আর্থ্রাইটিস কী ও কেন হয় | আর্থ্রাইটিস হলো একটি জটিল এবং বহুমুখী রোগ যা মূলত জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির প্রদাহের কারণে ঘটে। এটি প্রায়শই বয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সের মানুষই আথ্রাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। আথ্রাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জয়েন্টের ব্যথা, ফোলা, শক্তপোক্ততা, এবং জয়েন্টের গতিশীলতার সীমাবদ্ধতা এবং কখনও কখনও লালচে ভাব সৃষ্টি করতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

আর্থ্রাইটিস কী

আর্থ্রাইটিস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে এটির প্রধান দুইটি ধরন হল অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস। এছাড়াও, অন্যান্য আরও অনেক ধরনের আথ্রাইটিস আছে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকারের আথ্রাইটিসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

আর্থ্রাইটিস কত প্রকার

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: এটি আথ্রাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন, যা মূলত বয়সজনিত কারণে ঘটে। এই ধরনের আথ্রাইটিসে জয়েন্টের কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে, যার ফলে হাড়গুলি একে অপরের সাথে ঘর্ষণ লাগে। এটি সাধারণত হাঁটু, হিপ, হাত এবং মেরুদণ্ডের জয়েন্টে ঘটে।

রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব জয়েন্টের টিস্যুগুলির ওপর আক্রমণ করে। এর ফলে জয়েন্টের আস্তরণে প্রদাহ হয়, যা ব্যথা, ফোলা এবং জয়েন্ট বিকৃতির কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত হাত, কব্জি, হাঁটু এবং পায়ের জয়েন্টকে আক্রমণ করে।

গাউট: এই ধরনের আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টাল আকারে জমা হওয়ার মাধ্যমে তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে। গাউট সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলের জয়েন্টে বেশি আঘাত হানে।

অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস: এটি মেরুদণ্ডের আথ্রাইটিসের একটি ধরন যেখানে মেরুদণ্ডের ছোট ছোট জয়েন্টে প্রদাহ হয়। সময়ের সাথে সাথে, এটি মেরুদণ্ডের হাড়গুলিকে জোড়া লাগিয়ে দিতে পারে, যার ফলে মেরুদন্ডের নমনীয়তা কমে যায় এবং মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়।

জুভেনাইল আথ্রাইটিস: এটি এক ধরনের আথ্রাইটিস যা শিশুদের হয়ে থাকে। এর বিভিন্ন ধরন রয়েছে, এবং এটি শরীরের বিভিন্ন অংশকে আক্রান্ত করতে পারে।

সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস: এটি সোরিয়াসিস নামে পরিচিত চর্মরোগের সাথে সম্পর্কিত একটি আথ্রাইটিসের ধরন। এতে ত্বকে লালচে ফোলাভাব ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।

লুপাস আথ্রাইটিস: লুপাস একটি অটোইমিউন রোগ যা বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুর ওপর আঘাত হানে, যার মধ্যে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ

আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলি প্রকারভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

জয়েন্টে ব্যথা (Joint Pain): এটি আথ্রাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। ব্যথা শুরুতে মৃদু হতে পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি তীব্র হয়ে উঠতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আথ্রাইটিসের ব্যথা সাধারণত সকালের দিকে বা দীর্ঘক্ষণ বিশ্রামের পর বেশি অনুভূত হয় এবং দিনের বেলা কিছুটা কমে আসতে পারে। এছাড়া, ব্যথার পাশাপাশি জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় এমনকি ফুলেও যেতে পারে, যার ফলে রোগীর জয়েন্টের নড়াচড়ে এবং কাজের ক্ষমতা কমে যায়।

জয়েন্ট ফুলে যাওয়া (Swelling): আথ্রাইটিসে আক্রান্ত জয়েন্টগুলি প্রায়ই ফুলে যায়। ফোলাভাব সাধারণত জয়েন্টের ভেতরের প্রদাহের কারণে ঘটে, যেখানে জয়েন্টের তরল বেড়ে যায় ও টিস্যু ফুলে ওঠে। ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি জয়েন্টে ব্যথা থাকে এবং আক্রান্ত জয়েন্টটি স্পর্শ করলে উষ্ণ অনুভূত হয়।

জয়েন্টের শক্তপোক্ততা (Stiffness): আথ্রাইটিসের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল জয়েন্ট জমে যাওয়া যা সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর বেশি অনুভূত হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি জয়েন্টের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে সীমিত করে দেয়, ফলে রোগী হাত, পা, বা শরীরের অন্যান্য জয়েন্ট নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা অনুভব করেন। আথ্রাইটিসের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, জয়েন্টের স্টিফনেস খুবই সাধারণ এবং এটি প্রতিদিনের কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন  মাসল স্পাজমের চিকিৎসা

জয়েন্টের নমনীয়তা কমে যাওয়া (Reduced Range of Motion): আর্থ্রাইটিসের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো জয়েন্টের নমনীয়তা কমে যাওয়া, যা রোগটির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে ঘটে। জয়েন্টের নমনীয়তা হ্রাস পাওয়া মানে হলো আক্রান্ত জয়েন্টগুলোর স্বাভাবিক গতিশীলতা এবং কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। এটি প্রায়শই জয়েন্টের ভেতরে প্রদাহ, কার্টিলেজ ক্ষয়, বা হাড়ের বিকৃতির কারণে ঘটে। ফলস্বরূপ, রোগী নড়াচড়া করতে বা দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধার সম্মুখীন হন।

লালচে ভাব ও উষ্ণতা (Redness and Warmth): এটি জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের কারণে ঘটে। যখন জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তখন শরীরের রক্তনালীগুলো আক্রান্ত অংশে আরও বেশি রক্ত প্রবাহিত করে, যার ফলে জয়েন্টটি লালচে এবং উষ্ণ অনুভূত হয়। এই লক্ষণের সাথে ব্যথা এবং ফোলাভাবও থাকতে পারে এবং এটি আথ্রাইটিসের তীব্রতা নির্দেশ করে।

জয়েন্টের বিকৃতি (Joint Deformity): জয়েন্টের বিকৃতি বলতে জয়েন্টের স্বাভাবিক আকার এবং কাঠামোগত পরিবর্তন হওয়া বোঝায়, যা আথ্রাইটিসের কারণে কার্টিলেজ ক্ষয়, হাড়ের ক্ষতি, এবং প্রদাহের ফলস্বরূপ ঘটে। এই বিকৃতি প্রায়শই রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো ধরনের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণে জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ, জয়েন্টের লিগামেন্ট, টেন্ডন, এবং হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং জয়েন্টের স্বাভাবিক আকার বিকৃত হয়। এটি রোগীর গতিশীলতা এবং কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়, এমনকি দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করতেও অসুবিধা সৃষ্টি করে।

ক্লান্তি (Fatigue and Malaise): আথ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, যা শুধুমাত্র শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তির কারণে নয়, বরং শরীরের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়ার ফলেও ঘটে। রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, শরীরের ইমিউন সিস্টেম ক্রমাগতভাবে নিজস্ব টিস্যুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা শরীরের শক্তি হ্রাস করে এবং ক্লান্তির কারণ হয়। এই ক্লান্তি প্রায়ই সারাদিন স্থায়ী হতে পারে এবং কাজের ক্ষমতা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ক্লান্তির পাশাপাশি মনোযোগের ঘাটতি, খিটখিটে মেজাজ এবং মানসিক চাপেরও কারণ হতে পারে।

আর্থ্রাইটিস কি ভাল হয়

আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রগতিশীল রোগ, যা সাধারণত পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তবে, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আথ্রাইটিসের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং রোগের প্রগতি ধীর করা যায়। আথ্রাইটিসের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা, জয়েন্টের কার্যকারিতা বজায় রাখা, এবং রোগীর জীবনের গুণগত মান উন্নত করা। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত ওষুধ,  ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, এবং কখনও কখনও সার্জারি অন্তর্ভুক্ত থাকে। হাঁটুর জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস এ করণীয়

জীবনধারার পরিবর্তন, যেমন নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও আথ্রাইটিস সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব নয়, নিয়মিত চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিকাংশ রোগী তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে এবং একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হন (১)।

আর্থ্রাইটিস রোগীর খাবার

সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে আথ্রাইটিসের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাত্রার গুণমান উন্নত করা সম্ভব। নিচে আথ্রাইটিস রোগীদের জন্য উপযোগী এবং পরিহার্য খাবারগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:

উপযোগী খাবারসমূহ

  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:
    • ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ: সালমন, ম্যাকারেল, সার্ডিন ইত্যাদি মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
    • চিয়া বীজ ও ফ্ল্যাক্সসিড: এসব বীজও ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস এবং সহজেই খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
    • আখরোট: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • ফল ও সবজি:
    • বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাসবেরি ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকর।
    • পাতাযুক্ত সবজি: পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারে সমৃদ্ধ এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
    • সাইট্রাস ফল: কমলা, লেবু, গ্রেপফ্রুট ইত্যাদি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস, যা জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • পুরো শস্য:
    • ব্রাউন রাইস, ওটস, কুইনোয়া: এই শস্যগুলো ফাইবার ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    • গমের পাঁউরুটি ও পাস্তা: পরিশোধিত শস্যের বদলে পুরো শস্য ব্যবহারে পুষ্টিগুণ বাড়ে এবং প্রদাহ কমে।
  • বাদাম ও বীজ:
    • আখরোট, বাদাম, পেস্তা: স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিনের ভালো উৎস, যা হৃদযন্ত্র ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
    • কুমড়ার বীজ ও সূর্যমুখীর বীজ: খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • অলিভ অয়েল:
    • ভার্জিন অলিভ অয়েল: এতে ওলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
  • মসলা ও ভেষজ:
    • হলুদ: এর মধ্যে কারকিউমিন নামক উপাদান রয়েছে, যা শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী গুণাবলী ধারণ করে।
    • আদা: প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশমে সহায়ক।
    • রসুন: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী গুণে সমৃদ্ধ।
  • দই ও ফারমেন্টেড খাবার:
    • প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই, কেফির, কিমচি: এগুলো হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
  • গ্রিন টি:
    • গ্রিন টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং প্রদাহবিরোধী গুণাবলী রয়েছে, যা জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আরও পড়ুন  ACLইনজুরি গ্রেড 3 মিলিয়ে দেখুন আপনিও আক্রান্ত নোনতো

পরিহার্য খাবারসমূহ

  • প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত খাবার:
    • ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাক্স: এসব খাবারে উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট, সোডিয়াম ও প্রিজারভেটিভ থাকে, যা প্রদাহ বাড়াতে পারে।
  • চিনি ও মিষ্টি:
    • সফট ড্রিঙ্কস, মিষ্টান্ন, ক্যান্ডি: অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করে এবং ওজন বাড়ায়, যা আথ্রাইটিসের লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।
  • পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট:
    • সাদা রুটি, সাদা পাস্তা, সাদা চাল: এসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং প্রদাহের সাথে যুক্ত।
  • স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট:
    • লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, মার্জারিন: এসব খাবার প্রদাহ বাড়াতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
  • অ্যালকোহল:
    • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: এটি শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং কিছু আথ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, যেমন গাউট, এর লক্ষণগুলিকে তীব্রতর করতে পারে।
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম:
    • লবণাক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত সূপ ও সস: উচ্চ সোডিয়াম গ্রহণ শরীরে পানি ধরে রাখে এবং ফোলাভাব বাড়াতে পারে।

সাধারণ পরামর্শ

  1. ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা জয়েন্টের ওপর চাপ কমায় এবং আথ্রাইটিসের লক্ষণগুলি হ্রাস করে।
  2. পানি পান: পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরের টক্সিন দূর করা এবং জয়েন্টের লুব্রিকেশন বজায় রাখা সম্ভব।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  4. খাদ্যতালিকার বৈচিত্র্য: বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরের সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা উচিত।

আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা

আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা মূলত রোগের ধরন, তীব্রতা, এবং রোগীর ব্যক্তিগত চাহিদার ওপর নির্ভর করে। আথ্রাইটিস সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব না হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগের প্রগতি ধীর করা যায়। নিচে আথ্রাইটিসের সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ওষুধ

আথ্রাইটিসের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

অ্যানালজেসিক (Analgesics): যেমন অ্যাসিটামিনোফেন বা ট্রামাডল, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। এই ওষুধগুলি প্রদাহ কমায় না, তবে ব্যথা উপশমে কার্যকর।

আরও পড়ুন  কিডনি রোগীর খাবার তালিকা | কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs): যেমন আইবুপ্রোফেন  বা ন্যাপ্রোক্সেন , যা প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক।

কোর্টিকোস্টেরয়েডস (Corticosteroids): যেমন প্রেডনিসোন, যা দ্রুত প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।

ডিএমএআরডিএস (DMARDs – Disease-Modifying Antirheumatic Drugs): যেমন মেথোট্রেক্সেট, যা রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন আথ্রাইটিসের প্রগতি ধীর করতে ব্যবহৃত হয়।

ফিজিওথেরাপি

ব্যায়ামঃ ফিজিওথেরাপিস্টরা আথ্রাইটিস রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম নির্ধারণ করেন, যা জয়েন্টের নমনীয়তা, পেশির শক্তি এবং সামগ্রিক চলাফেরার ক্ষমতা বাড়ায়। এসব ব্যায়ামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

  • স্ট্রেচিং (Stretching): জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখতে এবং জয়েন্ট স্টিফনেস কমাতে সহায়ক।
  • স্ট্রেংথ ট্রেনিং (Strength Training): পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে, যা জয়েন্টের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • এরোবিক এক্সারসাইজ (Aerobic Exercise): হাঁটা, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামগুলিকে এরোবিক এক্সারসাইজ বলা হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।

ম্যানুয়াল থেরাপিঃ ম্যানুয়াল থেরাপি জয়েন্ট ও পেশির ওপর হাতে চাপ প্রয়োগ করে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে। এতে জয়েন্টের গতিশীলতা উন্নত হয় এবং রোগীকে আরও সহজে নড়াচড়া করতে সহায়তা করে।

গরম এবং ঠাণ্ডা থেরাপিঃ গরম এবং ঠাণ্ডার সেক প্রদাহ, ফোলাভাব এবং ব্যথা কমাতে কার্যকর। গরম সেক পেশি শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, যেখানে ঠাণ্ডা সেক প্রদাহ এবং ফোলাভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়।

একুয়াটিক থেরাপি (Aquatic Therapy)ঃ একুয়াটিক থেরাপি আথ্রাইটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকর। পানির প্লবতা রোগীদেরকে ব্যথামুক্তভাবে ব্যায়াম করতে সহায়তা করে, কারণ পানিতে শরীরের ওজন কমে যায় এবং জয়েন্টের ওপর চাপ হ্রাস পায় (২)।

সার্জারি

যদি ওষুধ ও থেরাপি যথেষ্ট কার্যকর না হয়, তবে সার্জারি করা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট (Joint Replacement): ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টটি কৃত্রিম জয়েন্ট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি সাধারণত হিপ বা হাঁটু জয়েন্টের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

জয়েন্ট ফিউশন (Joint Fusion): কিছু ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টগুলি জুড়ে করে দেওয়া হয়, যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র

  1. Gignac, M.A., Badley, E.M., Lacaille, D., Cott, C.C., Adam, P. and Anis, A.H., 2004. Managing arthritis and employment: making arthritis‐related work changes as a means of adaptation.Arthritis Care & Research51(6), pp.909-916. https://acrjournals.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/art.20822
  2. Iversen, M.D., 2010. Physical therapy for older adults with arthritis: what is recommended?.International Journal of Clinical Rheumatology5(1), p.37. https://search.proquest.com/openview/729fabb0b498b64d93cf975301d81ba7/1?pq-origsite=gscholar&cbl=55174
0 0 প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা
পোস্ট রেটিং
0 মন্তব্য
প্রতিক্রিয়া
সমস্ত প্রতিক্রিয়া দেখুন
পরামর্শ নিতে 01877733322