আপনার ফুসফুসে রোগ এবং কারণ ও লক্ষণ। ফুসফুসের রোগের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শ্বাস – প্রশ্বাস জনিত সমস্যা অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষের জীবন যাত্রায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ রোগ হল অ্যাজমা, যা শ্বাসনালী গুলির সংকোচনের কারণে শ্বাস কষ্ট, কাশি এবং বুকে চাপ অনুভূতি সৃষ্টি করে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) একটি দীর্ঘ মেয়াদী রোগ যেখানে ফুসফুসের বায়ুনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ফুসফুসে রোগ এবং কারণ ও লক্ষণ
নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের কারণে হয়, এবং এটি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথার মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। টিউবারকুলোসিস বা যক্ষা একটি সংক্রামক ব্যাধি যা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে হয় এবং কাশি, জ্বর, ওজন কমা ও ঘাম হওয়ার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। ফুসফুসের ক্যান্সার আরেক টি গুরুতর রোগ, যেখানে ফুসফুসের কোষ গুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি পায়; ধূমপান এই রোগের প্রধান কারণ। এছাড়াও, ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ (ILD) ফুসফুসের টিস্যুতে প্রদাহ বা ক্ষতি করে, যা শ্বাসকষ্ট এবং শুকনো কাশির কারণ হতে পারে।
ফুসফুসে টিউমারের লক্ষণ
ফুসফুসে টিউমারের লক্ষণ গুলি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় অস্পষ্ট থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তবে, রোগটি যখন উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে, তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে টিউমারের সাধারণ লক্ষণ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
দীর্ঘস্থায়ী কাশি অনেক সময় এটি প্রথমে একটি সাধারণ কাশি মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এর ধরণ পরিবর্তিত হয়। শুকনো কাশি থেকে এটি কফ যুক্ত কাশিতে পরিণত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, কাশির সাথে রক্ত বা রক্তমিশ্রিত কফ বের হতে পারে, যা একটি গুরুতর ইঙ্গিত দেয় যে ফুসফুসে টিউমার বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী কাশি সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফুসফুসের সংক্রমণের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় এবং এর তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে।
কাশির সাথে রক্ত আসা সাধারণত, কাশি দেয়ার সময় যদি কফের সাথে রক্ত বা রক্ত মিশ্রিত কফ বের হয়, তবে এটি ফুসফুসের টিস্যু বা শ্বাসনালীতে টিউমার বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। এই লক্ষণ টি প্রাথমিক অবস্থায় হালকা বা অল্প পরিমাণে হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। কাশির সাথে রক্ত আসা ফুসফুসের অন্যান্য সমস্যার মতো প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণেও হতে পারে, তবে যদি এই লক্ষণ টি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার দেখা দেয়, তাহলে এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে।
ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণ
শ্বাসকষ্ট ফুসফুসের টিউমার ক্রমশ বড় হতে থাকলে, এটি শ্বাসনালী সংকুচিত করে বা আংশিক বন্ধ করে দেয়, যার ফলে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই শ্বাস কষ্ট প্রাথমিক পর্যায়ে কম হতে পারে এবং শারীরিক পরিশ্রম বা হাঁটার সময় স্পষ্টতর হতে পারে, তবে টিউমার যত বড় হয়, ততই শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে এবং এমন কি বিশ্রামের সময়ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টের কারণে ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, এবং কখনও কখনও বুকের মধ্যে ভারী অনুভূতি বা চাপা অনুভূতি দেখা দিতে পারে।
বুকে ব্যথা টিউমার বৃদ্ধির কারণে ব্যথা ক্রমাগত এবং তীব্র হতে পারে এবং সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বুকের পাশে অনুভূত হয়। অনেক সময় ব্যথা কাঁধ, পিঠ বা বাহুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথা শ্বাস নিতে বা কাশি দিলে আরও বেড়ে যেতে পারে, যা রোগীর জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। বুকে ব্যথার প্রকৃতি নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান এবং তার বৃদ্ধির মাত্রার উপর।
ওজন হ্রাস ও ক্ষুধা মন্দা ফুসফুসের টিউমার শরীরে বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটায়, যা রোগীর স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা হ্রাস করতে পারে এবং খাবারে আগ্রহ কমিয়ে দেয়। এটি ধীরে ধীরে খুদা মন্দায় পরিণত হতে পারে, ফলে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয় এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ওজন কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে, রোগী নিজেও লক্ষ্য করেন যে তার শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যদিও তিনি স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছেন। এ ধরনের অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধা মন্দা ফুসফুসে টিউমারের একটি গুরুত্ব পূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ শ্বাসনালী আংশিক ভাবে বন্ধ বা সংকুচিত হয়ে গেলে শ্বাস চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়, ফলে শ্বাস নেওয়া বা ছাড়ার সময় বাতাসের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং এতে শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যায়। এই শব্দটি সাধারণত শ্বাসকষ্টের সময় বা কায়িক শ্রমের সময় আরও প্রকট হতে পারে এবং টিউমারের অবস্থান এবং তার আকারের উপর নির্ভর করে শব্দের তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে। শ্বাস নেওয়ার সময় এ ধরনের শোঁ শোঁ শব্দ সাধারণ ঠান্ডা, অ্যালার্জি, বা অ্যাজমার মতো রোগের কারণেও হতে পারে (1)।
গলার স্বর ভাঙা বা কর্কশ হওয়া ফুসফুসের টিউমার, বিশেষ করে যদি এটি ফুসফুসের উপরের দিকে বা মাঝখানে অবস্থান করে, তাহলে এটি ভোকাল কর্ড বা গলার নার্ভ (ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ) কে আক্রান্ত করে। এর ফলে স্বরের পরিবর্তন ঘটে এবং গলা ভাঙা বা কর্কশ স্বর শোনা যেতে পারে। রোগী স্বাভাবিক কথা বলার সময় খেয়াল করতে পারেন যে তাদের গলার স্বর অস্বাভাবিক ভাবে বদলে গেছে বা কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় এটি কেবল সাময়িক ভাবে ঘটে, কিন্তু ফুসফুসে টিউমার থাকলে এই পরিবর্তন স্থায়ী হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে গলার স্বরে এই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করেন এবং এর সাথে অন্য কোনো ফুসফুস জনিত উপসর্গ দেখা দেয়।
অতিরিক্ত ক্লান্তি ফুসফুসে টিউমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই অবহেলিত লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা, যা টিউমার শরীরের শক্তি এবং পুষ্টি ব্যবহার করার কারণে হয়। টিউমার শরীরের অভ্যন্তরে বেড়ে উঠতে থাকলে, এটি শরীরের শক্তি ও পুষ্টির বড় একটি অংশ শোষণ করে ফেলে, যা স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির ঘাটতি তৈরি করে। ফলে রোগী সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন এবং সহজ কাজেও অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
বার বার শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ টিউমার যখন ফুসফুসের অভ্যন্তরে বৃদ্ধি পায়, এটি শ্বাসনালী বা বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বাতাস এবং শ্লেষ্মার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। এই অবস্থায় ফুসফুসের অভ্যন্তরে জীবাণু সহজেই জমা হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি কেউ একাধিক বার ফুসফুসের সংক্রমণ, যেমন নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হন এবং সংক্রমণটি সহজে নিরাময় না হয় বা পুনরায় ফিরে আসে।
ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ
ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ গুলি সাধারণত ফুসফুসের টিস্যু বা শ্বাসনালীর সংক্রমণের কারণে দেখা দেয় এবং রোগের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। ফুসফুসে সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার হলো নিউমোনিয়া, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের কারণে হতে পারে। ফুসফুস ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে
কাশি ফুসফুসে সংক্রমণের ক্ষেত্রে কাশি একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি শুরুতে শুকনো কাশি হতে পারে, যা পরে কফ যুক্ত কাশিতে পরিণত হয়। কফের সাথে হলুদ বা সবুজাভ রঙের মিউকাস আসতে পারে, এবং কখনো কখনো রক্তও থাকতে পারে।
শ্বাসকষ্ট শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট ফুসফুস ইনফেকশনের একটি সাধারণ উপসর্গ। সংক্রমণের কারণে শ্বাসনালী সংকুচিত হতে পারে, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং রোগী ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করেন।
বুকে ব্যথা বুকে ব্যথা সাধারণত শ্বাসনালী বা ফুসফুসের টিস্যুতে সংক্রমণ হওয়ার কারণে দেখা দেয়। এই ব্যথা শ্বাস নিতে বা কাশি দিলে তীব্রতর হতে পারে এবং প্রায়শই তীক্ষ্ণ বা ছুরির আঘাতের মতো অনুভূত হয়। ব্যথা সাধারণত বুকের একপাশে বা মাঝখানে কেন্দ্রীভূত থাকে, তবে কখনো কখনো এটি কাঁধ বা পিঠের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের আশেপাশের টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি হলে ব্যথার তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
জ্বর ও ঠান্ডা লাগা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হলে শরীরের অভ্যন্তরে প্রদাহ শুরু হয়, এবং এই প্রদাহের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা জ্বরের আকারে প্রকাশ পায়। জ্বর প্রায়ই হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এটি সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা (১০১-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি যখন ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটে, তখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণ দূর করতে বিপুল পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে। এর ফলে, রোগী সারাক্ষণ দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করেন। এই ক্লান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজগুলো সম্পন্ন করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
মাথা ব্যথা এবং পেশী তে ব্যথা যখন ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটে, তখন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে মাথা ও পেশীতে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে মাথাব্যথা এবং পেশীতে ব্যথা অনুভূত হয়। মাথাব্যথা সাধারণত মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং চোখের চারপাশে বা কপালে চাপের মতো অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
বমি বমি ভাব বা বমি সাধারণত সংক্রমণের কারণে শরীরের সামগ্রিক দুর্বলতা বমি বমি ভাব হতে পারে। যখন ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে, তখন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে।
এর ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশটি উত্তেজিত হতে পারে যা বমির প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া বিশেষত শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার কারণে সংক্রমণের ফলে শরীর আরও বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়াও, ফুসফুস ইনফেকশন থেকে জ্বর বা শ্বাসকষ্টের কারণে শরীরের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা বমি বা বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে (2)।
ফুসফুসে ইনফেকশন হলে করণীয়
ফুসফুসে ইনফেকশন হলে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ফুসফুসে ইনফেকশনের চিকিৎসা নির্ভর করে সংক্রমণের ধরণ, তীব্রতা এবং রোগীর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থার ওপর। কিছু করণীয় পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো:
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ফুসফুসে ইনফেকশনের উপসর্গ, যেমন কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বা অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক আপনার লক্ষণ অনুযায়ী ফিজিক্যাল এসেসমেন্ট ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যেমন রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, বা সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিতে পারেন।
চিকিৎসক যদি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ইনফেকশন নিশ্চিত করেন, তবে তিনি এন্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন। যদি ইনফেকশন ভাইরাসের কারণে হয়, তবে সাধারণত এন্টিবায়োটিক দরকার হয় না, তবে ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কাশির জন্য কফ নিরোধক, ব্যথানাশক, এবং প্রদাহরোধী ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে।
চেষ্ট ফিজিওথেরাপি
ফুসফুসের সংক্রমণে চেস্ট ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শ্বাসনালীর মধ্যে জমে থাকা মিউকাস বা কফ পরিষ্কার করতে সহায়ক। চেস্ট ফিজিওথেরাপি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাসপ্রশ্বাসকে সহজ করে, এবং সংক্রমণের জটিলতা কমায়। এটি সাধারণত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বা দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এর মতো ফুসফুসের সমস্যাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচে কিছু প্রধান চেস্ট ফিজিওথেরাপি কৌশল বর্ণনা করা হলো:
পারকাশন (Percussion): পারকাশন হল একটি পদ্ধতি যেখানে হাতের তালুর সাহায্যে রোগীর বুকে বা পিঠে দ্রুত আঘাত করা হয়। এটি ফুসফুসের মধ্যে জমে থাকা মিউকাস বা কফকে আলগা করতে সাহায্য করে, যা পরে কাশির মাধ্যমে বের হয়ে আসে।
পোশ্চারাল ড্রেনেজ (Postural Drainage): পোস্টুরাল ড্রেনেজ হল শরীরকে এমন একটি অবস্থানে রাখা, যাতে ফুসফুসের নির্দিষ্ট অংশ থেকে মিউকাস বা কফ সহজে বের হতে পারে। এই পদ্ধতিতে রোগীকে বিভিন্ন অবস্থানে শোয়ানো হয়, যেমন পা উঁচুতে রেখে মাথা নিচু করে শোয়ানো হয়, যাতে কফ গলার দিকে চলে আসে এবং সহজে বের হয়ে যায়। ব্রেন টিউমারের লক্ষন এবং ব্রেন টিউমারের কারন
ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ (Deep Breathing Exercises): ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং অক্সিজেনের সরবরাহ উন্নত করে। রোগীকে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ার জন্য বলা হয়, যা ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা মিউকাস আলগা করতে সাহায্য করে (3)।
কাফিং টেকনিক (Coughing Technique): সঠিক কাফিং টেকনিক ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক। রোগীকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাশি দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে ফুসফুসের গভীর অংশ থেকে মিউকাস বা কফ বের হয়ে আসে। “হাফড কাফিং” একটি কার্যকরী পদ্ধতি, যেখানে রোগী গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে কাশি দেয়, যা কফ নির্গত করতে সহায়ক।
ব্রিদিং এক্সারসাইজ ডিভাইস (Breathing Exercise Devices): পিক ফ্লো মিটার বা স্পাইরোমিটার ব্যবহার করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করা যায়। এই যন্ত্রগুলি রোগীকে শ্বাস নেওয়ার এবং ছাড়ার ব্যায়াম করতে সাহায্য করে, যা ফুসফুসের পেশীগুলি শক্তিশালী করে এবং শ্বাসনালীর ব্লকেজ কমায়।
বাষ্প গ্রহণ বা নেবুলাইজেশন (Steam Inhalation or Nebulization): বাষ্প গ্রহণ বা নেবুলাইজেশন ফুসফুসের ভেতরে আর্দ্রতা বাড়ায় এবং মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করে, যা শ্বাসনালী পরিষ্কার করে। এটি শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং ফুসফুসের সংক্রমণের উপশমে সহায়ক।
মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ (Mobilization Exercises): হালকা শারীরিক ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা হাত-পা নাড়ানোর মতো মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা সংক্রমণ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সাহায্য করে।
ডায়াফ্র্যাম্যাটিক ব্রিদিং (Diaphragmatic Breathing): এই পদ্ধতিতে রোগীকে পেটের গভীর পর্যন্ত শ্বাস নিতে শেখানো হয়, যাতে ডায়াফ্রাম সক্রিয় হয় এবং ফুসফুসের ভেন্টিলেশন বাড়ে। এটি শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
সঠিক জীবন যাপন
ফুসফুসে ইনফেকশন হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করতে প্রচুর পানি পান করুন। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। পুষ্টিকর খাবার, যেমন ফল, সবজি, স্যুপ, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মশলাদার, তেলেভাজা খাবার এবং ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার প্রকোপ বাড়াতে পারে।
ফুসফুসের সংক্রমণের সময় ধূমপান করা বা ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকুন। ধূমপান এবং বায়ুদূষণ শ্বাসনালীকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে এবং সংক্রমণ গুরুতর করতে পারে। শরীরের জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাতলা কাপড় পরুন এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে জ্বর কমানোর ওষুধ সেবন করুন। অন্যান্য লোকের সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে চলুন এবং সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমাতে যথাযথ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা, যেমন মাস্ক পরা এবং নিয়মিত হাত ধৌত করুন (4)।
তথ্যসূত্র
- Crane, M., Scott, N., O’Hara, B.J., Aranda, S., Lafontaine, M., Stacey, I., Varlow, M. and Currow, D., 2016. Knowledge of the signs and symptoms and risk factors of lung cancer in Australia: mixed methods study. BMC public health, 16, pp.1-12. https://link.springer.com/article/10.1186/s12889-016-3051-8
- van der Poll, T. and Opal, S.M., 2009. Pathogenesis, treatment, and prevention of pneumococcal pneumonia. The Lancet, 374(9700), pp.1543-1556. https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(09)61114-4/fulltext?version%3DprinterFriendly
- Holland, A.E., Hill, C.J., Jones, A.Y. and McDonald, C.F., 2012. Breathing exercises for chronic obstructive pulmonary disease. Cochrane Database of Systematic Reviews, (10). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD008250.pub2/abstract
- Wallaert, B., Monge, E., Le Rouzic, O., Wémeau-Stervinou, L., Salleron, J. and Grosbois, J.M., 2013. Physical activity in daily life of patients with fibrotic idiopathic interstitial pneumonia. Chest, 144(5), pp.1652-1658. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0012369213607436
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024
- হাঁটু ব্যথার জন্য কার্যকারী ব্যায়াম গুলো জেনে নিন - November 28, 2024
- লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়? ও স্পন্ডাইলোসিস কি? - November 5, 2024