ব্রেন টিউমারের লক্ষন এবং ব্রেন টিউমারের কারন। ব্রেন টিউমার হলো মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এটি মস্তিষ্কের কোষ থেকে সরাসরি উৎপন্ন হতে পারে অথবা শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্রেন টিউমার দুই ধরনের হতে পারে:বিনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমার সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য টিস্যুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না, তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের আশপাশের টিস্যুতে আক্রমণ করতে পারে।

ব্রেন টিউমার কেন হয়

ব্রেন টিউমার কেন হয় তার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কিছু কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ব্রেন টিউমার হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে কিছু কারণ নিম্নরূপ জিনগত পরিবর্তন কিছু ক্ষেত্রে, মস্তিষ্কের কোষ গুলোর ডিএনএতে (DNA) পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে, যা কোষগুলো কে অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি এবং বিভাজনের দিকে ধাবিত করে। এই পরিবর্তন গুলো কখনো জন্মগত ভাবে পাওয়া যায় অথবা জীবনের কোনো এক পর্যায়ে বিকাশ লাভ করতে পারে। নির্দিষ্ট জিনগত বৈশিষ্ট্যের ফলে, যেমন নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস টাইপ-1, টাইপ-2, এবং টিউব্যারাস স্ক্লেরোসিস-এর কারণে ব্রেন টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে (1)।

বংশগত ঝুঁকি পরিবারের কারো অতীতে ব্রেন টিউমার হবার ঘটনা থাকলে অন্য সদস্যদের ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে ব্রেন টিউমারের রোগী রয়েছে, তাদের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। কিছু নির্দিষ্ট বংশগত সিন্ড্রোম যেমন টার্কোট সিন্ড্রোম বা লি-ফ্রাওমেনি সিন্ড্রোম ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায় (2)।

বিকিরণ বিশেষত আয়নিত বিকিরণের (ionizing radiation) সংস্পর্শে আসা মানুষের ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পূর্বে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত রেডিয়েশন থেরাপি ব্রেন টিউমারের কারণ হতে পারে। যদিও দৈনন্দিন জীবনে পাওয়া বিকিরণ যেমন মোবাইল ফোন বা মাইক্রোওয়েভ থেকে আসা বিকিরণ, এর সাথে ব্রেন টিউমারের সরাসরি কোনো সম্পর্ক এখনো প্রমাণিত হয়নি (3)।

পরিবেশ গত এবং কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত কারণ কিছু বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ, যেমন পেস্টিসাইড, ক্লোরিনেটেড সলভেন্ট, বা ভারী ধাতু ইত্যাদির সাথে কাজ করা মানুষের ব্রেন টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে, এই বিষয় গুলো নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি (4)।

বয়স এবং লিঙ্গ ব্রেন টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ব্রেন টিউমার শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। উদাহরণ স্বরূপ, পাইলোসাইটিক অ্যাস্ট্রোসাইটোমা এবং মেডুলোব্লাস্টোমা প্রাথমিক ভাবে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে গ্লিওব্লাস্টোমার মতো টিউমার প্রায়শই বয়স্কদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

ব্রেন টিউমারের লক্ষন

সাধারণ ভাবে, পুরুষদের মধ্যে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ম্যালিগন্যান্ট বা মরণব্যাধি টিউমার। তবে কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ব্রেন টিউমার, যেমন মেনিঞ্জিওমা, নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায় নি, তবে এটি জিনগত, হরমোনাল, এবং পরিবেশগত কারণের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। (5)।

ব্রেন টিউমার কোথায় হয়

ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের যে কোনো অংশে হতে পারে, এবং এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের কোষ ও টিস্যুর উপর নির্ভর করে। সাধারণ ভাবে, ব্রেন টিউমার গুলো কে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে শ্রেণী করণ করা হয়। ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের নিচের অংশে, যেমন সেরেবেলাম (মস্তিষ্কের পশ্চাদ্ভাগ) এবং মস্তিষ্কের কাণ্ডে (brainstem), অথবা মস্তিষ্কের ওপরের অংশে, যেমন সেরেব্রামে (মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগ) হতে পারে। টিউমারের অবস্থান এর ধরণ, বৃদ্ধির হাড় এবং উপসর্গ গুলোর প্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার লক্ষণ ও প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা

ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের বিভিন্ন নির্দিষ্ট স্থানে হতে পারে, যেমন

সেরেব্রাম মস্তিষ্কের প্রধান অংশ, যা চিন্তা, স্মৃতি, আবেগ, কথা বলা, এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। সেরেব্রামে টিউমার হলে মাথা ব্যথা, ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন, কথা বলার সমস্যা, বা দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সেরেবেলাম মস্তিষ্কের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত, যা সমন্বয়, ভার সাম্য এবং পেশীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। সেরেবেলামে টিউমার হলে মাথা ঘোরা, ভারসাম্যহীনতা, বা চোখের মনির নড়াচড়ায় সমস্যা হতে পারে।

মস্তিষ্কের কাণ্ড (Brainstem) ব্রেন স্টেম, মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের মধ্যকার সংযোগ স্থাপন করে এবং শ্বাস প্রশ্বাস, হার্ট বিট, এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেন স্টেম এ টিউমার হলে কথা বলতে অসুবিধা, গিলতে সমস্যা, বা শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের নিচের দিকে অবস্থিত ছোট একটি গ্রন্থি, যা হরমোন নিঃসরণ এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার হলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বা প্রজনন জনিত সমস্যা হতে পারে।

পাইনিয়াল গ্রন্থি মস্তিষ্কের মাঝখানে অবস্থিত ছোট একটি গ্রন্থি, যা মেলাটোনিন উৎপন্ন করে এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। পাইনিয়াল গ্রন্থিতে টিউমার হলে ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যথা, বা দৃষ্টিশক্তি ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ

ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো সাধারণত টিউমারের আকার, অবস্থান এবং এর বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। এগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং মস্তিষ্কের যেসব অংশ আক্রান্ত হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ নিম্নরূপ

মাথা ব্যথা মাথাব্যথা সাধারণত সকালের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর বেশি অনুভূত হয় এবং ধীরে ধীরে সময়ের সাথে তীব্রতর হতে পারে। এটি সাধারণ মাথাব্যথার তুলনায় ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে; যেমন, এটি অনবরত এবং স্থায়ী হতে পারে, এবং সাধারণ কোন ব্যথার ওষুধে আরাম নাও পেতে পারে। ব্রেন টিউমার থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথার ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে, বিশেষত যখন মাথার ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়। কখনো কখনো মাথাব্যথা হঠাৎ করে খুব তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং এটি ঘুমের মধ্যে বা শুয়ে থাকার সময় আরও বেশি অনুভূত হতে পারে।

খিঁচুনি বা মৃগী রোগের উপসর্গ টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক ইলেকট্রিক্যাল কার্যকলাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি বা মৃগী রোগের উপসর্গ বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন আকস্মিক ভাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাঁপা, দেহের কোনো অংশে ঝাঁকি লাগা, দৃষ্টিভ্রম, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অথবা শরীরের এক পাশে বা পুরো শরীরে অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন। অনেক ক্ষেত্রে খিঁচুনি প্রথমে শরীরের একটি অংশে শুরু হতে পারে এবং পরবর্তীতে পুরো শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।

দৃষ্টি বা শ্রবণ সমস্যা টিউমার যখন মস্তিষ্কের এমন কোনো অংশে অবস্থান করে যা দৃষ্টি বা শ্রবণ শক্তির সঙ্গে যুক্ত, তখন এটি সেই অংশে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে এবং সেই অংশের কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে চোখে ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন, বা হঠাৎ করে দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দৃষ্টি ভঙ্গির ক্ষেত্রে কোনো এক পাশে দৃষ্টি শক্তি হারানো বা দৃশ্যের মধ্য বর্তী অংশে কালো ছোপ দেখা দেওয়া ব্রেন টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।

বমি বমি ভাব বা বমি মস্তিষ্কে টিউমার থাকলে তা মাথার ভেতরে চাপ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের বমি নিয়ন্ত্রক অংশ কে উদ্দীপিত করে এবং বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এই উপসর্গ বেশি দেখা যায় এবং তার পাশাপাশি মাথা ব্যথাও হতে পারে। কখনো কখনো বমি বমি ভাব এতটাই তীব্র হতে পারে যে, এটি হঠাৎ করে এবং কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হতে পারে।

স্মৃতিভ্র বা মানসিক পরিবর্তন টিউমার যখন মস্তিষ্কের সেই অংশে অবস্থান করে যা স্মৃতি, মনোযোগ, বা চিন্তা ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে, তখন এটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে স্মৃতি শক্তি হ্রাস, বিভ্রান্তি, এবং মানসিক অস্পষ্টতা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতে অসুবিধা বোধ করতে পারেন, যেমন কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে দেরি হওয়া, পরিচিত জায়গায় পথ ভুলে যাওয়া, বা সাম্প্রতিক ঘটনা স্মরণ করতে ব্যর্থ হওয়া। এছাড়া, আচরণ গত পরিবর্তন যেমন অস্থিরতা, বিরক্তি, আগ্রাসন, বা হতাশা দেখা দিতে পারে।

শারীরিক ভারসাম্যহীনতা চলাফেরা করার সময় পা টলমল করা, মেঝেতে হোঁচট খাওয়া, বা কোনো কিছুতে হঠাৎ ধাক্কা লাগার মতো সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। এছাড়া, টিউমারের কারণে মাথা ঘোরা বা চক্রাকারে ঘুর্ণনের অনুভূতি (ভার্টিগো) হতে পারে, যা শারীরিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করে। কখনো কখনো আক্রান্ত ব্যক্তি সূক্ষ্ম কাজ, যেমন বোতাম লাগানো বা চামচ দিয়ে খাওয়ার সময় সমন্বয় করতে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন। এই ধরনের শারীরিক ভারসাম্যহীনতা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে তীব্রতার দিকে যেতে পারে।

পেশী দুর্বলতা বা অসাড়তা সাধারণত, হাত, পা, বা মুখের পেশী তে এই ধরনের অসাড়তা বা দুর্বলতা দেখা দেয়, যা প্রায়ই শরীরের এক পাশে হয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজ, যেমন হাঁটা, লিখা, বা বস্তু উত্তোলনের সময় পেশীর দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। এছাড়া, টিউমার যদি মস্তিষ্কের এমন কোনো অংশে থাকে যা মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণ করে, তবে কথা বলা বা খাওয়ার সময়ও অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণ গুলি হঠাৎ শুরু হতে পারে অথবা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে।

কথা বলার সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বলতে অসুবিধা বোধ করতে পারেন, যেমন কথা বলতে গিয়ে শব্দ আটকে যাওয়া, বাক্য গঠন করতে সমস্যা হওয়া, বা কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে দেরি হওয়া। কখনো কখনো বক্তব্য অস্পষ্ট হতে পারে, এবং অন্যরা তার কথা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারেন না যে তারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছেন না বা তাদের কথা ভুল ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে খারাপের দিকে যেতে পারে।

ব্রেন টিউমার কি ভাল হয়

ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা ফলাফল বা “ভাল হওয়া” টিউমারের ধরণ, অবস্থান, আকার, এবং রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কিছু ব্রেন টিউমার, যেমন বিনাইন টিউমার, ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভাবে অপসারণ করা যেতে পারে, যার ফলে রোগীর পূর্ণ সুস্থতার সম্ভাবনা থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, মেনিঞ্জিওমা বা পাইলোসাইটিক অ্যাস্ট্রোসাইটোমা প্রায়শই বিনাইন প্রকৃতির হয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সফলভাবে নিরাময় করা যায়। তবে কিছু টিউমার মস্তিষ্কের গভীরে বা সংবেদনশীল অঞ্চলে থাকলে সেগুলো সম্পূর্ণ ভাবে অপসারণ করা কঠিন হতে পারে।

অন্য দিকে, ম্যালিগন্যান্ট (মারণব্যাধি) টিউমার, যেমন গ্লিওব্লাস্টোমা, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা চিকিৎসা করা কঠিন। এ ধরনের টিউমারের জন্য সাধারণত শল্য চিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে পুরোপুরি আরোগ্য সম্ভব না হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই টিউমার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং রোগীর জীবন যাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হয়। ব্রেন টিউমার ভাল হওয়া বা আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নির্ভর করে প্রাথমিক ভাবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের ওপর। তাই ব্রেন টিউমারের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (6)।

ব্রেন টিউমার হলে করনীয়

ব্রেন টিউমার হলে করণীয় পদক্ষেপ গুলো দ্রুত গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ, কারণ এটি রোগের ধরন, আকার, অবস্থান, এবং রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসায় সুস্থতার সম্ভাবনা এবং ফলাফল নির্ধারণ করে। নিচে ব্রেন টিউমার হলে করণীয় কিছু গুরুত্ব পূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ব্রেন টিউমারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে যেমন মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণ সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন নিউরোলজিস্ট বা নিউরোসার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস শুনে এবং প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষা নির্ধারণ করবেন।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সঠিক নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক সাধারণত এমআরআই (MRI), সিটি স্ক্যান (CT Scan), অথবা পিইটি স্ক্যান (PET Scan) এর মতো ইমেজিং টেস্টের পরামর্শ দেবেন। এই পরীক্ষা গুলো মস্তিষ্কের মধ্যে টিউমারের অবস্থান, আকার, এবং প্রকার নির্ধারণে সহায়তা করে। কখনো কখনো বায়োপসি (টিস্যু পরীক্ষা) এর প্রয়োজন হতে পারে, যা টিউমারের প্রকৃরণ নির্ধারণে সাহায্য করে।

চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের প্রকার, অবস্থান, আকার, এবং রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর। চিকিৎসা পরিকল্পনায় শল্যচিকিৎসা (সার্জারি), রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, বা ইমিউনোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকে। চিকিৎসক রোগীর জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন, যা টিউমার সরানোর বা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত হয়।

জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ব্রেন টিউমার হলে রোগী কে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, এবং মানসিক কাউন্সিলিং রোগী কে দৈনন্দিন কাজ কর্মে সহায়তা করতে পারে।

পরিবার এবং সামাজিক সমর্থন ব্রেন টিউমার একটি জটিল রোগ, এবং রোগীকে পরিবার এবং প্রিয়জনের সাপোর্ট করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক সহায়তা, পুষ্টিকর খাদ্য, এবং আরামদায়ক পরিবেশ রোগীর মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।

স্বাস্থ্যকর জীবন ধারা অনুসরণ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম রোগীকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া, ধূমপান, মদ্যপান এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এড়ানো উচিত।

দ্বিতীয় মতামত নেওয়া ব্রেন টিউমার জটিল রোগ, তাই প্রয়োজন হলে অন্য একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে দ্বিতীয় মতামত নেওয়া যেতে পারে। এটি রোগীর জন্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সহায়তা করে।

চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন রোগী এবং তার পরিবারের জন্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কোনো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার ইচ্ছে থাকলে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করা উচিত।

তথ্যসূত্র

  1. Louis, D.N., Perry, A., Wesseling, P., Brat, D.J., Cree, I.A., Figarella-Branger, D., Hawkins, C., Ng, H.K., Pfister, S.M., Reifenberger, G. and Soffietti, R., 2021. The 2021 WHO classification of tumors of the central nervous system: a summary.Neuro-oncology23(8), pp.1231-1251. https://academic.oup.com/neuro-oncology/article-abstract/23/8/1231/6311214
  2. Bondy, M.L., Scheurer, M.E., Malmer, B., Barnholtz‐Sloan, J.S., Davis, F.G., Il’Yasova, D., Kruchko, C., McCarthy, B.J., Rajaraman, P., Schwartzbaum, J.A. and Sadetzki, S., 2008. Brain tumor epidemiology: consensus from the Brain Tumor Epidemiology Consortium.Cancer113(S7), pp.1953-1968. https://acsjournals.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/cncr.23741
  3. Little, M.P., Rajaraman, P., Curtis, R.E., Devesa, S.S., Inskip, P.D., Check, D.P. and Linet, M.S., 2012. Mobile phone use and glioma risk: comparison of epidemiological study results with incidence trends in the United States.Bmj344. https://www.bmj.com/content/344/bmj.e1147.abstract
  4. Bondy, M.L., Scheurer, M.E., Malmer, B., Barnholtz‐Sloan, J.S., Davis, F.G., Il’Yasova, D., Kruchko, C., McCarthy, B.J., Rajaraman, P., Schwartzbaum, J.A. and Sadetzki, S., 2008. Brain tumor epidemiology: consensus from the Brain Tumor Epidemiology Consortium.Cancer113(S7), pp.1953-1968. https://acsjournals.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/cncr.23741
  5. Ostrom, Q.T., Cioffi, G., Waite, K., Kruchko, C. and Barnholtz-Sloan, J.S., 2021. CBTRUS statistical report: primary brain and other central nervous system tumors diagnosed in the United States in 2014–2018.Neuro-oncology23(Supplement_3), pp.iii1-iii105. https://academic.oup.com/neuro-oncology/article-abstract/23/Supplement_3/iii1/6381476
  6. Stupp, R., Mason, W.P., Van Den Bent, M.J., Weller, M., Fisher, B., Taphoorn, M.J., Belanger, K., Brandes, A.A., Marosi, C., Bogdahn, U. and Curschmann, J., 2005. Radiotherapy plus concomitant and adjuvant temozolomide for glioblastoma.New England journal of medicine352(10), pp.987-996. https://www.nejm.org/doi/abs/10.1056/NEJMoa043330

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস নামেও পরিচিত। এটি…
পরামর্শ নিতে 01877733322