থ্যালাসেমিয়া কি ও কেন হয় এবং প্রতিরোধে করনীয় | থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্ত রোগ যেখানে দেহের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাধা গ্রস্ত হয়, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের এক ধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেন পরিবহন করে এবং লোহিত রক্তকণি কাকে কার্যকর রাখে।

থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না, যার ফলে লোহিত কণিকার সংখ্যা কমে যায় এবং শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এটি দুটি প্রধান ধরনে বিভক্ত: থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজর একটি গুরুতর রূপ যেখানে নিয়মিত রক্তদান প্রয়োজন, অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর তুলনা মূলক ভাবে মৃদু এবং সাধারণত কোনো গুরুতর উপসর্গ দেখা যায় না।

থ্যালাসেমিয়া কেন হয়

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ, যার প্রধান কারণ হলো হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিন গুলির মিউটেশন বা পরিবর্তন। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের একটি প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকা গুলির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি প্রধান প্রোটিন সাবউনিট আছে: আলফা (α) এবং বিটা (β)। থ্যালাসেমিয়া হয় যখন এই সাবউনিট গুলির যে কোনো একটির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এটি সাধারণত বংশগত ভাবে পিতা মাতা থেকে সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।

আলফা থ্যালাসেমিয়া: আলফা থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্তরোগ, যা হিমোগ্লোবিনের আলফা গ্লোবিন চেইনের উৎপাদন কারী জিন গুলির মিউটেশন বা ডিলিশনের ফলে ঘটে। হিমোগ্লোবিনের আলফা সাবউনিট গঠনের জন্য চারটি জিন প্রয়োজন, যা ১৬ নম্বর ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। যখন এই চারটির মধ্যে একটি বা একাধিক জিন অনুপস্থিত থাকে বা মিউটেশন ঘটে, তখন আলফা থ্যালাসেমিয়া হয়।

এর ভয়াবহতা নির্ভর করে কতটি জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর। যদি একটি বা দুটি জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সাধারণত স্বল্প মাত্রায় রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। কিন্তু তিনটি জিন ক্ষতিগ্রস্ত হলে হিমোগ্লোবিন এইচ রোগ (HbH disease) সৃষ্টি হয়, যা মাঝারি থেকে গুরুতর রক্ত শূন্যতার কারণ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা হলো চারটি জিনই ক্ষতিগ্রস্ত হলে, যা হিমোগ্লোবিন বার্টস হাইড্রপস ফিটালিস (Hb Bart’s Hydrops Fetalis) সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় ভ্রূণ সাধারণত জন্মের আগে বা জন্মের পরপরই মারা যায় ()।

বিটা থ্যালাসেমিয়া: বিটা থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্ত রোগ, যা হিমোগ্লোবিনের বিটা গ্লোবিন চেইনের উৎপাদনে জড়িত দুটি জিনের মিউটেশন বা ডিলিশনের কারণে ঘটে। বিটা গ্লোবিন সাব ইউনিট গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি জিন ১১ নম্বর ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। যখন এই দুটি জিনের মধ্যে একটি বা উভয়ই মিউটেটেড হয়, তখন বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়। যদি একটি জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়

তাহলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা ক্যারিয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়, যা সাধারণত কোনো গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে না। তবে দুটি জিনই ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি এনিমিয়া দেখা দেয়, যা মারাত্মক রক্ত শূন্যতার কারণ হয় এবং নিয়মিত রক্তদান ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বিটা থ্যালাসেমিয়ার গুরুতরতা নির্ভর করে মিউটেশনের ধরন এবং তা কতটা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় তার উপর ()।

থ্যালাসেমিয়া মূলত তখনই হয় যখন একজন ব্যক্তি তাদের পিতা মাতা উভয়ের থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত জিন পায়। অর্থাৎ, যখন কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া মাইনর হয়, তখন তারা একপক্ষীয় ক্ষতিগ্রস্ত জিন ধারণ করে, যা তাদের সন্তানদের মধ্যে রোগটি ছড়াতে পারে। থ্যালাসেমিয়া মেজর ঘটে যখন পিতা-মাতা দুই পক্ষ থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত জিন পাওয়া যায়, যা রোগের গুরুতর রূপ সৃষ্টি করে। শিশুদের হাম কেন হয় এবং শিশুদের হাম হলে কি করনীয়

আরও পড়ুন  ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ গুলো রোগের ধরন ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। থ্যালাসেমিয়া মাইনর সাধারণত হালকা রক্ত শূন্যতা সৃষ্টি করে, যা তেমন কোনো উল্লেখ যোগ্য উপসর্গ তৈরি করে না। তবে থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি এনিমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন এইচ রোগের মতো গুরুতর ধরন গুলোতে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। নিচে থ্যালাসেমিয়ার সাধারণ লক্ষণ গুলো বর্ণনা করা হলো

রক্তশূন্যতা (Anemia) থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ হলো রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়া, যা শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের অভাবে হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের একটি প্রোটিন, যা লোহিত রক্ত কণিকার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায় এবং দেহের কোষ ও টিস্যু গুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না।

এর ফলে রোগীরা সব সময় দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, এবং শ্বাস কষ্ট অনুভব করেন। দীর্ঘ মেয়াদী এবং গুরুতর অ্যানিমিয়া রোগীদের হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা এবং অন্যান্য গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীরা অত্যন্ত গুরুতর অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন, যার জন্য নিয়মিত রক্তদান প্রয়োজন হয়। আর্থ্রাইটিস কী ও কেন হয়

হাড়ের পরিবর্তন (Bone Deformities): থ্যালাসেমিয়া রোগীরা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে না পারার কারণে, শরীরের হাড়ের মজ্জা লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির প্রচেষ্টা বাড়ায়। এই অতিরিক্ত কার্যকলাপের ফলে হাড়ের মজ্জা ফুলে ওঠে এবং হাড়ের গঠন পরিবর্তিত হতে শুরু করে। মুখের হাড়ের পরিবর্তনের ফলে মুখ মণ্ডল ফোলা এবং বিকৃত হতে পারে, এবং খুলির হাড় মোটা হয়ে যেতে পারে।

এটি মুখ মণ্ডলের একটি নির্দিষ্ট আকৃতি সৃষ্টি করতে পারে, যা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। এই পরিবর্তন গুলো শুধু শারীরিক সৌন্দর্য বিকৃতি নয়, বরং অন্যান্য হাড়ের জটিলতার কারণও হতে পারে, যেমন হাড়ের দুর্বলতা এবং ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি ()।

বিলম্বিত শারীরিক ও মানষিক বিকাশ (Delayed Growth and Development): যখন দেহ পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরের কোষ ও টিস্যু গুলিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই অক্সিজেনের অভাব শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ কে বাধা গ্রস্ত করে। থ্যালাসেমিয়া মেজর বা গুরুতর থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত তাদের বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা ও ওজন নিয়ে বড় হয় এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিলম্ব দেখা যায়।

এছাড়াও, এই রোগীদের শরীরের হাড়ের মজ্জার মাত্রাতিরিক্ত কার্যক্রমের কারণে হাড়ের বিকৃতি দেখা দিতে পারে, যা শারীরিক বিকাশে আরও সমস্যা সৃষ্টি করে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য নিয়মিত রক্তদান, পুষ্টিকর খাদ্য, এবং বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় ()।

তিল্লি ও যকৃতে বৃদ্ধিপ্রাপ্তি (Enlarged Spleen and Liver): থ্যালাসেমিয়া রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো তিল্লি (spleen) ও যকৃতের (liver) বৃদ্ধিপ্রাপ্তি, যা মূলত শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার অস্বাভাবিক ভাঙনের ফলে ঘটে। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিক গঠন ও লোহিত রক্ত কণিকার ভঙ্গুরতা দেখা যায়। ফল স্বরূপ, তিল্লি এই অস্বাভাবিক রক্তকণিকা গুলো কে ধ্বংস করতে অতিরিক্ত কাজ করে, যা তিল্লির আকার বাড়িয়ে তোলে (স্প্লেনোমেগালি)।

আরও পড়ুন  ওজন কমানোর উপায় ডায়েট ভিডিও সহ

তিল্লির এই অতিরিক্ত কাজের ফলে শরীরে আরও রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়, এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একই ভাবে, যকৃতও ক্ষতি গ্রস্ত লোহিত রক্ত কণিকা গুলো প্রক্রিয়াজাত করতে কাজ করে, যার ফলে যকৃতের আকার বৃদ্ধি পায় (হেপাটোমেগালি)। এই বৃদ্ধি প্রাপ্তি রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে শারীরিক অস্বস্তি, পেট ফাঁপা, এবং কখনও কখনও যকৃতের কার্য ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া অন্তর্ভুক্ত ()।

ত্বকের হলদে ভাব (Jaundice): থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লোহিত রক্তকণিকা অস্বাভাবিক ভাবে ভঙ্গুর হয় এবং দ্রুত ভেঙে যায়, ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের ভাঙনের পর বিলিরুবিন নামক একটি উপাদান তৈরি হয়। সাধারণত, লিভার এই বিলিরুবিন কে প্রক্রিয়াজাত করে এবং শরীর থেকে বের করে দেয়।

তবে থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের উৎপাদন এতটাই বেড়ে যায় যে লিভার এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় না। এর ফলে বিলিরুবিন রক্তে জমা হয়, যা ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হলদে ভাব সৃষ্টি করে। এই অবস্থা ক্রমাগত থাকলে এটি রোগীর স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং হেপাটোবিলিয়ারি জটিলতা অন্তর্ভুক্ত।

হৃদযন্ত্রের সমস্যা (Heart Complications): থ্যালাসেমিয়া রোগীরা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে না পারার কারণে রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা কমে যায়, যা হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে হৃদযন্ত্র কে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতার কারণ হতে পারে

যেমন হৃদপিণ্ডের বৃদ্ধি (cardiomegaly), হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা (heart failure), এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (arrhythmia)। তাছাড়া, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়, যা হৃদযন্ত্রের টিস্যুতে আয়রন জমার ফলে হৃদযন্ত্রের কার্য ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। আয়রন জমার কারণে হৃদযন্ত্রের মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিসও হতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা আরও কমিয়ে দেয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় ()।

মূত্রের গাঢ় রং (Dark Urine): থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দেহে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের কারণে লোহিত রক্তকণিকা দ্রুত ভেঙে যায়, যার ফলে হিমোগ্লোবিনের ভাঙনের পর বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়। সাধারণত, লিভার এই বিলিরুবিন কে প্রক্রিয়াজাত করে এবং শরীর থেকে তা মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। তবে থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের উৎপাদন এতটাই বেড়ে যায় যে এর অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তে জমা হয় এবং মূত্রে নির্গত হয়, যা মূত্রের রং গাঢ় করে দেয়। এই অবস্থা কে হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মধ্যে বিশেষ ভাবে দেখা যায়। মূত্রের গাঢ় রং সাধারণত রক্তে এবং দেহের টিস্যুতে বিলিরুবিনের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ এবং এটি অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ও ইঙ্গিত দিতে পারে, যেমন যকৃতের কার্য কারিতা কমে যাওয়া।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে করনীয়

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা বংশগত ভাবে এই রোগের বিস্তার রোধে সহায়ক হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের মূল উপায় গুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো

জেনেটিক কাউন্সেলিং এবং প্রাক-বিবাহ পরীক্ষা: যেহেতু থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ, তাই জেনেটিক কাউন্সেলিং এবং প্রাক-বিবাহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। যারা থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার বা মাইনর হিসেবে চিহ্নিত, তাদের জন্য জেনেটিক কাউন্সেলিং করার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করা এবং সম্ভাব্য সন্তানদের মধ্যে এই রোগের বিস্তার রোধের উপায় গুলো সম্পর্কে জানানো যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি বহনকারী দম্পতিদের সন্তানের মধ্যে রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন  মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার | মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ

প্রি-ন্যাটাল ডায়াগনসিস: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রি-ন্যাটাল ডায়াগনসিসের মাধ্যমে ভ্রূণের থ্যালাসেমিয়া স্ট্যাটাস নির্ধারণ করা যেতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া মেজর বা মাইনর হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা তা নির্ধারণ করা হয়। এই ধরনের ডায়াগনোসিসের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে যে গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাওয়া হবে কি না, যা থ্যালাসেমিয়ার গুরুতর রূপ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: জনসাধারণের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান গুলোর মাধ্যমে জনগণকে থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি, এটি প্রতিরোধের উপায়, এবং জেনেটিক পরীক্ষা সম্পর্কে জানানো যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া রোগটির প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে এবং বংশগত ভাবে এর বিস্তার রোধ করবে।

জেনেটিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জেনেটিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে, বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া-প্রবণ এলাকা গুলোতে। এই ধরনের প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হবে।

প্রাক-বিবাহ থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং: কিছু দেশে প্রাক-বিবাহ থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। এই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বিবাহের পূর্বে উভয় পক্ষের থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার স্ট্যাটাস নির্ধারণ করা হয়, যা সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়নে সহায়ক হতে পারে।

তথ্যসূত্র

  1. Higgs, D.R., Engel, J.D. and Stamatoyannopoulos, G., 2012. Thalassaemia.The lancet379(9813), pp.373-383. https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(11)60283-3/abstract
  2. Galanello, R. and Origa, R., 2010. Beta-thalassemia.Orphanet journal of rare diseases5, pp.1-15. https://link.springer.com/article/10.1186/1750-1172-5-11
  3. Shah, F.T., 2007.The relationship between non transferrin bound iron and iron overload in thalassaemia and sickle syndromes. University of London, University College London (United Kingdom). https://search.proquest.com/openview/11afe03ba24175af6d9a202f2660e1d1/1?pq-origsite=gscholar&cbl=2026366
  4. De Sanctis, V., Soliman, A.T., Elsedfy, H., Yassin, M., Canatan, D., Kilinc, Y., Sobti, P., Skordis, N., Karimi, M., Raiola, G. and Galati, M.C., 2013. Osteoporosis in thalassemia major: an update and the I-CET 2013 recommendations for surveillance and treatment.Pediatric endocrinology reviews: PER11(2), pp.167-180. https://europepmc.org/article/med/24575552
  5. Modell, B. and Darlison, M., 2008. Global epidemiology of haemoglobin disorders and derived service indicators.Bulletin of the World Health Organization86(6), pp.480-487. https://www.scielosp.org/pdf/bwho/v86n6/a17v86n6.pdf
  6. Borgna-Pignatti, C. and Gamberini, M.R., 2011. Complications of thalassemia major and their treatment.Expert review of hematology4(3), pp.353-366. https://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1586/ehm.11.29
Sep 06, 2022

হিপ ব্যথা

হিপ ব্যথা কি? হিপ ব্যথা হল হিপ জয়েন্টে বা তার চারপাশে অস্বস্তির…
0 0 প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা
পোস্ট রেটিং
0 মন্তব্য
প্রতিক্রিয়া
সমস্ত প্রতিক্রিয়া দেখুন
পরামর্শ নিতে 01877733322