আপনার কনুই ব্যথায় কী করবেন / কাপড় নিংড়াতে গিয়ে কনুই ব্যাথা। কাপড় নিংড়ানোর সময় কনুইয়ের ব্যথা সম্ভবত টেন্ডোনাইটিস বা “টেনিস এলবো” থেকে হতে পারে, যেখানে কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডন অতিরিক্ত চাপের কারণে আঘাত প্রাপ্ত হয়। বিশেষ করে বারবার কাপড় নিংড়ানোর মতো ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ করলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনার কনুই ব্যথায় কী করবেন
জগে পানি ঢালতে কনুই ব্যাথা। জগে পানি ঢালতে গিয়ে কনুইয়ে ব্যথা হওয়া সম্ভবত “গলফার্স এলবো” বা “মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস” এর লক্ষণ হতে পারে, যেখানে কনুইয়ের অভ্যন্তরীণ টেন্ডনে চাপ পড়ে। এই অবস্থায় হাতের মুভমেন্টে, বিশেষ করে ভারি কিছু তোলার সময়, ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
হাতের কনুই ব্যাথার কারণ
কনুইয়ের ব্যথার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে, এবং এগুলো সাধারণত হাতের অস্বাভাবিক বা পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ, আঘাত, বা দীর্ঘ দিনের শারীরিক চাপের ফল হতে পারে। নিচে কনুই ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
টেনিস এলবো (ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস): এটি কনুইয়ের একটি সাধারণ সমস্যা, যা হাতের পেশী ও টেন্ডনে পুনরাবৃত্তি মূলক চাপের কারণে ঘটে। এই অবস্থায় কনুইয়ের বাইরের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে যখন হাত দিয়ে কোনো কিছু তোলা, ঘোরানো, বা টান দেওয়া হয়। এটি সাধারণত টেনিস বা অনুরূপ খেলা খেলার সময় বেশি দেখা যায়, কিন্তু ঘরের কাজ, যেমন কাপড় নিংড়ানো, ভারী জিনিস তোলা, বা পানি ঢালার মতো কাজেও হতে পারে।
বাম হাতের জয়েন্টে ব্যাথা হয় কেন
গলফার্স এলবো (মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস): গলফার্স এলবো হলো এক ধরনের টেন্ডন সংক্রান্ত প্রদাহ, যা কনুইয়ের ভিতরের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত হাতের পেশী ও টেন্ডনের অতিরিক্ত ব্যবহার বা পুনরাবৃত্তি মূলক চাপের কারণে ঘটে। ভারি কিছু তোলা, পানি ঢালা, বা কাপড় নিংড়ানোর মতো কাজের ক্ষেত্রে এই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। যদিও এর নাম গলফ খেলার নামে হয়েছে তবে এটি খেলোয়ার ছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝেও হতে দেখা যায়, যেমন নির্মাণ শ্রমিক, বা যেকোনো কাজ যেখানে হাত ঘোরানোর বা চাপ দেওয়ার প্রয়োজন বেশি হয় (১)।
বার্সাইটিস: বার্সাইটিস হলো কনুইয়ের বারসা এর প্রদাহ, যা হাড়, পেশী এবং ত্বকের মধ্যে বর্তী ঘর্ষণ কমাতে কাজ করে। এটি সাধারণত কনুইয়ের ওপর দীর্ঘ সময় ভর দেওয়া, আঘাত বা পুনরাবৃত্তি মূলক কার্যকলাপের কারণে হয়। বিশেষ করে কনুই বাঁকানো বা সোজা করার সময় ব্যথা অনুভূত হয় এমনকি কনুই ফুলেও যায় (২)।
টেন্ডোনাইটিস: টেন্ডোনাইটিস হলো টেন্ডনের প্রদাহ, যা সাধারণত কনুইয়ের টেন্ডনে অতিরিক্ত চাপ বা পুনরাবৃত্তি মূলক কার্যকলাপের কারণে ঘটে। এটি এমন সব কাজের কারণে হতে পারে যেখানে কনুইয়ের পেশীতে বারবার টান পড়ে বা চাপ দিতে হয়, যেমন ভারী জিনিস তোলা, পানি ঢালা বা দীর্ঘ সময় একই ধরনের হাতের মুভমেন্ট করা। টেন্ডোনাইটিসের কারণে কনুইয়ে ব্যথা, ফোলাভাব এবং নড়াচড়ায় অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে (৩)।
ডান হাতের জয়েন্টে ব্যাথা
আর্থ্রাইটিস: সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ঘটে, তবে অন্য কারণেও হতে পারে, যেমন আঘাত, অতিরিক্ত ব্যবহার বা জয়েন্টের ক্ষয় জনিত সমস্যা। আর্থ্রাইটিসের ফলে কনুইয়ে ব্যথা, ফোলা ভাব, শক্তভাব, এবং নড়াচড়ায় সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘ সময় বিশ্রামের পর কনুই নাড়াতে সমস্যা হতে পারে।
আঘাত বা ফ্র্যাকচার: কনুইয়ে সরাসরি আঘাত লাগলে বা দুর্ঘটনার ফলে হাড় ভেঙে গেলে তীব্র ব্যথা, ফোলা ভাব, ও নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। আঘাত জনিত কনুই ব্যথা তৎক্ষণাৎ অনুভূত হতে পারে এবং হাড়ের ফ্র্যাকচার হলে ব্যথা আরও তীব্র হয়। ফ্র্যাকচারের ফলে কনুই ভাঁজ বা সোজা করা কঠিন হয়ে পরে এবং আঘাতের স্থান লাল বা নীল হয়ে ফুলে ওঠে। আপনার কি কাঁধের জয়েন্টে ব্যাথা
কাপড় নিংরাতে গিয়ে ব্যাথা হলে করনীয়
কাপড় নিংড়ানোর সময় কনুইয়ে ব্যথা হলে নিচের কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন:
বিশ্রাম নিন: কনুইয়ে ব্যথা হলে প্রথম করণীয় হলো হাত কে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া। যেকোনো পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ থেকে বিরত থাকা, যেমন কাপড় নিংড়ানো বা ভারি কিছু তোলা, কনুইয়ের টেন্ডন ও পেশীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই ব্যথা কমাতে হলে এমন কাজ থেকে বিরতি নিতে হবে এবং হাত কে বিশ্রামে রাখতে হবে। বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে টেন্ডন ও পেশী গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে, যা দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
বরফ দেয়া: ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ দিলে তা টিস্যুর প্রদাহ প্রশমিত করে এবং ব্যথা উপশম করে। বরফ দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার দেয়া উচিত, প্রতি বার ১০-১৫ মিনিটের জন্য। বরফ সরাসরি ত্বকে না লাগিয়ে, পাতলা কাপড়ে মোড়ানো বরফ বা আইস প্যাক ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ব্যথানাশক ওষুধ: সাধারণত নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs), যেমন ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন, ব্যবহৃত হয়, যা প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা উপশমে সহায়তা করে। এই ধরনের ওষুধ কনুইয়ের টেন্ডন বা পেশীতে সৃষ্ট প্রদাহ কমিয়ে সাময়িক আরাম দেয় এবং কাজের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা
কনুই সাপোর্ট: কনুই সাপোর্ট বা ব্রেস কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডনের ওপর থেকে চাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে ব্যথা উপশম হয় এবং ব্যথামুক্ত ভাবে কাজ করা যায়। বিশেষ করে পুনরাবৃত্তি মূলক কাজ করার সময় এটি কনুইকে স্থিতিশীল রাখে এবং অতিরিক্ত নড়াচড়া থেকে রক্ষা করে, যা কনুইয়ের হিলিং প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে। কনুই সাপোর্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে দৈনন্দিন কাজের সময় কনুইয়ের ওপর বাড়তি চাপ কমবে, ফলে পুনরায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপি ও ম্যানুয়াল এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডনের সঠিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এবং ব্যথা কমানোর একটি কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিসক কনুইয়ের জন্য সঠিক স্ট্রেচিং ও শক্তিবর্ধক ব্যায়াম নির্ধারণ করেন, যা টেন্ডনের নমনীয়তা ও পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে, ফলে পুনরায় আঘাতের সম্ভাবনা কমে। এছাড়া, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বিভিন্ন ম্যানুয়াল থেরাপিউটিক টেকনিক ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে SDM (Structural Diagnonis & Management) অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করলেও একমাত্র ASPC ম্যানিপুলেশন থেরাপি সেন্টারে (House #U64, Noorjahan Road Mohammadpur, Dhaka-1207) SDM (Structural Diagnonis & Management) টেকনিক ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের সঠিক অ্যাসেসমেন্টে করে চিকিৎসা প্রদান করা হয় যাতে করে রোগী দ্রুত সুস্থতা লাভ করে এবং ব্যথা পুনঃরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন: ভারী কাজ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ ভারী কাজ বা পুনরাবৃত্তি মূলক মুভমেন্ট কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ব্যথা কমানোর জন্য এবং কনুইকে সুস্থ রাখতে, কাপড় নিংড়ানো, ভারী কিছু ওঠানো, বা অন্য যেকোনো কাজ যা কনুইতে চাপ সৃষ্টি করে তা এড়িয়ে চলা জরুরি। কনুইয়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের কাজ থেকে বিরতি নেওয়া উচিত, যাতে টেন্ডন ও পেশী গুলো আরাম পায় এবং প্রদাহ বা ব্যথা আর বাড়তে না পারে। পুনরায় কাজ করার আগে ধীরে ধীরে কনুইয়ের শক্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন (৪)।
তথ্যসূত্র
- Amin, N.H., Kumar, N.S. and Schickendantz, M.S., 2015. Medial epicondylitis: evaluation and management.JAAOS-Journal of the American Academy of Orthopaedic Surgeons, 23(6), pp.348-355. https://journals.lww.com/jaaos/FullText/2015/06000/Medial_Epicondylitis__Evaluation_and_Management.4.aspx
- Compere, E.L. and Stack, J.K., 1949. Acute and chronic bursitis in the region of the elbow joint.Surgical Clinics of North America, 29(1), pp.155-162. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0039610916326408
- Nirschl, R.P. and Ashman, E.S., 2003. Elbow tendinopathy: tennis elbow.Clinics in sports medicine, 22(4), pp.813-836. https://www.sportsmed.theclinics.com/article/S0278-5919(03)00051-6/abstract
- Nirschl, R.P., 1973. Tennis elbow.Orthopedic Clinics of North America, 4(3), pp.787-800. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0030589820323518
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024
- হাঁটু ব্যথার জন্য কার্যকারী ব্যায়াম গুলো জেনে নিন - November 28, 2024
- লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কমানোর উপায়? ও স্পন্ডাইলোসিস কি? - November 5, 2024