fbpx

কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য বলতে শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না দরকার রোগমুক্ত দেহ ও মনের অধিকারী হওয়া। ঘরে বসে থেকে শুধু মনে মনে ভাবলেই হবে না কাজে পরিণত করতে হবে। সুস্থতা সকল পন্থা। এর জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। অনেকে মনে করেন আলাদাভাবে ব্যায়াম করার কি দরকার? প্রতিদিন তো কাজ করি, বিভিন্ন ধরনের খাটাখাটনি করি।

এই সমস্ত ধারণ একে বারেই ঠিক নয়। কারণ, বিজ্ঞানসম্মত এক্সারসাইজ বিশেষ করে ফিজিওথেরাপি আলাদা একটা মূল্য আছে। যারা এই থেরাপিউটিক উপায়ে উপদেশ মেনে নিয়মিত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে শক্তিমত্তাসহ মনের দৃঢ়তাকে কাজে লাগিয়ে আনন্দের সাথে শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রতিদিনের কাজকর্ম নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করার ক্ষমতাকেই ফিটনেস বলে।

আসলে একজন মানুষের জীবনে ফিটনেস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সকল সুস্থতার মূলে রয়েছে ফিটনেস। ফিটনেস থাকলে দৈনন্দিন কাজ-কর্মসহ পারিবারিক জীবনেও সুখ-শান্তি বয়ে আসে। আর এই ফিটনেস অর্জন করার পেছনে যাার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সে হচ্ছে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট শরীরের গঠন অনুযায়ী মানুষের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কার জন্য কি ধরনের এবং কতটুকু পরিমাণ ব্যায়াম বা অনুশীলন দরকার।

পরিপূর্ণ ফিটনেসে কি কি দরকার :

  • কি ধরনের এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করবেন
  • কোথায় ব্যায়াম করবেন
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কি থাকবে

কি ধরনের এক্সারসাইজ করবেন :

  • অ্যান এরোবিক এক্সারসাইজ
  • এ্যারোবিক এক্সারসাইজ

এ্যারোবিক এক্সারসাইজ :

শারীরিক ফিটনেসে- এর জন্য এ্যারোবিক এক্সারসাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার, কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেস ও কার্ডিওভাসকুলার এন্ডোরেন্স বেশি হয়। এই ফিটনেসের জন্য যে সমস্ত এক্সারসাইজ দরকার সেটি হল- দাঁড়ানো, সাঁতার কাটা, বাই সাইক্লিং, স্কিপিং ইত্যাদি। আর এসব চর্চা করলে হৃৎপিন্ড সতেজতা, ফুসফুসে বাড়ে ধারণ ক্ষমতা এবং দেহ ও মনে ফিরে আসে প্রফুল্লতা।

যে সকল এক্সারসাইজ করার সময় শরীর বায়ুমন্ডল হতে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ এবং তা থেকে শরীর শক্তির যোগান পায় তাকে বা সে সব এক্সারসাইজকে এ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলে। এই এক্সারসাইজ করার সময়

হৃৎপিন্ড সাধারণত ৭০%-৮০% স্পন্দনে শরীরকে রক্ত সরবরাহ করে এবং এই এক্সারসাইজের স্থায়ী কাল হওয়া উচিত ২৫-৩০ মিনিট।

অ্যান এরোবিক এক্সারসাইজ :

শারীরিক এক্সারসাইজটাই সাধারণত বেশি হয় । সেসব এক্সারসাইজ করতে শরীর তার শক্তি পূরণের জন্য বায়ুমন্ডল হতে অক্সিজেন গ্রহণ না করে শরীরের ভেতরের বিদ্যমান অক্সিজেন ব্যবহার করে ঐ  সকল এক্সারসাইজকে অ্যারোবির এক্সারসাইজ বলে।

এক্সারসাইজ সমূহ-

  • ভার উত্তোলন
  • শক্তি অনুযায়ী ডাম্বেল ব্যবহার করা
  • ফ্রি জয়েন্ট এক্সারসাইজ ( এ ক্ষেত্রে প্রতিটি এক্সারসাইজ ৫-120 সেঃ স্থায়ী হতে হবে)।
  • ট্রেডমীল ও সাইকেল চালানো

কখন এক্সারসাইজ করবেন :

সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যা বা রাতে এক্সারসাইজ করাটাই শ্রেয়। কারণ সারাদিনে শরীরের সাথে রক্তচাপের ভারসাম্য রক্ষা হয়, ফলে হঠাৎ রক্তচাপ বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা  কম থাকে। সকাল বেলা দিনের কাজ-কর্ম শুরুর আগেও এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। তবে যাদের হৃদরোগ আছে তাদের জন্য সকালে ব্যায়াম না করাই ভাল। এক্সারসাইজ সপ্তাহে ৩-৫ বার এবং প্রতিবারে ৩০-৬০ মিনিটি করা যেতে পারে।

ফিটনেসের জন্য কোথায় ব্যায়াম করবেন :

ফিটনেস সাধারণত নিজের প্র্যাকটিসের ব্যাপার। আগে নিজেকে তৈরি থাকতে হবে যে আমি ব্যায়াম করব। আমাদের প্রতিদিনের কর্মকান্ডের সকল কিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলছে কিন্তু যখনই ব্যায়ামের ব্যাপার আসে তখনই আর সময় হয়ে ওঠে না। নিজের কাছে অলসতা লাগে। ব্যায়াম করব করব বলে আর হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ হয়ত ব্যায়াম করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু তারা জানেন না কোথায় এবং কিভাবে ব্যায়াম করবেন। তাহলে জেনে নেয়া যাক কোথায় ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত জায়গা।

নিরীবিলি জায়গায় যেখানে সুবিধা মত ব্যায়াম করা যায়

দৌড়ানোর জন্য দীঘ বাগান বা রাস্তা যেখানে গাড়ির ভিড় কম

ঘরে বসেও করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে ট্রেডমেইল ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিটনেসের ব্যাপারে জীমে যাওয়া যেতে পারে। তবে জীমের ক্ষেত্রে একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, জীমের যে ইনস্ট্রাক্টর থাকেন ওনার হাড়, মাংসপেশী ও জয়েন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে কি না। জীমে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে অনেক সময় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

মনে রাখবেন-সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোনো ভাবেই সামনে ঝুঁকে ব্যায়াম করবেন না । কারণ সকালে কোমরের ডিক্সগুলো ফুলে থাকে। তাই সামনে ঝুঁকলে এটি স্লিপও হতে পারে, যা কিনা আপনাকে অনেক ভোগান্তিতে ফেলবে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্যের তালিকা :

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রত্যহ পুষ্টির জন্য দরকার হয় ৩৫০০-৪০০০ কিলোক্যালরির মত খাদ্য। একজন মহিলার জন্য ৩০০০-৩২০০কিলো ক্যালরি। সুষম খাদ্য বলতে বুঝায় (পরিমাণ মত) ৪00 গ্রামের মত শর্করা বা কার্বহাইড্রেট,, ১২৫ গ্লাসের মত প্রোটিন  এবং ফ্যাট ১০০ গ্লাসের মত। মোটামুট অনুপাত ৪ঃ১ঃ১।

উচ্চতা অনুযায়ী-

৫ ফুট-৫ফুট ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ১৫০০-২৫০০ কিলো ক্যলরি

৫ ফুট ৬ ইঞ্চি-৬ ফুট এর জন্য ২৫০০-৩৫০০ কিলো ক্যালরি এর সাথে যারা বেশি পরিশ্রম অথবা নিজেকে ফিটনেসে ব্যস্ত রাখে তাদের জন্য ৫00 কিলো ক্যালরির বেশি খাবার হতে হবে

মহিলাদের ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি- ৫ ফুট উচ্চতা হলে লাগবে ১২০০-২০০০ কিলো ক্যালরি খাবার

আবার, ৫ ফুট-৬ ফুট উচ্চতায় লাগবে ২০০০-৩০০০ কিলো ক্যালরির মত খাদ্য

আরও ২০০ কিলো ক্যালরি যোগ করা যেতে পারে যারা ফিটনেস বা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকেন। প্রতি একজন মানুষের জন্য অন্তত ৫ লিটার পানি পান করা উচিত যা কিউনী ও ইউনিনারী ব্লাডারকে সচল রাখে।

সংক্ষেপে জেনে নেই নিয়মিত ব্যায়ামের উপকারিতা :

  • হাই ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে
  • ডায়াবেটিসকে  নিয়ন্ত্রণ রাখে
  • রক্তে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি কমায়
  • হৃৎপিন্ডের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে
  • হজমে সহযোগিতা করে
  • ব্যায়াম নিদ্রা বা ঘুম ভাল হয়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
  • শরীরের ওজন কমাতে ও স্বাস্থ্য সুন্দর রাখে দৈনন্দিন কাজ-কর্মে উৎফুল্লতা ফিরে আসে
  • মানসিক দুশচিন্তা দূর হয়
  • মেদভূঁড়ি কমায়
  • শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর হয়
  • মেদভূঁড়ি কমায়
  • শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে
  • শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিসহ শরীরে রক্ত চলাচলের ছন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
Follow me

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

× পরামর্শ নিতে মেসেজ করুন