জরায়ু মুখের ক্যান্সার লক্ষণ ও প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা. জরায়ু ক্যান্সার হলো এক ধরনের ক্যান্সার, যা নারীদের জরায়ু তে, বিশেষ করে এন্ডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তরে, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে।

এটি সাধারণত মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত যোনি পথে রক্তপাত, পিরিয়ডের মধ্যে বা যৌন মিলনের পর রক্তপাত, যোনি পথে অস্বাভাবিক স্রাব, তলপেটে বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা, এবং ওজন হ্রাস। বয়স, স্থূলতা, দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ মাত্রায় এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব, এবং পারিবারিক ইতিহাস এর ঝুঁকি বাড়ায়।

জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ প্রাথমিক লক্ষন

যোনি পথে অনিয়মিত রক্তপাত মেনোপজের পর যোনি পথে যে কোনো ধরনের রক্ত পাত হওয়া একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে, কারণ মেনোপজের পর সাধারণত নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া পিরিয়ডের মধ্যে অস্বাভাবিক ভাবে বেশি রক্তপাত হওয়া বা যৌন মিলনের পর রক্তপাত ও জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

এমন রক্তপাত আগে দেখা না গেলে এবং হঠাৎ শুরু হলে এটি আরও বেশি উদ্বেগ জনক হতে পারে। এই ধরনের যেকোনো পরিবর্তনই জরায়ুর অভ্যন্তরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে, যা ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপের ইঙ্গিত দেয়। যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

পিরিয়ডের মধ্যে বা যৌন মিলনের পর রক্তপাত পিরিয়ডের সময় যে ধরনের রক্তপাত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি বা দীর্ঘ স্থায়ী রক্তপাত হওয়া অস্বাভাবিক হতে পারে এবং এটি জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তাছাড়া, যৌন মিলনের পর রক্তপাত হওয়াও একটি উদ্বেগ জনক লক্ষণ, যা জরায়ুর অভ্যন্তরে কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।

জরায়ু ক্যান্সার লক্ষণ গুলো কি কি

যোনিপথে অস্বাভাবিক স্রাব নারীদের যোনি পথে স্রাব একটি স্বাভাবিক শারীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও, এর রং, গন্ধ বা পরিমাণে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন জরায়ুর অভ্যন্তরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে সাদা, পাতলা, বা রক্ত মিশ্রিত স্রাব হলে এটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। এমন স্রাব হঠাৎ শুরু হলে এবং দীর্ঘস্থায়ী ভাবে চলতে থাকলে তা অবহেলা করা উচিত নয়।

তলপেটে বা পেলভিসে ব্যথা জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে তলপেটে বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা একটি গুরুত্ব পূর্ণ সতর্ক সংকেত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত মৃদু এবং ক্রমাগত হতে পারে, এবং তা তলপেটের নীচের দিকে বা পেলভিক অঞ্চলে অনুভূত হয়। ব্যথা টি কখনও কখনও তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। জরায়ুর কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টিউমার তৈরি হলে এই ধরনের ব্যথা হতে পারে, যা ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়

ওজন হ্রাস বা দুর্বলতা অস্বাভাবিক ভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, বিশেষ করে যখন তার জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, তা শরীরে ক্যান্সার বা অন্য কোনো গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে। জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, টিউমার বা ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ওজন কমাতে পারে। একই সঙ্গে, ক্যান্সারের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা সাধারণ দুর্বলতা এবং ক্লান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।

যোনি তে চাপ বা ভারী অনুভূতি এই লক্ষণ টি জরায়ুর অভ্যন্তরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টিউমার তৈরি হওয়ার ফলে হতে পারে, যা যোনি পথে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে। অনেক নারী এটি এড়িয়ে যান বা অন্যান্য সমস্যার কারণে মনে করেন, কিন্তু এটি জরায়ু ক্যান্সারের একটি গুরুত্ব পূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।

মূত্র ত্যাগে অসুবিধা ক্যান্সারের কারণে জরায়ুর আশে পাশের টিস্যু বা পেশীর উপর চাপ সৃষ্টি হলে মূত্রথলির স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধা গ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে মূত্র ত্যাগের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি, প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা পোড়া অনুভূতি, কিংবা বার বার মূত্রত্যাগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা সম্পূর্ণ ভাবে মূত্রত্যাগ করতে না পারা, এমন কি প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যেতে পারে।

পিঠ বা পায়ে ব্যথা জরায়ু তে টিউমার বা ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে তা আশে পাশের টিস্যু বা নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে পিঠের নিচের দিকে বা কোমরের আশে পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও, ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন লসিকা গ্রন্থি বা হাড়ে, তাহলে পায়ে ব্যথা বা ঝিন ঝিন অনুভূতি হতে পারে।

এই ধরনের ব্যথা প্রায়শই তীব্র, অনবরত হয় এবং ওষুধের দ্বারা সহজে উপশম হয় না। যদি এই ধরনের পিঠ বা পায়ের ব্যথা হঠাৎ শুরু হয় এবং কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘ স্থায়ী হয়, তবে এটি জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিকার

জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিকার নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ, অবস্থান, পর্যায়, এবং রোগীর স্বাস্থ্য গত অবস্থা ও বয়সের উপর। সাধারণত, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত হলে চিকিৎসার কার্যকারিতা অনেক বেশি হয়। জরায়ু ক্যান্সারের কিছু প্রধান প্রতিকার পদ্ধতি হলো

সার্জারি (অস্ত্রোপচার) সার্জারির মাধ্যমে জরায়ু তে থাকা ক্যান্সার কোষ এবং প্রয়োজনে আশেপাশের টিস্যু অপসারণ করা হয়। সবচেয়ে প্রচলিত সার্জারি হলো হিস্টেরেকটমি, যেখানে জরায়ু এবং কখনও কখনও সার্ভিক্স, ডিম্বাশয়, ও ফ্যালোপিয়ান টিউবও অপসারণ করা হয়।

যদি ক্যান্সার জরায়ুর বাইরে ছড়ানোর ঝুঁকিতে থাকে, তবে লিম্ফ নোড ডিসেকশন বা আশে পাশের লসিকা গ্রন্থি অপসারণ করা হতে পারে। কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ডিবালকিং সার্জারি করা হয়, যেখানে টিউমারের বড় অংশ অপসারণ করা হয় যাতে পরবর্তী চিকিৎসা আরও কার্যকর হয়।

রেডিয়েশন থেরাপি জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি একটি গুরুত্ব পূর্ণ পদ্ধতি, যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করে। রেডিয়েশন থেরাপি সাধারণত তখন ব্যবহৃত হয় যখন ক্যান্সার জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, অথবা সার্জারির আগে টিউমার কে ছোট করার জন্য, কিংবা সার্জারির পরে বাকি থাকা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য।

এটি দুই ধরনের হতে পারে – বাহ্যিক রেডিয়েশন থেরাপি, যেখানে শরীরের বাইরে থেকে রশ্মি প্রয়োগ করা হয়, এবং অভ্যন্তরীণ রেডিয়েশন থেরাপি বা ব্র্যাকি থেরাপি, যেখানে সরাসরি জরায়ুর কাছে একটি রেডিয়েশন উৎস স্থাপন করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপি কার্যকর ভাবে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে, তবে এটি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যেমন ত্বকের জ্বালা পোড়া, ক্লান্তি, মূত্রাশয় বা অন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করা যেতে পারে।

কেমোথেরাপি কেমোথেরাপি সাধারণত তখন ব্যবহৃত হয় যখন ক্যান্সার জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে বা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এটি শরীরের যে কোনো অংশে পৌঁছে ক্যান্সার কোষগুলি কে ধ্বংস করতে সক্ষম, তাই এটি প্রায়শই সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর প্রয়োগ করা হয়, অথবা তাদের সাথে মিলিত ভাবে ব্যবহার করা হয়।

কেমোথেরাপির ওষুধ গুলো সাধারণত শিরায় ইনজেকশন বা মুখে খাওয়ার মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং একাধিক চক্রে প্রয়োগ করা হয়। যদিও কেমোথেরাপি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর, এটির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যেমন বমি, ক্লান্তি, চুল পড়া, এবং রক্তের কোষের সংখ্যা হ্রাস ঘটাতে পারে।

হরমোন থেরাপি এই থেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরের হরমোনের মাত্রা কমানো বা ক্যান্সার কোষ গুলোর হরমোন গ্রহণের ক্ষমতা কে ব্যাহত করা, যাতে তাদের বৃদ্ধি ও বিস্তার বন্ধ হয়। সাধারণত প্রগেস্টিন, ট্যামোক্সিফেন বা অ্যারোমাটেজ ইনহিবিটার্সের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা জরায়ু ক্যান্সারের অগ্রগতি কে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।

হরমোন থেরাপি প্রায়শই তখন ব্যবহৃত হয় যখন ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে বা পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে। যদিও এই থেরাপি তুলনামূলক ভাবে কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যুক্ত, তবে কিছু ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের পরিবর্তন, অথবা মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে।

ইমিউনোথেরাপি: ইমিউনোথেরাপি ক্যান্সার কোষের পৃষ্ঠে থাকা প্রোটিন গুলো কে লক্ষ্য করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেম কে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে উৎসাহিত করে। এই থেরাপি সাধারণত এডভান্স লেভেলের জরায়ু ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো যেমন সার্জারি, রেডিয়েশন, বা কেমোথেরাপি পর্যাপ্ত নয়।

ইমিউনোথেরাপির ওষুধ, যেমন PD-1 বা PD-L1 ইনহিবিটর, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ করে। ইমিউনোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে কম হলেও, কিছু ক্ষেত্রে ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, বা ইমিউন-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই থেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক।

জরায়ু ক্যান্সার হলে করণীয়

জরায়ু ক্যান্সার হলে রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যদের কিছু গুরুত্ব পূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় রোগী কে মানসিক ভাবে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে। জরায়ু ক্যান্সার হলে করণীয় পদক্ষেপ গুলো হলো

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত হলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক রোগীর ক্যান্সারের ধরণ, অবস্থান, এবং পর্যায় অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা চিকিৎসক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যেমন আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই, সিটি স্ক্যান বা বায়োপসি করার নির্দেশ দিতে পারেন, যা ক্যান্সারের পরিমাণ, অবস্থান, এবং ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা নির্ধারণে সহায়ক।

চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা চিকিৎসক যে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন, যেমন সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, বা ইমিউনোথেরাপি, তা সঠিক ভাবে অনুসরণ করা জরুরি। এই চিকিৎসা গুলো নিয়মিত ভাবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।

সুস্থ জীবনযাপন করা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা গুরুত্ব পূর্ণ। এ ধরনের পদক্ষেপ রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

মানসিক ভাবে সহায়তা পাওয়া ক্যান্সার রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার ওপর গুরুত্ব পূর্ণ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং বিষণ্নতা কমাতে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে (1)। এছাড়া, কাউন্সেলিং, সাপোর্ট গ্রুপে যোগদান, বা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া রোগী কে মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করতে পারে এবং মানসিক চাপ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে (2)।

নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করা জরায়ু ক্যান্সার হলে নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি ক্যান্সারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসার কার্যকারিতা মূল্যায়ন, এবং যেকোনো পুনরাবৃত্তি বা জটিলতা দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়ক।

চিকিৎসার সময় এবং পরবর্তী পর্যায়ে নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার, পেলভিক পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড, বা এমআরআইয়ের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক ক্যান্সারের বর্তমান অবস্থা এবং সম্ভাব্য পুনরায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারেন।

শরীরচর্চা করা নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ রোগীর শরীরের শক্তি বাড়াতে, ক্লান্তি কমাতে, এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক হতে পারে। ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, যেমন ক্লান্তি, মানসিক চাপ, এবং বিষণ্নতা কমাতে সহায়ক। হাঁটা, যোগ ব্যায়াম, বা হালকা স্ট্রেচিংয়ের মতো শরীরচর্চার পদ্ধতি গুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে, যাতে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। শরীর চর্চা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পেশীর শক্তি ও স্থিতি স্থাপকতা বাড়ায়, যা দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে। (3)

সচেতন থাকা প্রথমত, নিজের শরীরের পরিবর্তন গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি, যেমন যোনি পথে অস্বাভাবিক রক্তপাত, যোনি পথে স্রাব, তলপেটে ব্যথা, অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, যেমন প্যাপ স্মিয়ার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা উচিত, যা ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ আগে থেকেই শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

জরায়ু ক্যান্সার কি ভাল হয়

জরায়ু ক্যান্সার সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রূপে নিরাময়ও সম্ভব। ক্যান্সারের ধরণ, অবস্থান, এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, যা সাধারণত সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, এবং প্রয়োজনে হরমোন থেরাপির সমন্বয়ে গঠিত। জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে, যেখানে ক্যান্সার কোষ গুলো শুধুমাত্র জরায়ুতে সীমাবদ্ধ থাকে, সার্জারি প্রায়ই সফল ভাবে ক্যান্সার কোষ অপসারণ করতে পারে, এবং রোগী সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হতে পারেন।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকৃত জরায়ু ক্যান্সারের জন্য ৫ বছর সুস্থ থাকার হার প্রায় ৯৫% পর্যন্ত হতে পারে (4)। তবে, ক্যান্সার যদি দেরিতে সনাক্ত হয় বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে চিকিৎসা আরও জটিল হতে পারে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। তাই, জরায়ু ক্যান্সার ভাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রাথমিক সনাক্ত করণ, সঠিক এবং সময় মতো চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে।

তথ্যসূত্র

  1. Stanton, A.L., 2006. Psychosocial concerns and interventions for cancer survivors. Journal of clinical oncology, 24(32), pp.5132-5137. https://ascopubs.org/doi/abs/10.1200/jco.2006.06.8775
  2. Zabora, J., BrintzenhofeSzoc, K., Curbow, B., Hooker, C. and Piantadosi, S., 2001. The prevalence of psychological distress by cancer site. Psycho‐oncology: journal of the psychological, social and behavioral dimensions of Cancer, 10(1), pp.19-28. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/1099-1611(200101/02)10:1%3C19::AID-PON501%3E3.0.CO;2-6
  3. Friedenreich, C.M., Shaw, E., Neilson, H.K. and Brenner, D.R., 2017. Epidemiology and biology of physical activity and cancer recurrence. Journal of Molecular Medicine, 95, pp.1029-1041. https://link.springer.com/article/10.1007/s00109-017-1558-9
  4. Berek, J.S., Matias‐Guiu, X., Creutzberg, C., Fotopoulou, C., Gaffney, D., Kehoe, S., Lindemann, K., Mutch, D., Concin, N., Endometrial Cancer Staging Subcommittee, FIGO Women’s Cancer Committee and Berek, J.S., 2023. FIGO staging of endometrial cancer: 2023. International Journal of Gynecology & Obstetrics, 162(2), pp.383-394. https://obgyn.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/ijgo.14923
Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322