ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় এবং নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা কি? ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া (Leukemia) হল এক ধরনের ক্যান্সার যা রক্ত এবং রক্ত গঠনের জন্য দায়ী অঙ্গ যেমন অস্থিমজ্জা (bone marrow)-তে আঘাত হানে। লিউকেমিয়ার ফলে অস্বাভাবিক সাদা রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় যা দেহের স্বাভাবিক রক্তকণিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি হয় (1)।

ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় এবং নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা কি?

জেনেটিক মিউটেশন শরীরের ডিএনএতে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বা মিউটেশন ব্লাড ক্যান্সারের প্রধান কারণ। কিছু বিশেষ ধরনের জেনেটিক মিউটেশন রক্তের কোষগুলোকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে ও বিভাজিত হতে বাধ্য করে, যা লিউকেমিয়া সৃষ্টি করে। বংশগত কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বংশগত কারণে ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পরিবারের ইতিহাসে লিউকেমিয়া থাকলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে বা যারা ইমিউন সিস্টেমকে দমনকারী ওষুধ গ্রহণ করে, তাদের ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষন

ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষনগুলো কি কি

ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ বা সিম্পটমস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এটি রোগীর শরীরের অবস্থা ও ক্যান্সারের ধরণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যেমনঃ

দুর্বলতা এবং ক্লান্তি: ব্লাড ক্যান্সারের রোগীরা সাধারণত অতিরিক্ত দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করেন। এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন ধরে হয় এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। ব্লাড ক্যান্সার হলে লহিত রক্তকণিকার (red blood cells) উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া (anemia) বলা হয়, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতার প্রধান কারণ।

অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস: ব্লাড ক্যান্সার, বিশেষ করে লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমার ক্ষেত্রে শরীরে অস্বাভাবিক কোষের দ্রুত বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ঘটে যা শরীরের স্বাভাবিক শক্তি ও পুষ্টি শোষণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ফলে রোগীর শরীর ক্রমাগত শক্তি হারায় এবং এর ফলে ওজন কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় দ্রুত ওজন হ্রাস পায় এবং এটি ক্যান্সারের একটি প্রাথমিক লক্ষন।

ব্লাড ক্যান্সারের সিম্পটমস

জ্বর এবং রাতে ঘাম: ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে রোগী ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। দিনের পর দিন দেখা যায় রোগী জ্বরে রোগী ভুগে এবং কখনও কখনও এর কোনো সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও, ব্লাড ক্যান্সারের রোগীরা প্রায়ই রাতে অতিরিক্ত ঘামতে পারেন, যা “নাইট সোয়েটস” নামে পরিচিত।

রক্তপাত এবং আঘাত থেকে সহজেই রক্তপাত: ব্লাড ক্যান্সার হলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে সহজেই রক্তপাত হতে পারে এবং আঘাত বা কাটা-ছেঁড়া থেকে রক্তপাত সহজেই থামে না এটি সাধারণত লিউকেমিয়া হলে বেশি দেখা যায়। লিউকেমিয়ার কারণে রক্তের প্লাটিলেট (platelets) উৎপাদন কমে যায়। প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায়, তখন রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে রোগীরা আঘাত পেলে সাথে সাথেই রক্তপাত হয়।

অস্থিমজ্জা বা হাড়ের ব্যথা: হাড়ের মধ্যে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে যা অস্থিমজ্জায় ক্যান্সারের উপস্থিতির কারণে হতে পারে। বিশেষ করে লিউকেমিয়া এবং মাল্টিপল মাইলোমার ক্ষেত্রে এই ব্যথা প্রায়শই দেখা যায়। ব্লাড ক্যান্সারের সময় অস্থিমজ্জায় অস্বাভাবিক কোষের অতিরিক্ত উৎপাদন ঘটে যা  অস্থিমজ্জার ভিতরে চাপ তৈরি করে এবং হাড়ের মধ্যে ব্যাথা অনুভব হয় যার ফলে রোগীর হাঁটা-চলা বা দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

শ্বাসকষ্ট: লিউকেমিয়ার সময় অস্থিমজ্জায় অস্বাভাবিক সাদা রক্তকণিকার অতিরিক্ত উৎপাদন ঘটে যা রক্তের লোহিত রক্তকণিকা (red blood cells) এবং প্লেটলেট উৎপাদনকে ব্যাহত করে। লোহিত রক্তকণিকার অভাবের ফলে শরীরের টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না ফলে রোগী শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। এই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়, যা শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ।

ব্লাড ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়

ব্লাড ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণভাবে বাঁচার কোনো নিশ্চিত উপায় নেই, কারণ এর সঠিক কারণগুলি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে, কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

যেমনঃ

তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলা: তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলা ব্লাড ক্যান্সার থেকে বাঁচার অন্যতম কার্যকর উপায়। তামাক এবং ধূমপান বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে লিউকেমিয়া অন্যতম। ধূমপান করার সময় শরীরে নিকোটিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে, যা রক্তের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, তামাকের সাথে সংযুক্ত বেনজিন (benzene) নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা রক্ত এবং অস্থিমজ্জার কোষের ডিএনএ-তে ক্ষতি করতে পারে এবং লিউকেমিয়ার মতো ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। (2)

রেডিয়েশনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা: উচ্চ মাত্রার আয়নাইজিং রেডিয়েশন যা সাধারণত পারমাণবিক বিকিরণ, রেডিওথেরাপি, এবং কিছু শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, শরীরের কোষের ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডিএনএ এর এই সমস্যার ফলে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যা লিউকেমিয়া এবং অন্যান্য ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। রেডিয়েশনের সংস্পর্শ এড়াতে অপ্রয়োজনীয় রেডিয়েশন ভিত্তিক চিকিৎসা পরীক্ষা, যেমন সিটি স্ক্যান এবং এক্স-রে, এড়িয়ে চলা উচিত এবং সুরক্ষামূলক গিয়ার ব্যবহার করে নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা উচিত (3)।

রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা: কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ, বিশেষ করে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেনজিন (benzene) এবং কীটনাশকের মতো বিষাক্ত পদার্থ ব্লাড ক্যান্সার, বিশেষ করে লিউকেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বেনজিন একটি সাধারণ দ্রাবক যা তেল, প্লাস্টিক, রাবার, এবং কিছু পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা রক্তের কোষগুলির ডিএনএ-তে পরিবর্তন ঘটাতে পারে যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যারা এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন, তাদের জন্য সুরক্ষামূলক গিয়ার ব্যবহার করা, সঠিক বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা রাখা, এবং যতটা সম্ভব এই পদার্থগুলির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা জরুরি (4)।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: ব্লাড ক্যান্সার থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বলতে বোঝায় একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত কায়িক শ্রম, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা। সুষম খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয় এবং ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায় (5)।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যাদের পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি দ্রুত শনাক্ত করতে পারে ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করার সুযোগ বেড়ে যায়। ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, বায়োপসি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা নির্ধারণ করতে পারে যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসা সাধারণত বেশি কার্যকর হয় এবং সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বেড়ে পায়। হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার | হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ

জেনেটিক পরামর্শ: ব্লাড ক্যান্সার থেকে বাঁচার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে জেনেটিক পরামর্শ গ্রহণ করা, বিশেষ করে যাদের পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে। জেনেটিক পরামর্শের মাধ্যমে একজন বিশেষজ্ঞ আপনার জেনেটিক ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারেন, যা ক্যান্সারের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। জেনেটিক মিউটেশন বা অস্বাভাবিক জিন থাকলে, ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে, তা আগে থেকেই জানা সম্ভব। এই তথ্যের ভিত্তিতে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করার মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এছাড়াও, জেনেটিক পরামর্শের মাধ্যমে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা যায় এবং তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন (6)।

ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষনগুলো কি কি

ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণগুলি বিভিন্ন হতে পারে এবং এটি টিউমারের আকার, অবস্থান, এবং এর বৃদ্ধি কেমন তার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্র হয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

মাথাব্যথা: ব্রেইন টিউমারের কারণে মাথার ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্র হয়। ব্রেইন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বেশি তীব্র হয় এবং মাঝে মাঝে ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে। এছাড়া, শারীরিক পরিশ্রম বা হাঁচি কাশির সময় ব্যথা আরও বাড়তে পারে।

মুখমণ্ডল বা দৈহিক দুর্বলতা বা অবশতা: ব্রেইন ক্যান্সারের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো মুখমণ্ডল বা শারীরিক দুর্বলতা বা অবশতা। এই লক্ষণটি সাধারণত তখন দেখা দেয় যখন ব্রেইন টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে চাপ সৃষ্টি করে, যা দেহের নির্দিষ্ট অংশের চলাচল বা সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি টিউমার মস্তিষ্কের বাম পাশে থাকে, তাহলে দেহের ডান পাশের হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হতে পারে। একইভাবে, মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট অংশে টিউমার থাকলে মুখমণ্ডলের কোনো অংশ দুর্বল হতে পারে বা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হতে পারে।

দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন: ব্রেইন ক্যান্সারের কারণে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন চোখে ঝাপসা দেখা, ডাবল দেখা, বা দৃষ্টির ক্ষেত্র সীমিত হয়ে আসা। (7) By: Snyder, H., Robinson, K., Shah, D., Brennan, R. and Handrigan, M.

মতিভ্রংশ বা ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন: যখন ব্রেইন টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে প্রভাব ফেলে যা চিন্তা, অনুভূতি, বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, তখন ব্যক্তির মধ্যে মতিভ্রংশ (cognitive impairment) বা আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারাতে পারেন, চিন্তা করার ধরণে পরিবর্তন আসতে পারে, বা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন যেমন অস্বাভাবিকভাবে আক্রমণাত্মক হওয়া, সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা, বা সাধারণ আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া, ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে আরও তীব্রতর হতে পারে, যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে (7)।

বিষণ্ণতা এবং মেজাজের পরিবর্তন: ব্রেইন ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হিসেবে বিষণ্ণতা এবং মেজাজের পরিবর্তন প্রায়ই দেখা যায়। মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আবেগ, অনুভূতি এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশে ব্রেইন টিউমার চাপ সৃষ্টি করলে বা ক্ষতি হলে, এটি বিষণ্ণতা এবং মেজাজের দ্রুত পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। একজন রোগী হঠাৎ করে বিষণ্ণ বোধ করতে পারেন, আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন, অথবা অযথা দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ অনুভব করতে পারেন। পাশাপাশি, মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন, যেমন হঠাৎ করে অত্যন্ত আনন্দিত থেকে অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে পড়া, আক্রমণাত্মক আচরণ বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বাকশক্তি বা কথাবার্তার সমস্যা: ব্রেইন টিউমার হলে রোগীর বাকশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কের যেই অংশটি ভাষা এবং কথাবার্তার জন্য দায়ী সেই অংশে যদি টিউমার হয় তাহলে বাকশক্তি ও কথাবার্তায় সমস্যা হয়। এই সমস্যাগুলির মধ্যে কথা বলার সময় শব্দ খুঁজে পেতে অসুবিধা হওয়া, বাক্য গঠন করতে সমস্যা হওয়া, বা অন্যের কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে। টিউমারের অবস্থান এবং আকারের ওপর ভিত্তি করে, এই লক্ষণগুলি মৃদু থেকে তীব্রতর হতে পারে। কখনও কখনও, রোগী হয়তো সম্পূর্ণভাবে কথা বলতে অক্ষম হতে পারেন, কিংবা তাদের কথা অস্পষ্ট এবং বোঝা কঠিন হতে পারে। এই ধরনের ভাষাগত সমস্যা সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে খারাপ হতে পারে।

অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা ঘুমের সমস্যা: ব্রেইন টিউমার মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে রোগী অত্যধিক ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এই ক্লান্তি সাধারণ ক্লান্তি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির, কারণ এটি বিশ্রাম নেয়ার পরও কাটে না এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া, টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে প্রভাব ফেলতে পারে যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বা ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তি থেকে যায়। অনেক সময় রোগী অতিরিক্ত ঘুমাতে পারেন অথবা ঘুমোতে সমস্যা অনুভব করতে পারেন। এই লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্রতর হতে পারে, যা রোগীর জীবন মানের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

খিঁচুনি বা সিজার: খিঁচুনি বা সিজার (Seizure) ব্রেইন ক্যান্সারের একটি সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। মস্তিষ্কে টিউমার থাকলে এটি মস্তিষ্কের বিদ্যুতায়িত কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে খিঁচুনি হতে পারে। এই খিঁচুনিগুলি মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং প্রায়শই কোনো পূর্ব সংকেত ছাড়াই শুরু হয়। খিঁচুনির ধরন নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান এবং আকারের ওপর। এটি শরীরের একটি অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি এমন ব্যক্তিরাও, যাদের আগে কখনও খিঁচুনি হয়নি, তাদের ব্রেইন টিউমার থাকার কারণে হঠাৎ করে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি একটি গুরুতর লক্ষণ এবং এটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

শরীরের ভারসাম্য বা সমন্বয়ের সমস্যা: শরীরের ভারসাম্য বা সমন্বয়ের সমস্যা ব্রেইন ক্যান্সারের একটি লক্ষণ, বিশেষ করে যখন টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে প্রভাব ফেলে যা সমন্বয় এবং চলাচলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের সেরিবেলাম (cerebellum) নামক অংশটি শরীরের সমন্বয় এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি ব্রেইন টিউমার এই অঞ্চলে বা তার কাছাকাছি বৃদ্ধি পায়, তাহলে রোগী হাঁটাচলার সময় ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া, হাত-পা সমন্বয় করতে অসুবিধা, হাঁটার সময় হোঁচট খাওয়া, বা কোনও নির্দিষ্ট কাজ করার সময় অস্বাভাবিক দোদুল্যমানতা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব: বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব ব্রেইন ক্যান্সারের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। বিশেষ করে যখন মস্তিষ্কে টিউমার বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বাড়ে তখন রোগীর বমি হতে পারে। এই চাপের কারণে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যা বমি বা বমি বমি ভাবের উদ্রেক করতে পারে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত সকালে বেশি দেখা যায় এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বা ভারসাম্যহীনতা এর সাথে যুক্ত হতে পারে। বমি বা বমি বমি ভাব যদি নিয়মিতভাবে ঘটে এবং এর সঙ্গে অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে এটি ব্রেইন টিউমারের ইঙ্গিত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

মলদ্বারে ক্যান্সারের লক্ষনগুলো কি কি

মলদ্বারে ক্যান্সারের (Anal Cancer) লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে এবং এটি রোগীর শরীরের অবস্থা ও ক্যান্সারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। নিচে মলদ্বারে ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

মলদ্বারে রক্তপাত: মলদ্বারে রক্তপাত মলদ্বারে ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর একটি। এটি সাধারণত মলত্যাগের সময় ঘটে এবং প্রায়ই মল বা টয়লেট পেপারে লাল রঙের তাজা রক্ত দেখা যায়। এই রক্তপাত প্রায়শই পাইলস বা হেমোরয়েডস (অর্শ্ব) এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়, তবে যদি রক্তপাতের সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ যেমন মলদ্বারে ব্যথা, চাপ, বা ফোলা অনুভূত হয়, তাহলে এটি মলদ্বারের ক্যান্সারের সংকেত হতে পারে। মলদ্বারে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে এর তীব্রতা বাড়তে পারে।

মলদ্বারে ব্যথা বা চাপ: মলদ্বারে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মলদ্বার বা তার আশেপাশে ক্রমাগত ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা মলত্যাগের সময় তীব্র হতে পারে এবং কখনও কখনও মলত্যাগের পরেও অব্যাহত থাকতে পারে। ক্যান্সারের টিউমার মলদ্বারের টিস্যুগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে বা তাদের মধ্যে প্রবেশ করে ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। ব্যথা কখনও কখনও মলদ্বার থেকে শুরু করে পেটের নীচের অংশে বা তলপেট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

মলদ্বারের চারপাশে একটি গুটি বা ফোলা: মলদ্বারের চারপাশে একটি গুটি বা ফোলা মলদ্বারে ক্যান্সারের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। মলদ্বারের টিউমার প্রায়ই একটি গুটি বা ফোলার আকারে শুরু হয়, যা মলদ্বারের আশেপাশে বা ভিতরে অনুভব করা যেতে পারে। এই গুটি সাধারণত কঠিন বা মসৃণ হতে পারে এবং আকারে ছোট থেকে বড় হতে পারে। ফোলাটি সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এর সাথে ব্যথা, অস্বস্তি, বা রক্তপাতের মতো অন্যান্য লক্ষণ যুক্ত হতে পারে। যদি মলদ্বারের আশেপাশে বা ভিতরে কোনো অস্বাভাবিক গুটি বা ফোলা দেখা দেয়, তাহলে এটি মলদ্বারে ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মলদ্বার থেকে অনিয়মিত স্রাব: মলদ্বারের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হচ্ছে মলদ্বার থেকে অনিয়মিত স্রাব যাওয়া। এই স্রাব রক্তমিশ্রিত, মিউকাসযুক্ত, বা পুঁজের মতো হতে পারে। মলদ্বার থেকে অস্বাভাবিক স্রাব সাধারণত মলত্যাগের সময় বা এর বাইরেও হতে পারে এবং এটি ক্যান্সারের টিউমার থেকে হতে পারে, যা মলদ্বারের স্বাভাবিক টিস্যুতে প্রভাব ফেলে এবং সংক্রমণ বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। মলদ্বার থেকে অনিয়মিত স্রাবের সাথে অন্যান্য উপসর্গ যেমন মলদ্বারে ব্যথা, চাপ, বা রক্তপাত দেখা দিলে, এটি মলদ্বারে ক্যান্সারের সম্ভাব্য সংকেত হতে পারে এবং এই লক্ষণগুলো উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

মল ত্যাগের সময় পরিবর্তন: মল ত্যাগের সময় পরিবর্তন মলদ্বারের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। মলদ্বারের টিউমার মলদ্বারের প্যাসেজে প্রভাব ফেলে, যার ফলে মল ত্যাগের ধরন এবং সময় পরিবর্তিত হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা মলত্যাগের সময় ব্যথা হতে পারে। কখনও কখনও মলের আকারও পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন মল সরু বা পাতলা হয়ে যেতে পারে, যা মলদ্বারের টিউমারের কারণে মলদ্বার সংকুচিত হওয়ার ফলে।

মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালা: মলদ্বারের ক্যান্সার হলে মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হয়। মলদ্বারের টিউমার বা এর আশেপাশের টিস্যুগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মলদ্বারের চামড়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, টিউমার থেকে নির্গত মিউকাস বা অন্য কোনো তরল মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে জ্বালা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। মলদ্বারে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি বা জ্বালাপোড়া, সময়ের সাথে সাথে তীব্র হয় এবং এর সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন রক্তপাত, ব্যথা বা ফোলাভাব যুক্ত থাকে। এই লক্ষণগুলো মলদ্বারের ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ()

আস্বাভাবিক ওজন হ্রাস: অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস মলদ্বারের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে প্রভাব ফেলে এবং টিউমারের বৃদ্ধি শরীরের শক্তি ও পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে, রোগীর ওজন অনিচ্ছাকৃতভাবে কমে যেতে পারে। মলদ্বারে ক্যান্সারের কারণে খাবারের প্রতি অনাগ্রহ, হজমের সমস্যা, এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে ওজন হ্রাস পেতে পারে। এই ধরনের ওজন হ্রাস সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে এবং কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই হয়, যা ক্যান্সারের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হতে পারে।

লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া: মলদ্বারের ক্যান্সার হতে লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি ক্যান্সার মলদ্বারের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। লিম্ফ নোডগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিচালনা করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবে, ক্যান্সার যখন লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে। মলদ্বারের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, এই ফোলাভাব সাধারণত কুঁচকির আশেপাশে বা তলপেটের লিম্ফ নোডে দেখা দিতে পারে। ফোলা লিম্ফ নোড সাধারণত শক্ত এবং ব্যথাযুক্ত হতে পারে, তবে কখনও কখনও এটি কোনো ব্যথা ছাড়াও দেখা দিতে পারে।

তথ্যসূত্র:

Dr. M Shahadat Hossain
Follow me

Physiotherapist, Pain, Paralysis & Manipulative Therapy Specialist, Assistant Professor Dhaka College of Physiotherapy, Secretary-General(BPA), Secretary(CARD), Chief Consultant(ASPC), Conceptual Inventor(SDM), Faculty Member(CRP), Member-Bangladesh Rehabilitation Council

পরামর্শ নিতে 01877733322