এই কৃত্রিম জয়েন্ট সাধারণত ধাতু, সিরামিক, বা প্লাস্টিকের তৈরি হয়, যা ন্যাচারাল হিপ জয়েন্টের কার্যক্ষমতা অনুকরণ করে। প্রস্থেটিক বল এবং সকেট অংশটি রোগীর হাড়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়, প্রয়োজনে বিশেষ স্ক্রু ব্যবহার করা হয়।

সার্জারি শেষে, সার্জন ছেদ করা অংশটি সুতার সাহায্যে সেলাই করে দেন এবং রোগীকে পুনর্বাসনের জন্য পাঠানো হয়। পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি এক্সারসাইজ, ফিজিওথেরাপি, এবং অন্যান্য থেরাপিউটিক পদ্ধতির মাধ্যমে হয়, যা রোগীকে নতুন হিপ জয়েন্টের সাথে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করে।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে কত সময় লাগে?

সাধারণভাবে, একটি টোটাল হিপ প্রতিস্থাপন সার্জারি সম্পাদন করতে প্রায় ৬০ থেকে ৯০ মিনিটের মধ্যে সময় নেয়া হয়, যা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করার পর কী হয়?

হিপ প্রতিস্থাপন সার্জারির পরবর্তী পর্যায়ে, রক্ত জমাট বন্ধ এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসক বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করবেন। এই ওষুধগুলি রক্ত জমাট প্রতিরোধক এবং ব্যথা নাশক হতে পারে, যা সার্জারির পর রোগীর আরাম ও স্বাস্থ্য উন্নতি নিশ্চিত করে।

পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াটি একজন অভিজ্ঞ ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে শুরু হবে, যিনি রোগীকে বিশেষ এক্সারসাইজ ও মুভমেন্ট প্রোটোকল অনুসরণ করার পরামর্শ দেবেন। এই এক্সারসাইজগুলি নতুন হিপ জয়েন্টের সঙ্গে অভিযোজন, শক্তি বৃদ্ধি, ও গতিশীলতা উন্নতির লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয়। রোগীকে সাহায্য করতে থেরাপিস্ট হাঁটার লাঠি, ওয়াকার, বা অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জামের ব্যবহার শেখাবেন।

পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি সাধারণত সার্জারির পর অবিলম্বে শুরু হয়, এবং রোগীর সুস্থতা ও পুনর্বাসনের গতি অনুযায়ী কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে নিয়মিত মনিটরিং ও পর্যালোচনার মাধ্যমে তার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রগতি সাধন করা হয়।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্টের বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা?

হিপ জয়েন্টের ব্যথা ও অন্যান্য অসুবিধা দেখা দিলে সব ক্ষেত্রে হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি না করলেও চলে। এর বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম প্রণালী বার্মিংহ্যাম হিপ রিসারফেসিং সার্জারি নামে পরিচিত। যদিও এই চিকিৎসা প্রণালী সাধারণত কম বয়সীদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। নবজাতক থেকে শুরু করে ৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের জন্য এই চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রযোজ্য।

এই সার্জারিতে সম্পূর্ন হিপ জয়েন্টটি প্রতিস্থাপন করার পরিবর্তে চিকিৎসক হাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে চেঁছে তুলে দেন এবং ঐ জয়েন্ট বা হাড়ের সন্ধির অংশটিকে সাপোর্ট বা অবলম্বন দেওয়ার জন্য একটি কৃত্রিম ব্রেস বা বন্ধনী লাগিয়ে দেন। এর ফলে হাড়ের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং রোগী পুনরায় স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম হয়। এর সাথে সাথে, ব্যথাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।

চিকিৎসকেরা সাধারণত টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্টের পরিবর্তে এই চিকিৎসারই সুপারিশ করে থাকেন, যদিও এর সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সর্বদা অস্থি বিশেষজ্ঞ বা অর্থোপেডিক সার্জেন নিয়ে থাকেন। এবং এই সিদ্ধান্ত নেবার জন্য তিনি রোগীর বয়স, দেহের ওজন, হাড়ের ক্ষতির পরিমাণ, দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি সব রকম বিষয় খতিয়ে দেখেন।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট এবং হিপ রিসারফেসিং—এই দুই প্রধান সার্জিক্যাল চিকিৎসা ছাড়াও হিপ জয়েন্টের চিকিৎসার জন্য নানা ধরণের চিকিৎসা প্রণালী উপলব্ধ। এর মধ্যে অপারেশন ছাড়া যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া যায়, তার মধ্যে উল্লেখ্য হলোঃ

  • ব্যথার ওষুধ
  • ফিজিওথেরাপি
  • জয়েন্ট সাপ্লিমেন্ট
  • ওজন কমানো
  • দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনচর্যায় পরিবর্তন

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি?

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি মূলতঃ দুটি পদ্ধতিতে করা যেতে পারেঃ

  • প্রথাগত ওপেন সার্জারি
  • মিনিমালি ইনভেসিভ অর্থাৎ ন্যূনতম কাটাছেঁড়া করে সার্জারি

যদিও এই দুই পদ্ধতিতেই অপারেশনের প্রণালী মূলত একইরকম থাকে, এদের মূল পার্থক্য হল অপারেশনের জন্য শরীরে কাটার পরিমাণ। প্রথাগত ওপেন সার্জারির জন্য অনেকখানি অংশ কেটে অপারেশন করতে হ্য়। অন্যদিকে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিতে নেহাৎই অল্প পরিমাণ অংশ কাটতে হয়। এছাড়াও, এই দ্বিতীয় পদ্ধতিতে অপারেশনের পরের যন্ত্রনা অনেক কম হয় এবং সেলাই শুকোতে ও সম্পূর্ণ নিরাময় হতে প্রথাগত ওপেন সার্জারির চাইতে তুলনামূলক ভাবে কম সময় লাগে।

এই টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করার জন্য রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে সম্পুর্ন অচেতন করে নেয়া হয়।

কৃত্রিম জয়েন্ট স্থাপন করা হয়ে গেলে চিকিৎসক আর কোনো হাড়ে বা তরুণাস্থিতে কোনো ক্ষয় অথবা আঘাত আছে কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেন। যদি সেরকম কোনো আঘাত বা ক্ষয় থাকে, তাহলে সেই হাড়ও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই অংশের পেশীগুলি যথাস্থানে স্থাপন করে কাটা অংশটি সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট অপারেশনের বিভিন্ন ধাপ?

টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি দুইটি ধাপে করা হয়।

১ম ধাপঃ প্রথমে সার্জেন হিপ বা নিতম্বের কাছে জায়গাটি প্রয়োজন মত কেটে নেন এবং ঐ কাটা অংশ দিয়ে নিতম্বের পেশীগুলি সরিয়ে জায়গাটি খালি করে নেন। এর ফলে হিপ জয়েন্ট বা হাড়ের জোড়া অংশটি পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়। এরপর হাড়ের যে বলের মত অংশটি ফিমার নামক পায়ের হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে, সেই অংশটি চেঁছে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ওই অংশে কৃত্রিম হাড় বা জয়েন্ট স্থাপন করা হয়। স্থাপন করার সময় কৃত্রিম হাড়টি ফিমার হাড়ের সাথে এমন ভাবে যুক্ত করা হয় যাতে তার বলের মত অংশটি জয়েন্টের বাইরে বেরিয়ে থাকে।

২য় ধাপঃ পরবর্তী ধাপে চিকিৎসক হিপ বোনের সকেট অংশটি প্রস্তুত করেন এবং যদি অন্যান্য কোনো হাড় বা তরুণাস্থিতে কোনোরকম ক্ষয় থাকে, তাও বাদ দিয়ে দেন। এরপর কৃত্রিম জয়েন্টের কাপের মত অংশটি সকেটে বসিয়ে ফিমার হাড়ের সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও অপারেশনের পর যাতে দেহের ওই অংশে অতিরিক্ত তরল জমা না হয়, তার জন্য একটি অতিরিক্ত ড্রেন বা তরল নিঃসরণের পথ তৈরী করে দেবার প্রয়োজন হতে পারে।

কৃত্রিম জয়েন্টটি স্থাপন করা হয়ে গেলে চিকিৎসক আর কোনো হাড়ে বা তরুণাস্থিতে কোনো ক্ষয় অথবা আঘাত আছে কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেন। যদি সেরকম কোনো আঘাত বা ক্ষয় থাকে, তাহলে সেই হাড়ও বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই অংশের পেশীগুলি যথাস্থানে স্থাপন করে কাটা অংশটি সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্রঃ

Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322