কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ডেজেনারেটিভ বা ক্ষয়জনিত পরিবর্তন। এটি মূলত মেরুদণ্ডের কশেরুকার মধ্যে থাকা ডিস্ক এবং অস্থিসন্ধির গাঠনিক পরিবর্তনের ফলে ঘটে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই পরিবর্তনগুলি হয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু কখনও কখনও এগুলি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুতগতিতে ঘটে এবং ব্যথা ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।

বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে তরুণদের মধ্যেও এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আধুনিক জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তিগত নির্ভরতার কারণে হতে পারে। ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৮৫% লোকের মধ্যে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কোনো না কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়। প্রায় ২৫% লোকের মধ্যে ৪০ বছর বয়সের পর এই লক্ষণগুলি দেখা দেয়। কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণ ও তার প্রতিকার

Table of Contents hide

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণ

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস সাধারণত বয়সের সাথে সাথে ঘাড়ের মেরুদণ্ডে ডিজেনারেটিভ পরিবর্তনের ফলে ঘটে। এটি মূলত একটি অস্টিওআর্থ্রাইটিক রোগ, যা মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, এবং জয়েন্টের ক্ষয়ের কারণে ঘটে। নিচে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের প্রধান কারণগুলি বর্ণনা করা হলো:

  • বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদণ্ডের ডিস্ক এবং অস্থির মধ্যে থাকা জলীয় পদার্থ শুকিয়ে যেতে পারে, যার ফলে ডিস্ক সংকুচিত হয় এবং স্থিতিস্থাপকতা হারায়। অস্থির মধ্যকার ঘর্ষণ বৃদ্ধির ফলে হাড় ক্ষয় হয় এবং অস্টিওফাইট (Bone Spurs) তৈরি হতে পারে।
  • ডিস্ক ডিগ্রেডেশনঃ ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কগুলি সময়ের সাথে সাথে তাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং জলীয় পদার্থ হারায়, যা ডিস্কের উচ্চতা কমিয়ে দেয় এবং কশেরুকাগুলির মধ্যে ঘর্ষণ বৃদ্ধি পায়। ডিস্কে ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়, যা ডিস্কের বাইরের অংশ দুর্বল করে এবং হাড়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
  • অস্টিওফাইট (Bone Spurs): অস্থির চারপাশে অতিরিক্ত হাড় বৃদ্ধি (অস্টিওফাইট) ঘটে, যা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যথা ও স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমনঃ ঝিনঝিন, ভাড়ভাড়, অবশ-অবশ ভাব।
  • আঘাত বা ইনজুরিঃ পূর্বের কোন আঘাত বা ইনজুরির ফলে মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা কমে যেতে পারে এবং সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
  • জিনগত প্রভাবঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের ঝুঁকি পরিবারে সাধারণভাবে বেশি হতে পারে, যা জিনগত প্রভাবের কারণে হতে পারে।
  • পেশাগত কারণে একটানা বসে কাজ করাঃ যারা দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে বা মাথা নিচু করে কুজও হয়ে বসে কাজ করেন, তাদের মধ্যে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির কারণে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হতে পারে।
  • পেশী এবং লিগামেন্টের দুর্বলতাঃ ঘাড়ের পেশী এবং লিগামেন্ট দুর্বল হয়ে গেলে মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতা কমে যায়, যা সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণ হতে পারে।
  • ন্যান্য রোগ বা অবস্থার কারণেঃ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis) বা অন্যান্য আর্থ্রাইটিসজনিত রোগ সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণ হতে পারে।

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের লক্ষণগুলো কি?

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস বিভিন্ন লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যেগুলো প্রধানত ঘাড়ের অংশে এবং কখনও কখনও কাঁধ, বাহু, এবং হাতে অনুভূত হয়। নিচে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের প্রধান লক্ষণগুলি বর্ণনা করা হলো:

  • ঘাড়ে ব্যথাঃ সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো ঘাড়ে ক্রমাগত বা মাঝে মাঝে ব্যথা। ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং সাধারণত মুভমেন্টের সাথে বাড়তে পারে।
  • কাঁধ ও বাহুতে ব্যথাঃ ব্যথা ঘাড় থেকে কাঁধ এবং বাহুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কখনও কখনও ব্যথা আঙ্গুল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
  • ঘাড়ে শক্তিঃ ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং নড়াচড়া করতে কষ্ট হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘ সময় একই অবস্থায় বসে থাকার পর ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে।
  • ঝিঁঝিঁ ভাব ও অসাড়তাঃ হাতে এবং আঙ্গুলে ঝিঁঝিঁ ভাব বা অসাড়তা অনুভূত হতে পারে। এটি স্নায়ুর চাপ লাগার কারণে হতে পারে, যা ঘাড়ের ডিস্কের ডিগ্রেডেশন বা অস্টিওফাইট (bone spurs) এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
  • মাথা ঘোরা ও ভারসাম্য হারানোঃ কিছু লোক সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর মত সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
  • মাথাব্যথাঃ ঘাড়ের ব্যথা মাথায় প্রসারিত হতে পারে এবং মাথাব্যথা হতে পারে।
  • পেশী দুর্বলতাঃ ঘাড়, কাঁধ এবং বাহুর পেশীতে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হাতের পেশী দুর্বল হতে পারে এবং পেশীর নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে।
  • গলায় ব্যথাঃ কখনও কখনও সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে গলায় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  • মুভমেন্টের সীমাবদ্ধতাঃ ঘাড়ের মুভমেন্ট কমে যেতে পারে এবং ঘাড় ঘোরাতে বা নাড়াতে কষ্ট হতে পারে।

 

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কতদিন স্থায়ী হয়?

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। এই রোগটির তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে লক্ষণগুলো আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগীর জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কতদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে:

  • রোগীর বয়স
  • অবস্থা কতটা গুরুতর
  • চিকিৎসার প্রকার এবং কার্যকারিতা
  • রোগীর জীবনধারা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর।

বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যথা এবং অস্বস্তি নিয়ন্ত্রণ হয় এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের ফলে কি রেডিকুলোপ্যাথি হতে পারে?

হ্যাঁ, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে রেডিকুলোপ্যাথি (Radiculopathy) হতে পারে। রেডিকুলোপ্যাথি হলে স্পাইনাল স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা ঘাড়, কাঁধ, বাহু এবং হাতের মধ্যে ব্যথা, অসাড়তা, এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলির মাধ্যমে ঘটে:

  1. ডিস্ক হার্নিয়েশনঃ সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে এবং ডিস্কের জেলি জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে এসে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. অস্টিওফাইট (Bone Spurs): অস্টিওফাইট বা অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি স্নায়ুর পথ সংকুচিত করতে পারে এবং স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. স্পাইনাল স্টেনোসিসঃ সার্ভাইক্যাল স্পাইনাল স্টেনোসিস, যেখানে স্পাইনাল ক্যানাল সংকুচিত হয়, স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে রেডিকুলোপ্যাথি সৃষ্টি করতে পারে।

রেডিকুলোপ্যাথির লক্ষণ:

  • ঘাড়ের ব্যথা যা কাঁধ এবং বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে।
  • হাতে ঝিঁঝিঁ ভাব এবং অসাড়তা।
  • পেশী দুর্বলতা।
  • স্নায়ুর মুভমেন্টের সীমাবদ্ধতা।

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস রোগ নির্ণয় একটি বিস্তৃত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা হয়। নির্ণয় প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস (Medical History)

উপসর্গের বিবরণঃ চিকিৎসক রোগীর উপসর্গ, ব্যথার ধরন, সময়কাল, এবং ব্যথার তীব্রতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাসঃ রোগীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চিকিৎসার ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন আগে কোনো আঘাত, সার্জারি, বা অন্যান্য রোগ হয়েছে কি না।

শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination)

ঘাড়ের মুভমেন্ট পরীক্ষাঃ চিকিৎসক রোগীর ঘাড়ের মুভমেন্ট রেঞ্জ পরীক্ষা করেন, যেমন মাথা ঘোরানো, সামনের দিকে ঝুঁকানো, এবং পিছনের দিকে নেয়া, উভয় পাশে কাত করা।

স্নায়ুর কার্যকারিতা পরীক্ষাঃ স্নায়ুর কার্যকারিতা এবং রিফ্লেক্স পরীক্ষা করা হয়, যা স্নায়ুতে কোন চাপ সৃষ্টি হয়েছে কি না তা নির্ণয় করতে সহায়ক।

পেশী শক্তি ও অনুভূতি পরীক্ষাঃ কাঁধ, বাহু এবং হাতের পেশী শক্তি এবং অনুভূতি পরীক্ষা করা হয়।

ইমেজিং টেস্ট (Imaging Tests)

এক্স-রে (X-ray): হাড়ের গঠন, অস্টিওফাইট (হাড়ের বৃদ্ধি), এবং ডিস্ক স্পেসের ক্ষয় পরীক্ষা করা হয়।

এমআরআই (MRI): স্নায়ু এবং সফট টিশুগুলির অবস্থা যাচাই করতে এমআরআই স্ক্যান করা হয়। এটি ডিস্ক ডিজেনারেশন বা নার্ভ কম্প্রেশন দেখতে সাহায্য করে।

সিটি স্ক্যান (CT Scan): কখনো কখনো বিস্তারিত বোন ইমেজ পেতে সিটি স্ক্যান করা হয়।

স্নায়ুর পরীক্ষা (Nerve Tests)

ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি (EMG): মাংসপেশির স্বাস্থ্য এবং নার্ভের ফাংশন যাচাই করতে EMG পরীক্ষা করা হতে পারে।

নার্ভ কনডাকশন স্টাডি (Nerve Conduction Study): নার্ভ সিগনালের গতি এবং শক্তি পরিমাপ করতে এই পরীক্ষা করা হয়।

C5 C6 সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের চিকিৎসা

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের চিকিৎসা, বিশেষ করে C5-C6 ভার্টিব্রা যখন প্রভাবিত হয়, তার উপর নির্ভর করে রোগীর লক্ষণ ও সেই অবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী। নিম্নে এই স্পেসিফিক অংশের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:

ওষুধপত্র

পেইন রিলিভারস (Pain relievers): নন-স্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্লামাটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রক্সেন ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে পারে।

মাসল রিল্যাক্সান্টস: পেশীর টান ও ব্যথা হ্রাস করতে পারে।

নার্ভ পেইন মেডিকেশন: যেমন গ্যাবাপেন্টিন বা প্রেগাবালিন নার্ভ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।

ফিজিক্যাল থেরাপি

এক্সারসাইজ ও স্ট্রেচিং: নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ যা ঘাড় এবং উপরের পিঠের মাংসপেশীগুলি শক্তিশালী ও নমনীয় করে তোলে।

ম্যানুয়াল থেরাপি: পেশী ও জয়েন্টগুলির উপর ম্যানুয়াল ম্যানিপুলেশন এবং মোবিলাইজেশন গতিশীলতা বাড়াতে এবং ব্যথা হ্রাস করতে পারে।

ইমেজ গাইডেড ইনজেকশন

কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন: স্নায়ুর চাপ এবং প্রদাহ হ্রাস করার জন্য প্রদাহজনক এলাকায় সরাসরি কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে।

সার্জারি

এন্টেরিয়র সার্ভাইক্যাল ডিস্কেক্টমি এবং ফিউশন (ACDF): যদি স্টেনোসিস বা ডিস্ক হারনিয়েশনের মতো গুরুতর পরিস্থিতি থাকে, তবে এই সার্জারি করা হয়, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ডিস্ক সরানো হয় এবং ভার্টিব্রাগুলি একসাথে ফিউজ করা হয়।

লাইফস্টাইল মডিফিকেশন

পোশ্চার করেকশন: সঠিক আসন এবং পোশ্চার অবলম্বন করা।

এর্গোনমিক পরিবর্তনঃ কাজের স্থানে এর্গোনমিক পরিবর্তন ঘটানো যেমন কম্পিউটার মনিটরের উচ্চতা সঠিক করা, উপযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করা ইত্যাদি।

হোম থেরাপি

গরম এবং ঠান্ডা প্যাক: ব্যথার স্থানে গরম বা ঠান্ডা প্যাক প্রয়োগ করা ব্যথা হ্রাস করতে পারে। কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণ ও তার প্রতিকার

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস সাধারণত একটি প্রগতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ হওয়ায় এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়মিত চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্য হলো ব্যথা হ্রাস করা, স্নায়বিক চাপ ও প্রদাহ কমানো, এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা ও মোবিলিটি বজায় রাখা।

অতএব, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষণগুলি উন্নত করা যায় এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা সম্ভব হলেও এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। এটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করা উচিত।

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের জন্য কোন ব্যায়াম ভালো?

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের জন্য নির্দিষ্ট কিছু এক্সারসাইজ ঘাড়ের মাংসপেশি শক্তিশালী করা, নমনীয়তা বৃদ্ধি করা এবং ব্যথা হ্রাস করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত হয়। নিম্নে কিছু কার্যকর এক্সারসাইজের বর্ণনা দেওয়া হলো:

নেক টিল্ট (Neck Tilts)

  • সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান।
  • মাথাকে ধীরে ধীরে এক কাঁধের দিকে নামিয়ে অনুভূতির সীমানা পর্যন্ত নামান।
  • ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর অপর দিকে করুন।
  • প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

নেক স্ট্রেচ (Neck Stretch)

  • চোখের স্তর সোজা রাখুন এবং মাথাকে ধীরে ধীরে একদিকে ঘুরান।
  • প্রতিটি দিকে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
  • প্রতি দিকে ৫ থেকে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

শোল্ডার রোলস (Shoulder Rolls)

দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায়, কাঁধগুলোকে উপরে, পিছনে এবং নিচে নিয়ে গোলাকার চলন করুন।

প্রতি সেশনে ১০ বার করে ২-৩ সেট করুন।

নেক এক্সটেনশন (Neck Extension)

চেয়ারে বসুন এবং ঘাড়কে ধীরে ধীরে পেছনে নিয়ে যান, মাথাকে পেছন দিকে ধাক্কা দিয়ে।

৫ থেকে ১০ সেকেন্ড এই অবস্থানে থাকুন, তারপর সামনে ফিরে আসুন।

প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

চিন টাক (Chin Tuck)

সোজা হয়ে বসুন অথবা দাঁড়ান।

চিবুককে ধীরে ধীরে পিছনের দিকে টেনে আনুন, গলার পেছনে একটি টান অনুভব করুন।

৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন।

চেস্ট ওপেনার (Chest Opener)

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান।

দুই হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে আঙ্গুলগুলো একত্রিত করুন।

কাঁধ ও বুক সামনে টানুন।

১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

প্রতিদিন ৫-১০ বার করুন।

এই ব্যায়ামগুলি সঠিকভাবে ও নিয়মিত করলে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের লক্ষণগুলি হ্রাস পাবে এবং ঘাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতি হবে। তবে, কোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন চিকিৎসক অথবা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণ ও তার প্রতিকার

 

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হলে কিভাবে বসতে হয়?

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হলে সঠিকভাবে বসার কিছু নিয়মাবলী আছে যা আপনাকে আরাম প্রদান করবে এবং সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। সঠিকভাবে বসার জন্য নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

চেয়ারের উচ্চতা ঠিক করাঃ আপনার চেয়ার এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে আপনার পা মাটিতে সমানভাবে থাকে এবং হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকে।

কোমড়ে সাপোর্ট ব্যবহার করাঃ চেয়ারের পিছনে একটি লাম্বার সাপোর্ট বা একটি ছোট কুশন ব্যবহার করুন যা আপনার মেরুদন্ডের প্রাকৃতিক যে বাঁক থাকে সেটি ধরে রাখে।

মেরুদণ্ড সোজা রাখাঃ বসার সময় আপনার মেরুদণ্ড সোজা এবং মাথা সামনের দিকে সোজা রাখুন। মাথা সামনের দিকে ঝুকিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকুন।

কম্পিউটার মনিটরের উচ্চতা ঠিক করাঃ আপনার কম্পিউটার মনিটর এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে আপনি সোজা হয়ে মনিটর দেখতে পারেন এবং মনিটর চোখের লেভেলে থাকে। মনিটর খুব বেশি নিচু বা উপরে না রাখুন।

বিরতি নেয়াঃ দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার সময় প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পরপর বিরতি নিন। ছোটো ছোটো বিরতিতে উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটুন এবং কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন।

এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে সঠিকভাবে বসার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে, একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে আপনার বসার পদ্ধতি উন্নত করুন।

তথ্যসূত্র

  1. Binder, A.I., 2007. Cervical spondylosis and neck pain. Bmj, 334(7592), pp.527-531. https://www.bmj.com/content/334/7592/527.short
  2. Hoy, D., Protani, M., De, R. and Buchbinder, R.J.B.P., 2010. The epidemiology of neck pain. Best practice & research Clinical rheumatology, 24(6), pp.783-792. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1521694211000246
  3. Hurwitz, E.L., Carragee, E.J., van der Velde, G., Carroll, L.J., Nordin, M., Guzman, J., Peloso, P.M., Holm, L.W., Côté, P., Hogg-Johnson, S. and Cassidy, J.D., 2009. Treatment of neck pain: noninvasive interventions: results of the Bone and Joint Decade 2000–2010 Task Force on Neck Pain and Its Associated Disorders. Journal of manipulative and physiological therapeutics, 32(2), pp.S141-S175. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0161475408003448
  4. Lawrence, J.S., Bremner, J.M. and Bier, F., 1966. Osteo-arthrosis. Prevalence in the population and relationship between symptoms and x-ray changes. Annals of the rheumatic diseases, 25(1), p.1. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2453365/
  5. Matz, P.G., Anderson, P.A., Holly, L.T., Groff, M.W., Heary, R.F., Kaiser, M.G., Mummaneni, P.V., Ryken, T.C., Choudhri, T.F., Vresilovic, E.J. and Resnick, D.K., 2009. The natural history of cervical spondylotic myelopathy. Journal of Neurosurgery: Spine, 11(2), pp.104-111. https://thejns.org/spine/view/journals/j-neurosurg-spine/11/2/article-p104.xml
  6. Sharan, D., Parijat, P., Sasidharan, A.P., Ranganathan, R., Mohandoss, M. and Jose, J., 2011. Workstyle risk factors for work related musculoskeletal symptoms among computer professionals in India. Journal of occupational rehabilitation, 21, pp.520-525. https://link.springer.com/article/10.1007/s10926-011-9294-4
Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322