আপনার হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়। হরমোন হলো জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয় এবং রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়। হরমোন শরীরের বিভিন্ন শারীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়া কে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন শারীরিক বৃদ্ধির হার, বিপাক ক্রিয়া, মানসিক আচরণ, যৌন আকাঙ্ক্ষা, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা, এবং শরীরের স্বাভাবিক হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখা।

আপনার হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

উদাহরণ স্বরূপ, ইনসুলিন একটি গুরুত্ব পূর্ণ হরমোন যা অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন হয় এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া, থাইরয়েড হরমোন, এস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, অ্যাড্রেনালিন প্রভৃতি হরমোন গুলোও শরীরের গুরুত্ব পূর্ণ কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

হরমোন কি রোগ

হরমোন জনিত রোগ হলো এমন রোগ বা শারীরিক সমস্যা, যা হরমোনের অস্বাভাবিকতা বা ভারসাম্য হীনতার কারণে ঘটে। হরমোনের অস্বাভাবিকতা মূলত হরমোন গ্রন্থি গুলির (যেমন থাইরয়েড, পিটুইটারি, অগ্ন্যাশয়, অ্যাড্রেনাল) সঠিক ভাবে কাজ না করার কারণে হতে পারে।

ডায়াবেটিস (Diabetes) এটি একটি সাধারণ হরমোন জনিত রোগ, যা অগ্ন্যাশয় যথাযথ ভাবে ইনসুলিন উৎপাদন করতে না পারার কারণে হয়। ডায়াবেটিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে – টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীর কোনো ইনসুলিন তৈরি করে না, আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

থাইরয়েড ডিজিজ (Thyroid Diseases): থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোনের অত্যধিক বা অপ্রতুল উৎপাদন জনিত সমস্যা কে থাইরয়েড ডিজিজ বলে। হাইপোথাইরয়েডিজমে (Hypothyroidism) থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি থাকে, যা বিপাক ক্রিয়া ধীর করে দেয়, আর হাইপার থাইরয়েডিজমে (Hyperthyroidism) থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন ঘটে, যা বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome বা PCOS): এটি একটি হরমোন জনিত সমস্যা, যা সাধারণত মহিলাদের মধ্যে ঘটে। এতে শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এটি অনিয়মিত মাসিক, ডিম্বাশয়ে সিস্ট এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

অ্যাডিসন’স ডিজিজ (Addison’s Disease): এটি অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির হরমোনের ঘাটতির কারণে ঘটে। এতে কর্টিসল ও অ্যালডোস্টেরনের মত হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যা ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, রক্ত চাপ কমে যাওয়া এবং ত্বকের রঙ পরিবর্তনের মতো উপসর্গ তৈরি করে।

কুশিং’স সিন্ড্রোম (Cushing’s Syndrome): কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে এই রোগ হয়। এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে মুখে ও শরীরে চর্বি জমা, উচ্চ রক্তচাপ, হাড়ের ক্ষয়, এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি।

হাইপোপিটুইটারিজম (Hypopituitarism): পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোনের ঘাটতির কারণে ঘটে। এটি শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলে, যেমন শারীরিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, যৌন হরমোনের ঘাটতি, এবং ক্লান্তি অনুভব করা।

ছেলেদের হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

ছেলেদের মধ্যে হরমোনের সমস্যা সাধারণত শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ ও লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই সমস্যা গুলো কে সঠিক ভাবে বুঝতে হলে লক্ষণ গুলি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ছেলেদের হরমোনের সমস্যা বোঝার কিছু সাধারণ উপায় ও লক্ষণ উল্লেখ করা হলো

লিঙ্গ এবং যৌন সঙ্গতি সম্পর্কিত পরিবর্তন হরমোনের সমস্যা, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি, পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে যৌন ইচ্ছা বা লিবিডোতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা দিতে পারে, যা যৌন সম্পর্কে আগ্রহ কমিয়ে দেয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা ইরেকশন বজায় রাখতে সমস্যা ও হতে পারে, যার ফলে যৌন মিলনের সময় পুরোপুরি ইরেকশন না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে বীর্য উৎপাদন কমে যায় এবং বীর্যের গুণগত মানের অবনতি হতে পারে, যা পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্গাজমে তৃপ্তির অভাব বা যৌন মিলনে আনন্দ অনুভব করার ক্ষমতা কমে যাওয়া ও হতে পারে হরমোনের সমস্যার একটি লক্ষণ (1)।

আরও পড়ুন
সারভাইক্যাল রিবস

শারীরিক পরিবর্তন ছেলেদের হরমোনের সমস্যা বোঝার অন্যতম উপায় হলো শরীরে দেখা দেওয়া বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন। বিশেষত টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষদের শরীরে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পেশী শক্তি কমে যাওয়া; হরমোনের অভাবে পেশীর শক্তি কমে যায় এবং শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। এছাড়া, শরীরে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বিশেষ করে পেটের আশেপাশে চর্বি জমা হওয়া, হরমোনের ভারসাম্য হীনতার লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, পুরুষদের স্তনে চর্বি বা টিস্যু জমে স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, যাকে গাইনোকোমাস্টিয়া বলা হয়, এটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার আরেকটি লক্ষণ। হরমোনের সমস্যা থাকলে শরীরের লোম কমে যেতে পারে এবং চুল পড়া বা টাক পড়া শুরু হতে পারে (2)। হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

শারীরিক শক্তি এবং ক্লান্তি টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি থাকলে পুরুষদের মধ্যে অবসাদ, দুর্বলতা, এবং শারীরিক কর্ম ক্ষমতায় হ্রাস দেখা দিতে পারে। টেস্টোস্টেরন হরমোন শরীরের শক্তি, পেশী গঠন, এবং সাধারণত সক্রিয় থাকার ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন এই হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভূত হয়, যা দৈনন্দিন কাজ কর্মে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময়, টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি শরীরের হিলিং ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়, ফলে সামান্য পরিশ্রমের পরেও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি ঘুমের গুণগত মানেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন ইনসোমনিয়া বা ঘুম না আসা। হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

হাড়ের ঘনত্ব এবং ক্ষয় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষ দের হাড়ের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যেতে পারে, যা অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন হাড়ের গঠন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এর অভাব হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এমন কি সামান্য আঘাতেও হাড় ভেঙে যেতে পারে, এবং এটি পিঠের ব্যথা বা উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে পুরুষদের মধ্যে অল্পতেই আঘাত পাওয়া, হাড় ভংগুর হয়ে যাওয়া, এবং শারীরিক কর্ম ক্ষমতা কমে যাওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

চুলের পরিবর্তন টেস্টোস্টেরন এবং ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) হরমোন চুলের বৃদ্ধির চক্র নিয়ন্ত্রণ করে, এবং যখন এই হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তখন পুরুষদের মাথার চুল পড়া বা টাক পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও, শরীর এবং মুখের চুল কমে যেতে পারে বা ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যেতে পারে। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি চুলের গুণগত মানকেও প্রভাবিত করতে পারে, ফলে চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর বা সহজে ভেঙে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যদি কোনো পুরুষ চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়া, চুল পড়ার হার বেড়ে যাওয়া, বা শরীরের অন্যান্য স্থানে লোম কমে যাওয়ার লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তবে এটি হরমোনের সমস্যার একটি নির্দেশক হতে পারে (3)।

গন্ধে পরিবর্তন টেস্টোস্টেরন হরমোন শরীরের গ্রন্থি গুলোর কার্য কারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ঘাম এবং ত্বকের তৈলাক্ততার ওপর প্রভাব ফেলে। যখন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায়, তখন শরীরের ঘাম কমে যেতে পারে অথবা গন্ধে পরিবর্তন আসতে পারে। এমন কি কিছু ক্ষেত্রে, শরীরের গন্ধ বেশি তীব্র বা অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে, যা একজন ব্যক্তির জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। এই ধরনের গন্ধের পরিবর্তন শরীরের হরমোনের ভার সাম্যহীনতার একটি লক্ষণ হতে পারে।

আরও পড়ুন
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষন

উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পুরুষদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। টেস্টোস্টেরন হরমোন রক্তনালী ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যখন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, তখন রক্তনালী গুলো সংকুচিত হতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এছাড়াও, টেস্টোস্টেরনের অভাবে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয়

মেয়েদের শরীরে হরমোনের মাত্রা বেশি হলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সাধারণত, মেয়েদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য হীনতা ঘটলে এই সমস্যা গুলো বেশি দেখা যায়।

ইস্ট্রোজেন হরমোন বেশি হলে যে লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে

ওজন বৃদ্ধি শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে চর্বি জমে যেতে পারে, বিশেষ করে কোমর, নিতম্ব, এবং পেটে। এটি সাধারণত মেটাবলিজমের হার কমিয়ে দেয়, যার ফলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়।

মাসিকের সমস্যা ইস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রা মাসিক চক্রের গণ্ড গোলের কারণ হতে পারে, যেমন মাসিকের অনিয়ম, বেশি রক্ত ক্ষরণ, কিংবা মাসিকের সময়ে অতিরিক্ত ব্যথা।

স্তনের টিস্যুগত পরিবর্তন স্তনে টেনশন বা ব্যথা অনুভব করা, স্তনের আকারে পরিবর্তন, বা স্তনে গাঁট দেখা দেওয়া ইস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ হতে পারে।

মেজাজের পরিবর্তন ইস্ট্রোজেনের পরিমাণে বেড়ে গেলে মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে, যেমন খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ, কিংবা হতাশা দেখা দিতে পারে।

হরমোন-সংশ্লিষ্ট রোগের ঝুঁকি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে কিছু নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যেমন ইস্ট্রোজেন-সম্পর্কিত স্তন ক্যান্সার, জরায়ুর ফাইব্রয়েড এবং এন্ডোমেট্রিওসিস।

প্রজেস্টেরন হরমোন বেশি হলে যে লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে

ঘুমের সমস্যা প্রজেস্টেরনের মাত্রা বেশি হলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, ইনসোমনিয়া বা ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে ওঠার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

শরীরের ফোলা ভাব প্রজেস্টেরন বেশি থাকলে শরীরে পানি জমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, যার ফলে হাত, পা, এবং মুখে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

উদ্বেগ ও হতাশা প্রজেস্টেরনের উচ্চ মাত্রা উদ্বেগ বা হতাশার কারণ হতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়

হরমোনের সমস্যা দূর করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এই পদক্ষেপ গুলোতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আপনার কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা

সুষম খাদ্য গ্রহণ হরমোনের সমস্যা দূর করার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার, যেমন ফল, সবজি, প্রোটিন, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন বাদাম, বীজ, এবং জলপাই তেল) খাওয়া উচিত। শর্করা এবং চিনি কম খাওয়া উচিত কারণ এগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করতে পারে। ব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং হরমোনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, মেজাজ উন্নত করা, এবং ঘুমের মান ভালো করতেও সহায়ক।

যথেষ্ট ঘুম পর্যাপ্ত এবং মান সম্মত ঘুম হরমোনের সমস্যা দূর করার একটি প্রধান উপায়। প্রতি রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত, কারণ ঘুমের সময় শরীরের হরমোন উৎপাদন ও পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ঘটে।

আরও পড়ুন
ব্রেন টিউমারের লক্ষন এবং ব্রেন টিউমারের কারন

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হরমোনের ভার সাম্যহীনতার অন্যতম কারণ হতে পারে। স্ট্রেস কমাতে ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, এবং ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজের মতো কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে। স্ট্রেস কমলে কর্টিসল এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।

প্রাকৃতিক ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট কিছু প্রাকৃতিক উপাদান এবং সাপ্লিমেন্ট হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে, যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। তবে, এসব গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সক্রিয় জীবন ধারা নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন যোগব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ানো, বা জিমে ব্যায়াম করা, শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রোধে সহায়ক (4)।

চিকিৎসা: হরমোনের সমস্যা দূর করার জন্য চিকিৎসার মধ্যে প্রধানত হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (Hormone Replacement Therapy বা HRT), নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন, ইনসুলিন থেরাপি, জীবনধারার পরিবর্তন, এবং কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হরমোনের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন ইস্ট্রোজেন বা টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হলে তা পূরণের জন্য ইস্ট্রোজেন বা টেস্টোস্টেরন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট হরমোনগত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি বা মাত্রাতিরিক্ততা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ সেবন করা হয়। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন থেরাপি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জীবনধারার পরিবর্তন, যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, গ্রন্থির সমস্যা বা টিউমারের কারণে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

তথ্যসূত্র

  1. Morales, A., Bebb, R.A., Manjoo, P., Assimakopoulos, P., Axler, J., Collier, C., Elliott, S., Goldenberg, L., Gottesman, I., Grober, E.D. and Guyatt, G.H., 2015. Diagnosis and management of testosterone deficiency syndrome in men: clinical practice guideline.Cmaj187(18), pp.1369-1377. https://www.cmaj.ca/content/187/18/1369.short
  2. Bhasin, S., Brito, J.P., Cunningham, G.R., Hayes, F.J., Hodis, H.N., Matsumoto, A.M., Snyder, P.J., Swerdloff, R.S., Wu, F.C. and Yialamas, M.A., 2018. Testosterone therapy in men with hypogonadism: an endocrine society clinical practice guideline.The Journal of Clinical Endocrinology & Metabolism103(5), pp.1715-1744. https://academic.oup.com/jcem/article-abstract/103/5/1715/4939465
  3. Kaufman, K.D., 2002. Androgens and alopecia.Molecular and cellular endocrinology198(1-2), pp.89-95. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0303720702003726
  4. Hackney, A.C. and Lane, A.R., 2015. Exercise and the regulation of endocrine hormones.Progress in molecular biology and translational science135, pp.293-311. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1877117315001337
Dr. M Shahadat Hossain
পরামর্শ নিতে 01877733322