সাইনাসের মাথা ব্যাথা. সাইনুসাইটিস হেডেক হল সাইনাসে প্রদাহ বা সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট এক ধরণের মাথাব্যথা, যা সাধারণত নাক ও মুখের আশেপাশে থাকা সাইনাস বা বায়ু কুঠুরীগুলিতে মিউকাস জমার কারণে হয়। এই প্রদাহ সাইনাসে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে মাথার সামনের অংশ, চোখের চারপাশ, গালের উপরের অংশ এবং কপালে ব্যথা হয়। সাইনুসাইটিস হেডেকের সাথে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, সর্দি, গলায় খুসখুসে ভাব এবং কাশি হতে পারে। মুখ নিচের দিকে ঝোঁকালে বা মাথা সামনের দিকে নোয়ালে ব্যথা বেড়ে যায়।
সাইনোসাইটিস কি কারনে হয়
সাইনাসের মাথা ব্যাথা / সাইনোসাইটিস সাধারণত সাইনাস বা বায়ুকুঠুরীগুলিতে প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে হয়, যা বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। নিচে সাইনোসাইটিসের কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
ভাইরাল সংক্রমণ: ভাইরাসের আক্রমণে সাইনাসের ভেতরের ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত মিউকাস সাইনাস কুঠুরীগুলোতে জমে থাকে এবং সাইনাসের নালীপথগুলি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে সাইনাসে চাপ অনুভূত হয় এবং মাথাব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে থাকা, এবং মুখের চারপাশে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: সাধারণ ঠান্ডা বা ভাইরাল সংক্রমণের ফলে সাইনাসে মিউকাস জমা হলে এবং তা সঠিকভাবে নিঃসৃত না হলে, সাইনাসের অভ্যন্তরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি সাইনাসের ঝিল্লিতে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে সাইনাসে তীব্র ব্যথা, নাক দিয়ে ঘন পুঁজের মতো স্রাব, মুখে চাপ অনুভব করা, এবং জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এলার্জি: ধূলিকণা, পোলেন, পশুর লোম, ছত্রাক বা অন্যান্য এলার্জেনের সংস্পর্শে এলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অতিরিক্ত হিস্টামিন নিঃসরণ করে, যা নাসারন্ধ্রের ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে এবং ফুলে যেতে বাধ্য করে। এর ফলে সাইনাসের মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং সাইনাসের ভেতরে মিউকাস জমে গিয়ে সাইনোসাইটিসের উপসর্গ দেখা দেয়।
সাইনাসের মাথা ব্যাথা
নাসারন্ধ্রের বাঁধা: নাসারন্ধ্রের এই ব্লক বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন নাকের পলিপস (নাকের ভেতরের মাংস বৃদ্ধি), ডেভিয়েটেড সেপটাম (নাকের ভেতরের বিভাজক হাড়ের বক্রতা), বা কোনো আঘাতজনিত কারণে নাকের হাড়ের গঠনগত পরিবর্তন। এই বাধাগ্রস্ততার ফলে সাইনাসের স্বাভাবিক মিউকাস নিঃসরণ ব্যাহত হয় এবং মিউকাস সাইনাসের ভেতরে জমতে থাকে, যা সাইনাসে চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
অতিরিক্ত ধূমপান: ধূমপানের সময় তামাকের ধোঁয়া ও এর রাসায়নিক পদার্থগুলো নাসারন্ধ্রের ভেতরের সংবেদনশীল ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে এবং এটি ফুলে ওঠে। এর ফলে সাইনাসের মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং নালীপথগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যা মিউকাসের সঠিক নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে। সাইনোসাইটিক হেডেক
ফাঙ্গাল সংক্রমণ: ফাঙ্গাস সাধারণত বায়ুর মাধ্যমে আমাদের নাকের ভেতরে প্রবেশ করে, তবে সুস্থ ব্যক্তির শরীর তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, যেমন- ডায়াবেটিস, এইচআইভি/এইডস, ক্যান্সার চিকিৎসাধীন, বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন, তখন ফাঙ্গাস নাসারন্ধ্রের ঝিল্লিতে সংক্রমণ করতে পারে এবং সাইনাসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
সাঁতার বা ডাইভিং: সাঁতার বা ডাইভিং করার সময় যদি নাক দিয়ে পানি প্রবেশ করে, তাহলে তা সাইনাসের নালীপথে চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্লোরিনযুক্ত সুইমিং পুলের পানি সাইনাসের সংবেদনশীল ঝিল্লিকে উত্তেজিত করতে পারে, যা সাইনাসের ভেতরের প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং মিউকাস নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সাইনাসে পানি আটকে গেলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা: সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো জিনগত সমস্যায় সাইনাসে মিউকাস ঘন হয়ে জমা হয় এবং নালীপথ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সাইনোসাইটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া, এইচআইভি/এইডস বা অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এমন রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা অটোইমিউন ডিজিজের কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, যা সাইনাসের সংক্রমণ এবং প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়। রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এবং ক্রনিক গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাও সাইনাসে মিউকাস নিঃসরণ বাড়িয়ে সাইনোসাইটিসের কারণ হতে পারে।
সাইনুসাইটিস জনিত মাথাব্যথা
সাইনাসের মাথা ব্যাথা / সাইনুসাইটিসজনিত মাথাব্যথা হলো সাইনাসের প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট এক ধরনের মাথাব্যথা, যা সাধারণত সাইনাসের বায়ু কুঠুরীগুলিতে মিউকাস জমা এবং চাপ বৃদ্ধির ফলে হয়। সাইনুসাইটিসে আক্রান্ত হলে নাকের চারপাশের সাইনাস বায়ু কুঠুরীগুলি ফুলে ওঠে, মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায়, এবং সাইনাসের নালীপথ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সাইনাসের ভেতরে চাপ সৃষ্টি হয়, যা মাথার সামনের অংশ, কপাল, চোখের চারপাশ, এবং গালের উপরের অংশে ব্যথা তৈরি করে।
চাপের অনুভূতি: সাইনাসের নালীপথগুলি যখন মিউকাস জমে বন্ধ হয়ে যায়, তখন সাইনাস কুঠুরীগুলির অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যায় এবং এটি আশেপাশের নরম টিস্যুতে চাপ প্রয়োগ করে। এর ফলে মাথার ভেতরে ভারী বা ভরাট হওয়ার অনুভূতি তৈরি হয়, যা অত্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে। এই চাপের কারণে মাথাব্যথা তীব্র হয় এবং মাথা সামনে ঝুঁকালে, নীচের দিকে তাকালে বা শুয়ে থাকা অবস্থায় ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।
মাথা নাড়ালে ব্যথা বৃদ্ধি: সাইনাসের ভেতরে জমে থাকা মিউকাস ও সাইনাসের নালীপথ বন্ধ থাকার কারণে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবেও মিউকাস নড়াচড়া করে, যা আশেপাশের টিস্যুতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় এবং এটি মাথার সামনের অংশ, কপাল, চোখের চারপাশ, এবং গালের উপরের অংশে বেশি অনুভূত হয়। অনেক সময় এই ব্যথা এমন তীব্র হতে পারে যে, কোনো শারীরিক নড়াচড়া বা সামাণ্য হাঁটাচলা করলে তা আরও বেড়ে যায়।
নাক বন্ধ হওয়া এবং ঘন সর্দি: সাইনাসে প্রদাহ হলে নাসারন্ধ্রের ভেতরের ঝিল্লি ফুলে ওঠে এবং মিউকাসের উৎপাদন বেড়ে যায়। এই মিউকাস সাইনাসের নালীপথে জমা হয়ে সাইনাসের কুঠুরীগুলোকে বন্ধ করে দেয়, যার ফলে নাক বন্ধ হয়ে থাকার অনুভূতি তৈরি হয়। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ঘন, পুঁজের মতো সর্দি নাক দিয়ে বের হতে পারে।
গন্ধ না পাওয়া বা স্বাদের পরিবর্তন: সাইনাসে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে মিউকাসের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং সাইনাসের নালীপথে জমা হয়ে নাক বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নাকের ভেতরে অবস্থিত ঘ্রাণগ্রন্থির মাধ্যমে গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতা ব্যাহত হয়। একইভাবে, মিউকাস জমে থাকা এবং নাসারন্ধ্র বন্ধ থাকার কারণে খাবারের স্বাদও পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ স্বাদ ও গন্ধ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
গালে এবং দাঁতে ব্যথা: সাইনাসের ভেতরে জমে থাকা মিউকাসের কারণে যখন সাইনাসের নালীপথগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন সাইনাসের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এটি আশেপাশের টিস্যু এবং দাঁতের শিকড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে দাঁতে বা গালে তীব্র ব্যথা হয়, যা অনেক সময় দাঁত ব্যথার মতো অনুভূত হতে পারে। দাঁতের শিকড় এবং সাইনাসের গহ্বর একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকায়, এই চাপ বা প্রদাহ দাঁতের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে ব্যথা সৃষ্টি করে।
গলায় খুসখুসে ভাব ও কাশি: মিউকাসের কারণে গলায় খুসখুসে ভাব, জ্বালাপোড়া এবং বিরক্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা বারবার কাশির উদ্রেক করতে পারে। এই কাশি সাধারণত শুষ্ক বা আর্দ্র কাশি হিসেবে অনুভূত হয় এবং রাতের বেলায় বা শুয়ে থাকলে তা আরও বেড়ে যায়, কারণ শুয়ে থাকার সময় মিউকাস গলায় সহজে গড়িয়ে পড়ে।
সাইনোসাইটিস কি ভালো হয়
সাইনাসের মাথা ব্যাথা / সাইনোসাইটিস সাধারণত ভালো হতে পারে, তবে এর চিকিৎসা এবং সুস্থতার সময়কাল নির্ভর করে সংক্রমণের প্রকৃতি এবং তীব্রতার উপর। অ্যাকিউট সাইনোসাইটিস, যা সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায় এবং এতে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এই সময়ে উপসর্গগুলি কমানোর জন্য গরম পানির ভাপ নেওয়া, নাকের স্যালাইন স্প্রে ব্যবহার, এবং ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, ক্রনিক সাইনোসাইটিস, যা ১২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা এলার্জির কারণে হয় এবং এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। এর চিকিৎসায় নাকের স্টেরয়েড স্প্রে, অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ, এবং কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। যদি নাকের পলিপ বা ডিভিয়েটেড সেপটাম থাকে, তাহলে অস্ত্রোপচারও দরকার হতে পারে।
সাইনাসের মাথা ব্যাথা / গবেষণা অনুযায়ী, সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে সাইনোসাইটিস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব, তবে পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থাকে, বিশেষত যদি কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কারণ যেমন এলার্জি বা ধূমপানের অভ্যাস থাকে(1)। সাইনোসাইটিসের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা বজায় রাখতে নিয়মিত চিকিৎসা ও জীবনের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।
সাইনোসাইটিস হলে করনীয়
সাইনাসের মাথা ব্যাথা / সাইনোসাইটিস হলে দ্রুত উপশম এবং জটিলতা এড়ানোর জন্য কিছু সাধারণ করণীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে সাইনোসাইটিস হলে করণীয় কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:
পানির ভাপ নেওয়া: গরম পানির ভাপ সাইনাসের ভেতরের জমে থাকা মিউকাসকে নরম করে এবং মিউকাস সহজে বের হতে সাহায্য করে, ফলে সাইনাসের চাপ কমে যায় এবং শ্বাস নিতে স্বস্তি পাওয়া যায়। ভাপ নেওয়ার জন্য একটি বাটি বা বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে মাথা একটি তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট ভাপ নিতে হয়। এ সময় ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া উচিত, যাতে গরম বাষ্প নাক ও সাইনাসের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। দিনে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সাইনাসের প্রদাহ কমে এবং মাথাব্যথা ও নাক বন্ধের মতো উপসর্গ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
সাইনাস থেকে মুক্তির উপায়
স্যালাইন স্প্রে: স্যালাইন স্প্রে মূলত নরমাল স্যালাইন (নোনা পানি) দিয়ে তৈরি, যা নাকের ভেতরের জমে থাকা মিউকাসকে পাতলা করে এবং তা বের করে আনে, ফলে নাসারন্ধ্র খুলে যায় এবং শ্বাস নিতে সুবিধা হয়। নাসারন্ধ্রের শুষ্কতা দূর করা, এলার্জি সৃষ্ট ধূলিকণা এবং অন্যান্য জীবাণু দূর করতে স্যালাইন স্প্রে অত্যন্ত উপকারী। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্যালাইন স্প্রে বা ন্যাসাল ইরিগেশন সাইনোসাইটিসের উপসর্গ যেমন নাক বন্ধ থাকা, ঘন সর্দি, এবং মাথাব্যথা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে (2)।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে, যা মিউকাসকে তরল অবস্থায় রাখে এবং সাইনাসের ভেতরে জমে থাকা মিউকাস সহজে বের হয়ে আসতে পারে। ফলে নাক বন্ধ হয়ে থাকা, মাথাব্যথা এবং গলা খুসখুসের মতো উপসর্গগুলো উপশম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং প্রদাহজনিত রোগগুলোর প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় (3)।
ম্যাক্সিলারি সাইনোসাইটিস ট্রিটমেন্ট
বিশ্রাম নেওয়া: সাইনোসাইটিসের ফলে শরীরে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হয় এবং প্রদাহ কমে আসে। ঘুমের সময় শরীর নিজেকে পুনর্গঠন করে এবং ইমিউন সিস্টেম সক্রিয়ভাবে কাজ করে, যা সংক্রমণ নিরাময়ে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং সাইনোসাইটিসসহ অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমায় (4)। সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত হলে দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা করে ঘুমানো উচিত এবং অতিরিক্ত মানসিক বা শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে শরীর দ্রুত সুস্থ হতে পারে।
ব্যথানাশক ওষুধ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ সাইনোসাইটিসজনিত ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এই ওষুধগুলো মাথাব্যথা এবং গাল বা কপালে চাপের অনুভূতি লাঘব করতে পারে, যা সাইনাসের প্রদাহের কারণে ঘটে। প্যারাসিটামল সাধারণত ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এটি সাইনাসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, আইবুপ্রোফেন প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য সাইনাসের প্রদাহ এবং সংক্রমণজনিত ফোলাভাব কমাতে কার্যকর (5)।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণ: এলার্জির উৎস যেমন ধুলাবালি, পোলেন, পশুর লোম, এবং ছত্রাকের স্পোর থেকে দূরে থাকা উচিত। ঘরের ভেতরে ধুলাবালি কমানোর জন্য নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বালিশ ও বিছানার চাদর ধোয়া এবং এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা সহায়ক হতে পারে। এলার্জি নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ এবং নাকের স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহারে নাসারন্ধ্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সাইনাসের চাপ ও মিউকাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে (6)। এ ছাড়া, ন্যাসাল ডিকনজেস্টেন্টও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এড়ানো উচিত, কারণ এটি রিবাউন্ড কংজেশন বা নাসারন্ধ্রের ফোলাভাব বাড়াতে পারে।
নাকের ডিকনজেস্টেন্ট ব্যবহার: ডিকনজেস্টেন্ট সাধারণত নাকের ভেতরের রক্তনালীগুলোর ফোলাভাব হ্রাস করে এবং সাইনাসের নালীপথ খুলে দেয়, ফলে নাক বন্ধের সমস্যা ও সাইনাসের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি সাইনোসাইটিসজনিত মাথাব্যথা, মুখের চাপ ও ঘন সর্দি উপশমে সহায়ক। তবে, নাকের ডিকনজেস্টেন্ট স্প্রে বা ড্রপ শুধুমাত্র ৩-৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত, কারণ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে রিবাউন্ড কংজেশন (নাসারন্ধ্রের ফোলাভাব বেড়ে যাওয়া) বা ঔষধের উপর নির্ভরশীলতা তৈরি হতে পারে (7)।
ধূমপান ও দূষণ এড়িয়ে চলা: ধূমপানের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নাসারন্ধ্রের ভেতরের সংবেদনশীল ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে এবং সাইনাসের প্রদাহ বৃদ্ধি করে, ফলে সাইনাসের মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, ধূমপান সাইনাসের রক্ত প্রবাহও বাধাগ্রস্ত করে, যা সাইনোসাইটিসের দ্রুত আরোগ্যকে ব্যাহত করে। তাই, সাইনোসাইটিসের সময় ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা এবং দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত। ঘরের ভেতরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার, মুখোশ পরিধান করে বাইরে বের হওয়া, এবং দূষণযুক্ত এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলা এই সমস্যার উপশমে সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিকভাবে সাইনোসাইটিসের ধরন ও কারণ নির্ণয় করা যায়, যেমন এটি ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল, ফাঙ্গাল সংক্রমণ, বা এলার্জি-জনিত কিনা। এর ভিত্তিতে চিকিৎসক উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারেন, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ, বা নাকের স্টেরয়েড স্প্রে। এছাড়া, ক্রনিক সাইনোসাইটিসের ক্ষেত্রে নাকের পলিপ, ডিভিয়েটেড সেপটাম বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে, চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিতে পারেন। যদি সাইনোসাইটিসের সাথে তীব্র মাথাব্যথা, চোখের চারপাশে ফোলাভাব, উচ্চ জ্বর, বা ঘাড়ে ব্যথা হয়, তবে তা জটিল সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র
- Slavin, R.G., Spector, S.L., Bernstein, I.L., Workgroup, S.U., Kaliner, M.A., Kennedy, D.W., Virant, F.S., Wald, E.R., Khan, D.A., Blessing-Moore, J. and Lang, D.M., 2005. The diagnosis and management of sinusitis: a practice parameter update. Journal of Allergy and Clinical Immunology, 116(6), pp.S13-S47. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0091674905022542
- Harvey, R., Hannan, S.A., Badia, L. and Scadding, G., 2007. Nasal saline irrigations for the symptoms of chronic rhinosinusitis. Cochrane database of systematic reviews, (3). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD006394.pub2/abstract
- Popkin, B.M., D’Anci, K.E. and Rosenberg, I.H., 2010. Water, hydration, and health. Nutrition reviews, 68(8), pp.439-458. https://academic.oup.com/nutritionreviews/article-abstract/68/8/439/1841926
- Besedovsky, L., Lange, T. and Born, J., 2012. Sleep and immune function. Pflügers Archiv-European Journal of Physiology, 463(1), pp.121-137. https://link.springer.com/article/10.1007/s00424-011-1044-0?correlationId=ac0e3b7c-03d9-47d0-8ac6-cce856c91e8f
- Wiffen, P.J., Knaggs, R., Derry, S., Cole, P., Phillips, T. and Moore, R.A., 2016. Paracetamol (acetaminophen) with or without codeine or dihydrocodeine for neuropathic pain in adults. Cochrane Database of Systematic Reviews, (12). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD012227.pub2/abstract
- Wallace, D.V., Dykewicz, M.S., Bernstein, D.I., Blessing-Moore, J., Cox, L., Khan, D.A., Lang, D.M., Nicklas, R.A., Oppenheimer, J., Portnoy, J.M. and Randolph, C.C., 2008. The diagnosis and management of rhinitis: an updated practice parameter. Journal of allergy and clinical immunology, 122(2), pp.S1-S84. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0091674908011238
- Desrosiers, M., Evans, G.A., Keith, P.K., Wright, E.D., Kaplan, A., Bouchard, J., Ciavarella, A., Doyle, P.W., Javer, A.R., Leith, E.S. and Mukherji, A., 2011. Canadian clinical practice guidelines for acute and chronic rhinosinusitis. Allergy, Asthma & Clinical Immunology, 7, pp.1-38. https://link.springer.com/article/10.1186/1710-1492-7-2
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024
- হাঁটু ব্যথার জন্য কার্যকারী ব্যায়াম গুলো জেনে নিন - November 28, 2024
- লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়? ও স্পন্ডাইলোসিস কি? - November 5, 2024