সায়াটিকা কি ? সায়াটিকা হলো একটি ব্যথা জনিত সমস্যা, যা মূলত সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ বা প্রদাহের কারণে সৃষ্টি হয়। সায়াটিক নার্ভ টি শরীরের দীর্ঘতম নার্ভ, যা কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত প্রসারিত।
সাধারণত, এই ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্বের এক পাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং উরু ও পায়ের পাতা পর্যন্ত পৌঁছায়। সায়াটিকার লক্ষণ গুলোর মধ্যে তীব্র ব্যথা, ঝিনঝিন, অসাড়তা বা দুর্বলতা থাকতে পারে, যা হাঁটা, বসা বা দাঁড়ানোর সময় আরও তীব্র হয়ে উঠে।
সায়াটিকা হওয়ার কারণ কি?
সায়াটিকা হওয়ার প্রধান কারণ হলো সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপে সৃষ্টি হওয়া। এই চাপ সাধারণত কোমড়ের মেরুদণ্ডের ডিস্কের সমস্যা, হাড়ের স্পার বা হার বেড়ে যাওয়া, বা স্নায়ুর প্রদাহের মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণে লাগতে পারে। নিচে সায়াটিকার কয়েক টি সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো
হার্নিয়েটেড ডিস্ক: মেরুদণ্ডের প্রতিটি কশেরুকার (vertebra) মধ্যে একটি করে ডিস্ক থাকে, যা একটি জেলির মতো নরম পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং বাইরের দিকে শক্ত ফাইব্রাস রিং দিয়ে আবৃত। এই ডিস্ক গুলো মেরুদণ্ড কে নমনীয়তা প্রদান করে এবং আঘাত বা চাপ শোষণ করতে সাহায্য করে।
যখন কোনো কারণে ডিস্কের বাইরের ফাইব্রাস অংশ দুর্বল হয় বা ছিঁড়ে যায়, তখন ভিতরের নরম পদার্থ বেরিয়ে এসে সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ দেয়।
এই অবস্থা কে হার্নিয়েটেড ডিস্ক বলা হয়। হার্নিয়েটেড ডিস্কের কারণে সায়াটিক নার্ভ চাপে পড়ে এবং ব্যথা, ঝিনঝিন, অসাড়তা, বা দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, যা কোমর থেকে শুরু করে নিতম্ব এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ: ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজের কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্ক গুলো সংকুচিত হতে শুরু করে, যা ডিস্কের উচ্চতা কমিয়ে দেয় এবং মেরুদণ্ডের অন্যান্য গাঠনিক পরিবর্তন করে।
এই সংকোচন বা পরিবর্তন সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ব্যথা, ঝিনঝিন, অসাড়তা বা দুর্বলতা অনুভূত হয়।
স্পাইনাল স্টেনোসিস: সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড় এবং টিস্যু গুলোর পরিবর্তন, যেমন হাড়ের স্পার (Bone Spurs), পুরু লিগামেন্ট, বা হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল ক্যানাল সংকুচিত করতে পারে।
এই সংকোচন সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ ফেলে, যার ফলে সায়াটিকা হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
পিরিফরমিস সিন্ড্রোম: পিরিফরমিস মাংসপেশীর অস্বাভাবিক সংকোচন বা প্রদাহের কারণে সায়াটিক নার্ভ চাপে পড়ে, যার ফলে সায়াটিকার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পিরিফরমিস সিন্ড্রোমের কারণে নিতম্বের গভীরে তীব্র ব্যথা, যা পায়ের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, ঝিনঝিন, অসাড়তা, বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। এই পরিস্থিতি সাধারণত দীর্ঘ সময় বসে থাকা, অতিরিক্ত হাঁটা বা দৌড়ানো, বা নিতম্বে আঘাতের কারণে হতে পারে।
আঘাত বা চোট: কোমরের মেরুদণ্ডে আঘাত বা চোট লাগলে, সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ পড়তে পারে, যা সায়াটিকার ব্যথার জন্ম দেয়। সড়ক দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া, ভারী বস্তু তোলার সময় আকস্মিক মোচড় বা আঘাতের ফলে মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, বা মাংসপেশীতে আঘাত লাগতে পারে, যা সায়াটিক নার্ভ কে সংকুচিত বা চাপে ফেলতে পারে। এর ফলে কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত তীব্র ব্যথা, ঝিনঝিন, অসাড়তা, বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভধারণের সময়, নারীর শরীরে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে জরায়ুর আকার বৃদ্ধি এবং ওজন বাড়া অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবর্তন গুলোর ফলে শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় এবং কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা সায়াটিক নার্ভ কে সংকুচিত করতে পারে। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং লিগামেন্ট শিথিল হতে শুরু করে, যা সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
টিউমার বা অন্যান্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: মেরুদণ্ডের আশেপাশে যখন টিউমার বৃদ্ধি পায়, তখন এটি সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। টিউমার সাধারণত মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, বা নার্ভ রুটের আশেপাশে বৃদ্ধি পায় এবং নার্ভ সংকোচনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি রাতে বেশি হয়?
সায়াটিক নার্ভের ব্যথা রাতে বেশি হতে পারে, এবং এটি অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। বেশ কিছু কারণের জন্য সায়াটিকার ব্যথা রাতে বাড়তে পারে, যেমন ঘুমানোর সময় শরীরের অবস্থান, দিনের ক্লান্তি, বা মাংসপেশীর শিথিলতা। রাতে যখন রোগী শুয়ে থাকে, তখন কিছু কিছু অবস্থান সায়াটিক নার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে।
এছাড়াও, দিনের সময় শারীরিক কার্যকলাপ এবং ক্লান্তি স্নায়ুর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে রাতে ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে।
গবেষণা থেকে জানা যায় যে, রাতে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি কারণ হলো প্রদাহ এবং স্নায়ুর সংবেদনশীলতা। রাতে শরীরের প্রদাহ জনিত রাসায়নিক গুলো বাড়তে পারে,
যা সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কে আরও তীব্র করে তুলতে পারে (1)। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রাতে ব্যথা বাড়ার কারণ হতে পারে দেহের রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, যা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভবের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আরেক টি কারণ হলো মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ, যা ঘুমানোর সময় বেড়ে যেতে পারে এবং স্নায়ুর ব্যথা কে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মানসিক চাপের কারণে স্নায়ুর প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, ফলে সায়াটিকার ব্যথা আরও তীব্র মনে হয় (2)।
সায়াটিকার ব্যথা কি সকালে বেশি করে?
সায়াটিকার ব্যথা সকালে বেশি হতে পারে, বিশেষত ঘুম থেকে ওঠার সময়। সকালে ব্যথা বাড়ার কয়েক টি কারণ রয়েছে, যা সায়াটিকার সঙ্গে সম্পর্কিত।
দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা অবস্থায় মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে চাপ পড়তে পারে, যা সায়াটিক নার্ভ কে সংকুচিত করে এবং ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, ঘুমের সময় শরীরের পেশী গুলো শিথিল অবস্থায় থাকে, ফলে সকালে ওঠার পর পেশী গুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং স্নায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুর সংকোচন বেশি অনুভূত হতে পারে, যার ফলে ব্যথা তীব্রতর হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের পরে পেশী গুলো শক্ত হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের ডিস্ক গুলো রাতে তরল শোষণ করার ফলে সকালে ডিস্কগুলোর চাপ বেশি থাকে, যা সায়াটিক নার্ভে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা বাড়ায় (3)। এই কারণে সায়াটিকার রোগীরা প্রায়ই সকালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব করেন, যা দিনের বাকি সময়ে চলাফেরা করার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা কমে যায়।
সায়াটিকা হলে কি ক্লান্ত লাগে?
সায়াটিকা হলে অনেক সময় রোগীরা ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণে। যখন সায়াটিক নার্ভে চাপ বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তখন ব্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যা দৈনন্দিন কাজ কর্ম এবং চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।
এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা শরীরের ওপর শারীরিক এবং মানসিক চাপ বাড়ায়, যার ফলে ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে রাতে সঠিক ভাবে ঘুমাতে না পারলে বা ব্যথার কারণে ঘুম ব্যাহত হলে, পরদিন ক্লান্তির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথা ক্লান্তি বা অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
Pain Research and Management জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং ক্লান্তি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, কারণ ব্যথা শরীরের শক্তি হ্রাস করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায় (4)।
সায়াটিকা রোগের লক্ষণ
সায়াটিকা রোগের লক্ষণ গুলো সাধারণত সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ বা সংকোচনের কারণে দেখা দেয় এবং কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সায়াটিকার প্রধান লক্ষণ গুলো হলো
কোমরে তীব্র ব্যথা সাধারণত কোমরে তীব্র ব্যথা, যা সাধারণত নিতম্ব থেকে শুরু হয়ে উরু, পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই ব্যথা সাধারণত একপাশে অনুভূত হয় এবং এটি তীব্র ব্যথা, জ্বালাপোড়া, বা গভীরে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা টি মাঝে মাঝে আসতে পারে, আবার দীর্ঘ সময় ধরে অবিরামও থাকতে পারে।
ঝিনঝিন বা জ্বালা পোড়ার মতো অনুভূতি: পায়ে বা নিতম্বে ঝিনঝিন বা জ্বালা পোড়ার মতো অনুভূতি হয়, যা সাধারণত কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই অনুভূতি অনেক সময় বিদ্যুতের শকের মতো হতে পারে এবং এটি পায়ের এক পাশে তীব্র ভাবে অনুভূত হয়। রোগীরা প্রায়ই বর্ণনা করেন যে, পায়ে কোনো জায়গায় জ্বালা পোড়া বা সূঁচ ফোটার মতো অনুভূতি হচ্ছে, যা কখনও কখনও খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়।
অসাড়তা বা দুর্বলতা: পায়ে ভারী বা ঝিম ধরা অনুভূত হতে পারে, যা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা বা দাঁড়ানো কঠিন করে তোলে। এই অসাড়তা বা দুর্বলতা সায়াটিক নার্ভে চাপ বা স্নায়ুর সংকোচনের কারণে ঘটে, যা নার্ভের স্বাভাবিক সিগনাল প্রেরণ ক্ষমতা কে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে পায়ের পেশী গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চলাচলে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
পায়ে ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি: পায়ের পাতা বা আঙ্গুলে ঝাঁকুনি, খিঁচুনি বা শক্ত হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে। এই ঝাঁকুনি বা খিঁচুনির অনুভূতি পায়ের এক পাশে তীব্র ভাবে অনুভূত হতে পারে এবং কখনও কখনও পুরো পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগীরা প্রায়ই বলেন যে, তাদের পায়ে হঠাৎ ঝাঁকুনি বা টান ধরার মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে, যা হাটা চলার সময় বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর তীব্রতর হয়।
দাঁড়ানো বা বসার সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়া: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকলে কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব এবং মেরুদন্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা সায়াটিক নার্ভ কে আরও সংকুচিত করে, ফলে ব্যথা তীব্রতর হয়।
বিশেষ করে, যখন রোগী চেয়ারে বসে বা কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন এই ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। কখনও কখনও এই ব্যথা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তা রোগীর দৈনন্দিন কাজকর্ম বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।
মোচড়ানো বা সোজা হওয়ার সময় ব্যথা: হঠাৎ মোচড়ানো বা সোজা হওয়ার সময় ব্যথা বাড়তে পারে, যা নড়াচড়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রোগীরা প্রায়ই বলেন যে, হঠাৎ করে মোচড় দেয়ার সময় বা কোনো ভারী বস্তু তোলার সময় পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। একই ভাবে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে বা মেরুদণ্ড সোজা করার সময়ও ব্যথা বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় স্নায়ুর সংকোচন বা প্রদাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সায়াটিক নার্ভের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথা কে আরও তীব্র করে তোলে।
সায়াটিকা কি ভালো হয়
সায়াটিকা রোগ সঠিক চিকিৎসা এবং জীবন ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণত ভালো হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সায়াটিকার উপসর্গ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে বা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে উন্নত হয়।
সায়াটিকার চিকিৎসায় ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ুর ওপর চাপ কমানো, এবং পেশীর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, ওষুধ, এবং প্রয়োজন হলে সার্জারি এই রোগের উপশমে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০% সায়াটিকার রোগী সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেন (5)। তবে, সায়াটিকার কারণ যদি গুরুতর হয়, যেমন হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, বা টিউমার, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে (6)।
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ফিজিওথেরাপি এবং নিয়মিত ব্যায়াম সায়াটিকার লক্ষণ কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে (7)। এছাড়া, প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে সায়াটিকা রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
হাঁটুর নিচে হাঁটুর বালিশ দিলে কি সায়াটিকার ব্যাথা কি কমে যায়?
হাঁটুর নিচে বালিশ দিলে সায়াটিকার ব্যথা কমতে পারে, বিশেষত শুয়ে থাকার সময়। এই পদ্ধতিটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পিঠের নিচের অংশে চাপ কমিয়ে দেয়, যা সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক হয়। শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে বালিশ রাখলে পিঠের নীচের অংশে অতিরিক্ত বাঁকানো বা চাপ পড়া এড়ানো যায়, ফলে মেরুদণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট পেশী ও নার্ভ গুলোর শিথিলতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা উপশম হতে পারে।
গবেষণা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে জানা গেছে, শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে বালিশ ব্যবহার করলে পিঠের নিচের অংশ কে সমর্থন দেওয়া হয়, যা সায়াটিক নার্ভের সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট ব্যথা কমাতে সহায়ক। “The Journal of Physical Therapy Science” এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই ধরনের সমর্থন ব্যথা কমাতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে (8)। সুতরাং, হাঁটুর নিচে বালিশ রাখা সায়াটিকার রোগীদের জন্য একটি সাধারণ এবং সহজ পদ্ধতি, যা ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে।
সায়াটিকা রোগের চিকিৎসা
নিউরোলজিস্ট: সায়াটিকা রোগের চিকিৎসায় নিউরোলজিস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ এটি মূলত স্নায়ুর সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। নিউরোলজিস্ট সায়াটিকার লক্ষণ গুলো এসসমেন্ট করেন এবং সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ বা প্রদাহের কারণ নির্ণয় করতে সহায়তা করেন। তারা স্নায়ুর কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে এমআরআই (MRI), সিটি স্ক্যান (CT scan), বা ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG) এর মতো পরীক্ষার পরামর্শ দেন, যা সায়াটিক নার্ভের ক্ষতি বা কতটুকুন চাপ লেগে আছে তা শণাক্ত করতে সাহায্য করে। নিউরোলজিস্ট সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং স্নায়ুর প্রদাহ কমানোর চিকিৎসা দেন, যার মধ্যে নিউরোপ্যাথিক পেইন রিলিভার (যেমন গ্যাবাপেন্টিন বা প্রেগাবালিন) এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সায়াটিকার সবচেয়ে সফল চিকিৎসা কোনটি
ফিজিওথেরাপি: সায়াটিকা রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি মূলত পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ ধরনের ব্যায়াম নির্ধারণ করেন, যা কোমর এবং পায়ের পেশীকে শক্তিশালী ও নমনীয় করে তোলে।
একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিক্যাল অ্যাাসেসমেন্টের মাধ্যমে রোগীর শারিরীক অবস্থা পর্যালোচনা করে কারেকশন থেরাপির গ্রহনের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে এই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারেকশন থেরাপির মাধ্যমে কোমরের মেরুদণ্ডের হাঁড়ের কাঠামো উন্নতি সহ সংশ্লিষ্ট মাংশপেশীর শক্তিবৃদ্ধি করা যায়, যার ফলে পুনরায় এই সমস্যাটি ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বার ও ক্লিনিক সহ ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফিজিওথেরাপি বা ম্যানুয়াল থেরাপি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
তবে অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছে সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া উচিৎ। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র ASPC ম্যানু্পুলেশন থেরাপি সেন্টার (House #U64, Noorjahan Road Mohammadpur, Dhaka-1207) এ শুধুই ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। Structural Diagnosis & Management (SDM) টেকনিকের ভিত্তিতে রোগীর অবস্থা অনু্যায়ি কারেকশন থেরাপির চিকিৎসা প্রদান করে থাকে যার ফলে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে রোগী সর্বোচ্চ সুস্থতা পায়।
নিউরোসার্জন সায়াটিকা রোগের জটিল এবং গুরুতর ক্ষেত্রে নিউরোসার্জনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন সায়াটিকার ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, বা অন্যান্য প্রচলিত চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, অথবা রোগীর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়, তখন নিউরোসার্জন অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। নিউরোসার্জন সায়াটিকার মূল কারণ যেমন হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, বা মেরুদণ্ডের অন্যান্য গঠনগত সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং সেই সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা করেন।
সাধারণত সায়াটিকার ক্ষেত্রে নিউরোসার্জন মাইক্রোডিস্কেকটমি বা লামিনেকটমি সার্জারি করেন, যা মেরুদণ্ডের ডিস্ক বা হাড়ের অতিরিক্ত অংশ সরিয়ে সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। এই ধরনের সার্জারি স্নায়ুর চাপ মুক্ত করে রোগীর ব্যথা ও অসাড়তা কমিয়ে দেয় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
সায়াটিকা রোগের ঔষধ
সায়াটিকা রোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়, যা প্রধানত ব্যথা কমানো, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ, এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করার লক্ষ্যে দেওয়া হয়। নিচে সায়াটিকার জন্য কিছু সাধারণ ভাবে ব্যবহৃত ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো:
পেইনকিলার বা ব্যথানাশক ওষুধ: প্যারাসিটামল (Paracetamol) মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছু ক্ষেত্রে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs): যেমন আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen), ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac)। এগুলি প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মাংসপেশী শিথিলকারী: ব্যাক্লোফেন (Baclofen), টিজানিডিন (Tizanidine) মাংসপেশীর খিঁচুনি বা টানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
নিউরোপ্যাথিক পেইন রিলিভার: গ্যাবাপেন্টিন (Gabapentin), প্রেগাবালিন (Pregabalin) স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলি সায়াটিকার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর, বিশেষ করে যখন স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
সায়াটিকা রোগের ট্যাবলেট
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: অ্যামিট্রিপটিলিন (Amitriptyline), ডুলোসেটিন (Duloxetine) কিছু ক্ষেত্রে স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
স্টেরয়েড ইনজেকশন: কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন (Corticosteroid Injections) সরাসরি প্রদাহগ্রস্ত স্থানে ইনজেকশন দিয়ে প্রদাহ কমাতে এবং স্নায়ুর ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত তীব্র সায়াটিকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
অপয়েডস বা নারকোটিকস: কোডিন (Codeine), ট্রামাডল (Tramadol) খুব তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হওয়ার কারণে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।
সায়াটিকার ঘরোয়া চিকিৎসা
সায়াটিকার ঘরোয়া চিকিৎসা সাধারণত ব্যথা উপশম, স্নায়ুর ওপর চাপ কমানো, এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম সহজতর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যদিও গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, হালকা বা মাঝারি সায়াটিকার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি তে কিছু উপশম পাওয়া যেতে পারে। নিচে কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো
ঠাণ্ডা ও গরম সেঁক প্রাথমিক ভাবে, সায়াটিকার তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ঠাণ্ডা সেঁক অত্যন্ত উপযোগী। এটি স্নায়ুর প্রদাহ হ্রাস করতে এবং ব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে। একটি আইস প্যাক বা ঠাণ্ডা কাপড় ব্যবহার করে প্রায় ২০ মিনিট ধরে দিনে কয়েক বার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা হলে তা দ্রুত ব্যথা কমাতে পারে। কয়েক দিন পরে, গরম সেঁক ব্যবহার করলে পেশী গুলো শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা পেশী ও নার্ভের চাপ কমিয়ে ব্যথা উপশম করতে সহায়ক। গরম পানির ব্যাগ বা গরম প্যাড ব্যবহার করে দিনে কয়েক বার প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধরে সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম হালকা ব্যায়াম সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ কমা তে এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়। বিশেষ করে কোমর এবং পায়ের পেশীগুলো কে প্রসারণ ও শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা যেতে পারে। যেমন, হাঁটু বুকে চেপে ধরার ব্যায়াম, পায়ের পেশী স্ট্রেচিং, এবং কোমরের নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্ট্রেচিং ব্যায়াম মেরুদণ্ডে চাপ হ্রাস করে এবং সায়াটিক নার্ভের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভাবে এই হালকা ব্যায়াম করলে পেশীগুলো শিথিল হয় এবং সায়াটিকার কারণে সৃষ্ট ব্যথা উপশম হয়।
পিঠ ও কোমরের অবস্থান ঠিক রাখা সঠিক শোয়ার এবং বসার ভঙ্গি কোমরের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা সায়াটিক নার্ভের ওপর থেকে চাপ হ্রাস করে ব্যথা উপশমে সহায়ক হয়। শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে একটি বালিশ রাখা হলে কোমর কে পাতলা রাখে এবং মেরুদণ্ডের প্রাকৃতিক বক্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক কাত হয়ে শোয়া এবং একটি বালিশ ব্যবহার করে কোমর কে সঠিক অবস্থানে রাখা সায়াটিকার ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে। এছাড়া, সঠিক ভাবে আর্গোনোমিক চেয়ারে কোমর ও পিঠ সোজা রাখার অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। সায়াটিকা কি এবং কেন হয় ও সমস্যার সমাধান
আদা বা হলুদের চা আদা এবং হলুদ উভয়ই প্রদাহ নাশক গুণাবলী তে সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ হ্রাস করে ব্যথা উপশমে সহায়ক হতে পারে। আদা বা হলুদ দিয়ে তৈরি চা নিয়মিত পান করলে শরীরের প্রদাহ কমে এবং সায়াটিকার কারণে সৃষ্ট ব্যথা কিছুটা লাঘব হয়। আদা এ থাকা জিঞ্জারল এবং হলুদের কারকিউমিন যৌগ স্নায়ুর প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন এক বা দুই বার আদা বা হলুদের চা পান করলে সায়াটিকার উপসর্গ কমানোর পাশাপাশি শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যও উন্নত হয় (9)
ইপসম সল্ট বাথ ইপসম সল্ট ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সমৃদ্ধ, যা পেশী শিথিল করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। সায়াটিকার কারণে পিঠ, নিতম্ব, এবং পায়ের পেশীতে যে চাপ এবং ব্যথা হয়, ইপসম সল্ট দিয়ে গরম পানিতে গোসল করলে তা অনেক টা উপশম পায়। ইপসম সল্ট বাথ শরীরের পেশীগুলো কে শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে স্নায়ুর ওপর চাপ হ্রাস পায় এবং ব্যথা কমে। দিনে একবার ১৫-২০ মিনিটের জন্য ইপসম সল্ট বাথ নেওয়া সায়াটিকার উপসর্গ উপশমে কার্যকর হতে পারে। এটি শুধু ব্যথা কমায় না, বরং শারীরিক আরাম এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে, যা সায়াটিকা রোগীদের আরোগ্য প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণ অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ড এবং সায়াটিক নার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে সায়াটিকার উপসর্গ গুলো আরও তীব্র হতে পারে। যখন শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকে, তখন কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা সায়াটিক নার্ভ কে সংকুচিত করে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সায়াটিকার উপসর্গ কমানোর একটি কার্যকর উপায়। সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। ফল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং আঁশযুক্ত খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি কমে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, বা যোগ ব্যায়াম ওজন কমাতে এবং মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে সায়াটিকার ব্যথা কমে এবং রোগীর জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়।
তথ্যসূত্র
- Bair, M.J., Robinson, R.L., Katon, W. and Kroenke, K., 2003. Depression and pain comorbidity: a literature review. Archives of internal medicine, 163(20), pp.2433-2445. https://jamanetwork.com/journals/jamainternalmedicine/article-abstract/216320
- Finan, P.H., Goodin, B.R. and Smith, M.T., 2013. The association of sleep and pain: an update and a path forward. The journal of pain, 14(12), pp.1539-1552. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1526590013011991
- Cox, J.M., 2012. Low back pain: mechanism, diagnosis and treatment. Lippincott Williams & Wilkins. https://books.google.com/books?hl=en&lr=&id=imVBoQriMf0C&oi=fnd&pg=PP22&dq=Wheeler+SG,+et+al.+(2001).+The+Role+of+Biomechanical+Factors+in+the+Development+of+Low+Back+Pain:+A+Prospective+Cohort+Study.+The+Journal+of+Spinal+Disorders+and+Techniques.&ots=ctGlyfV1th&sig=JjIPzTkhxxhFczVmx4dGKsaefEM
- Finan, P.H., Goodin, B.R. and Smith, M.T., 2013. The association of sleep and pain: an update and a path forward. The journal of pain, 14(12), pp.1539-1552. https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1526590013011991
- Van Tulder, M., Peul, W. and Koes, B., 2010. Sciatica: what the rheumatologist needs to know. Nature reviews Rheumatology, 6(3), pp.139-145. https://www.nature.com/articles/nrrheum.2010.3
- Jensen, M.C., Brant-Zawadzki, M.N., Obuchowski, N., Modic, M.T., Malkasian, D. and Ross, J.S., 1994. Magnetic resonance imaging of the lumbar spine in people without back pain. New England Journal of Medicine, 331(2), pp.69-73. https://www.nejm.org/doi/abs/10.1056/NEJM199407143310201
- Koes, B.W., Van Tulder, M.W. and Peul, W.C., 2007. Diagnosis and treatment of sciatica. Bmj, 334(7607), pp.1313-1317. https://www.bmj.com/content/334/7607/1313?flh
- Zhang, S.K., Yang, Y., Gu, M.L., Mao, S.J. and Zhou, W.S., 2022. Effects of low back pain exercises on pain symptoms and activities of daily living: a systematic review and meta-analysis. Perceptual and Motor Skills, 129(1), pp.63-89. https://journals.sagepub.com/doi/abs/10.1177/00315125211059407
- Grzanna, R., Lindmark, L. and Frondoza, C.G., 2005. Ginger—an herbal medicinal product with broad anti-inflammatory actions. Journal of medicinal food, 8(2), pp.125-132. https://www.liebertpub.com/doi/abs/10.1089/jmf.2005.8.125
সাধারণ জিজ্ঞাসা
সায়াটিকা কি ?
সায়াটিকা হলো একটি ব্যথা জনিত সমস্যা, যা মূলত সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ বা প্রদাহের কারণে সৃষ্টি হয়। সায়াটিক নার্ভ টি শরীরের দীর্ঘতম নার্ভ, যা কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব, উরু, এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত প্রসারিত।
সায়াটিকা নার্ভ কি?
সায়াটিক নার্ভে চাপ বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তখন ব্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যা দৈনন্দিন কাজ কর্ম এবং চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা শরীরের ওপর শারীরিক এবং মানসিক চাপ বাড়ায়, যার ফলে ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা দিতে পারে।
ফিজিওথেরাপিতে কি সায়াটিকা ভালো হয় ?
সায়াটিকা রোগ সঠিক চিকিৎসা এবং জীবন ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণত ভালো হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সায়াটিকার উপসর্গ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে বা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে উন্নত হয়।
সায়াটিকা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি
সায়াটিকা রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি মূলত পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং সায়াটিক নার্ভের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
সায়াটিক নার্ভের ব্যথা কি বেশি হয়?
হ্যাঁ, সায়াটিক নার্ভের ব্যথা বেশি হতে পারে। বেশ কিছু কারণের জন্য সায়াটিকার ব্যথা বাড়তে পারে, যেমন ঘুমানোর সময় শরীরের অবস্থান, ক্লান্তি, বা মাংসপেশীর শিথিলতা। যখন রোগী শুয়ে থাকে, তখন কিছু কিছু অবস্থান সায়াটিক নার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে।
Assistant professor, Dhaka College of Physiotherapy
Chief Consultant(Ex): Popular Medical college Hospital, Dhanmondi- 2.
Chairman and Chief Consultant: ASPC Manipulation Therapy Centre, Nurjahan Road, Mohammadpur.
Founder and conceptual inventor: Structural Diagnosis and Management (SDM) concept.
Secretary: Centre for the Rehabilitation of Autism and Person with Disabilities (CARD).
Secretary-General: Bangladesh Physiotherapy Association (BPA).
Phone +88 01712-867364
Email aspc.dhaka@gmail.com
Website https://aspc.com.bd
- ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ - February 9, 2025
- সায়াটিকা সারানোর উপায় - January 30, 2025
- ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ২০২৪ | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - November 28, 2024