বর্তমান সময়ে কোমড় ব্যথা হয়নি এমন মানুষ নাই বললেই চলে তবে সৌভাগ্যক্রমে কোমড় ব্যথার অনেক উন্নত চিকিৎসা আছে এবং এটি সম্পূর্ণরূপে ভাল হয়। যাইহোক, কিছু ক্ষেত্রে, কোমড় ব্যথা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা ডিস্কের হার্নিয়েশন এর কারণে হতে পারে। যখন মেরদন্ডের ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক ফেটে গিয়ে তার ভিতরের নরম জেলীর ন্যায় অংশটি বের হয়ে এসে পার্শ্ববর্তী নার্ভ রুটে চাপ দেয় তখন এটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা পি এল আইডি বলা হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন, কোমড়ে আঘাত পেলে, দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করলে যেটাতে কোমড়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ে বা বার্ধক্যজনিত কারণে হতে পারে।
হার্নিয়েটেড ডিস্কের উপসর্গগুলি বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে যেমন, কোমড় ব্যথা, পায়ের দিকে ঝিন-ঝিন, ভাড়-ভাড়, অবশ-অবশ লাগা, পা দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে কোমড় ব্যথা যে কারণেই হোক না কেন আমাদের উচিৎ সঠিক কারণটি চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া।


সঠিকভাবে কোমড় ব্যথার কারন নির্ণয় করতে, ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্টগণ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে থাকেন। যেমন ফিজিক্যাল এসেসমেন্ট, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস পর্যালোচনা করা এবং এক্স-রে, এমআরআই স্ক্যান বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং পরীক্ষা করা। হার্নিয়েটেড ডিস্কের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে, চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। কঞ্জারভেটিভ চিকি্ৎসাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম নেয়া, ফিজিক্যাল থেরাপি, ওষুধ সেবন, বা কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।
এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে একটি ডিস্ক হার্নিয়েশন হলে বেদনাদায়ক এবং অস্বস্তিকর কোমড় ব্যথা হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে সেড়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনযায়ী শুরু থেকে শেষ অব্দি চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ।

চলুন জেনে নেই পিএলআইডি/ডিস্ক হার্নিয়েশনের লক্ষণগুলো

কোমর ব্যথার ধরণ যেমন হতে পারে

পি এল আই ডি বা ডিস্ক হার্নিয়েশনের কারণে কোমড়ে হালকা বা তীব্র ব্যথা হতে পারে এবং ব্যথাটি ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। ব্যথাটি সাধারণত কোমড় থেকেই শুরু হয় এবং অনেক সময় কোমড়ের নিচে নেমে যেতে পারে সেটা হতে পারে নিতম্ব পর্যন্ত অথবা নিতম্ব হয়ে পায়ের সামনের দিক দিয়ে বা পিছন দিয়ে নেমে যায়। ব্যথার তীব্রতা হার্নিয়েশনের মাত্রা এবং অবস্থানের পাশাপাশি নার্ভে কতখানি চাপ দিয়ে আছে তার উপর নির্ভর করে।

অনেক সময় দেখা যায় ডিস্ক প্রোল্যাপ্স এর রোগীদের আক্রান্ত স্থানের মাংস পেশী শক্ত হয়ে যায় যেটাকে আমরা স্পাজম বলে থাকি এবং জয়েন্ট গুলো জমে যায়। কিছু কিছু কাজে ব্যথাটি বেড়ে যেতে পারে যেমন সামনের দিকে ঝোকা, নিচ থেকে কোন কিছু তোলা, দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা ইত্যাদি। গুরুতর ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যথার তীব্রতায় রোগী তার দৈনন্দিন কাজ করতে ব্যর্থ হয়।
ব্যথা পায়ে নেমে যাওয়া

পায়ের দিকে শির শির করে ব্যথা নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা পি এল আইডি। এভাবে ব্যথা পায়ে নেমে যাওয়াকে সায়াটিকা বলা হয় কারণ ডিস্ক হার্নিয়েশন হলে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় এটি সায়াটিক নার্ভে চাপ দেয়। হার্নিয়েশনের অবস্থান এবং আকারের উপর নির্ভর করে ব্যথার তীব্রতা এবং স্থায়িত্বতা পরিবর্তিত হতে পারে।
কোমড়ের ডিস্ক হার্নিয়েশনের কারণে যে ব্যথা পায়ে নেমে যায় তার অনুভুতি তীব্র হয়ে থাকে এবং জ্বালাপোড়া হয়। কিছু কিছু কাজে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে যেমন বসা, দাঁড়ানো, হাঁটাচলা বা সামনে ঝুকে কিছু তুলতে যাওয়া ইত্যাদি।

কোমড়ের নিচ থেকে অন্যরকম অনুভূতি

যদি আপনার পায়ে ঝিন-ঝিন, ভাড়-ভাড়, অবশ-অবশ লাগে তাহলে বিষয়টা অবশ্যই চিন্তার বিষয়, কারণ এগুলো ডিস্ক প্রোল্যাপ্স এর ইঙ্গিত হতে পারে। এটি ঘটে যখন ডিস্কটি মেরুদণ্ডের স্নায়ুর বিরুদ্ধে চাপ দেয়, যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় যা চিকিত্সা না করা হলে আরও খারাপ হতে পারে।

প্রশ্রাব পায়খানা ধরে রাখতে না পারা এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী

আপনার যদি প্রস্রাব-পায়খানা ধরে রাখতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া উচিৎ কারণ এগুলো ডিস্ক হার্নিয়েশন এর ইমারজেন্সি লক্ষণসমূহের মধ্যে অন্যতম। যদিও এটি খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায় কারণ ডিস্ক হার্নিয়েশন যখন খুব মাত্রাতিরিক্ত আকারে হয়ে থাকে ঠিক তখনই প্রশ্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণকারী নার্ভের উপর চাপ পড়ে। এইসব লক্ষণ থাকা অবস্থায় যদি আমরা তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না নেই তাহলে এটা আমাদের স্থায়ী অক্ষমতার দিকে ঠেলে দিতে পারে
এ ধরনের ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

কারা ডিস্ক হার্নিয়েশন হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন

  • দৈনদিন জীবনে যেকোন মানুষের ই ডিস্ক প্রোল্যাপ্স হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় আমাদের ডিস্ক হার্নিয়েশন হবার ঝুকি বাড়িয়ে দেয় সুতরাং ডিস্ক হার্নিয়েশন প্রতিরোধ করতে আমাদের অবশ্যই সেই কারণগুলি জানা উচিৎ।
  • এখানে এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকা রয়েছে যারা ডিস্ক হার্নিয়েশন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে:
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
  • ধূমপায়ী
  • যারা সামনের দিকে ঝুকে ভারী জিনিস তোলার কাজে নিয়োজিত
  • যাদের বাঁকা হয়ে জিনিসপত্র তুলতে হয়
  • যেসকল পেশায় কায়িক শ্রম বেশি হয় এবং মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে
  • যাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য গাড়ি চালাতে হয়
  • যাদের কায়িক পরিশ্রম নেই বললেই চলে এবং অলস জীবনযাপন
  • ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের।
  • আপনি যদি উপরোক্ত তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকেন, তবে আপনার এখনই হার্নিয়েটেড ডিস্ক হার্নিয়েশন এর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিৎ এবং সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

পি এল আইডি এর ইমারজেন্সি লক্ষণ সমূহ বা “রেড ফ্ল্যাগস”

একটি হার্নিয়েটেড ডিস্ক এর বিভিন্ন উপসর্গ থাকে, যার মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণকে “রেড ফ্ল্যাগ” হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেগুলোর উপস্থিতিতে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এখানে ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের কিছু সম্ভাব্য লক্ষণ উল্ল্যখ করা হলোঃ

  • হাতে বা পায়ের দুর্বলতা ক্রমশ বাড়তে থাকা
  • প্রশ্রাব বা পায়খানা ধরে রাখতে না পারা
  • যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারের চারপাশে অসাড়তা বা ঝিন ঝিন করা
  • ক্রমবর্ধমান ব্যথা যা কঞ্জারভেটিভ চিকিৎসায় কমছে না
  • আক্রান্ত স্থানে অনুভুতি না থাকা বা মুভমেন্ট না হওয়া
  • পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় ভর দিয়ে হাটতে না পারা
  • এই লক্ষণগুলি যদি থেকে তাহলে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন, কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে এবং চিকৎসা বিলম্বিত হলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ

Follow me
Jul 05, 2022

ডেঙ্গু হলে করণীয় কি?

ডায়াগনস্টিক টেস্টিং বেশিরভাগ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং অনেক বাণিজ্যিক পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ডায়াগনস্টিক…
Aug 21, 2022

গোড়ালি মচকানো

গোড়ালি মচকানো কি?  গোড়ালি মচকে যাওয়া টিস্যু(লিগামেন্ট)এর শক্ত ব্যান্ডের আঘাত যা পায়ের…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

পরামর্শ নিতে 01975451525