কোমর ব্যথার কারণ, যেভাবে মহিলারা কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মিসেস আরমিন সুলতানা কর্পোরেট অফিসে চাকরি করেন তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ডেস্কে বসে কাজ করার ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই কোমরের ব্যথায় ভুগছিলেন। প্রথম দিকে তিনি সমস্যাটি তেমন গুরুত্ব দেননি, কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ব্যথার তীব্রতা ততই বাড়তে থাকে।

এক সময় দেখা যায় এই ব্যথা তার দৈনন্দিন জীবনের কাজে বেশ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তার কোমর ব্যথা প্রথমে কম ছিল, তবে সময়ের সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে ব্যথা বেড়ে যেত এবং মাঝে মাঝে কোমরের সাথে সাথে পায়েও টান ধরতো। রাতে শোয়া অবস্থায় কোমরে ব্যথার কারনে ঘুমাতে পারতেন না। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রায় ৫০% থেকে ৭০% প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা জীবনের কোনো এক পর্যায়ে কোন না কোন কারনে কোমর ব্যথায় ভুগেছেন (1)।

মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ

বাংলাদেশের মহিলাদের দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজ যেমন, রান্না করা, ঘর ঝাড়ু দেয়া এবং মোছা, সামনের দিকে ঝুকে ভারী কিছু তোলা, নিচু হয়ে শাকসবজি, মাছ, মাংস কাঁটা ইত্যাদি কাজের পাশাপাশি পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে অফিস আদালতেও সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এত কর্মব্যস্ততার মাঝে বিভিন্ন কারনে তাদের কোমর ব্যথা হতে পারে যেমন

ভারী কাজ করা: বাংলাদেশের মহিলারা প্রতিদিন বিভিন ধরনের কাজ করে যেমন কাপড় ধোঁয়া, মেঝে মোছা, পানি সংগ্রহ করা ইত্যাদি। এই ধরনের কাজ তারা সাধারণত সামনের দিকে ঝুঁকে এবং অনেক সময় ধরে বসে কাজ করে যার ফলে তাদের মেরুদন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের কাজ করার ফলে মেরুদন্ডের পাশের মাংশপেশী দুর্বল হয়ে পরে যার ফলে কোমর ব্যথা হয়।

অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রম: আমাদের দেশের মহিলাদের অল্পতেই ওজন বেড়ে যায় এবং এই বাড়তি ওজন নিয়েই দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম করতে হয়। কিন্তু তার এই বাড়তি ওজনের ফলে কোমরের মেরুদন্ড ও ডিস্ক বা জেলের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে এবং এই চাপের কারণে মেরুদন্ডের আশেপাশের মাংশপেশীতে টান পড়ে ও ইঞ্জুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে যা ব্যথা হবার অন্যতম কারণ। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বহন করার ফলে কোমরের হাড় দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যায় এর ফলেও কোমর ব্যথা হয়।

পুষ্টির অভাব: বাংলাদেশের অধিকাংশ মা-বোনেরা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন (2)। মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এবং অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি হাড়কে দুর্বল করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়ে দেয়, ফলে সামান্য আঘাতে বা চাপের ফলে ব্যথা হয়। এছাড়াও মহিলাদের শরীরে যদি পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাব থাকে তবে পেশীগুলোর শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, যার ফলে তারা অল্প পরিশ্রমেই দূর্বল হয়ে পরে এবং কোমর ব্যথা হয়।

গর্ভাবস্থা এবং প্রসব পরবর্তী যত্নের অভাব: গর্ভাবস্থার সময় মহিলাদের শরীরের ওজন এবং শারীরিক গঠন পরিবর্তিত হয়, যা কোমরের পেশী এবং মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষত, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে কোমরের উপর এই চাপ বৃদ্ধি পায়, কারণ গর্ভের ওজন মেরুদণ্ডের নীচের অংশে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, প্রসবের পর নবজাতকের যত্ন নিতে গিয়ে ভারী কাজ, নিচু হয়ে বসা বা বারবার উঠা-বসার প্রয়োজন হয়, যা কোমরের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করে এর ফলে মা-বোনেরা গর্ভাবস্থা এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে কোমর ব্যথায় ভোগেন।

উঁচু হিলের জুতো পরা: বাংলাদেশের শহুরগুলোতে ফ্যাশনের জন্য মহিলারা উঁচু হিলের জুতো পরেন, যার ফলে তাদের শরীরের ভরকেন্দ্র সামনের দিকে সরে যায় এবং তাদের কোমরের মেরুদণ্ডের উপর বেশি চাপ পড়ে যার ফলে তারা কোমর ব্যথায় ভোগেন।

মাসিক চক্র এবং হরমোন পরিবর্তন: বাংলাদেশি মহিলাদের মাসিক চক্র বা পিরিয়ডের সময় তাদের শরীরে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের মাত্রার ওঠানামা করে, অনেক ক্ষেত্রে তাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় যার ফলে কোমরের মাংশপেশীতে টান লাগার পাশাপাশি কোমরে ব্যথা হয় (3)।

দীর্ঘ সময় বসে থাকা: আমাদের দেশের মা-বোনেরা অনেক সময় বসে ঘরবাড়ির বিভিন্ন কাজ করেন যেমন, রান্না করা, কাটা-কাটি করা, বাসন মাজা, জামাকাপড় ধোঁয়া সহ দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই বসে বসে বিশেষ করে সাম্নের দিকে ঝুঁকে কাজ করেন, যার ফলে কোমরের মাংশপেশীগুলোতে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার কারনে স্পাজম হয়ে যায় এবং এর সাথে সাথে সঠিকভাবে না বসার কারনে কোমরের মেরুদন্ডে ও ব্যথা হয় (4)।

মেরুদন্ডের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

আপনার যদি কোমর ব্যথা হয় তবে আপনি একজন অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ব্যথানাশক, Muscle Relaxants, গ্যাবাপেন্টিন বা প্রিগাবালিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-৩ সাপ্লিমেন্ট ঔষধ খাওয়ার সাথে সাথে পাশাপাশি ব্যথার তীব্রতার উপর নির্ভর করে ৫-৭ দিনের বিশ্রাম নিলে প্রাথমিক ভাবে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পিএলআইডি জনিত কোমর ব্যথা

কিন্তু আপনি যদি দেখেন যে আপনার ব্যথা ঔষধ খেলে ভাল থাকে এবং বন্ধ করলে আবার ফিরে আসে তাহলে আপনার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারন যখন ঔষধ বন্ধ করলে ব্যথা ফিরে আসে তখন আপনার বুঝতে হবে আপনার ব্যথা মেরুদন্ডের কোন রগে চাপ লাগার কারনে হতে পারে সেক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যথাটা যে কোন এক পায়ের দিকে অথাবা উভয় পায়ের দিকে নামতে পারে, অনেক সময় পায়ে ঝিমঝিম ভারভার অবস অবস হতে পারে তখন একজন  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক  আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করে চিকিৎসা দিবেন।

তার পরামর্শ অনুযায়ী আপানি ম্যানুয়াল থেরাপি বা ইলেকট্রোথেরাপি চিকিৎসা নিতে পারেন।  বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠানে কারেকশন বা ম্যানুয়াল থেরাপি সেবা চালু আছে যেখান থেকে আপনি সহজেই চিকিৎসা গ্রহন করতে পারবেন। কিন্তু একমাত্র ASPC ম্যানু্পুলেশন থেরাপি সেন্টার (House #U64, Noorjahan Road Mohammadpur, Dhaka-1207) Structural Diagnosis & Management (SDM) টেকনিকের ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।

এখানে সর্বপ্রথম আপনার শারীরিক অবস্থা SDM টেকনিকের মাধ্যমে অ্যাসেসমেন্ট করে আপানর কোমর ব্যথার কারন সম্পর্কে সঠিক ধারনা নিয়ে কারেকশন থেরাপির মাধ্যমে প্রথমে কোমরের মাংশপেশীগুলো (ইরেক্টর স্পাইন, মাল্টিফিডাস, মাল্টিফিডাস, কোয়াড্রাটাস লাম্বোরাম , পসাস মেজর, গ্লুটিয়া ম্যাক্সিমাস, ল্যাটিসিমাস ডরসাই) প্রথমে রিলিজ করা হয় তারপর স্ট্রেচিং এবং মাংশপেশীর অবস্থা অনুযায়ী স্ট্রেন্থেনিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন যার ফলে কোমরের হাঁড় আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সহ ব্যথা পুরোপুরি নিরাময় করা হয় যার ফলে রোগী দ্রুত কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পায় এবং পুনরায় কোমর ব্যথার সম্ভাবনাও কমে যায়।

কোমরে ব্যথার ব্যায়াম

কোমরে ব্যথার উপশমে ঘরে বসে আপনি কিছু ব্যায়াম যেমন, ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ, কোবরো স্ট্রেচ, কোমর স্ট্রেচ, পেলভিক টিল্ট,চাইল্ড পোজ ইত্যাদি করার মাধ্যমে করা যায়, যার আপনার কোমরের পেশীকে শক্তিশালী ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করেব এবং আপনার কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।

তথ্যসূত্র

  1. Manchikanti, L., Singh, V., Falco, F.J., Benyamin, R.M. and Hirsch, J.A., 2014. Epidemiology of low back pain in adults.Neuromodulation: Technology at the Neural Interface17, pp.3-10. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S109471591460129X
  2. Shannon, K., Mahmud, Z., Asfia, A. and Ali, M., 2008. The social and environmental factors underlying maternal malnutrition in rural Bangladesh: implications for reproductive health and nutrition programs.Health care for women international29(8-9), pp.826-840. https://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1080/07399330802269493
  3. Bangladeshi women have fluctuating levels of progesterone and estrogen during their menstrual cycle, often leading to dehydration, which results in lower back pain and muscle tension. http://103.133.167.11:8080/handle/123456789/1692
  4. Borenstein, D. and Calin, A., 2012.Fast facts: low back pain. Karger Medical and Scientific Publishers. https://books.google.com/books?hl=en&lr=&id=qV9uDwAAQBAJ&oi=fnd&pg=PP1&dq=Leaning+forward+for+long+periods+of+time+puts+extra+stress+on+the+back+muscles+and+reduces+blood+circulation,+causing+the+muscles+to+spasm+or+tighten.+This+reduces+the+performance+of+the+muscles+and+increases+the+risk+of+pain.&ots=9OWNGzL5kY&sig=-Af1IBAWWVk-LCXDDWW9nLjMHx8
Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়? ও স্পন্ডাইলোসিস কি?

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়, লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কেন হয়, লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কি, স্পন্ডাইলোসিস…
পরামর্শ নিতে 01877733322