রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কি?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) হল এক ধরনের অটোইমিউন রোগ, যা প্রধানত জয়েন্ট গুলিতে প্রদাহ, ব্যথা, এবং স্থূলতা সৃষ্টি করে। এই অবস্থায়, শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুল করে সুস্থ টিস্যু গুলি কে হামলা করে, যা প্রদাহ তৈরী করে এবং টিস্যুর ক্ষতি সাধন করে। জয়েন্টের চারপাশের সাইনোভিয়াম নামক টিস্যুর ও প্রদাহ হয়।

এই প্রদাহ জয়েন্টের কার্টিলেজে ক্ষতি করে, যা হাড় এবং জয়েন্টকে আচ্ছাদন করে এবং তাদের সংযোজনে সাহায্য করে। কার্টিলেজের ক্ষতি হলে, জয়েন্টের মধ্যে হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণ বাড়ে, যা আরো ব্যথা এবং স্থূলতা তৈরি করে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ফলে জয়েন্টের আকার ও আকৃতি গত পরিবর্তন হতে পারে, এবং অবশেষে জয়েন্টের কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। হাঁটুর জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস এ করণীয়

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলে কি হয়?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যা সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, কব্জি, এবং ঘাড়ের জয়েন্ট গুলি তে ব্যথা হয় এবং জয়েন্ট গুলি ফুলে যায়। এটি প্রধানত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তবে বর্তমান সময়ে জীবন যাত্রার পরিবর্তনের ফলে যুবকদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস শুধু সন্ধিস্থলে ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আরও গুরুতর স্বাস্থ্য জনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এই রোগটি যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি না শুধু জয়েন্ট এবং হাড়ের ক্ষতি ঘটাতে পারে, বরং চোখ, ত্বক, এবং ফুসফুস সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ গুলিতেও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এর ফলে রোগীর জীবন যাত্রা ও দৈনন্দিন কাজ কর্মে গুরুতর বিঘ্ন ঘটতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ গুলি অনেক সময় বারবার ফিরে আসতে পারে, যা রোগীর মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে। অতএব, এই রোগের প্রতি সঠিক মনোযোগ ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। Diet and Exercise Plans Tailored for Osteoarthritis Patients

. জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ বা আঘাত: শারীরিক পরিশ্রমের ফলে হাড়ের জয়েন্ট গুলিতে প্রায়শই অতিরিক্ত চাপ বা আঘাত লাগতে পারে। এই ধরনের চাপ বা আঘাত কার্টিলেজ, যা হাড়ের পৃষ্ঠকে মসৃণ রাখে এবং জয়েন্টের ঘর্ষণ কমায়, তার ক্ষতি করতে পারে। ফলে জয়েন্টের টিস্যু ও হাড়ে প্রদাহ ও ব্যথা সৃষ্টি হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ঝুঁকি বাড়ে, কারণ বয়সের সাথে কার্টিলেজের মান হ্রাস পায় এবং তা আর আগের মতো সহনশীল থাকে না। এই কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা বাড়ে, যেখানে কার্টিলেজের ক্ষতি এবং হাড়ের পরিবর্তন ঘটে।

. ধূমপান ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: ধূমপান এবং অলস জীবন ধারার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধূমপানের ফলে শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কমে যায় এবং এর ফলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন ব্যাধি গুলির ঝুঁকি বাড়ে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক টিস্যু গুলিকে আক্রমণ করে, যা জয়েন্টে প্রদাহ এবং ক্ষতি সৃষ্টি করে। এছাড়াও, শারীরিক দুর্বলতার ফলে জয়েন্ট এবং মাংস পেশীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে, যা জয়েন্টের ব্যথা এবং স্থূলতার সম্ভাবনা বাড়ায়। হাঁটুর জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস এ করণীয়

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের লক্ষণ ?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) একটি ক্রনিক অটোইমিউন রোগ যা মূলত জয়েন্ট গুলি তে প্রদাহ এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। এর লক্ষণ ও উপসর্গ গুলি হল:

  • জয়েন্টে ফোলা এবং উষ্ণতা: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত জয়েন্ট গুলি ফুলে যায়, উষ্ণ হয়ে ওঠে এবং তাতে ব্যথা অনুভূত হয়। এই প্রদাহ সাধারণত জয়েন্টের সাইনোভিয়াল টিস্যুতে ঘটে যা জয়েন্টের গতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া: বিশেষ করে সকালে বা দীর্ঘক্ষণ বিশ্রামে থাকার পরে জয়েন্টে জমে যাওয়া অনুভূত হয়। এটি সাইনোভিয়াল প্রদাহ এবং টিস্যুর ক্ষতির ফলে ঘটে।
  • ক্লান্তি, জ্বর এবং ক্ষুধামন্দা: RA এর ফলে শরীর অত্যধিক শক্তি হারায়, যা ক্লান্তি, অল্প জ্বর এবং ক্ষুধা মন্দার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন  প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি ও এটি দূর করার উপায়

প্রারম্ভিক পর্যায়ে, RA সাধারণত ছোট জয়েন্ট গুলিতে প্রভাব ফেলে, যেমন হাতের এবং পায়ের আঙ্গুল গুলিতে। রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে, লক্ষণ গুলি বৃহত্তর জয়েন্ট গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন কব্জি, হাঁটু, গোড়ালি, কনুই, নিতম্ব, এবং কাঁধে। এই রোগে সাধারণত শরীরের উভয় পাশের জয়েন্ট গুলো একই সাথে আক্রান্ত হয়।

প্রায় ৪০% RA রোগীরা জয়েন্টের বাইরে অন্যান্য লক্ষণ অনুভব করে, যেমন:

  • চামড়া: রোগের ফলে চামড়ায় র‍্যাশ বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
  • চোখ: চোখে লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া এবং শুষ্কতা অনুভূত হতে পারে।
  • শ্বাসযন্ত্র: শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
  • হার্ট: হার্টের প্রদাহ এবং হার্ট ভাল্ভের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • কিডনি: কিডনি ফাংশনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
  • লালা গ্রন্থি: মুখে শুষ্কতা এবং লালা নিঃসরণে সমস্যা।
  • স্নায়ু টিস্যু: স্নায়ুতে ব্যথা এবং অসাড়তা।
  • অস্থি মজ্জা: রক্ত তৈরির সমস্যা।
  • রক্তনালী: রক্তনালীর প্রদাহ এবং ব্লকেজ।

লক্ষণ গুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্ব পূর্ণ হলেও, রোগ নির্ণয়ের জন্য এ গুলি যথেষ্ট নয়। সঠিক নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষা প্রয়োজন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য, যাতে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এই লক্ষণ গুলি রোগের প্রাথমিক ইঙ্গিত দেয় এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘ মেয়াদী, প্রদাহ জনিত রোগ, যা মূলত জয়েন্ট গুলিতে প্রদাহ ও ব্যথা সৃষ্টি করে। এই রোগ সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় যোগ্য নয়, তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে, রোগীর অবস্থার উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় মেডিকেশন এবং ফিজিওথেরাপির মিশ্রণ অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় তিন ধরনের ঔষধের ব্যবহার হয়:

১। অ্যানালজেসিক বা ব্যথানাশক ঔষুধ: এ গুলি মূলত ব্যথা উপশম করে। এর মধ্যে প্রচলিত ঔষুধ গুলি হলো:

  • অ্যাসপিরিন
  • আইবুপ্রফেন
  • কিটোপ্রফেন
  • ন্যাপ্রোক্সেন
  • পাইরোক্সিকাম

২। অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বা প্রদাহ বিরোধী ঔষুধ: এই ধরনের ঔষুধ প্রদাহ হ্রাস করে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।

৩। ডিএমএআরডি বা ডিজিজমডিফাইং অ্যান্টিরিউম্যাটিক ড্রাগস: এই ধরনের ঔষুধ রোগের প্রগতিকে ধীর করে এবং জয়েন্টের ক্ষতি কমিয়ে আনে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • গোল্ড (সোডিয়াম অরোথিওম্যালেট) – এটি ইনজেকশন আকারে নেয়া যায় এবং মুখেও খাওয়া যায়, তবে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার উচিত নয়।
  • সালফাস্যালাজিন
  • পেনিসিলামাইন
  • ক্লোরোকুইন
  • ড্যাপসন এবং লিভামিসল

এছাড়াও, স্টেরয়েড এবং জয়েন্টে ইনজেকশনের ব্যবহার এই রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি গুলি প্রয়োগ করে রোগীরা তাদের উপসর্গ গুলি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে ফিজিওথেরাপী

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির পদ্ধতি একটি অন্যতম মূল অংশ। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের থেরাপি এবং ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত থাকে যা রোগীর ব্যথা হ্রাস এবং জয়েন্ট মোবিলিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক।

১। ঠাণ্ডা এবং গরম সেঁক: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের বিভিন্ন পর্যায় অনুযায়ী ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক দেয়া হয়।

  • প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীদের ক্ষেত্রে বরফ থেরাপী ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যথা ও প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করে।
  • ক্রনিক পর্যায়ের রোগীদের জন্য গরম সেঁকের ব্যবহার করা হয় যা পেশী ও জয়েন্টের শিথিলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা উপশম করে। এই সিদ্ধান্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নির্ধারণ করেন।
আরও পড়ুন  ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো জেনে নিন

২। টেন্স মেশিন: এই মেশিন ছোট ছোট ইলেকট্রিকাল ইম্পালস ব্যবহার করে ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

৩। হাইড্রোথেরাপীবেলেনোথেরাপী: জলের মধ্যে বিশেষ ধরনের ব্যায়াম করানো হয়, যা জয়েন্টের উপর চাপ কমিয়ে আনে এবং মোবিলিটি বৃদ্ধি করে।

৪। অন্যান্য থেরাপি ও ব্যায়াম:

  • স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ: এই ব্যায়াম পেশী ও জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
  • স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ: এই ব্যায়াম পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জয়েন্ট এর দৃঢ়তা বাড়ায়।
  • ব্যালান্স এবং কোঅর্ডিনেশন এক্সারসাইজ: এ গুলি শারীরিক সামঞ্জস্য এবং সামগ্রিক চলাচলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

এই ফিজিওথেরাপির বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি রোগীর ব্যথা হ্রাস, মোবিলিটি বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক জীবন যাপনের মান উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে।

বাসায় করনীয় কি?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আক্রান্ত রোগীরা বাসায় নিজের যত্ন নেয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের সুস্থতা ও জীবন শৈলীর মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।

১। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম: হালকা ও নিয়মিত ব্যায়াম জয়েন্টের নমনীয়তা এবং শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেশী গুলির স্বাস্থ্য উন্নত করে।

২। ব্যথা এবং জ্বালাপোড়ার সময় বিশ্রাম নেয়া: রোগীদের উচিত ব্যথার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নেয়া, যা প্রদাহ ও ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

৩। হিট/কোল্ড থেরাপি: ঠাণ্ডা সেঁক বা গরম সেঁক প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে কার্যকর। রোগীর অবস্থানুযায়ী হিট বা কোল্ড থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৪। স্প্লিন্ট বা ব্রেস ব্যবহার: জয়েন্ট কে স্থিতিশীল রাখতে এবং ব্যথা কমাতে স্প্লিন্ট বা ব্রেসের ব্যবহার উপকারী।

রোগীর খাদ্য তালিকা হিসেবে, নিম্ন লিখিত খাদ্য গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে:

  • ব্লু বেরি এবং স্ট্রবেরি: এই ফল গুলিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • ডার্ক চকোলেট: এটি ফ্ল্যাভনয়েডে সমৃদ্ধ, যা ইনফ্লামেশন কমাতে পারে।
  • তিসি: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের একটি ভালো উৎস।
  • আখরোট: এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্রকলি: এতে সালফোরাফেন থাকে, যা প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • গ্রীন টি: এর এন্টি-ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ রয়েছে।

এই জাতীয় খাদ্য এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীরা তাদের ইনফ্লামেশন হ্রাস করতে পারেন এবং তাদের জীবন যাপনের মান বৃদ্ধি করতে পারেন।

জয়েন্ট শক্ত হয়ে গেলে করনীয়

ফিজিওথেরাপী চিকিৎসা এবং এক্সারসাইজ আপনাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং কম ব্যথা নিয়ে চলাফেরা করতে সহায়তা করবে। আপনার শক্ত হয়ে যাওয়া জয়েন্ট গুলি কে নরম করার জন্য আপনি আর্দ্র উষ্ণতা (যেমন গরম পানির স্নান বা সেক দেওয়া) এবং ফুলে যাওয়া জয়েন্ট গুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইস প্যাক (বা জমাট বাঁধা মটরের ব্যাগ) ব্যবহার করতে পারেন। শিথিলকরণের বিভিন্ন কৌশল পেশীর টান লাঘব করতে সহায়ক। একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট আপনাকে দৈনন্দিন কাজ কর্ম কীভাবে সহজে করা যায় তা শেখাতে পারেন। প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি

জয়েন্ট ফুলে গেলে করনীয়

যদি ফোলা খুব বেশি হয়, তবে একজন চিকিৎসক জয়েন্ট থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে নিতে পারেন, এই পদ্ধতি কে জয়েন্ট অ্যাসপিরেশন বলা হয়। চিকিৎসক জয়েন্টে হাইড্রোকর্টিসোন নামের একটি প্রদাহ বিরোধী তরল ইনজেক্ট করতে পারেন, যা ফোলার কিছু লক্ষণ হ্রাস করতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে, চিকিৎসক অ্যাসপিরেশন স্থানের ত্বকে টপিকাল অ্যানেস্থেটিক স্প্রে বা লিডোকেইন প্রয়োগ করে থাকেন।

ঘাড় ব্যথায় করনীয়

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণে ঘাড়ের ব্যথা মোকাবেলায় ঘরোয়া প্রতিকার এবং জীবন ধারায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যেমন

  1. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, যেমন সাঁতার ও হাঁটা।
  2. ঘাড়ের সঠিক পজিশন এর জন্য সার্ভাইক্যাল বালিশের ব্যবহার।
  3. পেশী ও শক্ত জয়েন্টে ব্যথা হ্রাসের জন্য হট কম্প্রেশন দেয়া।
  4. ফোলা ও ব্যথা কমানোর জন্য ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার।
  5. ধূমপান ত্যাগ।
  6. কম্পিউটার ব্যবহারের সময় বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সময় পিঠ ও ঘাড় সোজা করে বসা।
  7. স্মার্ট ফোন চোখের বরাবর রেখে ব্যবহার করা।
আরও পড়ুন  নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ | দ্রুত সমস্যার সমাধান?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য ব্যায়াম

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ক্রিয়া কলাপ এবং ব্যায়াম আপনার দুর্বল জয়েন্ট গুলি কে শক্তি যোগানো এবং গতি শীলতা ও নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য কার্যকর হতে পারে। এই ব্যায়াম গুলি হল:

  1. ১। পানিতে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ: জলের অ্যারোবিক্স, সাঁতার কাটা এবং অন্যান্য হালকা জলের এক্সারসাইজ আপনার জয়েন্ট গুলি তে শক্তি বাড়ানো এবং তাদের শক্তভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে।
  2. ২। হাঁটা: হাঁটার আগে সঠিক মাপের জুতা নিশ্চিত করুন যা আপনাকে যথাযত আরাম দেয়। ধীরে ধীরে হাটা শুরু করুন এবং ক্রমশ আপনার গতি বাড়ান। হাইড্রেটেড থাকা অর্থাৎ পর্যাপ্ত পানি পান করা গুরুত্ব পূর্ণ।
  3. ৩। সাইকেল চালানো: সাইকেল চালানো হল এমন একটি ব্যায়াম যা জয়েন্টের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  4. ৪। শক্তি প্রশিক্ষণ: ওজন, রেজিস্ট্যান্ট ব্যান্ড এবং ওজন মেশিনের মাধ্যমে পেশী শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজ করুন। অল্প ওজন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান। সপ্তাহে ২-৩ বার এই ধরনের এক্সারসাইজ করা ভালো।
  5. ৫। হাতের এক্সারসাইজ: হাতের নমনীয়তা এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য আঙুল কুঁচকানো, আঙুল ছড়ানো, কব্জি ঘোরানোর মতো এক্সারসাইজ করুন।
  6. ৬। স্ট্রেচিং: স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ আপনার জয়েন্টের রেঞ্জ বাড়াতে, নমনীয়তা উন্নত করতে এবং শক্ত ভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে। প্রতিটি স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করার সময় কমপক্ষে ১০-২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

এছাড়াও, অগ্রণী ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রে আপনি বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে আরও ভালভাবে চিকিৎসা পেতে পারেন। এখানে চিকিৎসকরা আপনার সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন এবং নিয়মিত এসেসমেন্ট ও পরিকল্পনা অনুসরণ করে চিকিৎসা প্রদান করবেন। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আপনি একটি ব্যথা মুক্ত, সচল জীবন যাপনের পথে অগ্রসর হতে পারবেন।

তথ্যসূত্র

  • Singh, J.A., Saag, K.G., Bridges Jr, S.L., Akl, E.A., Bannuru, R.R., Sullivan, M.C., Vaysbrot, E., McNaughton, C., Osani, M., Shmerling, R.H. and Curtis, J.R., 2016. 2015 American College of Rheumatology guideline for the treatment of rheumatoid arthritis. Arthritis & rheumatology68(1), pp.1-26. https://onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1002/art.39480
Follow me
পরামর্শ নিতে 01877733322