পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস নামেও পরিচিত। এটি একটি প্রদাহজনিত রোগ যে রোগে আক্রান্ত হলে সময়ের বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো জোড়া লেগে যায়। এই কশেরুকাগুলো জোড়া লেগে যাওয়ার কারণে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা কমে যায় এবং এতে করে ফলে রোগীর মেরুদন্ড ক্রমশ সামনের দিকে বেঁকে যেতে থাকে। এ রোগ হলে পাঁজরের হাড় ও শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির পুর্ণভাবে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস দুই প্রকার। এক্স-রের মাধ্যমে এই রোগটি শণাক্ত হলে একে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস বলা হয়, এটি এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থারাইটিস নামেও পরিচিত। যখন এক্স-রেতে এই রোগের লক্ষণগত কোন পরিবর্তন দেখা যায় না কিন্তু রোগীর লক্ষণ, রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে পাওয়া যায়, তখন তাকে নন-রেডিওগ্রাফিক স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস বলা হয়।

লক্ষণগুলি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক হবার শুরুর দিকেই শুরু দেখা দিতে থাকে এবং এটি কেবল মেরুদন্ডেই প্রদাহ সৃষ্টি করে না বরং শরীরের অন্যান্য অংশেও প্রদাহ হতে পারে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চোখ।

অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস পরিপূর্ণভাবে সেড়ে না গেলেও, চিকিৎসা এবং সঠিক নিয়মে চলাফেরার মাধ্যমে থাকলে রোগী অনেকটাই ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন।

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস এর লক্ষণসমূহ

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস এর লক্ষণগুলো ১৭-৪৫ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি প্রকাশ পায়। অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে ঘাড় ব্যথা, পিঠে ব্যথা এবং সকালে বা ঘুম থেকে ওঠার পর কোমড় এবং হিপ জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে ক্লান্তিভাব উল্লেখযোগ্য। যত দিন যায় কখনো কখনো লক্ষণগুলি বেড়ে যায় আবার অনেক ক্ষেত্রে ভালোর দিকেও যেতে পারে।

শরীরের যে অংশগুলো সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে:

  • ফ্যাসেট জয়েন্ট এবং পেলভিসের মধ্যেবর্তী জয়েন্ট।
  • কোমড়ের কশেরুকা।
  • পাঁজরের তরুণাস্থি।
  • হিপ জয়েন্ট এবং শোল্ডার জয়েন্ট।

এ রোগ হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

আপনার যদি পিঠে, কোমড়ে বা নিতম্বের দিকে ধীরে ধীরে ব্যথা শুরু হয় যা সকালে বেশি থাকে, ব্যথার জন্য রাতের শেষভাগে আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং বিশেষ করে যদি ব্যায়াম করলে ব্যথাটি কমে যায় এবং অতিরিক্ত বিশ্রামের ফলে খারাপের দিকে যায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে। একই ভাবে যদি আপনার চোখ লাল-লাল হয়ে থাকে, চোখে ব্যথা হয়, তীব্র আলোতে যেতে অসুবিধা হয় অথবা চখে ঝাপসা দেখেন তাহলে অবিলম্বে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করুন।

আরও পড়ুনঃ কোমড় ব্যথা কিডনি সমস্যার জন্য হচ্ছে না তো!

রোগের কারণসমূহ

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের কোনো নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ধারণা করা হয় এটি জিনগত কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে, যাদের রক্তে HLA-B27 নামক জিন আছে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে এমন অনেকেই আছেন যাদের শরীরে এই জিনটির অবস্থান থাকা সত্ত্বেও অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না।

আরও পড়ুন  কার্পাল টানেল সিনড্রোম

রোগের জটিলতা

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস এর সমস্যা বাড়ার পাশাপাশি শরীরের হিলিং প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে নতুন করে হাড় বেরে যায় যাকে ক্যালসিফিকেশন বলা হয়। নতুন হাড় ধীরে ধীরে কশেরুকার মধ্যবর্তী জয়েন্টগুলির ফাকা কমিয়ে ফেলে এবং অবশেষে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো লেগে যায়। কশেরুকাগুলি লেগে যাওয়ার ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা কমে যায় এবং মেরুদন্ড সোজা হয়ে যায়। এর ফলে যত দিন যায় রোগীর মেরুদন্ড শক্ত হয়ে জমে যায়।

অন্যান্য জটিলতাসমূহ:

চোখের প্রদাহ(ইউভাইটিস)ঃ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের জটিলতাগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ইউভাইটিস। ইউভাইটিস হলে রোগীর চোখে ব্যথা হয়, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় এবং চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। আপনার যদি এই লক্ষণগুলি দেখা দেয় তবে অবিলম্বে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

কম্প্রেশনফ্র্যাকচারঃ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক রোগীর হাড় দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল কশেরুকাগুলো ভংগুর প্রকৃতির হয়। এতে করে মেরুদন্ড শরীরের ওজন বহনে ব্যর্থ হয় এবং কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার হতে পারে। কশেরুকা ফ্র্যাকচারগুলি স্পাইনাল কর্ড এবং মেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়া নার্ভ গুলিতে চাপ দিতে পারে এবং নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার হলে রোগীর সামনের দিকে ঝুকে যাওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায়।

হৃদপিণ্ডজনিতসমস্যাঃ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস হৃৎপিন্ডের বড় ধমনী ও মহাধমনীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মহাধমনীটি এতটাই বড় হয়ে যেতে পারে যার ফলে হৃৎপিণ্ডের এওর্টিক ভালভের বিকৃতি ঘটে এবং এর কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের কারণে যেসকল প্রদাহ হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

আরও পড়ুনঃ ডিস্ক প্রল্যাপ্স কি নিজে নিজেই সেরে যায়?

রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

ফিজিক্যাল এসেসমেন্ট করার সময়, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনাকে বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট করতে বলবেন যেমন সামনে ঝোকা, পিছনের দিকে বাঁকা হওয়া, দুই পাশে বাঁকা হওয়া ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসক মেরুদণ্ডের মেরুদন্ডের রেঞ্জ অব মোশান পরীক্ষা করে থাকেন। চিকিৎসক আপনার কোমড়ে এবং পেলভিসের বিভিন্ন অংশে চাপ দিয়ে দেখবেন যে ব্যথার অবস্থান কোথায় বা ব্যথা বেড়ে যায় কিনা। চিকিৎসক আপনাকে বুকভরে শ্বাস নিতে বলতে পারেন যাতে করে আপনার বক্ষ কতটুকুন প্রসারিত হচ্ছে তা বুঝা যায় এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে বুকের মুভমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা বোঝা যায়।

ইমেজিং পরীক্ষা

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

এক্সরেঃ এক্স-রের মাধ্যমে চিকিৎসকগণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের এর কারণে হাড় এবং জয়েন্টের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারেন। যদি আক্রান্তদের এক্সরে তে পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে সেটিকে রেডিওগ্রাফিক এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস বলা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে হাড় এবং জয়েন্টে মধ্যে কোন পরিবর্তন পাওয়া যেতে নাও পারে।

এম আর আইঃ ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) হাড় এবং সফট টিস্যুগুলির অবস্থা দৃশ্যমান করতে রেডিও তরঙ্গ এবং একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে। এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে নন-রেডিওগ্রাফিক এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস শনাক্ত করা সম্ভব তবে এই পরীক্ষাটি একটু ব্যয়বহুল।

ল্যাব পরীক্ষা

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস সনাক্ত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট ল্যাব পরীক্ষা নেই। কিছু রক্ত ​​পরীক্ষা শরীরে প্রদাহের মাত্রা দেখার জন্য করা হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও প্রদাহ হতে পারে।

HLA-B27 জিনের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এই জিনের অবস্থান থাকা সত্ত্বেও অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস হয় না। আবার HLA-B27 জিন না থাকলেও অনেকেরই এই রোগ হতে পারে।

আরও পড়ুন  কোমর ব্যথার কারণ | কোমর ব্যথা প্রতিরোধে ব্যায়াম

চিকিৎসার ধরণ

চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল ব্যথা কমানো, মেরুদন্ডের জমে যাওয়া ভাব কমানো এবং জটিলতা এবং মেরুদণ্ডের বিকৃতি প্রতিরোধ করা। অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস এর চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যায় তত উত্তম। কারণে যত দিন যায় রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে।

ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

চিকিৎসকগণ সাধারণত এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থারাইটিস এবং ননরেডিওগ্রাফিক এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থারাইটিসের চিকিৎসার জন্য ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) — যেমন ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম এবং আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধগুলি ব্যবহার করে থাকেন। এই ওষুধগুলি প্রদাহ, ব্যথা এবং মেরুদন্ডের কঠোরতা উপশম করতে পারে, তবে এগুলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।

যদি ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) সহায়ক না হয়, ডাক্তার টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর (TNF) ব্লকার বা ইন্টারলেউকিন-17 (IL-17) ইনহিবিটর এর পরামর্শ দিতে পারেন। এই ওষুধগুলি ত্বকের নীচে বা শিরাপথের মাধ্যে ইনজেক্ট করা হয়। আরেকটি বিকল্প হল Janus kinase (JAK) ইনহিবিটর। janus kinase (JAK) inhibitors মুখ দিয়ে নেওয়া হয়।

টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর (TNF) ব্লকারগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • Adalimumab (Humira).
  • Certolizumab pegol (Cimzia).
  • Etanercept (Enbrel).
  • Golimumab (Simponi).
  • Infliximab (Remicade).

যেসকল ইন্টারলেউকিন-17 (IL-17) ইনহিবিটরগুলি অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে সেকুকিনুমাব (কোসেন্টাইক্স) এবং ইক্সেকিজুমাব (টল্টজ) উল্লেখযোগ্য। অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসের চিকিৎসার জন্য JAK ইনহিবিটারগুলির মধ্যে রয়েছে টোফাসিটিনিব এবং এপডাসিটিনিব।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

ফিজিওথেরাপি অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস রোগীদের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে রোগীর ব্যথা উপশম, মাংসপেশীর শক্তি বাড়ানো, মেরুদন্ডের নমনীয়তা রক্ষা রোগীকে তার দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো ব্যথামুক্তভাবে করতে সাহায্য করে থাকে। সঠিক ভঙ্গিতে চলাফেরা করা এবং যেসকল কাজে ব্যথা বাড়তে পারে সেগুলো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফিজিওথেরাপী চিকিৎসক কিছু কিছু ব্যায়াম ও শিখিয়ে দিয়ে থাকেন যেগুলো রোগী বাসায় নিজে নিজে করতে পারবেন, যেমন

  • রেঞ্জ-অফ-মোশন এক্সারসাইজ এবং স্ট্রেচিং।
  • পেট এবং কোমড়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করার ব্যায়াম।
  • নিয়মিত সাইকেল চালানো
  • সাতার কাটা
  • সঠিক ভঙ্গিতে ঘুমানো এবং সঠিকপদ্ধতিতে হাটাচলা করা ইত্যাদি।

শেখানো ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে রোগীর সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে যায় এবং রোগী ব্যথামুক্ত জীবন-যাপন করতে পারে।

অপারেশন

পিঠে ব্যথার অন্যতম কারণ অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসঃ রোগের ধরণ এবং প্রতিকার

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস বা নন-রেডিওগ্রাফিক অ্যাক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। আপনার যদি গুরুতর ব্যথা হয় বা যদি হিপ জয়েন্টগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে এটি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন তাহলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।

নিজের যত্ন

অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নেয়া্র পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করার মাধ্যমে ব্যথা এবং প্রদাহের মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যে পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে সেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

১। পুষ্টিকর খাবারঃ ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শরীরের প্রদাহ এবং ব্যথা কমিয়ে রাখতে হলে রোগীদেরকে অবশ্যই এই ধরনের খাবার পরিহার করা উচিত। এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি শরীর থেকে ব্যথার টক্সিন গুলো বের করে দেয়। একই সাথে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের মাংসপেশিগুলোর নমনীয়তা ধরে রাখে।

আরও পড়ুন  অ্যাকিউট লামবাগো

২। ওজন নিয়ন্ত্রণঃ অতিরিক্ত ওজন শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং মেরুদন্ডের উপর চাপ বাড়িয়ে। যার ফলে রোগের মাত্রা যদি কমও থাকে শুধু অতিরিক্ত ওজনের জন্য জয়েন্ট গুলিতে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। সুতরাং আমাদের অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।

৩।অ্যালকোহল পরিহারঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ পান করলে শরীরের হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডালাইটিস রোগীদের জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং শরীর ধীরে ধীরে জমে যায় সে ক্ষেত্রে যদি রোগীর হাড়গুলোও দুর্বল থাকে তাহলে অল্পতেই ফ্র্যাকচার হয়ে যেতে পারে। 

৪। ধূমপানঃ ধূমপান করলে মেরুদন্ডের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। ধূমপান আমাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসকে ব্যাহত করে। এংকাইলোজিং রোগীদের বক্ষপিঞ্জর শক্ত হয়ে যায় যার দরুণ শ্বাস নেয়ার সময় ফুসফুস পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রসারিত হতে পারে না। একই সাথে যদি রোগী ধুমপায়ী হয় তাহলে অচিরেই রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

তথ্যসূত্র

1. Hwang, M.C., Ridley, L. and Reveille, J.D., 2021. Ankylosing spondylitis risk factors: a systematic literature review. Clinical rheumatology, 40, pp.3079-3093. https://link.springer.com/article/10.1007/s10067-021-05679-7

2. Sieper, J., Braun, J., Rudwaleit, M., Boonen, A. and Zink, A., 2002. Ankylosing spondylitis: an overview. Annals of the rheumatic diseases, 61(suppl 3), pp.iii8-iii18. https://ard.bmj.com/content/61/suppl_3/iii8.short

3. Ull, C., Yilmaz, E., Hoffmann, M.F., Reinke, C., Aach, M., Schildhauer, T.A. and Kruppa, C., 2022. Factors associated with major complications and mortality during hospitalization in patients with ankylosing spondylitis undergoing surgical management for a spine fracture. Global Spine Journal, 12(7), pp.1380-1387. https://journals.sagepub.com/doi/abs/10.1177/2192568220980702

4. Zhu W, He X, Cheng K, Zhang L, Chen D, Wang X, Qiu G, Cao X, Weng X. Ankylosing spondylitis: etiology, pathogenesis, and treatments. Bone Res. 2019 Aug 5;7:22. doi: 10.1038/s41413-019-0057-8. PMID: 31666997; PMCID: PMC6804882. https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/31666997/#:~:text=,%E3%80%91%20%E3%80%9031%E2%80%A0%201%20%E3%80%91

Follow me
পরামর্শ নিতে 01877733322