হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা বা হাঁটু ব্যথা দৈনন্দিন জীবনে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার অগণিত মানুষ হাটু ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে। এই হাটু ব্যথা বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে লিগামেন্ট ইনজুরি, পরে গিয়ে ব্যথা পাওয়া, হাড় ভেংগে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। হাটু ব্যথার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়, হাটা-চলা করতে সমস্যা হয়, সহজেই কোথাও যাওয়া যায় না।

হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা

হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা. ব্যথার যন্ত্রণায় জীবন প্রায় অতিষ্ট হয়ে ওঠে। হাটু ব্যথার যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে দিন যত যায় এটি তত খারাপ হতে থাকে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে দাঁড়িয়ে নামায পড়া কিংবা টয়লেট এ যাওয়ার মত সামাণ্য কাজটুকু করার ক্ষমতাও থাকে না। হাঁটু ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা

হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যাদের বয়স ৪০ পার হয়েছে, যাদের শরীরের ওজন বেশি অথবা সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটান তাদের হাটু ব্যথায় আক্রান্ত হবার ঝুকি বেশি। দিনে দিনে হাসপাতালগুলোতে হাটু ব্যথা রোগীর ভীড় শুধু বেড়েই যাচ্ছে।

হাটু ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

আমাদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ হাটু ব্যথায় ভুগছেন, বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়েছেন, অনেক অনেক ওষুধ খাওয়ার পরেও কোন সমাধান হচ্ছে না। সেসকল রোগীদের অনেকেই দেখা যায় একসময় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেন। হাটুর ব্যথায় দুশ্চিন্তা না করে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। আজকের আলোচনায় আমরা জানব হাটু ব্যথায় সারা বিশ্বে কি কি ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে এবং কখন কোন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।

হাটুর গঠনের সাথে হাঁটু ব্যথা ও ইনজুরির সম্পর্ক

লিগামেন্ট ইনজুরিঃ হাটুর লিগামেন্ট (বিশেষ করে ACL এবং MCL) ইনজুরি হলে হাটুতে ব্যথা হয়, হাটু ফুলে যায়, এবং হাটুর স্ট্যাবিলিটি কমে যায়। দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া কিংবা হোচট খাওয়া জনিত আঘাতের কারণে লিগামেন্ট ইনজুরি হয়ে থাকে। হাঁটু ব্যথা কমানোর উপায়: সহজ ও কার্যকরী পরামর্শ

মিনিস্কাস টিয়ার বা ছিড়ে যাওয়াঃ হাঁটুতে যদি হঠাৎ মোচর লাগে তাহলে মিনিস্কাস টিয়ার হয়ে থাকে। মিনিস্কাস ছিড়ে গেলেও হাটু ফুলে যায়, ব্যথা হয় ও হাঁটু নড়াচড়া করাতে কষ্ট হয়।

টেন্ডন স্ট্রেইনঃ দিনের পর দিন একই কাজ বার বার করার ফলে এবং যেসকল পেশাদারদের হাটুর উপর বেশ চাপ পড়ে যেমন খেলোয়ার, কুলি, সৈনিক, ড্যান্সার, ফিটনেস ট্রেইনারদের ক্ষেত্রে দেখা যায় একসময় হাটুর টেন্ডন দুর্বল হয়ে যায়, চাপ নিতে পারে না এবং শেষমেষ স্ট্রেইন হয় বা ছিড়ে যায়।

কার্টিলেজ ড্যামেজঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিসজনিত হাটু ব্যথায় জয়েন্টের ভিতরে যেই কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি থাকে সেটিতে ক্ষত হয়। তরুণস্থিতে ক্ষত হলে ব্যথা হয়, হাটু জমে যায় বা শক্ত হয়ে যায় এবং হাটুর নড়াচড়া কমে যায়। কারণ হাটু যখনই ভাঁজ করতে যায় ঠিক তখনই হাটুর কার্টিলেজ এ ঘষা লাগে এবং তীব্র ব্যথা হয়।

প্যাটেলাজনিত কারণঃ হাটুর উপরে যেই ছোট হাড়টি নড়াচড়া করে যেটকে আমরা প্যাটেলা বলি। প্যাটেলার সমস্যার কারণেও হাটু ব্যথা হতে পারে। প্যাটেলা ডিজলোকেশন হলে কিংবা প্যাটেলো-ফিমোরাল পেইন সিন্ড্রোম হলে হাটুর সামনের দিকে ব্যথা হয়।

হাটুর ব্যথার চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ

ওষুধবিহীন চিকিৎসা

হাঁটুর ব্যথায় ঔষধবিহীন চিকিৎসা সবচেয়ে নিরাপদ. কারণ ওষুধ যত সাধারণই হোক না কেন সেটা শরীরের উপর কোন না কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবেই। এজন্যেই সারাবিশ্বে ওষুধবিহীন প্রাকৃতিক চিকিৎসার কদর সবচেয়ে বেশি। হাঁটু ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা

ফিজিওথেরাপী বা কারেকশন থেরাপী

এক্সারসাইজঃ অনেক দিনের হাটু ব্যথার কারণে দেখা যায় হাটুর আশেপাশের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং অনেকের হাটার ব্যালেন্স থাকে না। এজন্য হাটুকে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য হাটু নড়াচড়ায় যেসকল পেশীগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য ফিজিওথেরপী চিকিৎসক শক্তি বাড়ানো ও ব্যালেন্সের বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন  অপারেশনের আগে ও পরে অর্থাৎ সার্জিক্যাল কন্ডিশনে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজনীয়তা

স্ট্রেচিং এক্সারসাইজঃ হাটু সম্পূর্ণ ভাঁজ ও সোজা করার জন্য এবং হাটুর পেশীগুলোর নমনীয়তা রক্ষা করার জন্য স্ট্রেচিং এক্সাইরসাইজ করা জরুরী। পেশী স্পাজম বা শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে যদি হাটু ব্যথা হয় তাহলে স্ট্রেচিং এক্সারসারসাইজের মাধ্যমে সেগুলোকে নমনীয় করা হয়।

গেইট ট্রেনিংঃ রোগী বয়স যদি বেশি হয়, ওজন বেশি হলে কিংবা অনেক দিনের পুরনো হাটুর ব্যথার রুগীদের ক্ষেত্রে হাটার ব্যালেন্সের সমস্যা দেখা দেয়। সেসব রোগীদের ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপী চিকিৎসক হাটুর ব্যথা কমানোর পাশাপাশি হাটার ব্যলেন্সের ট্রেনিং করিয়ে থাকেন।

গরম ও ঠান্ডা সেক দেয়াঃ হাটুর জয়েন্টের লুব্রিকেশন রক্ষায় ও পেশী শিথিলকরণে গরম সেক বেশ কার্যকর। এটি জয়েন্টের স্টিফনেস ও কমায়। অপরদিকে ঠান্ডা সেক দিলে হাটুর প্রদাহ কমে ও ব্যথা অনেকাংশেই কমে যায়।

অর্থোটিক ডিভাইসঃ হাটুর ব্যথায় নি-ক্যাপ, নি-ব্রেইস, স্লিভস, নি-স্ট্যাবিলাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। এগুলো আমাদের হাটুকে বাহ্যিক চাপ থেকে রক্ষা করে ও হাটুকে স্টেবল রাখে।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ হাটু আমাদের শরীরের সমস্ত ওজন বহন করে। শরীরের ওজন যদি হাটুর ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তাহলে হাটু শরীরের ওজন নিতে পারে না। তখন হাটুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। কার্টিলেজ ছিড়ে যাওয়া, স্প্রেইন ও স্ট্রেইন হতে পারে এবং একসময় অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও দেখা দেয়। এজন্য হাটুর যেকোন সমস্যায় হাটুর উপর চাপ কম থাকলে সেটি খুব দ্রুত কমে যায়। তাই আমরা অবশ্যই অতিরিক্ত ওজন পরিহার করব। প্রয়োজনে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন। হাঁটুতে লুজ বডি

কাজের ধরণ পরিবর্তনঃ আমরা যারা দৈনন্দিন জীবনে ভাড়ী কাজকর্মের সাথে জড়িত তারা হাটু ব্যথা পরিহার করতে আমাদের কাজের ধরণ পরিবর্তন করতে পারি। একই কাজ দেখা যায় সঠিক পদ্ধতিতে না করলে বিভিন্ন সমস্যা হয়ে যায়। নিচে থেকে ভাড়ী বস্তু তোলা, হাটা-চলা, কিংবা বসা ইত্যাদি কাজের সঠিক ধরণ রয়েছে যেভাবে করলে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে না। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ আমরা যে যেই কাজটি করছি সেটি যাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে করি। একটূ সচেতন হয়ে চললে আমরা অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারি।

বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি

আকুপাংচারঃ আকুপাংচার হচ্ছে একটি ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে শরীরের বিভিন্ন পয়েন্টে খুবই সূক্ষ্ণ সূচ এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ধারণা করা হয় এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাটুর ব্যথা ও প্রদাহ কমে যায়।

কাইরোপ্র্যাকটিক কেয়ারঃ কাইরোপ্র্যাকটিক চিকিৎসক স্পাইনাল ম্যানিপুলেশন ও বিভিন্ন টেকনিক প্রয়োগ করেন যেগুলো আক্রান্ত স্থানের ব্যথা কমতে সাহায্য করে, জয়েন্টের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরের হিলিং প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। হাটুর ব্যথা যদি শরীরের অন্যান্য অংশের ইমব্যালেন্সের জন্য হয়ে থাকে তাহলে তাহলে কাইরোপ্যাকটিক চিকিৎসায় খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ওষুধের চিকিৎসা

হাটু ব্যথা কমাতে ব্যথার ওষুধ দ্রুত কাজ করে। সাধারণত ওভার দি কাউন্টার পেইন মেডিকেশন থেকে শুরু করে শক্তিশালী ব্যথার ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক অয়েন্টমেন্ট বা মলম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ওষুধগুলো ব্যথা কমায় ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেকোন ধরনের ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ। হাঁটুর জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস এ করণীয়

ওভার দ্য কাউন্টার পেইন মেডিকেশনঃ যেই ব্যথার ওষুধগুলো কিনতে হলে কোন ধরনের ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন প্রয়োজন হয় না সেগুলোকে ওভার দ্য কাউন্টার পেইন মেডিকেশন বলা হয়। এই ওষুধগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে। নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ ও এসিটামিনফেন। হাটুর প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন ও ন্যাপ্রোক্সেন গ্রুপের ওষুধগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসিটামিনোফেন প্রদাহ কমায় না, এটা শুধুমাত্র ব্যথা কমায়। যদিও এগুলো খেলে ব্যথাটি থেমে থাকে বন্ধ করলে আবার ফিরে আসে। তবে ব্যথার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক উপায়ে সেবন করাই জ্ঞানীর কাজ কারণ এগুলো পাকস্থলী ও কিডনীর সমস্যার কারন হতে পারে।

প্রেসক্রীপশনকৃত ওষুধঃ চিকিৎসক যেসকল ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো সবই প্রেস্ক্রীপশনকৃত ওষুধ। এগুলো একটু বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং এগুলো সঠিক মাত্রায় সেবন না করলে হতে পারে বড় ধরনের ক্ষতি। হাটু ব্যথার প্রেসক্রাইবড মেডিসিন গুলো নিচে দেয়া হলোঃ

  • কর্টিকোস্টেরয়েডঃ এই ওষুধটি হাঁটুর প্রদাহ কমানোর একটি শক্তিশালী ওষুধ। এটি মুখেও খাওয়া যায় আবার হাটুর ভিতরে ইঞ্জেকশন আকারেও দেয়া হয়। এটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ব্যথা কমিয়ে থাকে তবে দীর্ঘদিন সেবনে হাটুর জয়েন্টের সার্বিক অবনতি দেখা দিতে পারে।
  • অপয়েডসঃ গুরুতর হাটু ব্যথায় যখন সকল ধরনের ওষুধ ভেস্তে যায় কেবল তখনই এ ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এটি খুবই সতর্কতা মেনে প্রয়োগ করা হয়। কারণ এটির প্রতি রোগীর আসক্তি সৃষ্টি হবার ঝুকি থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগী নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
  • অয়েন্টমেন্ট বা টপিক্যালসঃ বিভিন্ন ধরনের মলম বা অয়েন্টমেন্ট হাঁটুর ব্যথায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ ডাইক্লোফেনাক জেল বা ক্যাপসাইসিন ক্রীম। এগুলো হাটুর ত্বকে লাগানো হয়ে থাকে। যেসকল রোগীদের ব্যথার ওষুধ সেবনে সমস্যা হয় বা কিডিনী ও লিভার এর সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এগুলোর পরামর্শ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন  রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কেন হয়

সার্জিক্যাল চিকিৎসা বা অপারেশন

হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা. যখন হাটু ব্যথা এমন কিছু কারণে হয়ে থাকে যেগুলো ওষুধের চিকিৎসায় সমাধান হয় না যেমন হাটুর ইনজুরি বা আঘাতের কারণে লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া, হাড় ভেংগে যাওয়া বা মচকানো কিংবা এডভান্স পর্যায়ের অস্টিও-আর্থ্রাইটিস তখন রোগীর স্বার্থে অপারেশন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। হাটুর অপারেশনগুলো সাধারণত হাটূর গঠণগত কারেকশন এর জন্য করা হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাটুর অপারেশন জরুরী তা নিম্নে বিষদভাবে আলোচনা করা হলোঃ

  • যদি দিনের পর দিন ওষুধ খাওয়ার পরেও হাটু ব্যথা না কমে
  • অস্টিও-আর্থ্রাইটিসজনিত কারণে যদি হাটুর জয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়
  • আঘাতের কারনে হাটূর লিগামেন্ট বা মিনিস্কাস যদি ছিড়ে যায়

হাটুর অপারেশনের ধরণসমূহ

আর্থোস্কপিঃ হাটুর জয়েন্টের বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় আর্থোস্কপি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হাটুর সরু ছিদ্র দিয়ে একটি ক্যামেরা ও অপারেশন সরঞ্জামাদি প্রবেশের মাধ্যমে এই চিকিৎসাটি করা হয়। এই পদ্ধতিতে হাটুর ভিতরের লুজ বডি অপসারণ, কার্টিলেজ জোড়া দেয়া কিংবা লিগামেন্ট জোড়া দেয়ার মত অপারেশনগুলো করা হয়ে থাকে।

নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিঃ নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারীকে আর্থোপ্লাস্টিও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে হাটুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে কেটে ফেলে দিয়ে কৃত্রিম অংশ লাগানো হয়। প্রধানত দুই ধরনের নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারী হয়ে থাকেঃ

  • টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারীঃ এই অপারেশনে হাটূর জয়েন্টের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পরিবর্তন করা হয়। যদি দুর্ঘটনা, আঘাত, আর্থ্রাইটিস বা বাতজনিত কারণে হাটুর জয়েন্ট একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় তাহলে টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট করা হয়।
  • পার্শিয়াল নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারীঃ হাটুর জয়েন্টের শুধু একটি অংশ পরিবর্তন করলে সেটাকে পার্শিয়াল নি রিপ্লেসমেন্ট বলা হয়।

লিগামেন্ট রিপেয়ার/রিকন্সট্রাকশনঃ হাটুর জয়েন্টের লিগামেন্ট যদি কোন কারণে ছিড়ে যায় তাহলে লিগামেন্ট রিপেয়ার বা রিকন্সট্রাকশন সার্জারী করা হয়। যেমন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেখা যায় ACL ছিড়ে যায় এবং ACL রিকন্সট্রাকশন সার্জারি করা হয়।

হাটুর ব্যথার চিকিৎসায় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ

স্টেম সেল থেরাপীঃ স্টেম সেল থেরাপী হাটু ব্যথার চিকিৎসায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রোগীর শরীর থেকেই স্টেম সেল তৈরী করে সেটি জয়েন্টের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই স্টেম সেল হাটুর কার্টিলেজ ও লিগামেন্ট রিপেয়ার করতে সাহায্য করে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস এ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি রোগীর ব্যথা কমায় ও হাটুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে থাকে।

প্লাটিলেট রীচ প্লাজমাঃ প্লাটিলেট রীচ প্লাজমা বা পিআরপি থেরাপীতে রোগীর নিজের শরীরের প্লাজমা হাটুর জয়েন্টের ভিতরে ইনজেক্ট করা হয়। এতে করে আক্রান্ত স্থানের হিলিং প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়। টেন্ডিনাইটিস বা মাইল্ড আর্থ্রাইটিস এর ক্ষেত্রে পিআরপি থেরাপী বেশ কার্যকর।

হাঁটু ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা, কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিৎ রোগ হবার আগে সচেতন হওয়া যাতে আমরা সহজেই অসুস্থ না হই। হাটু ব্যথা প্রতিরোধ করার বেশ কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো মেনে চললে আমাদের হাটু দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। সহজে ব্যথা হবে না এমনকি আমরা ভারী কাজ ও করতে পারব। হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধের উপায়সমূহ নিচে বর্নণা করা হলোঃ

নিয়মিত এক্সারসাইজ করাঃ আমরা যেহেতু হাঁটুর উপর ভর দিয়ে সকল কাজ কর্ম করে থাকি সেহেতু হাটুর শক্তি যদি না থাকে তাহলে হাঁটু ব্যথা হবেই। কারণ হাঁটু দুর্বল থাকলে আমাদের শরীরের ভর নিতে ব্যর্থ হয়। তখনই হাটুতে অতিরিক্ত চাপ পরে। হাঁটুর শক্তি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ করা উচিৎ। যেমন ধরুণ কোয়াড্রিসেপস (রানের সামনের পাশী), হ্যামস্ট্রিং (রানের পিছনের পেশী) ও কাফ মাসেলের শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজ। কিছু কিছু এক্সারসাইজ আছে যেগুলো করতে খুব বেশি কষ্ট না হলেও হাটুর শক্তি ঠিকই বদ্ধি পায় যেমন সাইক্লিং করা, সাতার কাটা এবং প্রতিদিন নিয়মিত হাটা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন  ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

সঠিক মাপের জুতা ব্যবহারঃ আমরা যারা খেলাধুলা করি তাদের অবশ্যই সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ জুতা যদি টাইট থাকে তাহলে পা সঠিকভাবে ফেলা যায় না, এতে করে হাটুতে চাপ পরে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ যাদের শরীরের ওজন বেশি তারা হাটু ব্যথার হবার বেশ ঝুকিতে আছি। কারণ হাটু ব্যবহার করে আমাদের সব করতে হয়। হাটু আমাদের পুরো শরীরকে বহন করে। তাই শরীরের অতিরিক্ত ওজন মানেই হাটুর কষ্ট বেড়ে যাওয়া। এছাড়াও যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের হাটু ব্যথা হলে সারতে তূলনামুলক বেশি সময় লেগে যায়। এজন্য আমাদের অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ নিবো।

ঝুকিপূর্ণ কাজ থেকে দূরে থাকাঃ আমাদের শরীরে যেকোন মেকানিক্যাল পেইন শুরুর দিকে অল্প অল্প করে শুরু হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা এটাকে অবহেলা করি এবং আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। এটা হাটুর উপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। হাটুতে ব্যথা থাকা অবস্থায় ভাড়ী কিছু নেয়া, স্কোয়াট করা ছাড়াও সকল ধরনের ভাড়ী কাজকর্ম পরিহার করা উচিত। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

শেষ কথা

আমাদের এই শরীর হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। এ দেহের যত্ন নেয়া আমাদের দায়িত্ব। হাটু ব্যথা বা যন্ত্রণা কম বেশি প্রায় সব বয়সেই হয়ে থাকে। এর মানে এই নয় যে আমাদের থেমে যেতে হবে বা আমরা হতাশ হয়ে যাবো। হাতাশায় না ভুগে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। পাশাপাশি আমাদের হাটু ব্যথা যাতে না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তথ্যসূত্র

  1. Bennell, K.L., Egerton, T., Pua, Y.H., Abbott, J.H., Sims, K., Metcalf, B., McManus, F., Wrigley, T.V., Forbes, A., Harris, A. and Buchbinder, R., 2010. Efficacy of a multimodal physiotherapy treatment program for hip osteoarthritis: a randomised placebo-controlled trial protocol. BMC musculoskeletal disorders, 11(1), pp.1-13. https://bmcmusculoskeletdisord.biomedcentral.com/articles/10.1186/1471-2474-11-238
  2. Bakaa, N., 2020. EXERCISE ADHERENCE POST TOTAL KNEE ARTHROPLASTY (Doctoral dissertation). https://macsphere.mcmaster.ca/handle/11375/25772
  3. Harvey, L.A., Katalinic, O.M., Herbert, R.D., Moseley, A.M., Lannin, N.A. and Schurr, K., 2017. Stretch for the treatment and prevention of contractures. Cochrane Database of Systematic Reviews, (1). https://www.cochranelibrary.com/cdsr/doi/10.1002/14651858.CD007455.pub3/abstract
  4. Messier, S.P., 2010. Diet and exercise for obese adults with knee osteoarthritis. Clinics in geriatric medicine, 26(3), pp.461-477. https://www.geriatric.theclinics.com/article/S0749-0690(10)00047-9/abstract
  5. Messier, S.P., Mihalko, S.L., Legault, C., Miller, G.D., Nicklas, B.J., DeVita, P., Beavers, D.P., Hunter, D.J., Lyles, M.F., Eckstein, F. and Williamson, J.D., 2013. Effects of intensive diet and exercise on knee joint loads, inflammation, and clinical outcomes among overweight and obese adults with knee osteoarthritis: the IDEA randomized clinical trial. Jama, 310(12), pp.1263-1273. https://jamanetwork.com/journals/jama/article-abstract/1741824
  6. Hinman, R.S., McCrory, P., Pirotta, M., Relf, I., Forbes, A., Crossley, K.M., Williamson, E., Kyriakides, M., Novy, K., Metcalf, B.R. and Harris, A., 2014. Acupuncture for chronic knee pain: a randomized clinical trial. Jama, 312(13), pp.1313-1322. https://jamanetwork.com/journals/jama/article-abstract/1910110
Nov 17, 2022

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কি, কেন হয় এবং এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

“লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস” টার্মটি ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক, ভার্টিব্রাল বডি এবং কটিদেশীয় মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত জয়েন্টগুলোর…
পরামর্শ নিতে 01877733322