প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি, লাম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সোপ্যাথি বা ফেমোরাল নিউরোপ্যাথি নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি যা নিতম্ব, উরু এবং পায়ের স্নায়ুকে আক্রান্ত করে। এটি আক্রান্ত এলাকায় ব্যথা, দুর্বলতা এবং অবশতা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত লুম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সাসের ক্ষতির কারণে পিঠের নিচের অংশে এবং নিতম্বের স্নায়ুর নেটওয়ার্ক আক্রান্ত হয় । এর কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, ইনজুরী, সংক্রমণ বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ  যাওয়া ইত্যাদি। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত ফিজিওথেরাপি, ব্যথা কমানোর ঔষধ এবং অপারেশন থাকতে পারে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির কারণ কী?

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি সাধারণত লাম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সাসের ক্ষতির কারণে হয়[1] যা কোমরের নিচের অংশের এবং নিতম্বের স্নায়ুর একটি নেটওয়ার্ক যা পায়ের নড়াচড়া এবং সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করে। প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশী থাকলে তা সময়ের সাথে সাথে স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে, যা ধীরে ধীরে নিউরোপ্যাথি রোগের দিকে যায় ।

ট্রমা:কোমরের  নীচের দিকে বা নিতম্বতে ইজুরী বা ব্যথা পেলে তা লাম্বোস্যাক্রাল  প্লেক্সাসকে ক্ষতি করতে পারে।

সংক্রমণ: কিছু সংক্রমণ, যেমন হারপিস জোস্টার (শিংলস) বা লাইম রোগ, অক্রান্ত হলে তা স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে।

টক্সিন: অ্যালকোহল বা নির্দিষ্ট  কিছু ওষুধ যা  টক্সিনের মত কাজ করে ফলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।

ক্যান্সার: টিউমার বা ক্যান্সারের চিকিৎসা যেমন রেডিয়েশন থেরাপি লম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

অন্যান্য চিকিৎসা সম্পর্কিত: অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা সারকোইডোসিসও প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির কারণ হতে পারে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলি কী কী? 

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলির[2] স্নায়ুর ক্ষতির পরিমাণ এবং স্নায়ু প্রভাবিত হওয়ার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। কিছু সাধারণ উপসর্গ অন্তর্ভুক্ত:

  • নিতম্ব, উরু বা পায়ে ব্যথা, যা তীব্র হতে পারে এবং জ্বলন্ত বা শ্যুটিংয়ের মতো অনুভব করতে পারে।
  • নিতম্ব, উরু বা পায়ের পেশীতে দুর্বলতা, যা হাঁটতে বা দাঁড়াতে অসুবিধা করতে পারে।
  • আক্রান্ত স্থানে অবসতা বা ঝিনঝিন করা।
  • আক্রান্ত স্থানে অনুভূতির ক্ষতি।
  • প্রভাবিত এলাকায় পেশী ভর হ্রাস।
  • বসা অবস্থান থেকে দাঁড়াতে অসুবিধা
  • সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বা ভারী জিনিস তুলতে অসুবিধা হয়
  • ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা

পুরুষ না মহিলা কে বেশি আক্রান্ত হয় এই প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথিতে?

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই আক্রান্ত হয়। যেহেতু ডায়াবেটিস পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়, তাই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পুরুষদের নারীদের বেশী।  

ডাক্তার কিভাবে প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি নির্ণয় করবেন?

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি সাধারণত একজন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা যেমন একজন নিউরোলজিস্ট দ্বারা নির্ণয় করা হয়, যিনি শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং বিগত চিকিৎসার ইতিহাস নেবেন। প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হয়ে থাকে:

স্নায়ু পরিবাহী অধ্যয়ন (এন.সি.বি): এই পরীক্ষাটি স্নায়ুর সংকেতের গতি এবং শক্তি পরিমাপ করে।

ইলেক্ট্রোমাইগ্রাফি (ইএমজি): এই পরীক্ষাটি পেশীগুলির বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ করে এবং স্নায়ুর অক্রান্ত পেশীগুলোর দুর্বলতার কারণ নিণয় এবং তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

এমআরআই বা সিটি স্ক্যান: এই ইমেজিং পরীক্ষাগুলি নিউরোপ্যাথির অন্তর্নিহিত কারণগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে, যেমন টিউমার বা ইনজুরী।

রক্ত পরীক্ষা: এই পরীক্ষাগুলি ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সংক্রমণের কারণ নিণয় করতে সাহায্য করতে পারে।

এছাড়াও, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনার পেরিফেরাল স্নায়ুর, পেশী শক্তি এবং প্রতিচ্ছবিগুলির  পরীক্ষাও করতে পারেন। রোগীর লক্ষণ এবং চিকিৎসা ইতিহাসের উপর নির্ভর করে, ডাক্তার অন্যান্য সম্ভাবনাগুলিও বিবেচনা করতে পারে, যেমন সিআইডিপি, সারকোইডোসিস, বা অমাইলোইড নিউরোপ্যাথি । প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির নির্ণয় প্রায়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকে, কারণ এটি একাধিক কারণের কারণে হতে পারে । শারীরিক পরীক্ষা, পরীক্ষাগার পরীক্ষা এবং ইমেজিং অধ্যয়নের সংমিশ্রণ প্রায়ই এটি নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির ঘরোয়া চিকিৎসা

কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবল্বনের মাধ্যমে প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে[3] তার মধ্যে রয়েছে:

বিশ্রাম: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিশ্রাম, ব্যথা এবং জালাপড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ব্যায়াম: মৃদু ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো পেশীর শক্তি এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

গরম এবং ঠান্ডা থেরাপি: আক্রান্ত স্থানে গরম বা ঠান্ডা প্রয়োগ করা ব্যথা এবং জালা পোড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ম্যাসাজ: আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সঠিক পায়ের যত্ন: আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে আরও স্নায়ুর ক্ষতি রোধ করতে আপনার পায়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে আরামদায়ক জুতা পরা, প্রতিদিন আপনার পায়ের দিকে খেয়াল   রাখা এবং আপনার পা পরিষ্কার ও শুকনা রাখা।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস, নিউরোপ্যাথিক ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই ধ্যান, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কৌশলগুলির মাধ্যমে স্ট্রেস কমনোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:  স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খাওয়া  সুস্থ থাকার জন খুবই দরকার। যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত  পানি পান করা। 

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?

এই রোগের ভয়াবহতা স্নায়ুর ক্ষতির তীব্রতা এবং মাত্রার উপর নির্ভর করে । সাধারণত এই  রোগ হলে হাতে, পায়ে বা শরীরে প্রচুর ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, যার ফলে প্রতিদিনের কাজ করতে কষ্ট হয়। কিছু ক্ষেত্রে, এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয় এবং যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

এছাড়াও, এর কারণে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং সমন্বয় তৈরী করতে সমস্যা হতে পারে যার ফলসরূপ পড়ে যাওয়া এবং ব্যথা পাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, এটি বিশেষ করে বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় । এডভান্স স্টেজে, রোগীর পেশী দুর্বল, ও শুঁকিয়া যায় এবং প্যরালাইসিস হতে পারে।

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, পায়ের আলসার এবং কখন কখনও হাত বা পায়ে পচন ধরতে পারে যার ফলে পচা ধরা অংশ কাটা লাগতে পারে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি রোগীর চিকিৎসা

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির চিকিৎসা[4] এর কারণ এবং লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর নির্ভর করে। এরমধ্যে রয়েছে:

ওষুধ: ব্যথার ওষুধ, যেমন ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) বা ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ, যেমন গ্যাবাপেন্টিন বা প্রিগাবালিন, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদি নিউরোপ্যাথি ডায়াবেটিস দ্বারা সৃষ্ট হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধগুলি নির্ধারিত হতে পারে।

ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপি পেশীর শক্তি এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করার জন্য অনুশীলনগুলিও সুপারিশ করা হয়।

সার্জারি: টিউমার অপসারণ বা নিউরোপ্যাথির কারণে ইনজুরী হলে মাঝে মধ্যে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

জীবনধারা পরিবর্তন: জীবনধারা পরিবর্তন করা, যেমন ধূমপান ত্যাগ করা এবং অ্যালকোহল সেবন কমানো, স্নায়ুর ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ভিটামিন: ভিটামিন B, B6, B12 এবং ফোলেট গ্রহণ কিছু নিউরোপ্যাথিতে অক্রান্ত রোগীর জন্য উপকারী হতে পারে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি, যা লুম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সোপ্যাথি বা ফেমোরাল নিউরোপ্যাথি নামেও পরিচিত, এটি এক ধরনের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি যা নিতম্ব, উরু এবং পায়ের স্নায়ুকে অক্রান্ত করে। প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির কারণ ভিন্ন হতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে, কারণ সনাক্ত করাই কঠিন হতে পারে। প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথির চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, সার্জারি এবং জীবনধারার পরিবর্তন। যাইহোক, চিকিৎসার লক্ষ্য সব সময় রোগ নিরাময় করা নয় বরং রোগের লক্ষণগুলি তীব্রতা কমানোও হতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুসারে অপনার ডাক্তার আপনাকে চিকিৎসার পরামশ দিবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নিউরোপ্যাথি অপরিবর্তনীয় হতে পারে, এবং চিকিত্সার লক্ষ্য হবে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে লক্ষণগুলির তীব্রতা কমানো যাতে আপনি সাবাভিক জীবন যাপন করতে পারেন ।

Reference

2. DIABETIC PROXIMAL NEUROPATHY
GETTING AT THE ROOT OF THE PROBLEM
NEW INSIGHTS INTO DIAGNOSIS AND TREATMENT

https://journals.lww.com/neurotodayonline/fulltext/2004/02000/diabetic_proximal_neuropathy__getting_at_the_root.15.aspx

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This field is required.

This field is required.

পরামর্শ নিতে 01975451525