গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন গুলো বিভিন্ন মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে এবং কিছু লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। নিচে গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো:

মাসিক বন্ধ হওয়া: গর্ভধারণের পরে, শরীর প্রোজেস্টেরন এবং এইচসিজি (hCG) হরমোনের উৎপাদন শুরু করে। এই হরমোনগুলো ডিম্বাণুর নিঃসরণ বন্ধ করে এবং জরায়ুর আবরনকে ধরে রাখে, যা গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। ফলস্বরূপ, মাসিক রক্তপাত আর হয় না, যা সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় (1)।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন

বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া: গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া অত্যন্ত সাধারণ এবং এটি সাধারণত “মর্নিং সিকনেস” নামে পরিচিত হলেও দিন কিংবা রাতের যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে। এই উপসর্গগুলি সাধারণত গর্ভধারণের ছয় থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় এবং শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষ করে এইচসিজি (hCG) এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে। বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে কমে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়েই থাকতে পারে (2)।

স্তনে পরিবর্তন: গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকেই স্তনে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। গর্ভধারণের পরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্তনগুলি আরও কোমল এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়, এবং কখনও কখনও স্তনে ব্যথাও অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও, স্তনের বোটার চারপাশের অংশ, যাকে অ্যারিওলা বলা হয়, তা গাঢ় হয়ে যেতে পারে এবং সেখানে ছোট ছোট গোটা দেখা দিতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো শরীরের প্রস্তুতির একটি অংশ, যা ভবিষ্যতে শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য স্তনকে প্রস্তুত করে (3)।

ক্লান্তি: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা একটি খুবই সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের পরে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যা শরীরকে শিথিল করতে এবং গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। তবে এই হরমোনের বৃদ্ধি শরীরের শক্তি হ্রাস করে, ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং ঘুমঘুম ভাব দেখা দেয়। পাশাপাশি, শরীরে আরও রক্ত তৈরি হওয়ার প্রয়োজন হয়, যা হৃদপিণ্ডের কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং এটি ক্লান্তির কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের এই ক্লান্তি সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কমে আসে, তবে কিছু মায়েদের জন্য এটি গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়েই স্থায়ী হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত পানি পান ক্লান্তি মোকাবিলায় সহায়তা করে (4)।

প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া: গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াও একটি সাধারণ লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। গর্ভধারণের পরে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের আকারে নির্গত হতে শুরু করে। এছাড়াও, প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো গর্ভাশয় (uterus) বড় হতে শুরু করে, যা মূত্রথলি বা ব্লাডারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থার সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এই লক্ষণটি আরও প্রকট হতে পারে, বিশেষ করে রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার প্রস্রাবের তাগিদ অনুভূত হতে পারে। এই পরিস্থিতে অবহেলাস্বরূপ পানি কম পান করা যাবে না বরং বার বার প্রস্রাবের বেগ হলেও পর্যাপ্ত পানি করা উচিৎ (5)।

খাবারের রুচি পরিবর্তন: গর্ভবতী অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে খাবারের রুচি কমে যায়। এই পরিবর্তনটি হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে এবং এটি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কিছু খাবারের প্রতি আকস্মিকভাবে তীব্র আকর্ষণ জন্মাতে পারে, যাকে ক্রেভিং বলা হয়, আবার কিছু খাবারের প্রতি তীব্র অরুচি বা বিরক্তি দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থার আগে প্রিয় ছিল।

আরও পড়ুন  ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার | ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম

এমনকি, অনেক মহিলার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট গন্ধ বা স্বাদ অসহ্য মনে হতে পারে, যা আগে সমস্যা সৃষ্টি করত না। গর্ভবতী হওয়ার ফলে শরীরে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হয়, যা স্বাদ ও গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়। এই রুচির পরিবর্তনগুলি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়, তবে কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে পুরো সময় জুড়েই থাকতে পারে। এই সময়ে, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য জরুরি। (6)

মেজাজ পরিবর্তন: গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকে মেজাজ পরিবর্তন যাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ, যা অনেক মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায়। গর্ভধারণের পরে শরীরে হরমোনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন ও এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। এর ফলে মেজাজের ওঠানামা, উদ্বেগ, অথবা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা অল্প কারণেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন, যেমন হঠাৎ কান্না পেয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত খুশি বা বিষণ্ণতা অনুভব করা।

এছাড়াও, শারীরিক পরিবর্তন, ক্লান্তি, এবং অনাগত সন্তানের চিন্তা মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই মেজাজের পরিবর্তন সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে বেশি লক্ষ্য করা যায়, তবে কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে এটি পুরো গর্ভাবস্থায়ও থাকতে পারে। পারিবারিক সহযোগিতা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম  এই সময়ে মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে (7)।

পেট ফোলা: গর্ভবতী অনেক মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে পেট ফুলে বা ফেপে থাকে। এটি মূলত প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং শরীরের বিভিন্ন পেশী ও লিগামেন্টের শিথিল হওয়ার কারণে ঘটে। এই হরমোনটি গর্ভাশয়ের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সহায়তা করে, কিন্তু এটি হজম ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে, ফলে হজম ধীরগতিতে হয় এবং পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব তৈরি হয়। অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই পেটের এই ফোলাভাব গর্ভধারণের প্রথম দিকে খুবই স্বাভাবিক, যা প্রায় মাসিক পূর্ববর্তী ফোলাভাবের মতো অনুভূত হতে পারে। (8)

হালকা রক্তপাত বা স্পটিং: গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকে হালকা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দিতে পারে। এই রক্তপাত সাধারণত ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং নামে পরিচিত, যা তখন ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে নিজেকে সংযুক্ত করে। এটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ঘটে এবং মাসিকের রক্তপাতের তুলনায় অনেক হালকা হয়। রক্তের রঙ সাধারণত হালকা গোলাপী বা বাদামী হতে পারে এবং এটি কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে (9)।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যা সাধারণত গর্ভাবস্থার শারীরিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে। নিচে তলপেটে ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ ব্যাখ্যা করা হলো:

ইমপ্ল্যান্টেশন: গর্ভাবস্থার শুরুতে, যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে নিজেকে সংযুক্ত করে, তখন কিছু মহিলার ক্ষেত্রে হালকা তলপেটে ব্যথা বা টান অনুভব হতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ঘটে এবং এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

লিগামেন্টের টান: গর্ভাবস্থার সময়, বিশেষ করে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, জরায়ু বড় হতে থাকে এবং তলপেটের লিগামেন্টগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই লিগামেন্টগুলোকে সহায়তা করতে শরীর প্রসারিত হয়, যা পেটে হালকা বা তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। এটিকে রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন বলা হয়।

গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য: গর্ভাবস্থার হরমোনাল পরিবর্তন হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে, যার ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এটি তলপেটে অস্বস্তি এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

ব্র্যাক্সটন হিক্স কনট্র্যাকশন: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে ব্র্যাক্সটন হিক্স নামক কনট্র্যাকশন দেখা দিতে পারে। এটি জরায়ুর অস্থায়ী সংকোচন যা প্রসবের প্রস্তুতি হিসেবে ঘটে। এই কনট্র্যাকশনগুলি মাঝে মাঝে তলপেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, তবে এগুলি প্রকৃত প্রসবের কনট্র্যাকশন নয়।

ইনফেকশন বা অন্যান্য সমস্যা: কখনও কখনও তলপেটে ব্যথা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা অন্যান্য সমস্যার কারণে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ব্যথার সঙ্গে জ্বর, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, অথবা অস্বাভাবিক রক্তপাতের মতো অন্যান্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন  পিঠে ব্যথা হলে কোন ডাক্তার দেখাবো

প্রসবের প্রস্তুতি: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে তলপেটে ব্যথা প্রকৃত প্রসবের সংকেতও হতে পারে। যদি ব্যথা নিয়মিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যায়, তাহলে এটি প্রসবের লক্ষণ হতে পারে।

তলপেটে ব্যথা কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

তলপেটে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, তবে এটি গর্ভধারণের একমাত্র বা নির্দিষ্ট লক্ষণ নয়। প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক পর্যায়ে, কিছু মহিলার ক্ষেত্রে ইমপ্ল্যান্টেশনের সময় তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা তখন ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হয়। এছাড়াও, গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু প্রসারিত হতে শুরু করে, যা তলপেটে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব করাতে পারে। মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

তবে, তলপেটে ব্যথা গর্ভাবস্থার একমাত্র লক্ষণ হিসেবে ধরা উচিত নয়। এটি মাসিকের আগে বা বিভিন্ন অন্যান্য কারণে (যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা সংক্রমণ) ঘটতে পারে।

কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়

কনসিভ করার পর কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পেটে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং বা ইমপ্ল্যান্টেশনের সময় ঘটে। যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হয়, তখন জরায়ুর লাইনিং (এন্ডোমেট্রিয়াম) এ কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা সামান্য ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্যথাটি সাধারণত খুবই হালকা এবং ক্ষণস্থায়ী হয়, এবং মাসিকের পূর্ববর্তী ব্যথার মতো অনুভূত হতে পারে। কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণ ও তার প্রতিকার

প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহের লক্ষণগুলো কি কি?

প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহের লক্ষণগুলো সাধারণত খুব সূক্ষ্ম এবং অনেক সময় মহিলারা সেগুলো সহজে বুঝতে পারেন না। যেহেতু গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে শরীরে খুবই সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে, তাই এই সময়ে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি তেমন স্পষ্ট হয় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

মাসিক বন্ধ হওয়া: এটি গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রথম লক্ষণ। গর্ভধারণের পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, যা অনেকের জন্য গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ইঙ্গিত।

হালকা রক্তপাত বা স্পটিং: ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং নামক এই লক্ষণটি দেখা যেতে পারে, যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হয়। এটি মাসিকের রক্তপাতের মতো নয়, বরং হালকা গোলাপি বা বাদামী রঙের হতে পারে।

স্তনের কোমলতা ও আকার বৃদ্ধি: স্তন আরও কোমল হয়ে যেতে পারে এবং আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধির কারণে ঘটে।

ক্লান্তি: প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি শরীরকে শিথিল করে দেয়, ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং ঘুমঘুম ভাব হতে পারে।

বমি বমি ভাব: যদিও এটি সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয়, তবে কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহেও বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস দেখা দিতে পারে।

মুড সুইং: হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মুড সুইং হতে পারে, যা গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ হিসেবে অনুভূত হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাব: গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

পেটে ফোলাভাব: প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধির কারণে পেট ফাপা অনুভূত হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যাথা হওয়ার কারন

গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার বেশ কিছু সাধারণ কারণ থাকতে পারে। এই ব্যথার ধরন, তীব্রতা, এবং এর সাথে থাকা অন্যান্য লক্ষণগুলো স্বাভাবিক মনে হতে পারে বা কোনো জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে। নিচে পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ তুলে ধরা হলো:

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন: গর্ভবতী হওয়ার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পেটের বাম দিকে ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন। জরায়ু বড় হওয়ার সাথে সাথে লিগামেন্টগুলি প্রসারিত হতে থাকে, যা হঠাৎ টান অনুভূত করতে পারে এবং বাম পাশে তীক্ষ্ণ বা হালকা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত দ্রুত এবং তীব্র হয়, তবে এটি ক্ষণস্থায়ী।

গ্যাস এবং হজমজনিত সমস্যা: গর্ভবতী হওয়া হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে, যার ফলে পেটে গ্যাস এবং ফোলাভাব হতে পারে। এটি পেটের বাম দিকে বিশেষ করে পেটের নিচের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

আরও পড়ুন  সোল্ডার বার্সাইটিস

কোষ্ঠকাঠিন্য: প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবের কারণে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি পেটের বাম দিকে অস্বস্তি বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

ইনফেকশন বা ইনফ্ল্যামেশন: মূত্রনালী বা কিডনিজনিত ইনফেকশন এর কারণে (যেমন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা UTI) গর্ভাবস্থায় পেটের বাম দিকে ব্যথা হতে পারে। যদি ব্যথার সাথে প্রস্রাবে জ্বালা, জ্বর, বা বমি থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাম দিকের ডিম্বাশয় সংক্রান্ত সমস্যা: গর্ভবতী হওয়ার শুরুর দিকে ডিম্বাশয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু সমস্যা, যেমন ওভারিয়ান সিস্ট বা একটোপিক প্রেগন্যান্সি (যেখানে ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে থাকে), বাম দিকে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের ব্যথা গুরুতর এবং অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রি-টার্ম লেবার: গর্ভবতী হওয়ার শেষের দিকে পেটের বাম দিকে ধারাবাহিক এবং তীব্র ব্যথা প্রসবের সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি অনবরত হতেই থাকে বা বাড়তে থাকে। এটি প্রি-টার্ম লেবার বা অপরিপক্ক প্রসবের ইঙ্গিত হতে পারে, যার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র

  1. (Otchet, F., Carey, M.S. and Adam, L., 1999. General health and psychological symptom status in pregnancy and the puerperium: what is normal?.Obstetrics & Gynecology94(6), pp.935-941. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0029784499004391 )
  2. (Dunbar, K., Yadlapati, R. and Konda, V., 2022. Heartburn, nausea, and vomiting during pregnancy.Official journal of the American College of Gastroenterology| ACG117(10S), pp.10-15. https://journals.lww.com/ajg/fulltext/2022/10001/Heartburn,_Nausea,_and_Vomiting_During_Pregnancy.3.aspx )
  3. (Sapra, K.J., Buck Louis, G.M., Sundaram, R., Joseph, K.S., Bates, L.M., Galea, S. and Ananth, C.V., 2016. Signs and symptoms associated with early pregnancy loss: findings from a population-based preconception cohort.Human Reproduction31(4), pp.887-896. https://academic.oup.com/humrep/article-abstract/31/4/887/2380064 )
  4. (Bossuah, K.A., 2017. Fatigue in pregnancy.International Journal of Childbirth Education32(1), pp.10-13. https://go.gale.com/ps/i.do?id=GALE%7CA484096554&sid=googleScholar&v=2.1&it=r&linkaccess=abs&issn=08878625&p=HRCA&sw=w )
  5. (Zielinski, R., Searing, K. and Deibel, M., 2015. Gastrointestinal distress in pregnancy: prevalence, assessment, and treatment of 5 common minor discomforts.The Journal of perinatal & neonatal nursing29(1), pp.23-31. https://journals.lww.com/jpnnjournal/fulltext/2015/01000/gastrointestinal_distress_in_pregnancy_.8.aspx )
  6. (Orloff, N.C. and Hormes, J.M., 2014. Pickles and ice cream! Food cravings in pregnancy: hypotheses, preliminary evidence, and directions for future research.Frontiers in psychology5, p.111321. https://www.frontiersin.org/journals/psychology/articles/10.3389/fpsyg.2014.01076/full?s2=P876275345_1683331208207787281 )
  7. (Elliott, S.A., Rugg, A.J., Watson, J.P. and Brough, D.I., 1983. Mood changes during pregnancy and after the birth of a child.British Journal of Clinical Psychology22(4), pp.295-308. https://bpspsychub.onlinelibrary.wiley.com/doi/abs/10.1111/j.2044-8260.1983.tb00616.x )
  8. (Baron, T.H., Ramirez, B. and Richter, J.E., 1993. Gastrointestinal motility disorders during pregnancy.Annals of internal medicine118(5), pp.366-375. https://www.acpjournals.org/doi/abs/10.7326/0003-4819-118-5-199303010-00008 )
  9. (Harville, E.W., Wilcox, A.J., Baird, D.D. and Weinberg, C.R., 2003. Vaginal bleeding in very early pregnancy.Human Reproduction18(9), pp.1944-1947. https://academic.oup.com/humrep/article-abstract/18/9/1944/708284 )
May 24, 2024

কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়

কিভাবে সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হলো ঘাড়ের মেরুদণ্ডের…
পরামর্শ নিতে 01877733322